#জলপরীর_প্রেমে#
#সিজন_2#
পার্টঃ১৫
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।।
।।।।।
।।।।।
আমি কাছ থেকে লোকটাকে দেখলাম। এতো সুন্দর কোনো মানুষ আমি আগে কখনো দেখি নি। যৌবন অবস্থায় কত মেয়েকে মোহে ফেলেছে লোকটা সেটা বলা কষ্ট। আমার তাকিয়ে থাকা দেখে লোকটা বললো,
.
--আপনি এখানে আসলেন কিভাবে?(লোকটা)
.
--যেভাবে আপনি আসছেন সেভাবেই আমি আসছি এখানে।(আমি)
.
--কিন্তু ঔ জাদুর দেওয়াল পার করে আসা তো কোনো জলমানব বা মানুষের জন্য অসম্ভব।(লোকটা)
.
--আমি মানন ও নয় আবার জলমানবও নই। আমি দুটোর মাঝামাঝি তাই হয়তো আমি এখানে আসতে পারছি।(আমি)
.
--তবে কি আপনিই সেই।(লোকটা)
.
--আমি কে? আর আপনার পরিচয়টা কি? (আমি)
.
--আমি হলাম জাদুকর হিগমার বড় ভাই সিগমা। আমিও একজন জাদুকর। আর পাশাপাশি আমি এই অলৌকিক জাদুর দুনিয়ার সংরক্ষক।(লোকটা)
.
--ও।(আমি)
.
--আমার ধারনা যদি ভুল না হয় আপনার জন্যই আমার এতো বছরের অপেক্ষা।(লোকটা)
.
--মানে বুঝলাম না।(আমি)
.
--এই জায়গাটা প্রথমে ছিলো মাটির উপরে। হিগমা আর আমি দুজনেই এই জায়গাটা খুজে বের করি। ইতিহাসে ছিলো যে এই অলৌকিক জায়গাটা থেকেই জাদুর ক্ষমতাধারী হওয়া যায়। আমি এই সাদা গাছের আপেলটা খেয়েছিলাম। আর হিগমা সেই লাল গাছের আপেলটা খায়। দুজনেই শক্তির অধিকারী হয়ে যায়। নতুন জাদুর শক্তি। প্রথম কয়েক বছর দুজনে জাদু দিয়ে সবার অনেক সাহায্য করেছিলাম। আমি প্রায় প্রায় স্বপ্ন দেখতাম কেউ একজন আমাকে সেই জায়গাটার সুরক্ষা করতে বলতো।(লোকটা)
.
--তাহলে আপনি গার্ডিয়ান টাইপের লোক ছিলেন।(আমি)
.
--হুমমম বলা যায় সেরকমই। কিন্তু হঠাৎ করে হিগমার মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। ও কেমন জেনো হয়ে যায়। ওর শক্তি এমনিতেও অনেক ছিলো। তারপরও ওর মাঝে লোভ চলে আসে কিভাবে আরো শক্তির অধিকারী হবে ও। আমার অগোচোরেই একদিন ও লাল গাছের অনেকটা আপেল ছিড়ে গাছটাকে কেটে ফেলতে গিয়েছিলো। আমি বিষয়টা কিভাবে জেনে বুঝতে পেরে চলে গেলাম সেখানে। ওকে মানা করার ফলে ও রেগে আমার উপরেই আক্রমণ শুরু করলো। আমি এমনিতেই জাদুর বিষয়ে অনেক অজ্ঞ ছিলাম। ও জাদু দিয়ে আমাকে ২৫ বছরের যুবক থেকে ৯০ বছরের এই বুড়ো বানিয়ে দিলো। তখন কি হলো জানি না। আমি আমার চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিলাম। আর চোখ খুলে দেখি আমি এই জায়গায় চলে আসছি। তারপর থেকে আমি এখানেই আছি।(লোকটা)
.
--কিন্তু আপনি যে বললেন আমার জন্যই এখানে আপনি অপেক্ষা করছেন এটা বুঝলাম না।(আমি)
.
--আমার শক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে বয়স বাড়ার সাথে সাথে। আর আমার সব শক্তি চলে যাচ্ছে এই লাল আপেল গাছটাই। এভাবে এমন চলতে থাকলে সাদা গাছটা মারা যাবে আমার সাথে সাথে। তখন পুরো দুনিয়ায় শক্তিশালী মানুষ হবে হিগমা। আর আমি প্রতিদিনই স্বপ্নে দেখি কেউ একজন আসবে আমার কাছে। আসার পর হিগমার জাদু থেকে আমাকে মুক্ত করবে।(সিগমা)
.
