পার্ট:10
লেখক:Hridoy Bappy।
।।।।।।।
।।।।।।।
কয়েকদিন যাবৎ ভাবতে ভাবতে আমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেছে।কেনো যে এই কেসটা হাতে নিলাম।কালকেই আমার কি হয়েছিলো সেটা বুঝতে পারবো।ডাক্তার আনোয়ারই সব জানে।ফাইল এ আমার সব চিকিৎসার কথা লেখা আছে।মানে আমার প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে।কেনো করা হয়েছে সেটাই আমাকে জানতে হবে।তাই সকাল সকালই চলে আসলাম।নিলয়কে আনলাম না সাথে করে।এই রহস্যটা আমাকে একাই জানতে হবে।নিজের টা নিজেরই জানা ভালো।এখন মাথায় আর হৃদয় এর চিন্তা নায়।এখন শুধু মাথায় আমার চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে।হাসপাতালে চলে এলাম।কাউন্টার থেকে ডাক্তার আনোয়ার এর রুমটা জেনে নিয়ে চলে আসলাম ডাক্তার আনোয়ার এর রুমে।আমাকে ডাক্তার আনোয়ার দেখে অনেকটা অবাকই হলো।মনে হলো চিনতে পারছে।আমি আমার পরিচয় দিলাম যে আমি পুলিশ।
.
:-তা এতদিন পর হঠাৎ আমার কাছে কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি আপনার।(আনোয়ার)
.
:-হ্যা অনেক বড় সমস্যা হয়েছে।এইযে ফাইলটা একটু ভালো করে দেখে মনে করেন তো আমার কি হয়েছিলো।সব সত্যি বলবেন।কারণ মিথ্যা আমার একটু ও পছন্দ না।(আমি)
.
:-সেদিনকার ঘঠনাটা আমার এখনও মনে আছে।এজন্যই তো তোমাকে দেখার সাথে সাথেই আমি তোমাকে চিনে ফেললাম।(আনোয়ার)
.
:-তাহলে সব আমাকে খুলে বলেন এখন।(আমি)
.
:-যেদিন তুমি পাশের পাহাড় থেকে পরে যাও।সাথে সাথে তোমার বাবা তোমাকে এখানে নিয়ে আসে।তোমার ভাই এখানেই ছিলো আগে থেকেই ভর্তি।(আনোয়ার)
.
:-মানে আমার ভাই এলো কোথা থেকে আমার তো কোনো ভাই ছিলো না।(আমি)
.
:-আগে শুনো তো আমার কথা।
.
:-হুমমমম বলেন।
.
:-তোমাকে এখানে আনার পর তোমার ভাই মারা যাই।মারামারি করে এসেছিলো সে।মাথায় প্রছন্ড আঘাত পাওয়াই আমাদের ডাক্তাররা তাকে বাচাতে পারে নাই।কিন্তু এতো উচু পাহাড় থেকে পরে যাওয়ার পর ও তুমি বেচে ছিলে।এটা সত্যি একটা মিরাকেল ছিলো।(আনোয়ার)
.
:-আমার প্লাস্টিক সার্জারি কেনো হলো।(আমি)
.
:-তুমি বেচে তো ছিলে কিন্তু তোমার চেহারা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।যার জন্য তোমার মা আমাদের বললো যে আমার দুই ছেলে যমজ ছিলো।এজন্য ওর চেহারা তাই বসিয়ে দিন।(আনোয়ার)
.
:-তারপর কি হলো।(আমি)
.
:-আমরা আমাদের কাজ করে দিলাম।তোমার ভাইয়ার চেহারা দিয়ে দিলাম তোমাকে।এই কথা সবাইকে বলতে মানা করেছিলো আমাকে তোমার বাবা।তারপর ও তুমি যখন জানতে চাইলা বলে দিলাম তোমাকে।(আনোয়ার)
.
:-আরো কি কিছু জানেন।(আমি)
.
:-হ্যা আমার ট্রিটমেন্ট এর পর শুনতে পেলাম তোমার যখন জ্ঞান ফিরলো।তোমার মেমোরি লস হয়ে গেছে।(আনোয়ার)
.
:-আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ কথা গুলো আমাকে বলার জন্য।তাহলে আমি এখন আসি।(আমি)
।।।।।।।
ডাক্তার আনোয়ার এর কথা শুনে আমার মাথা ঘুরা শুরু করে দিলো।কিছুই ভেবে পাচ্ছি না আমি।আমার কাছে কি তাহলে সবাই মিথ্যা বলেছে।না মিথ্যা হবে কেনো।আচ্ছা আমার বন্ধুদের ফোন করলেই তো হয়।তাই রানাকে ফোন দিলাম।
.
