#জলপরীর_প্রেমে#
#সিজন_2#(শেষ)
পার্টঃ২৭
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।।
।।।।।
।।।।।
আমি শুয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। কষ্টের মাঝে ঘুমানোটা এতো সহজ হবে আমি ভাবি নি। তারপরও নিজের চোখকে আমি খোলা রাখতে পারি নি। অনেক চেষ্টা করেও আমি ঘুম আটকাতে পারি নি। একটা শান্তির ঘুমে আমাকে পুরো চিন্তামুক্ত করে দিলো। এতোক্ষন যা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো সব এখন থেমে গেলো। আমি তো এখানে আর কিছু দেখছি না। আমাকে তো এখন টাইমমেশিন দিয়ে ফেরত যেতে হবে। কিন্তু আগে তো আমাকে টাইমমেশিনের কাছে যেতে হবে। আমি জাদু ব্যবহার করে রুম থেকে উড়ে বের হয়ে গেলাম। আরো কতো জাদু আছে তা আমার অজানা। তবে সব শিখতে হবে আস্তে আস্তে। আমি উড়ে সেই বনের মধ্যে চলে আসলাম যেখানে আমি টাইমমেশিন দিয়ে এসেছিলাম। এখানেও পানিতে ভরে ফেলিছি আমি। সব গাছপালা ঢুবে গেছে পানির নিচে
।
আমি পানিতে নামার চেষ্টা করলাম। মনে মনে চিন্তা করলাম পানি আমার না লাগলে কেমন হতো। পানিতে পা দেওয়ার সাথে সাথেই পানি সরে যাচ্ছিলো আমার থেকে। আমি যতই পানিতে নামছিলাম পানি তত সরে যাচ্ছিলো আমার থেকে। এমন মনে হচ্ছিলো আমি পানির থেকে বিপরীত কোনো কিছু আর পানি আমাকে বিকর্ষন করছে। আমি মাটিতে নামলাম। যথারিতি পানি আমার থেকে অনেকটা সরে গেছে। আমার চারপাশে অদৃশ্য একটা দেওয়াল তৈরী হয়েছে। যেটা আমার আশেপাশের পানিকে আটকে রাখছে আমার কাছে আসতে দিচ্ছে না। আমি হাটতে লাগলাম। কিছুক্ষন খোজার পরে পেয়ে গেলাম আমি টাইমমেশিন টা। দেখা যাক চালু হয় কিনা। চালু হলেই আমি চলে যাবো এখান থেকে। আমার আর একটুও ভালো লাগছে না এখানে। আমার বোনটাকে দেখতে অনেক ইচ্ছা করতেছে।
.
আমি টাইমমেশিনের ভিতরে ঢুকলাম। পানির নিচে থাকার পরেও সিস্টেমের কোনো ক্ষতি হয় নি। মনে হচ্ছে অত্যাধুনিক কোনো প্রযুক্তিতে বানানো হয়েছে এই জিনিসটা। আমি বুঝতেই পারতেছি না এই মেশিনটা আমি কিভাবে পেলাম। আর কিভাবেই বা সেই জায়গাটাই রাখলাম। এই জিনিসটা তো আমাকে জানতে হবে।
।
আমি একটা টাইম ঠিক করতে চাইলাম। কিন্তু বুঝতেছি না টাইম ঠিক হচ্ছে না। যেদিন আমি চলে আসছিলাম সেদিনের টাইমই ঠিক করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু কোনো মতেই সেই টাইম ঠিক হচ্ছে না। উল্টো সেই সময়ের ১ মাস পরের সময় ঠিক হয়ে আছে। তারমানে কি আমাকে সেই সময়ে যেতে হবে? সে সময় গেলে তো ততোক্ষনে এলিয়েনটা পুরো পৃথিবী ধ্বংস করে দিবে। আমাকে তো আরো আগে যেতে হবে। কিন্তু বুঝতেছি না এই মেশিনটার কি হলো। আচ্ছা ঠিক আছে দেখি চালু হয় কিনা।
।
আমি লাল বোতামটাই চাপ দিলাম কিন্তু একবার কয়েকটা লাইট জ্বলে আবার বন্ধ হয়ে গেলো। কিছুই বুঝলাম না আমি কি হলো। মেশিনটা কি নষ্ট হয়ে গেলো নাকি। এতোক্ষন তো ভালোই মনে হচ্ছিলো। মেশিনের সামনেই একটা ডয়ারের মতো কিছু একটা আছে। হয়তো ম্যানুয়াল বুক থাকবে সেখানে। কিভাবে এটাকে ঠিক করতে হবে সেটা ঔখানে লেখা আছে মনে হয়। আমি ডয়ারটা খুল্লাম। একটা ডাইরী পেলাম সেখানে। ডাইরীর গায়ে সুন্দর করে লেখা "" প্রিয় আমি""।।।।
।।।
লেখা দেখেই বুঝলাম এটা আমিই লেখেছি। ডাইরিতে কোনো লক নেই। আমি খুললাম। আগেই বুঝেছি জাদুর হবে হয়তো। আমার সামনে হোলোগ্রাফ হয়ে আসলাম আমি নিজেই। নিজেকে অনেকটা এখন অবাক লাগছে। কারন আমার দাড়ি হয়ে গেছে অনেকটা। সেই সাথে গোফ ও বড় হয়েছে। চুলগুলোও বড় হয়েছে। আবার কেউ ভাইবেন না বুইড়া হয়ে গেছি। মনে হয় স্টাইল এর জন্য রাখছিলাম। কিংবা দেবদাস হয়ে রাখছিলাম।।। ও রাখছিলাম বললে চলবে না রাখবো বলতে হবে। এই বর্তমান অতীত আর ভবিষ্যৎ এই তিনটা জিনিস আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। থাক এসন নিয়ে না ভাবলেও হবে। আমাকে দেখতে হবে কি বলতেছি আমি।
.
