#জলপরীর_প্রেমে#
পার্টঃ০৭
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।।
।।।।।
।।।।।
আমি হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। কি হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না। হাতের ট্রিশুলটা যে এভাবে ভেঙে যাবে কল্পনাও করতে পারি নাই। আশে পাশের মারামারি সব যেনো আমার কাছে থেমে গেলো। আমি কিছুই অনুভব করতে পারছিলাম। একটা মুহুর্তই আমাকে পুরো থমকে দিলো। লু চিনের দিকে তাকালাম। দেখলাম সে মৃদ্যু হেসে আমাকে উপহাস করার চেষ্টা করছে। আমি যে এভাবে ট্রিশুল থাকা সত্ত্বেও তার কাছে হেরে যাবো এটা কল্পনাও করতে পারছিলাম না। হঠাৎ লু চিন তার বিরাট তলোয়ার দিয়ে আমার উপরে হামলা করতে গেলো। আবারো সেই মারাত্মক কোপ দিলো যেটা দিয়ে আমার ট্রিশুলটা ভেঙে দিলো। আমি চোখ বুঝে রইলাম। কারন বুঝতে পেরেছি আমার আর রক্ষা নাই। কিন্তু পরক্ষনেই বুঝতে পারলাম কেউ আমাকে নিয়ে কাঙ্খিত জায়গা থেকে সরে গেছে। যার দরুন কোপটা পিচ ঢালায় রাস্তাতেই পরলো। তাকিয়ে দেখলাম তলোয়ার থেকে আগুনের মতো কিছু একটা বের হচ্ছিলো। আমি তো অবাকই হলাম। কারন এতো শক্তুশালী একটা তলোয়ার থাকতে পারে সেটা আগে কখনো ভাবি নি। আমার পাশে দেখলাম সাইনাকে।
.
--মাই লর্ড। আপনি ওকে ক্ষমা করে দিন।(সাইনা)
.
--প্রিন্সেস তুমি তো জানো তোমার বাবার মনে কোনো দয়া নেই। আমি একটা সুন্দর অফার ওকে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ফিরিয়ে দিয়ে সে আমাকে অপমান করেছে। আর এই সুন্দর গ্রহটার রাজা নাকি তিনি। তাকে হত্যা না করলে এটা আমাদের হবে কিভাবে?(লু চিন)
.
--আপনি ওকে ছেড়ে দিন। মেয়ে হিসাবে বাবার কাছে এই প্রার্থনা আমার।(সাইনা)
.
--সরে যাও লু সাইনা। নাহলে মায়ার টানে তুমি নিজেকেও হত্যা করে ফেলবে।(লু চিন)
।।।।
।।।।
লু চিন সাইনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। লু চেইন তাকে শক্ত করে ধরলো। শুধু কেদেই যাচ্ছে সাইনা। অনেক কষ্ট লাগছে ওর। এদিকে আমি উঠার শক্তিও পাচ্ছি না। তলোয়ারের আঘাতে শুধু আমার ট্রিশুলই ভাঙে নি। বরং আমার শরীরও ড্যমেজ হয়েছে। আমি নড়াচড়া করার শক্তি ও পাচ্ছিলাম না। নিজেকে অনেক অসহায় লাগছিলো। আশে পাশে দেখলাম আমার সৈন্যরা ভালোই যুদ্ধে আদিপত্য দেখাচ্ছিলো। কিন্তু তাদের রাজাই যে ট্রিশুল ভেঙে বসে আছে। দুর থেকে হিতান আমাকে দেখলো। এর মধ্যেই সেনাপতি অদ্রিজ আর সেনাপতি রুদ্রিস এর সৈন্যরা লু চিনের অর্ধেক সৈন্যকে মারতে সক্ষম হয়েছে। সেনাপতি হিতান আমাকে দেখেই এসে আমাকে নিয়ে উড়াল দিলো। উড়তে উড়তে বলতে লাগলো।
.
--মহারাজ আপনার এই অবস্থা হলো কিভাবে? কিছুই তো বুঝতে পারছি না।(হিতান)
.
--আমি ভেবেছিলাম লড়াইটা সহজই হবে। কিন্তু না। আমি ঔ বিরাটদেহী রাজার আসল শক্তি দেখলাম। এক আঘাতেই ট্রিশুল ভেঙে দিলো।(আমি)
.
--কি? এটা কিভাবে সম্ভব?(হিতান)
.