:-হ্যালো রানা কেমন আছিস।(আমি)
.
:-ভালো।।।তুই তো চাকরি পেয়ে ভুলেই গেছিস।কোনো খোজ খবর। একটা ফোন ও দেস না।(রানা)
.
:-আরে একটা কেস নিয়ে অনেক বিজি রে।আচ্ছা রানা আমি চার বছর আগে যে হাসপাতালে ছিলাম।কেনো কি হয়েছিলো আমার।(আমি)
.
:-আরে আমি আর তুই ঔ রাসেলকে মারতে গিয়েছিলাম।কিন্তু রাসেল ওর বড় ভাইদের এনে আমাদেরই মারতে শুরু করলো।আমি তো তাও পালিয়ে এসেছিলাম।কিন্তু তুই আসতে পারোস নাই।পরে আমি লোক নিয়ে যেয়ে দেখি তোকে ফেলে রাখছে মাইর দিয়ে।তখনই হাসপাতালে নিয়ে যাই তোকে।(রানা)
.
:-কখনও শুনেছিস আমার কোনো যমজ ভাই ছিলো।(আমি)
.
:-আরে না।এইসব পাগল পাগলেরর মতো কথা বলতোছোস কেনো।(রানা)
.
:-না এমনি আচ্ছা রাখি আমার কাজ আছে।ভালো থাকিস।(আমি)
।।।।।।।
তাহলে সবাই আমাকে মিথ্যা বললো কেনো যে বাসায় পরে গিয়ে আমি হাসপাতালে ছিলাম আর আমার তো যমজ কোনো ভাই ও ছিলো না তাহলে কি আমি বাপ্পী না।বাপ্পী তো সেদিন মারা গিয়েছিলো।তারমানে কি আমি অন্য কেউ।না এটা সম্ভব কিভাবে।না মামনির সাথে কথা বলতে হবে।নিলয় বার বার ফোন দিচ্ছে ফোনটা বন্ধ করে বাসায় যেতে লাগলাম।জানতে হবে কেনো আমাকে মিথ্যা বলছে।
.
:-কিরে বাবা তুই আমাদের না বলেই চলে এসেছিস।(মামনি দরজা খুলে দিয়ে)
.
:-না এমনি আসলাম ভালো লাগতে ছিলো না তাই।(আমি)
.
:-তোর মন খারাপ কেনো।(মামনি)
.
:-কই নাতো আমি ভালো আছি আর তোমার সাথে কিছু কথা আছে।(আমি)
.
:-কি কথা বল।(মামনি)
.
:-আমি কে।কি আমার পরিচয়।(আমি)
.
:-মানে কি বলতেছিস।(মামনি অবাক হয়ে বললো)
.
:-এইযে দেখো বাপ্পীর ডেড সার্টিফিকেট।সে চার বছর আগেই মারা গিয়েছে।যদি বাপ্পী মারা যাই তাহলে আমি কে।(আমি)
.
:-আরে বাবা তুই তো বাপ্পী ঔ সার্টিফিকেট মনে হয় মিথ্যা।(মামনি)
.
:-দেখো মিথ্যা বলবা না হাসপাতালে আমাকে তোমার যমজ ছেলে হিসাবে পরিচয় দিয়েছো।যেখানে তোমার কোনো যমজ ছেলে ছিলো না।আর আমার চেহারাও বাপ্পীর মতো ছিলো না।কে আমি সত্যি করে বলেন।(আমি)
.
:-তুই বাদ দে তো তুই আমার ছেলে আর আমিই তোর মামনি।(মামনি)
.
:-না আপনি আমার পরিচয় দিবেন নাহলে আমি এখান থেকে চলে যাবো আর কখনো আসবো না।আমার মাথায় হাত রেখে বলবেন সব সত্য।(আমি)
।।।।।।।
মামনি এবার কান্না শুরু করে দিলো।
.
