#জলপরীর_প্রেমে#
#সিজন_2#
পার্টঃ১৬
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।।।
।।।।।।
।।।।।।
পৌছে গেলাম আমি আবার সমুদ্রের তীরে। আমার মনে একটা সন্দেহ জাগতেছে। সেটা হলো। ঔখানে দুই ধরনের গাছ ছিলো। তাদের শক্তি ও দুই ধরনের হবে। বইয়ে তো আমি কালো এবং সাদা দুই ধরনের জাদুর কথা উল্লেখ করেছি কিন্তু আমি তো লাল এবং সাদা জাদুই শুধু দেখতে পেলাম। আচ্ছা ক্রিসটলে হাত দেওয়ার পরে কি আমার ভিতরে শক্তি চলে আসছে। আমি তো কোনো শক্তিই অনুভব করতে পারতেছি না। আমি আর সিগমা দুজনেই দারালাম। আমি হাত দিতে ইলেকট্রিক বল বের করতে চাইছিলাম। অনেক ছবিতে দেখেছি জাদুকররা এই কাজ করে। তাদের থেকে অনুপ্রেণিত হয়ে আমিও চেষ্টা চালালাম একটা ইলেকট্রিক বল বানানোর। সামনের দিকে হাত বারাচ্ছি আর পিছনে নিচ্ছি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। উল্টো আমার হাত ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। শালা এই জাদু শেখাও তো বিশাল কষ্টের কাজ মনে হয়। নাকি আমার ভিতরে এসব শক্তি নাই। সিগমা আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।
.
--কি হলো আপনি হাসছেন কেনো?(আমি)
.
--আপনার এই আশ্চর্যজনক নৃত্য দেখে হাসি পাচ্ছিলো।(সিগমা)
.
--কি?(আমি)
।।।
।।।
শালা আমি জাদুকর হওয়ার চেষ্টার করছিলাম আর তোর সেটা নৃত্য মনে হলো। কি করবো নিজের এবিলিটি ছেড়ে আমি তলোয়ারটা দেখতে লাগলাম।
.
--মহারাজ এটাই সেই মূল্যবান তলোয়ার যার নাম হিজান।(সিগমা)
.
--আপনি এটার ব্যাপারে জানতেন?(আমি)
.
--হ্যা মহারাজ আমিই ছিলাম এটার রক্ষক। আমি যখন সাদা গাছ থেকে আপেলটা খেলাম সেদিন রাতেই আমাকে স্বপ্নে এক লোক এসে বলেছিলো কথাটা। এটাও বলেছিলো কোনো সাধারন মানুষের পক্ষে এই তলোয়ারটা বের করা অসম্ভব। ট্রিশুলটা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিই বের করতে পারবে। কিন্তু তলোয়ারটা শুধু একজনই বের করতে পারবে যে এই পুরো দুনিয়া রাজা হবে।(সিগমা)
.
--পুরো দুনিয়া?(আমি)
.
--হ্যা মহারাজ।(সিগমা)
।।।।
।।।।
আমি সিগমার কথা বাদ দিলাম। পুরো দুনিয়ার রাজা তো আমি ছিলামই। এখন তো আর সেই কালে আমি নাই। এই কালে কি হয় নাহয় সেটা আস্তে আস্তে দেখা যাবে। আমি তলোয়ারটা হাতে নিলাম দেখতে হবে তো কতো পাওয়ার এটার। আমি হাটতে হাটতে পাশের বনে চলে আসলাম। রাত তো মনে হয় দুইটার বেশী বাজে এখন। কিংবা তারো বেশী হতে পারে। দেখা গেলো একটু পরেই সূর্য উঠে যাবে। আমার চোখে উত্তেজনায় কোনো ঘুম নাই আজকে।
.
--তো জাদুকর সাহেব কি করতে পারেন একটু দেখি।(আমি)
.