--আমার ও সেটাই কথা।(আমি)
.
--এখন কি করবো মহারাজ?(হিতান)
.
--সবাইকে আপাতোতো পাতালপুরীতে এসব এলিয়েনদের চোখের আড়াল হয়ে পাতালপুরীতে যেতে হবে।(আমি)
।।।।
।।।।
সেনাপতি হিতান আমাকে নিয়ে বাকি দুই সেনাপতির কাছে নিয়ে আসলো। এতোক্ষন যা আত্মবিশ্বাস ছিলো এখন সেটাও নেই। সব হারিয়ে আমি এখন ভয়ে আছি। কোনো রকম নিজের জীবনটা বাচিয়ে আসতে পারছি আমি। জানি না এখান থেকে নিজ শরীরে ফিরতে পারবো কিনা। তিন সেনাপতি ঠিক করলো টেলোপোর্টেশন ব্যবহার করা হবে। কিন্তু আমি সেটাতে না বলে দিলাম।
.
--সেটা না করলে এতো সৈন্য তো আমরা বাচাতে পারবো না মহারাজ।(অদ্রিজ)
.
--হ্যা পারবো।(আমি)
.
--আদেশ দিন তারাতারি মহারাজ।(রুদ্রিস)
.
--ড্রিলিং চালু করা হোক।(আমি)
.
--সেটা তো ভয়ানক হতে পারে।(রুদ্রিস)
.
--না হবে না। আমি যেটা বলছি সেটাই করুন।। (আমি)
.
--ঠিক আছে মহারাজ কিন্তু আমাদের সেটার জন্য আকাশ পথ ব্যবহার করতে হবে।(হিতান)
.
--সেনাপতি হিতান। আপনি আপনার সৈন্যকে বলে দিন দুজন জলপুরীর সৈনিককে যেনো তারা নিয়ে সাগরে ফেলে দিয়ে আসে।(আমি)
.
--ঠিক আছে মহারাজ।(হিতান)
.
--আর সেনাপতি অদ্রিজ আপনি আপনার সৈন্যকে বলুন আক্রমন চালিয়ে যেতে। জলপরীর সব সেনা যখন নেওয়া হয়ে যাবে তখন আপনাদের টেলিপোর্ট করে আকাশপুরীতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখান থেকে আবার পাতালপুরীতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।(আমি)
.
--ঠিক আছে মহারাজ।(অদ্রিজ)
.
--আর সেনাপতি হিতান আপনার সৈন্যদের উড়ে সবার থেকে আলাদা হতে বলবেন। আর তারপর একটা সংকেত দিতে বলবে। তখন তাকে ড্রিল করে সরাসরি পাতালপুরীতে নিয়ে যাওয়া হবে।(আমি)
.
--জ্বী মহারাজ।
.
--কিন্তু হুজুর আমাদের কি এতো ঝামেলা না করে সোজাসুজি টেলিপোর্ট করলে ভালো হতো না।(রুদ্রিস)
.
--ভালো হতো কিন্তু তাদের মনে কৌতুহল জাগতো। তাদের মনে বলতো আমাদের পৃথিবীতে আরো কিছু আছে। তাই আমি তাদের থেকে ব্যাপারটা এড়াতে চাই।(আমি)
.
--ওওও। বুঝেছি হুজুর।(রুদ্রিস)
.
--তাহলে প্লান মতো কাজ করুন।(আমি)
।।।।
।।।।
আমাকে হিতান উড়িয়ে নিয়ে সাগরের পানিতে ফেলে দিলো। সবার আড়ালে চলে গেলাম। অবশ্য উড়াল দেওয়ার আগে আমি লু চিনের মুখে অদ্ভুদ একটা হাসি দেখেছি। দেখেই মনে হয় কত শক্তিশালী ও। আমি পাতালপুরীর বিজ্ঞানী কে বল্লাম আমাকে টেলিপোর্ট করে ওনার ল্যাবে নিয়ে যেতে। মাথায় একটা জিনিস আসলো। আগে আসলো না কেনো। যখন লু চিন কে আমি পানি দিয়ে আঘাত করেছিলাম তখন অনেকটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো। আর বিজ্ঞানী আগেও বলেছে ওদের স্পেসশীপ পানিতে কাজ করে না। আমি বিজ্ঞানীর ল্যাবে পৌছে গেলাম।
.
--মহারাজ আপনি ঠিক আছেন তো?(বিজ্ঞানী)
.
