#জলপরীর_প্রেমে#
#সিজন_২#
পার্টঃ০৯
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।
।।।।
আমি পৌছে গেলাম রাজ প্রাসাদে। এতো সুন্দর হবে ভাবতেও পারি নি। সবটাই পাথর দিয়ে বাধানো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক শ্রম পরেছে এই প্রাসাদ বানাতে গিয়ে। আমাদের মতো তো উন্নত মেশিন নাই যে সেগুলো দিয়ে কাজ করবে। আমি রাজ প্রাসাদে চলে গেলাম। ভিতরে আমাকে রাজ দরবারে নিয়ে আসা হলো। দেখলাম এখানে রাজ্যের সব ধরনের গন্য মান্য মানুষ বসে আছে। এক এক জন এক এক বিষয়ে দক্ষ। আমাকে সবার মাঝখানে দাড় করিয়ে মন্ত্রী তার আসনে গিয়ে বসলো। দেখলাম রাজার সিংহাসন এখনো ফাকা। আমাকে মাঝে রেখে মন্ত্রী বলতে লাগলো।
.
--ওনাকে কি রাজা মানতে আপনাদের কারো সমস্যা আছে?(মন্ত্রী)
.
--যেহেতু আমাদের রাজার শাহী নিশানা ওনার গলায় আছে তাই নিশ্চয় ওনিই আমাদের মহারাজ। আর সেটার প্রমান তো পেলামই আমরা। কারন একটা তীরেও উনি ক্ষত বিক্ষত হননি।(সেনাপতি বললো)
.
--হ্যা আমাদের ও কোনো সমস্যা নাই।।(বাকি সবাই)
.
--মহারাজ আপনি আপনার আসনে বসুন।(মন্ত্রী)
।।।
।।।
সবাই উঠে দাড়িয়ে আমাকে কুর্নিশ করলো। আমি আস্তে আস্তে গিয়ে দাড়ালাম সিংহাসনের কাছে। তারপর গিয়ে বসলাম। অবাকই লাগছে কারন আমি এতো সহজে এখানে আবার শাহী ভাবে থাকতে পারবো সেটা ভাবি নি। তাও আমি আমাকে ধন্যবাদ দিলাম। কারন আমিই তো একবার এসেছিলাম। যদিও আমি আসি নি তারপরও সেটা তো এসেছিলো। রাজ্যের বাকি লোকদের সাথে পরিচিত হলাম।। সেনাপতি আর মন্ত্রির সাথে তো আগেই পরিচিত হলাম। আমার সামনে থাকা বাকি বারো জনের সাথেও পরিচিত হলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম গোপাল ভাড় কার্টুনে যেমন মহারাজ তার রাজ দরবারে এক এক বিষয়ের উপরে দক্ষ লোক রাখেন এখানের বারো জনও তেমনি। কিন্তু না পরে দেখলাম সবাই এক একজন যোদ্ধা৷ এদের এক এক জনের অধীনে ২ হাজার সৈন্য আছে। সেনাপতি যিনি তিনি শুধু গেইটের নিরাপত্তা নিয়ে থাকে। তিনি শুধু ১ হাজার সৈন্যকে নিজের আয়ত্তে রাখে। আর এই ১২ জন পুরো ২৪ হাজার সৈন্যকে নিজের আয়ত্তে রাখে। আর এদের সৈন্যরা এক একজন বীর যোদ্ধা। যাইহোক নিজের একটা রাজ্য পেলাম। বিশাল একটা সেনা পেলাম। তবে কি এখানেই থেকে যাবো আমি। জারা তো আমাকে বলেছিলো রাজা হারকিউমাস নিজে থেকেই উধাও হয়ে গিয়েছিলো। তার মানে আমি এখানে অনেকদিন থেকে তারপর আবার ভবিষ্যতে চলে যাবো। তবে আমি এখানে কি করতে আসছি। এমন কিছু তো আছে যেটা আমি নিতে এসেছি। বইটা পরে দেখা যাক।
।।
।।
আমি রাজ দরবার থেকে চলে আসলাম। মন্ত্রী আমাকে এক এক করে কাহিনী বলতেছেন। আর এক এক করে রুম চিনাচ্ছিলেন। অবশ্য কাহিনীর আগা মাথা শুনে কিছুটা বুঝতে পারলাম। যেটা হলো। রাজার যে রানী ছিলো তারই গলায় ছিলো আমার এই রকেট। যুদ্ধের সময় রানীকে একটা সুরুক্ষিত জায়গায় রাখা হয় কারন তার পেটে আমাদের রাজার বাচ্চা ছিলো। আমাদের ভবিষ্যৎ রাজা ছিলো। যুদ্ধে তো আমরা জিতে যায়। কিন্তু আমাদের রাজা গুরুতর আঘাত পায় যুদ্ধে। আর আমাদের রানীর ঠিকানা পেয়ে যায় তাই।(মন্ত্রী)
.