--দেখবেন।(সিগমা)
।।।।
।।।।
জাদুকর তার জাদু দিয়ে একটা এনার্জি বল বানাইলো। এবং সেটা একটা গাছের উপরে ফেলে দিলো। সাথে সাথেই সেখানে ব্লাস্ট হয়ে গেলো। আর দুইটা গাছে একসাথে পরে গেলো। তার মানে জাদুকর রা ইলেকট্রিক বল বানাইতে পারে না। আমাকেও এনার্জি বল বানাতে হবে। কিন্তু পারবো না সেটা আমি জানি। আমাকে শিখতে হবে এসব। আমি একটা গাছের কাছে গেলাম। দেখি গাছটা কেটে। তলোয়ার দিয়ে দিলাম একটা কোপ। সাথে সাথেই মোটা গাছটা কেটে পরে গেলো নিচে। আমি তো হা করে রইলাম। খুশিতে তলোয়ার কে শক্তি করে ধরলাম দুই হাত দিয়ে। তলোয়ারটা যে লাল টকটকে হয়ে গেছে সেদিকে আমার খেয়াল ছিলো না। যেদিকে তলোয়ার চালিয়ে ছিলাম সেদিকে আবার জোরে একটা কোপ দিলাম।। পরের টুকে বেশী অবাক হলো। তলোয়ার থেকে লাল একটা কিছু বের হলো মনে হয়। অনেকটা ঝড়ের মতো হয়ে গেলো। সামনে ১ কি.মি হবে উধাও হয়ে গেলো মনে হলো। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। পুরো বনের ১২ টা বাজিয়ে দিয়েছি মনে হয়। অবশ্য এখন আরো ভালো করেছি এখানে নতুন রাজ্য গড়ে তোলা যাবে। আমি তলোয়ারের ক্ষমতা দেখে ফেলে দিলাম নিচে। তারপর পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলাম।
।
শালার এমন জিনিস যদি আমাকে কাছে থাকে তাহলে তো সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি আমি হবোই। কিন্তু সমস্যা হলো একটাই এটাকে আমার আয়ত্বে আনতে হবে। এটাকে আয়ত্বে না আনতে পারলে তো মাঝে মাঝে এমন অবস্থা ঘটাবে। আমি তলোয়ারটা হাতে নিলাম। শালার গরীব তলোয়ার৷ তলোয়ার তো ঠিকই পেয়েছি কিন্তু এটাকে ইউজ করা তো বেশ ভয়ানক বিষয়। আপাতোতো এটাকে আমার ইউজ করা যাবে না। আমাকে ট্রিশুলটা নিয়ে আসতে হবে। ঔটাতেই তো আমি দক্ষ। যখন এখান থেকে চলে যায় তখন তলোয়ারটা নিয়ে চলে যাবো। আচ্ছা তলোয়ারটা তো আমি পেয়ে গেছি। এখন তো আমি যেতে পারি তাই না।
।
কিন্তু আমি এখন চলে গেলে কি ঠিক হবে। এই রাজ্যে আমি রাজা এখন। এদের পুরো বিশ্বাস আমার উপরে। আমি তো এদেরকে রেখে চলে যেতে পারি না। তারপরে আবার তো হিগমা এদের উপরে আক্রমণ করতে পারে। যেহেতু তার পছন্দের কন্যাকে আমি বিয়ে করেছি। আর ইতিহাসে তো আছে। হারকিউমাস মানব,জলপুরী,আকাশপুরীর একক রাজা হবেন। পুরো দুনিয়া তার ভয়ে কাপপে। বেশ অনেক বছর উনি এখানে থাকবেন। তারপর হঠাৎ করেই তার স্থুলাভুক্ত রেখে তিনি হারিয়ে যাবেন অজানায়। কেউ সেটা জানে না। তারমানে বেশ কটি বছর আমাকে এখানে থাকতে হবে। কিন্তু আমার এখানে তো তেমন ভালো লাগে না। তেমন কোনো আধুনিক সুবিধা নাই এখানে। একটা টিভি থাকলেও তো অন্তত কোনো রকম দিন পার করতাম। কিন্তু উড়তে পারলেও তো ভ্রমন করে দিন পার করলাম। তাহলে কি করা যায়। আমি সিগমাকে বললাম।
.
--এটা ক্ষমতা যে এতো হবে সেটা কল্পনা করি নি। সাধারন একটা কোপেই এই অবস্থা।(আমি)
.
--মহারাজ এর ক্ষমতা এর থেকেও হাজার গুন বেশী। শুধু আপনাকে এর প্রশিক্ষন নিতে হবে কিছুদিন।(সিগমা)
.
--এজন্যই তো এখন এটার ব্যবহার করা যাবে না। এটাকে এটার সুরক্ষিত জায়গায় পৌছিয়ে দিতে হবে।(আমি)
.
--কিন্তু মহারাজ।(সিগমা)
.
--এটাকে রেখে আমাকে ট্রিশুলটা নিয়ে আসতে হবে। হয়তো ঔটার ক্ষমতা এটার থেকেও কম।(আমি জানি ওটার ক্ষমতা কম। সিওর হয়ে বল্লাম না কারন সিওর হয়ে বললে আবার ভাববে আমি এসব বিষয়ে আগে থেকেই জানি)
.
