#জলপরীর_প্রেমে#
#সিজন_2
পার্টঃ১০
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।।
।।।।।
।।।।।
সারাদিন স্বপ্নের মধ্যে কাটলো। এভাবে এতো সহজে যে রাজত্ব পেয়ে যাবো এটা কল্পনা করি নি আমি। কিভাবেই বা কল্পনা করবো। সবচেয়ে আশ্চর্য লাগছে এটা ভেবে যে কোথায় থেকে কোথায় পৌছে গেছি আমি। যে কেউ কল্পনাই করতে পারবে না বিষয় না। কিন্তু এখন যা হচ্ছে তাতে তো মানুষ ঠিকই কল্পনা করবে। যেখানে মানুষ এলিয়েন শুধু মারভেল কিংবা অন্যন্যা হলিউডের মুভি গুলোতেই দেখেছে সেখানে মানুষ নিজ চোখেই এলিয়েনদের দেখতে পাচ্ছে। এসব কিন্তু ট্রাজিটি ছাড়া কিছুই না। মানুষ এসব কোনো দিন ভাবেও নি।
।
আমি এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম। বিছানাটা ভেবেছিলাম হয়তো আরামদায়ক হবে না। কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিলো। ভেবেছিলাম হয়তো কাঠের হবে। কিন্তু না বিছানায় নরম কিরকম একটা কাপড় বিছানো রয়েছে। যেটার মধ্যে মনে হয় তুলো রাখা। অনেকটাই আরামদায়ক। আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিনের জন্য আমি অধির আগ্রহে ছিলাম। সকালেই ঘুম থেকে উঠে নিলাম। এখন সন্দেহ কেটে গেলো কিভাবে আমিই রাজা হারকিউমাস হয়েছিলাম। কিন্তু জলপরীদের অনেকটা রহস্যই হয়তো আমার অজানা। আস্তে আস্তে খোলাসা হবে আমার কাছে। প্রথমত আজকের দিনের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারন আমার বাবার। সরি এই রাজ্যের পুরাতন রাজার বন্ধু আসবে। তার সাথে পরিচিত হতে হবে। মন্ত্রী দুজন মহিলা নিয়ে আসলো আমার কাছে। তারা আমাকে নিয়ে গোসলখানায় নিয়ে গেলো। অনেকটা প্রাকৃতিক গোসলখানা। বাশ দিয়ে বানানো হয়েছে। পুকুরের মতোই। কিন্তু অবাক হলাম বাশ দিয়ে বানানোর পরেও সেখান থেকে পানি পরছে না। হয়তো অন্য কিছুর ব্যবহার করেছে। দুজন মেয়ের সামনে গোসল করতে আমার খুব লজ্জা করছে। এভাবে কি কখনো গোসল করেছি। কিন্তু না করলেও এখন করে নিতে হবে হয়তো। কারন তাদের বলার পরও তারা এক পা ও নরছে না। আমি কোনো রকমে পানিতে বসলাম যা শরীরে ছিলো সেগুলো নিয়েই। আর মেয়ে দুটো তাদের নরম হাত দিয়ে সাবানের মতো কিছু একটা দিয়ে আমাকে ঢলে ঢলে গোসল করিয়ে দিচ্ছে। ভালোই আরাম লাগছিলো। পানি ছিলো গরম পানি। আর মেয়েরা গোসল করিয়ে দিচ্ছে। এটাই তো রাজাদের স্টাইল। ইস এখন যদি জারা,নিলা আর মোহনা থাকতো তাহলে কি এমন মজা আমি পেতাম কখনো। ওরা পেতেই দিতো না।
।
যাক কোনোরকম গোসল শেষ করে আমার জন্য আনা শাহী পোশাকটা পরে নিলাম। আর যাইহোক রাজা বলতে কথা। ভাবলাম মন্ত্রী মনে হয় এখন আমার নাস্তার ব্যবস্থা করবে। কারন অনেক ক্ষুদা লাগছিলো। কিন্তু মন্ত্রীর দেখলাম এই বিষয়ে কোনো হদ্দিস ই নাই। আমাকে কি না খাইয়ে রাখবে দুপুর পর্যন্ত। একটু পর মন্ত্রী আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো খাওয়াতে নিয়ে যাবে। আজকে আমি প্রাসাদ টা একটু ভালো ভাবে লক্ষ করছি। এসব আমার কাছে পুরাতন চাইনা ছবির সাওলিন টেম্পেল এর মতো লাগছে সব। চেহারাই এদের মধ্যেও চাইনা চাইনা একটা ভাব