#জলপরীর_প্রেমে#
#সিজন_2#
পার্টঃ১১
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।
।।।।
।।।।
রাজা হিরোনাস আমার কথা শুনে হয়তো অবাকই হয়েছেন। অবাক হওয়ার কি আছে তা আমি বুঝতে পারতেছি না। কিভাবেই বা বুঝবো এতো আগের মানুষের মন মানুষিকতা বোঝার ক্ষমতা আমার হয় নাই। আমি কোনো কথা আর বলছি না। সে ও আর কথা বলছে না। এতোক্ষনে খেয়াল করলাম একটা পালকি রাজ দরবারে চলে আসছে। ভাবলাম হয়তো সেটাতেই দুজন রাজকন্যা নিয়ে রাজা হিরোনাস আসছেন। কিন্তু পরক্ষনেই ভুল প্রমাণিত হলো। দেখলাম একটু পর আরেকটা পালকি আসলো। এটা আর প্রথমটার মতো নয়। দরবারে থাকা সব লোকই একটু ভয় পেয়ে গেলো। ভয় পাওয়ারই কথা। কারন প্রথম পালকিটা যেমন সুন্দর করে সাজানো হয়েছিলো এই পালকিটাও সুন্দর করে সাজানো হবে এটাই ভেবেছিলাম। সাজানো আছে কিন্তু ভয়ঙ্কর সব নক্সা দিয়ে। আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জিনিস হলো প্রথম পালকিটা সাধারনত চারজন লোজ বহন করে নিয়ে এসেছে। কিন্তু পরের টা একা একাই হাওয়ায় উড়ে এসেছে। অবাক তো এখানেই হওয়ার কথা। দরবারের প্রত্যেক মানুষই হাল্কা ভয় পেয়ে গেছে।
।
ভয় তো পাওয়ারই কথা ভিতরে হলিউড মুভি গুলোর মধ্যে যেমনে ডাইনী দেখাই তেমন কিছু একটা আছে। আমি বুঝতে পারলাম ভুতরে যে আছে হয়তো সে জাদুর অধিকারিনী। আর আমার ধারনা যদি ঠিক হয় তাহলে ভিতরে রাজা হিরোনাসের বড় মেয়েই রয়েছে।
।
.
--তো রাজা হারকিউমাস তুমি মনে হয় হাল্কা ভয় পেয়ে গেলে?(রাজা)
.
--জ্বী না মহারাজ হিরোনাস।(আমি)
.
--আমি এজন্যই তোমাকে মানা করেছিলাম। আমার বড় মেয়ে রাজকুমারী হৃদিতার উপরে জাদুকর হিগমার অভিশাপ পরেছিলো। তাই সে ও জাদুকারিনী হয়ে গেছে।(রাজা)
.
--ওওও।(রাজকুমারীর নামটা শুনে মনে হালকা আঘাত লাগলো আমার। কারন আমার নিজের আপন বোনের নামও হৃদিতা)
.
--তাই তো তোমাকে আমার ছোট কন্যাকে বিয়ে করতে বলতেছি।(রাজা)
.
--আমিও আপনাকে বলতেছি। আপনার বড় কন্যা যেমনই হোক। যত বিপদজনক হোক। আমি তাকেই বিয়ে করবো।(আমি)
.
--আচ্ছা যেটা আপনার ঠিক লাগে। আমার এতে কোনো সমস্যা নাই। তবে আমার একটা শর্ত আছে।(রাজা)
.
--কি শর্ত?(আমি)
.
--তোমাকে আজই বিয়ে করতে হবে?(রাজা)
.
--কিন্তু মহারাজ সেটা কিভাবে সম্ভব? আমাদের মহারাজের বিয়ে আজকেই হবে কোনো আয়োজন ছাড়াই?(মন্ত্রী)
.
--আমিও আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিয়ে করাতে চেয়েছিলাম। তবে সেটা করতাম যদি আমার ছোট মেয়ের সাথে বিয়ে হতো। হৃদিতা কখন কি করে ফেলে তার ঠিক নাই? তাই তো আজকেই যত তারাতারি সম্ভব বিয়েটা আমি দিয়ে দিতে চাই।(রাজা)
.