--তাহলে আবার যাবেন সেখানে?(সিগমা)
.
--হ্যা কিন্তু এবার কিন্তু আরে মজা করে যাবো।(আমি)
.
--কিভাবে?(সিগমা)
.
--আপনি হাঙর হয়ে আমাকে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর আমি আপনার থেকেও দ্রুত চলে যাবো সেখানে।(আমি)
.
--আচ্ছা ঠিক আছে।(সিগমা)
।।।।
।।।।
কথা অনুযায়ী চলে গেলাম আমি আর সিগমা আবার পাতালপুরীর সেই জায়গায়। দেখলাম এখানেই সুরক্ষিত একটা জায়গা যেখানে আমি তলোয়ারের ক্ষমতাকে কন্ট্রোল করতে শিখতে পারবো। আমি তলোয়ারটাকে গেড়ে দিলাম ক্রিসটালের ভিতরে। আর ট্রিশুলটাকে ধরে টান দিয়ে বের করলাম। সিগমাকে বললাম তলোয়ারটাকে বের করে দেখতে। কিন্তু তার বাহুর শক্তি+জাদুর শক্তি কোনো কিছু দিয়েই বের করতে পারলো না সে। ট্রিশুলটাকে হাতে নিয়ে আবার ভালোই লাগলো। প্রথমেই একটা এনার্জি বল বানালাম তারপর সেটাকে মারলাম পাশের ফাকা জায়গায়। সেটা সরাসরি গিয়ে পাথরের গায়ে লাগলো। উপরের পাথর কিছুই হলো না সেটা সেটার মতোই রইলো৷ কিন্তু পাশের পাথরের দেওয়াল সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে গেলো। আমি এবার বুঝতে পেরেছি কিভাবে এই পুরো পাতালপুরী বড় হয়েছে। ঠিক আছে কাজে পরে লেগে যাওয়া যাবে আমার এখন প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। ট্রিশুলের সম্পূর্ন ব্যবহার তো আমি নিজেই জানি। তাই আর উত্তেজিত হলাম না। সিগমাকে নিয়ে সরাসরি চলে আসলাম আমার রাজ্যের গেইটের পাশে। পাশ থেকে এই দেওয়ালকে চাইনার গ্রেট ওয়ালের মতো মনে হয়। যদিও ওটার মতো এত বিশাল না তাউ একই রকম মনে হয় আমার।
.
--মহারাজ এভাবে গুপ্ত ভাবে ঢুকলে তো আমাদের সমস্যা হবে।(সিগমা)
.
--হ্যা ঠিকই বলেছো এভাবে ঢুকলে গুপ্তচোর ভেবে তীর চালাবে।(আর আমি আমার সেই সুরক্ষার জামাও পরি নি আজকে)
.
--তাহলে কিভাবে যাবো আমরা।(সিগমা)
.
--উড়তে পারেন আপনি?(আমি)
.
--হ্যা চেষ্টা করতে পারি।(সিগমা)
.
--আমাকে নিয়ে উড়ে সোজা রাজপ্রাসাদে চলে যান।(আমি)
.
--আচ্ছা চেষ্টা করছি।(সিগমা)
।।।।।
।।।।।
সিগমা একটা গাছের গুড়ি নিলো। ও সেইটাই বসে পরলো। আমি বুঝতে পারছি কি করবে ও৷ নিজে হয়তো উড়ার চেষ্টা করে নি কখনো। তাই গাছের গুড়িকে উড়ানোর চেষ্টা করবে। আমি ওর পিছনে শক্ত করে ধরে বসলাম। গুড়িটা অনেক ছোট এবং অনেক পাতলা। দুজনের ভর নিতে পারবে কিনা সন্দেহ। আমি বসার পর ই সিগমা মন্ত্র পড়ে হাত দিয়ে গুড়িটাকে ধরলো। ওর হাত থেকে আলো গুড়িতে চলে গেলো। মনে হলো এই বস্তুটা তার জীবন ফিরে পেয়েছে। সাথে সাথেই বলতে শুরু করলো।
.
--মালিক আমি কিভাবে আপনার সাহায্য করতে পারি?(গুড়িটা বলে উঠলো)
.
--আমাকে এবং মহারাজকে প্রাসাদে নিয়ে যাও।(সিগমা)
.