আছে। আর এদের তীর চালানোর স্টাইলটাও ওদের মতো। সে যাইহোক আমার ক্ষুদা লাগছে আগে সেটা কিভাবে পূরন করবো আপাতোতো সেটা ভাবছি। মন্ত্রী আমাকে নিয়ে বিশাল ডাইনিং টেবিলে নিয়ে আসলো। সেখানে আমার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথমে ভাবলাম হাল্কা চা নাস্তা করাবে। কিন্তু পরে অবাক হলাম। কারন কালকের মতোই আবারো মাংসের কাবাব আমার সামনে নিয়ে আসা হলো। এই হালারা কি শুধু কাবাবই খায় সব সময়। কিন্তু ভালো লাগলো যখন পাশে রুটি দেখতে পেলাম। রুটির চল তো অনেক আগে থেকেই তাই অবাক হলাম না। তবে ভাত দেখলে হয়তো অবাক হতাম। আমি তো দুটো রুটি খেয়েই কুপোকাত হয়ে গেলাম। যে বড় বড় এক একটা রুটি। যাক কোনো রকমে খেয়ে আমি উঠে আসলাম। নাহলে আরো কয়েক ঘামলা কাবাব নিয়ে আসবে আমার সামনে। আগে কাবাব খাওয়ার অনেক ইচ্ছা ছিলো। সব সময় তো আর খাওয়া হতো না। মাঝে মাঝে খাওয়া হতো। কিন্তু এখন দেখছি সব সময়ই কাবাব খেতে হবে।
।
খাওয়া শেষ হওয়ার পর মন্ত্রী আমাকে নিয়ে আসলো রাজ দরবারে। আমি গিয়ে বসলাম আমার সিংহাসনে। দরবারের বাকি সদস্যরাও হাজির ছিলো। মন্ত্রী আমাকে বলতে শুরু করলো।
.
--মহারাজ। আপনার পিতার মিত্র আসছে আজকে দুপুরের দিকেই।(মন্ত্রী)
.
--হ্যা কালকেই তো বললেন তিনি আসবেন। কিন্তু আসছেন কেনো।(আমি)
.
--আপনি ফিরে আসছেন এটা যেনে তিনি আর অপেক্ষা করবেন না। আপনার পিতাকে দেওয়া কথা তিনি পালন করবেন?(মন্ত্রী)
.
--মানে আমার পিতাকে তিনি কি কথা দিয়েছিলেন?(আমি)
.
--আপনার পিতা মারা যাবার পূর্বে তিনি এসেছিলেন। অনেক বড় বড় শল্যকার নিয়ে এসেছিলেন আপনার বাবার চিকিৎসার জন্য। কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। শেষ সময়ে আপনার বাবা বলেছিলেন তাকে,,"মিত্র আমি তো আমার পুত্রটাকে খুজতে পারলাম না। আমি এটা জানি সে জীবিত আছে। এটাও আশা করছি তার আম্মাও জীবিত আছেন। কিন্তু আমি হয়তো আর পারবো না। তাদের খোজার দায়িত্ব এখন থেকে তোমার। আর আমার ছেলেকে যদি তুমি পাও তাহলে কথা দাও আমাকে যে তোমার দুই কন্যার একজনের সাথে তার বিয়ে দিয়ে আমার ছেলেকে তোমার নিজের ছেলেই বানিয়ে দিবে"'(মন্ত্রী)
.
--কি?(আমি)
.
--হ্যা মহারাজ। আর রাজা হিরোনাস আসছে আপনার পিতাকে দেওয়া কথা পূরন করতে।(মন্ত্রী)
.
--মানে আমাকে তার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে?(আমি)
.
--হ্যা মহারাজ।(মন্ত্রী)
.
--আমি একজন রাজা আমি চাইলেই না করতে পারি।(আমি)
.
--এটা আপনার পিতার বানানো আইন। যদি আপনি অমান্য করেন তাহলে আপনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে এই প্রাসাদ থেকে। আপনি তখন আর রাজা থাকবেন না।(মন্ত্রী)
.
--এ কেমন কথা।(আমি)
.
--এটাই নিয়ম মহারাজ।(মন্ত্রী)
.
--ওকে তাহলে আমাকে একটু ভাবতে হবে এই বিষয়ে।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি রাজ দরবার থেকে আমার শয়ন কক্ষে চলে আসলাম। এই বিয়েটা আমাকে কি পেয়েছে। আমার কি বিয়ের রাশি নাকি। না না এই বিয়ে যেভাবেই হোক আমাকে আটকাতে হবে। দেখি বইতে কি লেখা আছে। আমি বই খুললাম।
.