--আচ্ছা আমার ও সমস্যা নাই।(আমি)
।।।।
।।।।
।।।।
আমার কৌতুহল এক দিক দিয়ে বেড়েই যাচ্ছে। কারন মনে হচ্ছে জাদুকারিনী বউ পাবো। যখন যা খেতে চাইবো জাদু দিয়ে বানিয়ে দিবে মুহুর্তে। আদৌও কি এটা সম্ভব কিনা সেটা আমি জানি না। তবে বুঝতেছি সামনের এডভেঞ্চার গুলো আমার সেরকম যাবে। এই জমানার নিয়মে আমার বিয়েটা হয়ে গেলো। এখানে অন্য কোনো নিয়ম খাটাতে গেলে আমার গর্দান তো যাবেই। তবে অবাকের বিষয় যাকে বিয়ে করলাম এখনো তাকে আমি দেখলাম না। বরং একবার দেখা হয়ছিলো রাজার ছোট মেয়েটার সাথে। মনে হয় কিছু বলতে চাইছিলো। কিন্তু লজ্জায় কিছু বলে নাই। কি আর বলবে হয়তো মেয়েটা মনে মনে কষ্ট পাইছে😳।
।
থাক ওর কষ্ট নিয়ে ভাবলে হয়তো কাহিনী উল্টে যাবে। তাই ওকে সাইডে রাখলাম। আমি আমার শাহী কক্ষে ঢুকলাম। একটু সুন্দর ভাবেই সাজানো হয়েছে এই কক্ষটা আজকে৷ ভিতরে দেখলাম চুপ চাপ বসিয়ে রাখা হয়েছে আমার সদ্য বিবাহিত বউটাকে। ভাবলাম একটু কথা বলে দেখি।
.
--হাই।(আমি)
.
--......(নো রিপ্লাই)
.
--হাউ আর ইউ?(আমি)
.
--......(এখনো নো রিপ্লাই)
.
--আপনি কি কানে শুনেন না কিছু।(আমি)
.
--......(নো রিপ্লাই)
।।।।
।।।।
আমি এবার একটু রেগে ওর হাতটা ধরতে যাবো এমন সময় কি হলো বুঝলাম না। আমি মনে হয় বিদ্যুতের ঝটকা খেলাম। রুমের দেয়ালে জোরে বারি খেলাম আমি। অনেক জোরেই বারি খেলাম। তবে তেমন কিছুটা হলো না আমার। হয়তো সেটা জলপরীদের দানের জন্য। আমি অবাক হলাম স্বামীকে কি কেউ এভাবে আঘাত করে। কিন্তু বেশী অবাক হলাম ওর শক্তি দেখে। আমাকে এক ঝটকায় ফেলে দিলো। এটা খুবই অবাক করার বিষয়। দুঃখ লাগতেছি এখনো চেহারা টা দেখতে পারলাম না। মনে হয় সন্নাসিনী হবে তাই স্বামীকেও শরীরে হাত দিতে দিলো না। আচ্ছা দেখা যাবে। এর বদলাও আমি নিবো। অনেক সুন্দর করেই নিবো দেইখো।
।
মেয়েটা চুপ চাপ শুয়ে পরলো আমাকে দুরে বসে থাকতে দেখে। আমি আর এই মেয়ের কাছে যাচ্ছি না এখন। নাহলে কারেন্টের শক দিয়ে আমাকে মেরে ফেলবে। আমি যেখানে পরে ছিলাম সেখানেই ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে উঠলাম দেখে মনে হচ্ছিলো কেউ আমার আশেপাশে ঝাড়ু দিয়ে ঘর পরিস্কার করতেছিলো। আর সেই ময়লা আমার গায়ে লাগছিলো। আমি চোখ খোলার পর আমার চোখ চরাক গাছ। দেখলাম ঝাড়ু একা একাই কাজ করতেছিলো। একদম জাদুর সাহায্যে। আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম। কোনো অদৃশ্য মানুষ আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য আমি ঝাড়ুর আশে পাশে হাত দিয়ে ঠাপ্পর দিতে লাগলাম। একদম বাচ্চাদের মতো করতেছিলাম। যে কেউ হেসে দিবে এটা দেখলে।
।
এটাই স্বাভাবিক বিজ্ঞানের জীবনে জাদুকে কয়জনে বিশ্বাস করে। আর সেই জাদু যদি চোখের সামনে ভেসে উঠে তাহলে তো কৌতুহল বেশী হবেই। আমিও বিজ্ঞানের মাধ্যমে সমাধান করতে চাইলাম। কিন্তু কোনো বিজ্ঞানী এর সমাধান হয়তো দিতে পারবে না। দিলেও শেষে হয়তো বলবে এখানে জ্বীন কিংবা আত্মার হাত রয়েছে।।
।
আমি জ্বীনের জাদু গুলো দেখেছি। তাদের জাদুর মধ্যে আশ্চর্য জনক কিছু পাই নি। তাদের জাদু খুব সাধারন। ওমন সাধারন জাদু আমার ভালো লাগতো না বলে আমি শিখি নি। কিন্তু আমার ব্লাক ম্যাজিক শিখার অনেক ইচ্ছা। তবে একটা প্রশ্ন থাকেই সেটা হলো আমার নতুন বউটা কোন জাদু ব্যবহার করছে। সাদা জাদু হলে কি সে আমার উপরে এট্যাক করতো। হয়তো কালো জাদুই হবে। আচ্ছা সেটা দেখা যাবে। আমি হুমরি খেয়ে বইটার কাছে গেলাম।
.