--তাই তারা হত্যা করে ফেলে তাকে?(আমি)
.
--সেটা বলতে পারবো না। কারন সেটা হলে আমরা তার মৃত শরীর পেতাম।(মন্ত্রী)
.
--হ্যা আমার আম্মা সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলো। অনেক কষ্টে তিনি অন্য একটা রাজ্যে পৌছে যান। সেখানেই আমার জন্ম হয়। কিন্তু জন্মের সময়ই তিনি মারা যান। কতটা কষ্টে যে আমি বড় হয়েছি সেটা আমিই জানি।(আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শুধু সেটাই একটু ঢিল মেরে দিলাম)
.
--আমাদের ক্ষমা করবেন মহারাজ আমরা কিছুই করতে পারি নি। আমাদের মহারাজ এই ২০ বছর অনেক চেষ্টা করেছে আপনাদের খুজতে কিন্তু তিনি খুজে পাওয়ার আগেই ইন্তেকাল করেন।(মন্ত্রী)
.
--তাহলে আমি আমার পিতাকে সামনে থেকে দেখতে পেলাম না?(আমি)
.
--আরো কিছুদিন আগে আসলে হয়তো পারতেন। আপনি একদম সঠিক সময়েই চলে আসছেন। আর কিছুদিন পর আসলে হয়তো আপনার সেনাদের মাঝেই একটা লোভ চলে আসতো সিংহাসন পাওয়ার।(মন্ত্রী)
.
--যে এমন ভাববে তার গর্দান যাবে।(আমি)
.
--জ্বী মহারাজ।(মন্ত্রী)
.
--আমি এখন বিশ্রাম করবো মন্ত্রী। অনেক ক্লান্ত আমি।(আমি)
.
--জ্বী মহারাজ আপনার শয়নকক্ষেই আপনাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।(মন্ত্রী)
।।।।
।।।।
আমাকে নিয়ে আসলো আমার শয়নকক্ষে। মনে একটা প্রশ্ন ছিলো রুমে কি পাখা আছে। আবার ভাবলাম আমার তো ঠান্ডা গরমের অনুভূতিই নাই। কিন্তু রুমে এসে পাখার ব্যবস্থা দেখে চোখ তো চরাক গাছে উঠে গেলো। দুটো মেয়ে হাতে বিশাল পাখা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। এভাবে কি আমার ঘুম হবে। আমি ওদের দুইজনকে পাঠিয়ে দিলাম। মনে হলো খুশিই হলো। কারন সারারাত না ঘুমিয়প বাতাস করতে হবে ওদের। হয়তো এখানে বাতাস না অন্য কিছুও ওদের দিতে হয়। আচ্ছা সেগুলো বাদ দিলাম। আমি শুয়ে পরলাম। মন্ত্রীকে বল্লাম আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। সে আমার খাবারের ব্যবস্থা করবে। আর আমি এই সুযোগে বইটা পড়তে লাগলাম।
.
--এতো ক্ষনে মন্ত্রী কাছ থেকে কাহিনী শুনলে তাই না। আর হ্যা বুঝেছো কিভাবে তোমায় চলতে হবে। ভাবছো এখানে কি রাজা হতে এসেছো নাকি তাই না? এখানে এসেছো যাদুর মালিক হতে। পৃথিবীতে দুই ধরনের ম্যাজিক দেখতে পারবে। একটা ওয়াইট আর অন্যটা ব্লাক ম্যাজিক। এর ভিতরে যেটা ওয়াইট ম্যাজিকটা তুমি ব্যবহার করেছো। যেটাই কি হলে শেষ মেষ তোমাকে হারতে হলো। নিজের সেনাপতিরাই তোমাকে মারতে চাইলো। তাহলে লাভ কি সেই ওয়াইট ম্যাজিকের। হ্যা লাভ আছে। পরের টা পরে বল্লাম। তোমাকে এখানে জিততে হলে ওয়াইট ম্যাজিক পুরোপুরি ব্যবহার করা শিখতে হবে। ওয়াইট ম্যাজিক তো শুধু তোমার ট্রিশুলের মধ্যেই ছিলো। এখন ট্রিশুল ছাড়া কিভাবে ব্যবহার করবে সেটা শিখতে হবে তোমাকে। প্রশ্ন জাগতেছে সেটা কিভাবে শিখবে তাই না? সেটা তুমি কালকেই বুঝতে পারবে কিভাবে পারবে। আপাতোতো এই পর্যন্তই। পরের গুলো পড়ার ইচ্ছা জাগলেও পড়তে পারবে না। কারন কালকেই খুলবে সেটা।(বইয়ে)
।।।।
