#জলপরীর_প্রেমে#
#সিজন_2#
পার্টঃ১৪
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।।।।
।।।।।।।
।।।।।।।
ডলফিনে সফরটা ভালোই কাটলো। কারন অহংকারী বউটা যাকে আমাকে ধরতে গিয়ে শক খেয়েছিলাম সেই শক্ত করে আমাকে জরিয়ে ধরে বসে আছে। খুব ভালোই লাগতেছিলো। মনে কেমন জানি একটা ফুরফুরি পেলাম আমি। এ কেমন ফুরফুরি বুঝলাম না। তবে চাদের নিচে এভাবে ডলফিনের পিঠে বসে সফর করতে বেশী ভালো লাগছিলো না। আরো বড় কিছু একটা লাগবে যেটাই শুধু বসতে না দাড়াতেও পারবো৷ এমন কি ঘুমাতেও পারবো শুয়ে। এমন কিছু একটা তো মনে হয় তিমিই আমাদের দিতে পারবে। আমি ডলফিনে বসা অবস্থায় হাতটা আবার পানিতে দিয়ে অনুভব করতে লাগলাম আশে পাশে তিমি আছে কিনা। হয়তো এটা তিমির বাচ্চা দেওয়ার সময় তাই একটাকেও পেলাম না। কিন্তু আজব আশে পাশে আমি তিমির থেকেও বড় এবং শক্তিশালী কিছু অনুভব করলাম। অনেক শক্তিশালী কিছু একটা। আমি সেটাকে ডাকতে চাইলাম। কিন্তু কেনো জানি ওর শক্তির সাথে আমি পেরে উঠতে পারলাম না। চোখ খুলতে হলো আমার। আমি একটু নরে উঠলাম। আবারো চেষ্টা করতে চাইলাম। এবার দেখি এদিকেই আসছিলো জিনিসটা। আমি ওটার সঠিক আকার ধারনা করতে পারলাম না। জিনিসটা কি হবে আমি বুঝে উঠতে পারলাম না।
.
--আপনি প্রাসাদে ফিরে যান।(আমি)
.
--কেনো আপনি যাবেন না?(হৃদিতা)
.
--না কিছু একটা ভয়ানক জিনিস রয়েছে যেটা আমাকে দেখতে হবে। আপনি ফিরে যান।(আমি)
।।।।
।।।।
হৃদিতাকে আমি ঢাঙায় দিয়ে দিলাম। ও কিছুক্ষন দাড়িয়ে তারপর ওর জাদু দিয়ে উড়ে চলে গেলো প্রাসাদে। আমি ওর দিকে ফোকাস করলাম না। আমার মূল ফোকাস রয়েছে পানির ঔ বিশাল জিনিসটার উপরে।যেহেতু পানির তাই আমার কোনো ভয় নেই। কিন্তু ভয় লাগতেছে জিনিসটাকে আমি কাবু করতে পারলাম না। বিষয়টা খুব আশ্চর্যের। আমি আবারো চেষ্টা করলাম জিনিসটাকে কাবু করার জন্য। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। উল্টো আমার দিকে তেড়ে আসছে জিনিসটা। আস্তে আস্তে অনেক কাছেই চলে আসছে। আমি এবার জিনিসটাকে ভালো করে অনুভব করতে পারলাম। এটা একটা বিশাল দেহী অক্টোপাস যার চোখ লাল হয়ে আছে। আমার এবার অনেকটা ভয় হতে লাগলো। কারন সেনাপতি তো এটার কথায় বলেছিলো।
।
আমি তো আগে না জেনেই এটাকে পোষ মানানোর কথা ভেবে নিয়েছিলাম। কিন্তু এটা তো কিছুতেই কাবু হচ্ছে না। উল্টো আমাকে মারার জন্য উঠে পরে লেগেছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি করবো। আমার কি দৌড় দেওয়া ঠিক হবে কিনা এখানে দাড়িয়ে দেখবো কি হয়। এখানে দাড়ালে নিশ্চয় জীবন্ত ফিরতে পারবো না। কারন অক্টোপাসটা আমাকে জীবন্ত গিলে ফেলবে মনে হচ্ছে। কিছুক্ষন পরেই আমার সামনে পানির বুদবুদ হতে লাগলো। আসতে আসতে পানি গুলো উপরে উঠতে লাগলো। যতটা বড় ভাবছিলাম এটা তার থেকেও বড়। এতো বিশাল একটা জিনিসের সাথে আমি কিভাবে পেরে উঠবো বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমাকে পারতেই হবে যে করেই হোক পারতে হবে।
।