--জো হুকুম মালিক।(বলেই গুড়িটা হাওয়ায় ভাসতে শুরু করলো।)
।।।।
।।।।।
প্রথমে ভালোই ভালোই উড়তে ছিলাম। পরে উড়োজাহাজটি হঠাৎ রোলারকোস্টার হয়ে গেলো। জীবন বাচিয়ে কোনো রকম প্রাসাদের ছাদে আমরা লেন্ড করলাম। নিজের জীবনকে এখন অনেক বড় মনে হতে লাগলো। তাই তো বলি মানুষ একবার রোলারকোস্টারে চরলে পরের বার চরতে চাই না কেনো। আমরা দুজনে ছাদ থেকে নামলাম। দুজনেই যাচ্ছিলাম একটা খালি শয়নকক্ষে। যাওয়ার সময় দেখলাম হৃনিতা দাড়িয়ে আছে ওর রুমের সামনে। আমাকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
.
--আপনি এতো রাতে ঘুরছেন বাইরে দিয়ে?(হৃনিতা আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে অবাক হলো)
.
--ঘুম আসছিলো না তাই আমার মিত্রকে নিয়ে একটু ঘুরছিলাম। আর আপনার বোন তো কেমন জানেনই। সে তার কাছে থাকতে দিবে না আমাকে। তাই ভাবলাম আজকে আমার মিত্র এর সাথে রাতটা কাটাই।(আমি)
.
--ওওওও।
।।।।
।।।।
দেখলাম হৃনিতা এক চোখে তাকিয়ে ছিলো সিগমার দিকে। আর সিগমাও মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে। কিন্তু আমাকে পাশে দেখে পুরো তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। আমি সিগমাকে নিয়ে সেখানে থেকে চলে আসলাম। এমনিতেও সিগমা অনেক সুন্দর একটা পুরুষ। যার বুড়ো চেহারা দেখেই আমার ভালো লেগেছিলো তাহলে যুবক চেহারা তো তার থেকেও অনেক সুন্দর হবে। সেই চেহারাই তো আমার অবিবাহিত শালিকার ক্রাশ খাওয়ারই কথা। সে যাইহোক। আমি সিগমাকে নিয়ে হাটা শুরু করলাম।
.
--মহারাজ মাফ করবেন। উনি কি আপনার বোন মানে রাজকুমারী?(সিগমা)
.
--না।(আমি)
.
--তাহলে তো রানী হবেন উনি?(সিগমা)
.
--রানী হলে কি আপনার উপরে ঔভাবে তাকিয়ে থাকবে।(আমি হেসে বল্লাম)
.
--.......(ভয়ে মনে হয় চুপ হয়ে গেলো)
.
--সে আমার শালিকা। তার বড় বোন মানে রাজকুমারী হৃদিতাই হলো এই রাজ্যের রানী।(আমি)
.
--রাজকুমারী হৃদিতা?(সিগমা)
.
--অবাক হলেন মনে হয়।(আমি)
.
--না মহারাজ অনেক খুশি হয়েছি। যখন হিগমা জানতে পারবে ওর পছন্দের মেয়েকে আপনি বিয়ে করছেন তখন ওর দুঃখের কথা ভেবে আমার হাসি পাচ্ছে খুব।(সিগমা)
.
--আচ্ছা অনেক কিছু জানার আছে আপনার থেকে আমার। আগে চলুন ঘুমিয়ে নি। সকাল তো হয়েই যাচ্ছে।(আমি)
.
--হ্যা চলুন।(সিগমা)
।।।।
।।।।
দুজনে একটা রুমে এসে শুয়ে পরলাম। সিগমাকে দেখেই বোঝা যায় কত সুন্দর মনে মানুষ ও। ওকে অবিশ্বাস করতে কেউই চাইবে না। যতই হোক সাদা ফল খাওয়া সাদা জাদুকর ও। ভাবতেছি ওর সাথে হৃনিতার বিয়ে দিয়ে দি। তাহলে বিষয়টা অনেক ভালো হবে। এমনিতেও হৃনিতা মেয়েটা হয়তো আশা করেছিলো তার সাথে আমার বিয়ে হবে। এমনিতেও মেয়েদের আশা বেশী থাকে। চাইলেই তো বিয়ে করতে পারি। কিন্তু এখানেও আমাকে বউ এর ঝামেলা পোশাতে হবে তাইলে। তাই যেমনে আছি ভালো আছি। ওর সাথে সিগমার বিয়েটা দিয়ে দিতে হবে। তার আগে আমাকে প্রমাণ করতে হবে খুব ভালো আর শক্তিশালী যোদ্ধা ও। দেখা যাক কি হয়। ঘুমে তলিয়ে পরলাম আমি। বেশ আরাম দায়ক ঘুম দিলাম।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষায় থাকুন ১৭ তম পার্টের।