--হ্যা মরতে মরতে বেচে গেছি।(আমি)
.
--মহারাজ খুব অবাক লাগছে আপনার তাইনা আপনার ট্রিশুলটা ভেঙে গেলো এটা দেখে।(বিজ্ঞানী)
.
--হ্যা বুঝলাম না। কাহিনী শুনলাম নাকি ট্রিশুলটাকে কোনো জিনিসই ভাঙতে পারবে না।(আমি)
.
--হ্যা পৃথিবীর কোনো জিনিস ভাঙতে পারবে না। তবে তাই বলে এমন না যে বাইরের কোনো গ্রহ ভাঙতে পারবে না। লু চিন এর বিরাট তলোয়ার তৈরী হয়েছে টাইট্রেরিয়াম, উল্কাপিন্ডের গলিত লাভা, টাংস্টেন আর বাইবার রড দিয়ে। যেটা আপনার ট্রিশুলের থেকে ১০ গুন বেশী আপগ্রেডেড।(বিজ্ঞানী)
.
--তাহলে তাকে হারানোর কোনো উপায় তো আছে।(আমি)
.
--আমি তার স্ট্যােমেনা চেক করেছি৷ সে একাই তার পুরো সৈন্যের সমান। আপনি পিছনে আসার চিন্তাটাই মনে হয় ঠিক করেছেন। এখন আপনার হাতে ট্রিশুল নেই। মনে হয় না তার মতো কারো সাথে যুদ্ধে যাওয়া আপনার পক্ষে ঠিক।(বিজ্ঞানী)
.
--কোনো ভাবে কি তাকে হারানো যাবে না?(আমি)
.
--যাবে যদি আপনি তার সমান বা বেশী আপগ্রেডেড অস্ত্র নিয়ে তার সাথে যুদ্ধ করেন এবং পানির ব্যবহার করেন। তাছাড়া তার সাথে যুদ্ধে যাওয়া মানে নিজের মৃত্যুকে ডাক দেওয়া। সে একাই আমাদের পুরো সেনাকে ধ্বংস করে দিতে পারবে।(বিজ্ঞানী)
.
--আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।(আমি)
.
--আপনার ট্রিশুলে যদি ধ্বংস করার ক্ষমতা থাকে। তাহলে কল্পনা করেন সেটা যে ভাঙলো তার কতো ক্ষমতা থাকতে পারে।(বিজ্ঞানী)
.
--হ্যা বুঝেছি। আপনি আমাদের বাকি সৈন্যদের আনার ব্যবস্থা করুন। সবাইকে পানিতে আসতে বলেন। তারপর এখানে নিয়ে আসুন। পানি থেকে টেলিপোর্ট হলে কখনো জানতেই পারবে না যে আমরা কোথায় গেছি।(আমি)
.
--ঠিক আছে মহারাজ।(বিজ্ঞানী)
।।।।
।।।।
আমি রেস্ট নিচ্ছিলাম। অনেক গুরুতর আঘাত লেগেছে। অবশ্য বেগুনী রঙের ঔষধটা খাওয়ার পর আবার শরীর আগের মতো হয়ে গেলো। কিন্তু ট্রিশুল যে আগের মতো হলো না। দুটো ভেঙে আমার হাতেই রয়েছে। বুঝতে পারছি না ট্রিশুল ভাঙার পরও ছোট বড় হচ্ছে দুই টুকরা। হয়তো কিছু আছে। তাই আমি দুটোকে পকেটে রাখলাম। লু চিন এর ধ্বংসের লিলা আমি দেখেছি। এতোক্ষনে তো আমার সৈন্যরাও এখানে চলে আসছে। দেখি গিয়ে কথা বলে সেনাপতিদের সাথে। আমি রুম থেকে বের হতে যাচ্ছিলাম তখনি দেখি বিজ্ঞানী আমার শয়নকক্ষে চলে আসলো দৌড়ে।
.
--কি হলো বিজ্ঞানী এভাবে দৌড়িয়ে আসলেন যে?(আমি)
.
--মহারাজ আপনার জীবনের ঝুকি আছে।(বিজ্ঞানী)
.
--কেনো লু চিন এর সৈন্য কি আমাদের পাতালপুরীতে চলে আসছে।(আমি)
.
--না মহারাজ। আপনার সেনাপতিরাই এখন আপনাকে মারার চক্রান্ত করছে।(বিজ্ঞানী)
.
--কি?(আমি)
.