:-হ্যা এটা সত্য যে আমি তোর মামনি নয়।সেদিন তোর বাবা তোকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।তোর অবস্হা খুবই সিরিয়াস ছিলো।তোর চেহারাও বুঝা যাচ্ছিলো না।আমরা যদি সেদিন তোর বাবা মার পরিচয় না দিতাম তাহলে তুই বাচতি না।তোকে আনার পরই আমি খবর পাই আমার ছেলেটা মারা যাই।অনেক কষ্ট হয়েছিলো।এই খবরটা শুধু আমি আর তোর বাবাই জানতাম।আমরা চাই নাই তোর বোন ও জানুক তার ভাই মারা গেছে।কিন্তু কিছুই করার ছিলো না আমাদের।তোকে ও আমাদের ছেলের পরিচয় দিয়েছিলাম।তোর বাবা তোকে বাচানোর জন্য সব করতে রাজি ছিলো।আমরা ভেবেছিলাম নিজের ছেলেকে বাচাতে পারি নাই তাতে কি তোকে আমরা ঠিকই বাচাবো।সব ট্রিটমেন্ট এর পর তুই সুস্হ হয়ে গেলি কিন্তু তোর চেহারা একদমই বুঝা যাচ্ছিলো না।ডাক্তাররা তোকে প্লাস্টিক সার্জারি করানোর কথা বলতে ছিলো।তোর আসল চেহারা জানতাম না।তাই আমাদের ছেলের চেহারাটাই দিয়ে করানো হয়েছিলো।আর যখন শুনলাম তোর কিছুই মনে নাই।তখন ভেবেছিলাম আল্লাহ আমাদের ছেলেটাকে নিয়ে আরেকটা দিয়ে দিয়েছে।কেউ যাতে ব্যাপার টা জানতে না পারে সেজন্য তোর বাবাকে ও বলে দিয়েছিলাম তোর বাবাই সব ব্যবস্হা করেছে যাতে কেউ জানতে না পারে।তোকে আমার ছেলের পরিচয় দিয়েই রেখেছি।(মামনি কান্না করতে করতে বলতে লাগলো।)
.
:-বাবা আমাকে ভুল বুঝিস না তুই।তুই আমার ছেলে।তোর আগের কি পরিচয় না কি সেটা আমি জানতে চাই না।তুই শুধু আমার ছেলে আমি তোর মামনি।(মামনি)
.
:-তারমানে তুমি আমার মামনি নও।আমি অন্যকারো ছেলে।আমার অন্য পরিবার আছে।এটা আমার পরিবার নই।(আমি)
.
:-এমন বলিস না এটাই তোর পরিবার,এটাই তোর পরিচয় এখন।(মামনি)
.
:-না সব মিথ্যা।আপনার ছেলে মারা গিয়েছে।আপনার জন্য অন্য কারো ছেলেও মরে গিয়েছে তাদের কাছে।(আমি)
.
:-আমরা না থাকলে তো তুই মরে যেতি।আমরাই তো বাচিয়েছি তোকে।(মামনি)
.
:-বাচিয়েছেন তাই বলে তো এমন না যে আমাকে জোর করে রেখে দিবেন আপনারা।আমার ও তো পরিবার আছে তাদের কাছেই আমার যেতে হবে।আপনি যে উপকার করেছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ থাকবো আর আমার জীবন দিয়ে হলেও আপনাদের সাহায্য করবো।কিন্তু আমার তো আসল পরিবার আছে তাদের কাছেই তো আমাকে যেতে হবে।(আমি)
.
:-তোর মামনি আমি।তুই কি পারবি আমাকে রেখে অন্য কারো কাছে থাকতে।(মামনি)
.
:-সেটা তো আপনি পরিচয় দিয়েছেন।কিন্তু আমার আসল মামনি তো আপনি না।(আমি)
.
:-বাবা তুই আমাদের ছেড়ে যাস না।আমি মা হয়ে তোর পায়ে পরছি।(মামনি)
............
আমার মাথা এখন একটু ও কাজ করছে না।কি হয়ে গেলো।এই রহস্য না জানলে ও ভালো হতো।কিন্তু জেনে যখন ফেলেছি তখন তো আমাকে সবই জানতে হবে।।।
.
:-তোমার জন্য আমি নতুন করে জীবন পেয়েছি।তোমাদের এই ঋৃণ আমি শোধ করতে পারবো না কোনোদিন।তুমি সব সময় আমার কাছে আমার মামনি থাকবা।তোমরা সবাই আমার পরিবার।কিন্তু আমার তো আরো একটা পরিবার আছে তাই না।তাদের কাছে ও তো আমাকে যেতে হবে।(আমি)
.
:-মামনি শুধু কান্না করতেছে।
.
:-আচ্ছা কান্না কইরো না তোমার ছেলে আছি।আর তোমার ছেলেই থাকবো।কিন্তু আমার শর্ত আছে।(আমি)
.
:-কি শর্ত বল বাবা।(মামনি)
.
:-তোমাকে ছেলে ভাগ দিতে হবে।(আমি)
.
:-মানে।(মামনি)
.
:-মানে আমার আসল বাবা মা আর আমরা সবাই একসাথে থাকবো রাজি থাকলে বলো।(আমি)
.
:-আমি রাজি তুই আমাকে মামনি বলে থাকলেই হবে।(মামনি)
.
:-ঠিক আছে তাহলে আমাকে এখন ফিরতে হবে।(আমি)
.
:-কেনো এখনই এলি আর এখনই চলে যাবি।(মামনি)
.