।।।।
আমি অপর পৃষ্ঠা উল্টিয়ে ও কিছু পেলাম না। সব সাদা। কালকে কি জানতে পারবো আমি। তবে ব্লাক ম্যাজিকের কথা লেখা সেটা পড়ে ভালোই লাগলো। অনেক ইচ্ছা ছিলো ব্লাক ম্যাজিক শেখার। আশা করা যায় সেটা শেখতে পারবো। আমি কিছু মুভি দেখেছি যেটাতে ব্লাক ম্যাজিক ব্যবহার করে। বেশীর ভাগ হলিউডের এনিমেশন মুভি গুলো ভালো লাগে যেটার কাহিনী ব্লাক ম্যাজিক নিয়ে। যেমন শেষ একটা মুভি দেখলাম 'The Stolen Princess'। এমন ব্লাক ম্যাজিক মুভি গুলো ভালোই লাগে। সেগুলো দেখে মনে হয় আমি রাজা না হয়ে যদি একজন ব্লাক ম্যাজিশিয়ান হতে পারতাম। আচ্ছা সমস্যা নাই বইয়ে যেভাবে লেখা আছে তাতে বোঝা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই শিখে ফেলবো ওয়াইট ম্যাজিক। দেখা যাক কালকে কি হয়। একটু পরই মন্ত্রীর সাথে আরো দুজন লোক আসলো। হাতে বিশাল বিশাল লোহার গামলা। সব বিছানার পাশের ছোট টেবিলটাতে রাখলো। ভালোই লাগলো দেখে যে এই সময়তে ও টেবিল ছিলো। আমার সামনে গামলা গুলো সরালো। আমি তো খাবার দেখেই মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার মতো অবস্থা হলাম। ভেবেছিলাম ভাত পাবো। কিন্তু না। পুরো এক গামলা ভরা বড় বড় মুরগীর রান। বাকি দুটোতে দেখে মনে হচ্ছিলো গরু হবে। দেখা যাক খেয়ে।
.
--মহারাজ এটা ভেড়ার মাংসের কাবাব। আর এটা হাতির মাংসের কাবাব।(মন্ত্রীর সাথে থাকা দুটো লোক বললে)
.
--হুমমম ঠিক আছে সবই চেষ্টা করে দেখি।(আমি)
।।।।
।।।।
মুরগীর রানের কাবাব গুলো খাচ্ছিলাম। এদের খাবার কি শুধু প্রোটিনই নাকি অন্য কিছু ও আছে। যাক সেটা আস্তে আস্তে দেখা যাবে। এখন যদি তেমন কিছু জিজ্ঞেস করি তাহলে আমাকে ভিন গ্রহের প্রানী ভাববে। অবশ্য গ্রহের কথা তাদের মাথাতে ঢুকবে না। কারন এখনো সেটা নিয়ে আবিষ্কার হয় নি কিছু। তাই এদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে আমার। আমি সেই ভাবে খাচ্ছিলাম।
.
--মহারাজ।(মন্ত্রী)
.
--জ্বী মন্ত্রী?(আমি)
.
--কালকে আপনার বাবা মানে আমাদের পুরান মহারাজের প্রিয় মিত্র আসছে।(মন্ত্রী)
.
--তিনি কেনো আসছেন?(আমি)
.
--আপনি আসছেন সেই খবর পাইরা(কবুতর) দিয়ে তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আজকেই রওনা দিচ্ছেন। ওনার লোকজন নিয়ে আসতে কালকে দুই প্রহর হয়ে যাবে।(মন্ত্রী)
.
--ওকে ঠিক আছে।(আমি)
।।।।।
।।।।।
আমাকে আর বিরক্ত করলো না মন্ত্রী। আর আমি তো খেয়েই চলেছি। অবশ্য মুরগীর সবগুলে কাবাব শেষ করে ফেলছি। হাতির টা সুস্বাদু ছিলো কিন্তু অনেক শক্ত। ছিড়তে গেলে সেগুলে দাতে লেগে যায়। তাই আমি মুরগীরটা দিয়েই পেট ভরলাম। তারপর সেগুলো নিয়ে গেলো পাশে থাকা দুটো লোক। সব শেষে এখ ঘুম দিতে হবে। সব স্বপ্নই পূরন হচ্ছে। কিন্তু নিজের জীবনটাই ঠিক হচ্ছে না। কবে যে সুখে থাকতে পারবো। এসব ঝামেলা আর ভালো লাগে না।। দেখা যাক কালকে কি হয়। নতুন কোনো চমক কি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। করতেও পারে।
।।।।
।।।
।।
।
(চলবে)
।
।।
।।।
।।।।