--হ্যা মহারাজ। আপনার কাছে এখন ট্রিশুল নেই। আর আপনি তিনজনের সাথে এখন যুদ্ধ করলে মোটেও জীবন্ত থাকবেন না। আর রাজ্য তিনটা তাদের দখলে চলে যাবে।(বিজ্ঞানী)
.
--এতো বড় দুর্সাহস তাদের।(আমি)
.
--উত্তেজিত হবেন না মহারাজ। আপনাকে এখনি এখান থেকে যেতে হবে নিরাপদ কোথাও।(বিজ্ঞানী)
.
--ঠিক আছে। আমাকে এক মিনিট ভাবতে দিন।(আমি)
।।।।
।।।।
আসলেই এখন আর রাজা হয়ে থাকার কোনো ইচ্ছাই করছে না। আবার নিজের সেনাপতিরাই এখন মারতে চাচ্ছে আমাকে। কি করবো বুঝতেই পারছি না। মাথায় কিছুই আসছে না। তখনি মনে পরলো সেই বইয়ের কথা। কেনো জানি মনে আসলো বইয়ের কথা। সেখানেই তো লেখা ছিলো। যখন কোনো কিছু ভেবে পাবো না কি করবো তখন যেনো বইটার কাছে যায়।
.
--বিজ্ঞানী আপনি এক কাজ করুন মেশিনটার মেইনটেইন করার মেইন রিমোটটা আমাকে দিন।(আমি)
.
--জ্বী মহারাজ এই নিন।(বিজ্ঞানী)
।।।।
।।।।
আমি মেশিনটাতে সেলফ ডিসট্রাকশন মুড দিয়ে দিলাম। ১০ সেকেন্ড এর মধ্যে এটা নিজে নিজেই ব্লাস্ট হয়ে যাবে। আর আমি কল্পনা করলাম রাজস্থান এর সেই মরুভূমিটা যেখান থেকে আমি ট্রিশুলটা পেয়েছিলাম। কল্পনা করলাম সেই দরজার সামনের জায়গাটা। তারপর সুইচে চাপ দিলাম। ২ সেকেন্ড থাকার সময়ই আমি পৌছে গেলাম আবার সেই দরজার সামনে। হাতের রিমোটটা ও আগুন জ্বলে গেলো। আমি চাই না কেউ আমার ঠিকানা বের করে আসুক আমাকে মারতে।
.
--আরে মহারাজ হৃদয় টিটান যে?(দরজা)
.
--দেখো আমি তোমার বক বক শুনতে আসি নি দরজা। এখন একটু চুপ থাকো।(আমি)
।।।
।।।
দরজা জানে কি হয়েছে। তাই আমার সামনে আর কথা না বলায় স্রেয় মনে করলো। দরজাটা আবার খুলে দিলো সে। আমি ভিতের গিয়ে বইটাতে হাত দিলাম। আমি বইটা খুললাম। আগের বার লক ছিলো খুলে নি। কিন্তু এবার হাত দেওয়ার সাথে সাথেই খুলে গেলো। ভাবলাম বইতে অনেক কিছু লেখা থাকবে। কিন্তু না কিছুই লেখা নেই। একটা 3d ভিডিও এর মতো কিছু একটা চালু হলো। হোলোগ্রাম এর মতো আসলো বইটা থেকে। বুঝতে পারলাম না এতো পুরানো একটা বই তাহলে এই এইটা যে টিভির মতো চলছে এটা চলার শক্তি পাচ্ছে কোথায়। সাথে সাথে একটা শব্দ শুনতে পেলাম।
.
--এলিয়েন আক্রমন করেছে। নিজের ট্রিশুল ভেঙে গেছে। এখন সেনাপতি নিজের উপরে আক্রমন করতে চাচ্ছে। নিশ্চয় আশ্চর্যের বিষয় আমি কিভাবে জানলাম। হ্যা আরেকটু আশ্চর্য না হয় দি তোমাকে। আগে আমাকে দেখে নাও।(চিনা একটা ভয়েজ আসলো 3d ভিডিও থেকে)
।।।
।।।
হঠাৎ সামনে একটা মানুষ আসলো। আমি দেখে নিজে যে কতটা অবাক হলাম সেটা নিজেও জানি না। কারন আমি আমাকেই দেখলাম। আমার সামনে আমিই আসলাম। আর সেই আমিই বল্লাম এই কথাটা। কিছুই বুঝলাম না।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ৮ম পার্টের জন্য।