:-হ্যা আমাকে একটা কেস সলভ করলে হবে।আর আমার বাবা মা কে ও খুজতে হবে।(আমি)
.
:-আমার কাছে কিছু একটা আছে যেটা দিয়ে তোর সুবিধা হবে মনে হয়।(মামনি)
.
:-কি (আমি)
।।।।।।
মামনি গেলো ভিতরে।হাতে একটা মোবাইল ফোন আর মানিব্যাগ নিয়ে আসলো।
.
:-এটাই তোর সাথে পেয়েছিলাম।আর কিছুই পাই নাই।
.
:-ধন্যবাদ মামনি।(আমি)
.
:-কিছু তো খেয়ে যা অন্তত।(মামনি)
.
:-আচ্ছা।
।।।।।।
কিছু খেয়ে হোটেলে আসার জন্য গাড়িতে উঠলাম।খুব খারাপ লাগতেছে।আবার ভালো ও লাগতেছে এত দিন পর আমার পরিবারের সাথে দেখা হবে আমার।।।।।
মাথা একদমই কাজ করা বন্ধ করে দিলো।চলে এলাম হোটেলে।নিলয় ও কোথা থেকে যেনো আসলো।
.
:-কিরে কোথায় গিয়েছিলি।(আমি)
.
:-আগে বল তুই কোথায় ছিলি।তোকে সব জায়গা দিয়ে খুজে এলাম।কোথাও পেলাম না।(নিলয়)
.
:-একটু বাসায় গিয়েছিলাম রে।(আমি)
.
:-ওওওও কিছু পেলি নাকি।(নিলয়)
.
:-হুমমমম অনেক বড় কিছু পেয়েছি যেটা শুনলে হয়তো তুই বিশ্বাস করবি না।(আমি)
.
:-কি এমন পেলি।(নিলয়)
।।।।।।
নিলয়কে আমার ব্যাপারে সব কিছু বল্লাম।
.
:-omg তোর ভিতরেই তো এতো রহস্য আর তুই রহস্য খুজতেছিস।(নিলয়)
.
:-হুমমমম।(আমি)
.
:-মানে তুই পাহাড় থেকে পরে গেছিস।(নিলয়)
.
:-হুমমমম।তাও বেচে গেছি।(আমি)
.
:-আরে তোর মাথা কাছ করতেছে না।(নিলয়)
.
:-মানে।(আমি)
.
:-আরে হৃদয় ও তো পাহাড় থেকে পরে নাই হয়ে গেছে তার মানে তুই ই।(নিলয়)
.
:-দারা আমার কাছে ২ টা জিনিস আছে।(আমি)
.
:-এই মোবাইল কার।(নিলয়)
.
:-আমি পরে যাওয়ার সময় আমার কাছে ছিলো।(আমি)
.
:-কি বলিস মোবাইল এর অবস্হা তো খারাপ।(নিলয়)
.
:-উপর থেকে পরছে তো।(আমি)
.
:-হুমমমম।(নিলয়)
.
:-আর এই মানিব্যাগ ও ছিলো।এই দুইটা চেক করলেই বুঝতে পারবো আমি কি ও নাকি।(আমি)
.
:-আমাদের কেসটা তো তাহলে সলভ হয়ে যাচ্ছে।(নিলয়)
.
:-হুমমমম কিন্তু এখন কেসটা পারশোনাল হয়ে গেছে।(আমি)
.
:-সিওর তো এখন তারপর ও দেখার কিছু নাই।(নিলয়)
.
:-আরে না তাও দেখতে হবে।সব চেক কর।মোবাইল টা ও রিপেয়ার এ দে।আর চল আজকেই ঢাকায় ফিরে যাবো।(আমি)
.
:-ওকে চল।(নিলয়)
.
:-আর এই খবর টা কাউকে বলিস না হৃদয়কে পাওয়া গেছে।আমি চাই এটা গোপন থাক।(আমি)
.
:-হুমমম জানালে দোষীরা সাবধান হয়ে যাবে।(নিলয়)
.
:-হুমমমম সময় হলে আমি বলে দিবো সবাইকে।(আমি)
.
:-হুমমমমম।
।।।।।।।
তারপর ঢাকায় চলে আসলাম আসতে আসতে রাত হয়ে গেলো।এখন একটু সিওর হলাম হৃদয় টার কি হয়েছে।সত্যিই তো রহস্যময় ছিলো।এখন শুধু অপরাধীটা কে সেটা বের করলেই হবে।মেঘলা নাকি নিধি,নাকি এর মধ্যে অন্য কেউ আছে।সেটা আসতে আসতে বের হয়ে যাবে।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(চলবে)
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
Wait for the next part......