--ওওওওও। কিন্তু আমি আপনাকে মুক্ত করবো কিভাবে সেটা তো আমি জানি না।।।। আর আপনি অক্টোপাস হয়ে ঔভাবে আক্রমন করলেন কেনো?(আমি)
.
--আমি যে কোনো প্রানীর রূপ নিতে পারি। কিন্তু সমস্যা হলো আমি কোনো প্রানীর রূপ নিলে অর্ধেক প্রহরের মধ্যে আবার মানুষ না হলে ঔ প্রানীর মতোই আচরন করতে শুরু করি। তখন আর আমার নিজের কোনো বোধ থাকে না। তেমনই কিছুদিন যাবৎ কয়েকটা জলমানব খুব জালাচ্ছিলো আমাকে। তারা এখানে আসার অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের ভয় দেখানোর জন্য আমি বিশাল দেহী দানব টা হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হলো আমি প্রতিদিনই ঘুমিয়ে যায়। যার জন্য পরে ভাঙাচোরা শুরু করে দি।(সিগমা)
.
--অনেক কষ্টের বিষয়। কিন্তু আমি আপনাকে মুক্ত করবো কিভাবে?(আমি)
.
--সেটা তো আমি নিজেও জানি না। হিগমা এসব কিছুর জ্ঞান রাখে। আমি এসব নিয়ে প্রথমে বেশী মাথা ঘামায় নি।(সিগমা)
.
--ওওওও।(আমি)
।।।।
।।।।
লোকটা বেদনায় কুকরাচ্ছে। পায়ে একটা তীর লেগেছে। আমি সেটা বের করে দিলাম। তীরটা হয়তো পাশের রাজ্যের সৈন্যরাই মেরেছে। লোকটার রক্তে মিষ্টি জাতীয় একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমে ভাবছিলাম একটু খেয়ে দেখবো। পরে দেখলাম বাজে একটা বুদ্ধি হবে সেটা। আমি চুপচাপ উপরের দিকে তাকালাম। তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলাম না। সাদা গাছের একটা আপেলও নাই। মনে হয় এই বুইড়া খেয়ে শেষ করেছে। লাল গাছে এখনো অনেক গুলো আপেল। আমি তো মনে হয় এই লাল গাছের আপেলই খেয়েছিলাম। তবে আমি কেনো জাদু পারছি না।
।
দেখি একটু চেষ্টা করে কিছু হয় নাকি।
.
--ফুতুরে মুতুরে কুতুরে। তুই হয়ে যা ভূতুরে।(মন্ত্র পরলাম কিন্তু কিছুই হলো না)
.
--কি করছেন?(সিগমা)
.
--দেখলাম জাদু কি আমি ও পারি কিনা। একটা মন্ত্র পড়ে চেষ্টা করলাম।(আমি)
.
--আপনি জাদু কে যতদিন মজা বলে স্বিকার করবেন ততদিন জাদুকর হতে পারবেন না।(সিগমা)
।।।।।
।।।।।
সিরিয়াস হতে হবে তাহলে আমাকে। আমি গম্ভীরমুখে দাড়িয়ে পরলাম। কি করবো ভাবছিলাম। একটা জিনিস লক্ষ করলাম। সিগমার সব রক্ত আস্তে আস্তে লাল গাছটার দিকে যাচ্ছে। প্রথমে মাঝখানে থাকা ক্রিসটলে যাচ্ছে তারপর সেখানে থেকে লাল আপেল গাছটাই। গাছটা দূর থেকে বটগাছের মতো লেগেছিলো৷ কিন্তু বটগাছে যে আপেল ধরবে সেটা জানতো কে?
।
আমি খুব ভালো করে লক্ষ করলাম ক্রিসটলের গায়ে কিছু একটা লেখা আছে।
"" যদি তোমার চাওয়া নেক হয় তাহলেই আমাকে পাবে। যদি তোমার চাওয়া পাক হয় তাহলেই আমাকে পাবে।""
।
লেখাটা দিয়ে যে কি বোঝাতে চাচ্ছে বুঝলাম না। আমার চাওয়াটা কি পাক না আমার চাওয়াটা কি নেক না। আমি পুরো পৃথিবীকে বাচাতে চাই এলিয়েনের হাত থেকে। আমি কিছু না ভেবেই হাত দিয়ে দিলাম। বিদ্যুৎ এর শকের মতো লাগলো আমার পুরো শরীর। এমন মনে হলো আমি ১১ হাজার ভোল্টের কোনো বিদ্যুতিক তার ধরে আছি। মনে হচ্ছিলো আমার পুরো শরীরে বিদ্যুৎ খেলা করছে। আমি নরতেই পারছিলাম না। জোরে জোরে চিল্লাচ্ছিলাম।
.