--কি আবারও একটা চমক চলে আসলো। এতো বিয়ে কিভাবে করবে তাই না। ভুলে যেয়ো না তুমি রাজা। আর এটা কোনো এক রাজা আর এক রানীর সুখের গল্প না। এটা একটা ট্রাজিডি মূলক গল্প। যেখানে রাজাদের অনেক বউ হয়ে যায়। তাই তোমার ও হয়েছে। আর হ্যা অবশ্য আরো হতে পারে। এটা নিয়ে বেশী ভাবতে হবে না। আসল কথায় আসি। তোমার সাথে রাজা হিরোনাস তার ছোট মেয়ের বিয়ে দিবে। অনেক সুন্দর তার ছোট মেয়ে। সাথে অনেক গুনবতীও। যদি হ্যাপি ফ্যামিলি বানাতে চাও তাহলে ঔ মেয়ে তোমার জন্য পারফেক্ট। কিন্তু তুমি যে জন্য এসেছো তার কোনো কাজেই লাগবে না ঔ মেয়ে। তোমার দরকার বড় মেয়েটাকে। রাজাকে যখন বলবা তোমার বড় মেয়েটাকে বিয়ে করবে। প্রথমে রাজা মানা করবে। কিন্তু পরে রাজি হয়ে যাবে। কারন সে বড় মেয়ের বিয়ে দিতে পারছে না কোথাও। আর এক কথা বিয়ে করলে মুখ দেখবে না কিন্তু আগে। পরে দেখবে। কারন এটাও তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ।(বইয়ে)
।।।।
।।।।
শালা আমি নিজেই আমাকে ফাসিয়ে দিচ্ছি। এসব কি হচ্ছে। আজি শুইয়ে পরলাম বইটা এক পাশে রেখে। আরামের ঘুম দিলাম একটা। একটু পরই মন্ত্রী আমাকে ডাক দিলো।
.
--মহারাজ উঠুন রাজা হিরোনাস চলে আসছেন।(মন্ত্রী)
.
--এতো তারাতারি।(আমি)
.
--হ্যা মহারাজ।(মন্ত্রী)
।।।।
।।।।
আমি গিয়ে সিংহাসনে বসলাম। আমার কাছেই আসলেন মহারাজ হিরোনাস। ঘোড়ায় করে এসেছেন সেটা আমি রাজ দরবারে ঢোকার সময়ই দেখতে পেয়েছি। আমার সামনে এসে দাড়ালেন রাজা। দেখলাম সবাই দাড়িয়ে সম্মান জানাচ্ছেন। আমার ও কি আমি ও দাড়িয়ে গেলাম। হয়তো আমার থেকেও বড় শক্তিশালী রাজ্যের রাজা তিনি এখন।
.
--তোমাকে দেখে অনেক আনন্দিত হলাম। তোমার পিতা হয়তো এই দিনের জন্য অনেক অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তার ভাগ্যে হয়তো এটা লেখা ছিলো না। আমার ও বয়স হয়ে গেছে। আমিও কবে চলে যায় না যায়। তার আগে আমার মেয়েদের দায়িত্ব আমি কারো হাতে দিয়ে যেতে চাই।(রাজা)
.
--আপনি বিশ্রাম করুন মহরাজ হিরোনাস।(মন্ত্রী)
.
--হ্যা বিশ্রাম তো করবোই। তার আগে কথা গুলো পাকাপাকি করে ফেলি এখনি।(রাজা)
.
--কিসের কথা আমি?(আমি)
.
--এইযে পালকিতে আমার দুটো মেয়ে। আমার ছোট মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে হবে।(রাজা)
.
--আর আপনার বড় মেয়ের কি বিয়ে হয়ে গেছে?(আমি)
.
--না?(একটু লজ্জিত ভাবে বললেন রাজা)
.
--তাহলে আপনি বড় মেয়েকে রেখে ছোট মেয়ের বিয়ে দিবেন কেনো আমার সাথে?। আমার বাবা যেহেতু বলেছেন তাই আমি রাজি আছি। তবে আমি আপনার ছোট মেয়েকে নয় বড় মেয়েকে বিয়ে করবো।(আমি)
.
--না এটা হয় না। আমি নিজে থেকে জেনে তোমাকে বিপদে ফেলতে চাই না।(রাজা)
.
--কোনো বিপদ না আমি আপনার বড় মেয়েকেই বিয়ে করবো এটাই ফাইনাল।(আমি)
।।।।
।।।।
হয়তো ফাইনাল মানে কি লোকটা বুঝে নাই। এতো বোঝানোর সময় ও নাই। কিছুক্ষন মানা করার পর রাজা রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু আমি এখনো বুঝতে পারতেছি না মেয়েটায় সমস্যা কি যে কেউ বিয়ে করে না। আর রাজা ও আমার সাথে বিয়ে দিবেন না মেয়েটার। সে যাইহোক বউ এর আদর অনেক মিস করতেছি এই সময়ে চলে আসার পর থেকে। একটাকে নিয়ে আসলেও কাজে দিতো। কিন্তু এখন যখন ফ্রিতে রাজ্য সাথে বউ ও পাচ্ছি এগুলো কি মিস করা যায়?। অবশ্যই মিস করা যায় না। তাই তো মিস ও করবো না। দেখা যাবে পরে কি হয়।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।