আমি আমার সামনে বিশালাকার একটা অক্টোপাস দেখতেছি যেটা একটা তিমির থেকে বড় আকারে। অক্টোপাসটার চোখের রং লাল। মনে হয় আগুন বের হচ্ছে ওর চোখ দিয়ে। আমি শিহরিত হলাম। কারন রাগী একটা লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। যদি কোনো মেয়ে এমন লুক নিয়ে তাকিয়ে থাকতো তাহলে নাহয় তাকে কিউট বলতাম। কিন্তু এটাকে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। কিছু ভাবার আগেই তার বিশাল আটটা হাতের একটা দিয়ে আমাকে আঘাত করলো। ভাগ্য ভালো কাছে থাকা ডলফিনটা আমাকে সরিয়ে দিলো। ওর হাতের আঘাতে পানি এদিকে ওদিকে যেতে লাগলো। স্রোত বেড়ে যাচ্ছে ওর দেওয়া আঘাতে। ডলফিন ওর পুরো চেষ্টা করছে ওর আঘাত থেকে আমাকে বাচাতে৷ আর অক্টোপাসটা একের পর এক আঘাত করতেছে। আমি যে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ খুব রাগ উঠলো কারন একটা ডলফিনকে ধরে ও গিলে খেয়ে ফেললো। বিষয়টা খুব খারাপ লাগলো+অনেক রাগ উঠলো। আমি চোখ বন্ধ করে পানির উপরে দারালাম। পানিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করলাম। দারিয়ে আছি পানির উপরে। মনে হচ্ছে পানি না আমি মাটির উপরে দাড়িয়ে আছি। এভাবে দাড়িয়ে থাকলে যে পায়ে শুরশুরি লাগে আগে জানতাম না। সিরিয়াস মুডে থাকার পরেও কেনো জানি হাসি পাচ্ছিলো খুব। একটু হেসে নিলাম। তারপর আবার সিরিয়াস হয়ে গেলাম। বাবা অক্টোপাস এবার আসো তুমি দেখি কত দম আছে তোমার।
।
দাড়িয়ে আছি যুদ্ধের স্টাইলে। অক্টোপাসটা একটা ডলফিন খেয়ে কিছুটা চুপ হয়ে গেছে। আমি একটা ছোট water ball বানিয়ে সেটা মারলাম ওর চোখে। যা আবার রাগিয়ে দিয়েছি। এবার হবে আসল মজা। আসো চান্দু আমার কাছে। অক্টোপাসটা ওর বিশাল দুটো হাত উপরে উঠালো আমাকে মারতে। আমি কি করবো দিলাম পানির উপরে দৌড়। এটা আমার অভিজ্ঞতা। এর আগে পানির উপর দিয়ে এভাবে হাটি নি। কারন নিজের ক্ষমতা পরীক্ষা করার সময়ই পাই নি। চার রাজ্যের রাজা ছিলাম। তখন কি আর এসব শক্তি নিয়ে আমার ভাবনা ছিলো। আমার ভাবনা তো ছিলো শুধু রাজ্য আর রানীগুলোকে নিয়ে। কিন্তু এখন তো দেখতে হবে কি কি করতে পারি আমি। আর একটু রিক্স না নিলে তো আমি জানতেই পারবো না কি কি পারি আমি। পানির উপর দিয়ে দৌড় শুরু করলাম। মাটিতে দৌড়ানোর থেকে তিনগুন স্পিড বেশী হচ্ছে দৌড়ে। আমার পিছনে অক্টোপাস টাও আসতেছে। জিনিসটা থেমে থেমে আসতেছে। তাই আমি আবারো কয়েকটা পানির বল বললাম ওর চোখে। এবার ফুপিয়ে আসছে আমার দিকে। এইতো এবার বেশী মজা হবে।
।
আমি দৌড়ের স্পিড বারালাম। পিছন থেকে অক্টোপাসটা আমাকে আঘাত করলো। সেটা আমার পিছনেই লাগলো। ভাবলাম এতো দৌড়িয়ে কি হবে। বিশাল পানির সুনামি আমার উপরে উঠলো। নতুন কিছু করতে পারি কিনা তার জন্য সুনামির মাঝখানে চলে গেলাম। আর একটু নিচু হয়ে পানিতে হাত দিয়ে সামনে আগানোর কথা ভাবলাম। আমি চুপচাপ দাড়িয়ে আছি। পানিই আমাকে সামনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি মজা নিচ্ছিলাম আর পিছনে ভয়ানক অক্টোপাসটা আমার পিছুই ছারছে না। এভাবো দুই ঘন্টার বেশী অক্টোপাসটাকে আমি জ্বালালাম। শেষমেষে জিনিসটা ক্লান্ত হয়ে পানির নিচে চলে গেলো। মনে মনে ভাবলাম হয়তো বিশ্রাম করবে এখন এটার ঘরে গিয়ে। আমাকেও যেতে হবে এটার পিছনে। আমিও ঢুপ দিলাম পানিতে। ওটার পিছনে সাতার শুরু করলাম। এখন জলমানবদের মতোই সাতার কাটতে পারি। ওদের মতোই দ্রত হয়ে গেছি। আমি ভাবলাম হয়তো পানির মধ্যেই কোথাও এই জিনিসটা যাবে। কিন্তু এটার পিছনে গিয়ে দেখতে পেলাম এটা সেই পাতালপুরীতে ঢুকার বিশাল গর্তটায় ঢুকলো যেখানে বর্তমানের বার্মুডা ট্রাঙ্গেল অবস্থিত। ভিতরে ঢুকলাম আমি। নিচে খুব সুন্দর এটা বললে ভুল হবে। বেশ ভয়ঙ্কর জিনিস নিচে।