--বউ যখন বাসর রাতে জাদু দিয়ে আঘাত করে কেমন লাগে এইটার অভিজ্ঞতা তো হয়েই গেলো। আমার পুরো কনফিডেন্স আছে আমার নিজের উপরে যে বেশীক্ষন লাগবে না বউটাকে লাইনে আনতে। কি করবা সেটা তো তুমি জানোই। এরপরে তোমার আর এই বইয়ের দরকার পরবে না। হ্যা অবশ্য তোমাকে নিজেই এই বইটাকে আবার লেখতে হবে। লেখার অনেক ইচ্ছা তোমার তো কষ্ট করে একটু লেইখো। আর ২ মিনিটের মধ্যেই বড় সড় একটা চমক খাবে সেটা আমি বলে যাচ্ছি। আর হ্যা তোমার প্রশ্ন থাকতে পারে আমি পুরো কাহিনী কেনো লেখি নি। সেটা লেখেও কোনো লাভ হবে না। কারন এখনি তোমার বউ মানে আমার ও তো বউ। সে এসে তার জাদু দিয়ে এই বইটাকে নষ্ট করে দিবে।(বইয়ে)
।।।।
।।।।
আহহহহহ। যা যেটা পরলাম সেটাই হলো। আমার হাতের বই মুহুর্তের মধ্যেই পুরে ছাই হয়ে গেলো। আমি শুধু হাবলার মতো দাড়িয়ে রইলাম। পাশ ফিরে তাকালাম দেখলাম একটা মেয়ে আমার সামনে এসে দাড়িয়েছে। মাত্র মনে হয় গোসল করে আসছে। চুল গুলো ভেজা। লম্বায় আমার থেকে চার ইঞ্চি ছোট হবে মনে হয়। চেহারাটা দেখে আমি হতবাক। এ আমি কাকে দেখছি? হৃদি আমার সামনে। দুজনের নামে যেমন মিল চেহারাটাও ঠিক একরকম। আমার মাথা কাজ করতেছে না। এটা কিভাবে সম্ভব। আমি কল্পনা করতেছি না তো। মেয়েটা আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে।
.
--এই বই কোথায় পাইছেন?(মেয়েটা)
.
--মা--মানে?(আমি)
.
--এই বই পাইছেন কোথায়?(মেয়েটা)
.
--ঔটা আমার বাবার বই।(আমি)
.
--আমাকে পাগল পেয়েছেন ঔটা জাদু দিয়ে বানানো একটা বই। ঔটা আপনার বাবার কাছে কিভাবে আসছিলো?(মেয়েটা)
.
--কি জানি ঔটা পড়লে নাকি জাদু শেখা যায় তাই বাবা কোন জাদুকরের থেকে নিয়েছিলেন। আমার তো অনেক আগে থেকেই জাদু শিখার অনেক ইচ্ছা তাই মন্ত্রী আমাকে দিলো বইটা।(আমি)
.
--মূর্খ এইটাও জানেন না জাদুকরের আশির্বাদ ছাড়া কখনো জাদু শেখা যায় না?(মেয়েটা)
.
--আমি তো শুনলাম আপনি একজন জাদুকারিনী তাহলে আপনিই আমাকে আশির্বাদ দিন।(আমি)
.
--না কখনো না। এই বিষয়ে কথা না বললে আমি খুশি হবো। আর আমি বলে রাখি আমাকে কখনো বিরক্ত করবেন না। আমাকে আমার মতো থাকতে দিবেন।(মেয়েটা)
.
--ওকে সমস্যা নাই।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি সেখান থেকে চলে আসলাম। কিভাবে বউদের সাইজ করতে হয় সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে। বউদের হিংসা হয় বেশী। আর তারা স্বামীদের ভাগ কাউকে দিতে চাই না। এটা তো একটা চিরন্তন সত্য। তাই তো এখন মিশন রাজার ছোট মেয়ে। একটু লুতু পুতু করতে হবে ছোটটার সাথে তাউ এইটাকে দেখিয়ে দেখিয়ে। তাহলেই কাজ শেষ। কাজে নেমে পরতে হবে আজকে থেকেই।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন পরবর্তী পার্টের।