--ঔ বুইড়া বাশ দিয়ে আমাকে বারি দে। ঔ বুইড়া আমাকে এখান থেকে ছাড়া তারাতারি।(আমি)
.।।।।
।।।।।
বুইড়া ভয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। আমি চমকিয়ে উঠলাম। মনে হচ্ছিলো কিছু একটা আমার শরীরে ঢুকছে। শীতল কিছু একটা আমার শরীরে খেলা করছে। আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম ক্রিসটলের দিকে।ক্রিসটল আস্তে আস্তে আরো উজ্জল হয়ে গেলো। ভিতরে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। আস্তে আস্তে ক্রিসটলটা গলতে শুরু করলো। গলতে গলতে অর্ধেক গলে গেলো। আমার ডান হাতটা এখনো ঔখানে দেওয়া। বিদ্যুতের শক এখনো লেগে আছে আমার শরীরে। আমার চোখ অবাক হয়ে গেলো। কারন ক্রিসটলের মধ্যেই আমার ট্রিসুলটাকে আমি দেখতে পারলাম। অনেকটা গর্ত করে রাখা হয়েছে ট্রিশুলটাকে। সেই সাথে একটা তলোয়ারও আমি দেখতে পারলাম। তলোয়ারটার হাতল লাল হয়ে গেছে। মানে তলোয়ারের হাতল গরম হয়েছে। আর সেই গরমে ক্রিসটলটা গলে গেছে। আমার হাত সোজা গিয়ে পরলো তলোয়ারের হাতলে। আমি ট্রিশুলটা ধরতে চাইছিলাম। কিন্তু ধরলাম তলোয়ারটা। থাক এখন নাহয় তলোয়ার নিয়েই যুদ্ধ করলাম। তলোয়ারকে উপরের দিকে টান দেওয়ার সাথে সাথেই এটা বের হয়ে আসলো। তলোয়ারের ব্লেড ও আস্তে আস্তে লাল হয়ে গেলো। মনে হচ্ছিলো জলন্ত লাভা। কিন্তু আমার হাতে এর গরম লাগছে না।
।
আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম তলোয়ারের দিকে। অন্যদিকে আমার কোনো চোখ নাই। হঠাৎ আমার কাধে কারো হাত পরলো। আমি সাথে সাথে হাত ধরে ফেললাম।
.
--আমি সিগমা।(সিগমা)
.
--ও।(আমি)
।।।
।।।
আমি বুইড়ার দিকে তাকিয়ে খুব অবাক হলাম। কারন বুইড়া আর এখন বুইড়া নাই। মুখে আগের মতো বড় দাড়ি নাই। তবে যেটুকু আছে সাদা হয়ে আছে। বুইড়া আবার যুবক হয়ে আছে। বয়স মনে হয় ৩৫ হবে। আমার হাতের জ্বলন্ত তলোয়ারটা এখন ঠান্ডা হয়ে গেছে। আমি তো বিশাল অপেক্ষায় আছি এই তলোয়ারের কি ক্ষমতা সেটা দেখার জন্য।
.
--আপনাকে বিশাল দন্যবাদ।(সিগমা)
.
--শুধু কি ধন্যবাদ দিলে হবে।(আমি)
.
--তাহলে?(সিগমা)
.
--আমার সাথে যেতে হবে আপনাকে। আমার প্রাসাদে থাকবেন। আমার মিত্র হবেন।(আমি)
.
--আপনার প্রাসাদ?(সিগমা)
.
--হ্যা আমিই রাজা হারকিউমাস।(আমি)
.
--ঠিক আছে মহারাজ।(সিগমা)
।।।।
।।।।
আমি গাছ দুটোর দিকে তাকালাম। দুটোর আলোই এখন হারিয়ে গেছে। জায়গাটা এখন ক্রিসটলের হাল্কা আলোই আলোকিত। এই আলোটা হয়তো পাচ্ছে ট্রিশুলের শক্তি থেকে। দুটো অস্ত্র ছিলো এখানে সেটা হয়তো সিগমা আর হিগমা জানতোই না আগে। আমরা দুজন পানির কাছে চলে আসলাম। সিগমা বিশাল একটা হাঙর হয়ে গেলো।
.
--চলুন মহারাজ দেখা যাক কে আগে পৌছায়?(সিগমা)
.
--ঠিক আছে।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি তলোয়ারটা হাতে নিয়ে সিগমার সাথে পাল্লা দিলাম।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ১৬ তম পার্টের জন্য।