।
ঔটা কিছু একটা জালের মতো জিনিসের মধ্য দিয়ে ঢুকে গেলো। আমি তাকালাম। হয়তো কোনো একটা ইলেকট্রিক জাল হবে ঔটা। তাই আমি একটু ভয় পেলাম। আমিও ভিতর দিয়ে গেলাম। কিছুই হলো না আমার। যাক বাচা গেলো। আমি অক্টোপাসের পিছু নিলাম। ঔটা ভিতরে চলে গেছে। আমি বর্তমানের পাতালপুরী দেখলাম। কিছুই নেই এখানে। চারদিকে শুধু বিদঘুতে অন্ধকার। অনেক ভয়ানক একটা জায়গা। আমি কিছুই দেখতে পারছিলাম না অক্টোপাসটা কোথায় গেলো। যখন এসেছি দেখা যাবে কি হয়। নাহলে পানির স্রোতের সাহায্যে আমি চলে যাবো এখানে থেকে। আমি উপরের দিকে তাকালাম দেখলাম কিছুটা আলো দেখা যাচ্ছে। ভাবলাম সেখানেই যাওয়া ঠিক হবে। আমি উপরে উঠলাম। সবচেয়ে আশ্চর্য জনক বিষয় হলো উপরে উঠার পর আমি পানি থেকে মাথা বের করতে পারলাম। মানে পাতালপুরীর মধ্যে আমি পানি থেকে উপরে উঠলাম। উপরে বেশী জায়গা নেই। একটা গুহার মতো জায়গা। বেশীর ভাগ জায়গা আমি আশে পাশেই রেখে আসছি। তবে এই একটু জায়গার মধ্যে আমি অনেক জিনিস দেখতে পাচ্ছি। সামনেই পানি শেষ হয়ে মাটি দেখতে পাচ্ছি। ছোট খাটো একটা মাঠের মতো বলা যায়। একটা বিশাল বট গাছ আছে। যেটার পাতাগুলো সাদা আলো দিচ্ছে। পাশেই আরেকটা বটগাছ যেটার পাতাগুলো লাল আলো দিচ্ছে। আর সেটার মাঝেই একটা বিশাল crystal জাতীয় কিছু হবে। আমি সাতার কেটে আস্তে আস্তে কাছে গেলাম।
।
কাছে গিয়ে মাটিতে উঠার আগেই দেখতে পেলাম। অক্টোপাসটা পানি থেকে মাটিতে উঠতে লাগলো। মাটিতে উঠার পর আস্তে আস্তে ছোট হতে লাগলো সেটা। আস্তে আস্তে পুরো একজন মানুষ হয়ে গেলো। হয়তো মেয়ে হলে ভালোই হতো। অক্টোপাস হয় এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করতাম আমি। কিন্তু একজন বুড়ো লোক হয়ে গেলো অক্টোপাসটা। লোকটার চুল আর দাড়ি সব সাদা হয়ে গেছে। দাড়ি গুলো বিশাল বড় বড় যেটা ওনার পেট পর্যন্ত চলে গেছে। দেখতে অনেকটা মায়াবী। সাদা পান্জাবীর মতো কিছু একটা শরীরে পরে আছে। লোকটা সোজা গিয়ে সাদা আলো দেওয়া গাছটার নিচে গিয়ে বসলো। হয়তো জাদুকর টাইপের লোক হবে সে। আর গাছ থেকে শক্তি নিবে সে।।
।
আমি এগিয়ে গেলাম ঔ দিকে। যে রাস্তা দিয়ে লোকটা হেটে গেছে আমি ওনার পায়ের দাগের সাথে রক্ত দেখতে ছিলাম। বিষয়টা বেদনা দায়ক লাগলো আমার কাছে। হয়তো লোকটার পায়ে কাটা গেথে গেছে। হতে পারে এমন। আমি গিয়ে দাড়ালাম লোকটার কাছে। লোকটা আমাকে দেখে খুব অবাক হলো। মনে হয় আমাকে এভাবে আশা করে নি লোকটা। আমার দিকে একবার তাকালো আরেকবার উপরে গাছের সাদা পাতা গুলোর দিকে তাকালো। পাশের লাল পাতাওয়ালা গাছের আলো আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে আর এই সাদা পাতা ওয়ালা গাছের আলো আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। অনেক রহস্যজনক একটা বিষয়। জিনিসটা বলার আগেই মনে হয় লোকটা মারা যাবে এমন মনে হচ্ছে।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ১৫ তম পার্টের জন্য।