--টাইম মেশিনটাকে দেখে অনেক উন্নত মনে হচ্ছে তাই না? কিন্তু আসলে এটা সবচেয়ে পূরনো মডেলের মধ্যে একটা। সবচেয়ে অবাক করার কথা হলো এটা কিন্তু কোনো মানুষের তৈরী টাইমমেশিন না। এটা এলিয়েনদের তৈরী একটা টাইমমেশিন। তুমি তো অবাক হবে না বিষয়টাতে। আমিও হয় নি। কারন আগেই এলিয়েনদের সম্পর্কে ভালো জ্ঞান পেয়েছি। তাদের টেকনোলজি আমাদের থেকে হাজার গুন ভালো। সো বেশী কিছু বলার প্রয়োজন আমার পরবে না। এই টাইমমেশিনটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে পানিতে। পানিতে এটার সার্কিট আউট হয়ে গেছে চাইলে খুলে দেখতে পারবো। একটা পূরনো মডেলের গাড়ি যেমন বেশীদিন টিকে না তেমনি আপগ্রেড ছাড়া টাইমমেশিন ও অচল। এখন তোমার মনের একটা প্রশ্ন আমি ভেঙে দি। তোমার মনে প্রশ্ন জাগতেছে কিভাবে এই এলিয়েন টাইমমেশিনটা পেলাম তাইনা? সেটাও খুব শীঘ্রই দেখতে পারবে। আপাতোতো অপেক্ষায় থাকো। এবং নতুন রাজ্য তৈরী করো।।।।।।(আমি)
।।।।।
।।।।।
কথাগুলো সংক্ষেপে ছিলো। কিন্তু মূল্যবান কথা ছিলো। শালার এলিয়েনরা টাইমমেশিনও বানিয়ে ফেলেছে। ওদের মনে হয় গরুর গোবর দিয়ে তৈরী। তাই তো এতো উন্নত ওরা। এখন আর কি করতাম আমি। আমার তো আর এখানে ভালো লাগছে না। কোনো কাজও আমার নেই। শুধু শুধু এই সময়ে আমার ভালো লাগছে না। আমার কথা আমি পুরো বুঝলাম না। আমার নিজের মাঝেই আমি রহস্য পেলাম। নিজেই যদি এতো রহস্য নিয়ে কথা বলি তাহলে আর কি হবে। আমার মাথা পুরো ধরছে আমার। কিছুই বুঝতেছিলাম না। আমি হিরোনাসের রাজ্যে ফিরে আসলাম। শ্বশুরের রাজ্য ভালো করে এখনো ঘুরতেও পারি নি। আমি আবারো রাজ্যের উড়ে আমি যে রুমে শুয়ে ছিলাম সেখানে আসলাম। ভাবলাম সবার সাথে একটু কথা বলে আসি। সবাই এতোক্ষনে রানীর মৃত্যুর কথা শুনেছে। আমি পাশের রুমে চলে আসলাম এখানে সিগমা মন্ত্রী আর হ্যারিকাস ছিলো।
.
--মহারাজ আপনি ঠিক আছেন?(মন্ত্রী)
.
--হ্যা মন্ত্রী(আমি)
.
--মহারাজ মহারানীর কথা শুনে আমরা খুবই দুঃখিত।(হ্যারি আর সিগমা)
.
--হুমম।(আমি মনটা ভারী করে)
।।।
কিছুক্ষন কেউ কিছু বললো না। আমি দেখলাম রাজা হ্যারিকাসের মনটা অনেক খারাপ। কেনো বুঝলাম না। হয়তো মন খারাপের কারন আমার স্ত্রীর মৃত্যু হবে।
.
--কি হলো হ্যারিকাস। আপনার মন খারাপ কেনো?(আমি)
.
--মহারাজ কিছুই হয় নি।(হ্যারি)
.
--না বলুন। রাজার বংশীয় কেউ মিথ্যা বলে না।(আমি)
.
--মহারাজ আপনার মন হয়তো ভালো না। এটা বলার সঠিক সময় না।(হ্যারি)
.
--না বলুন আপনি।(আমি)
.
--আকাশপুরীর রাজা আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়েছে আকাশপুরীতে। একদিন জলের উপরে আমার মেয়ে খেলা করতেছিলো। আকাশপুরীর রাজার ছেলে আমার মেয়েকে দেখে সেদিনই আমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেই। কিন্তু একজন ডানা ওয়ালা জ্বীনের সাথে কিভাবে রাজকন্যাকে বিয়ে দিবো বুঝতে পারতেছিলাম না। তাই তখন মানা করে দিয়েছিলাম। তাই তারা আমার রাজ্যের উপরে আক্রমন করতে এসেছিলো।(হ্যারি)
.
--ও এখন আপনার মেয়ে তাহলে আকাশপুরীতে আছে?(আমি)
.
--হ্যা মহারাজ।(হ্যারি)
.
--আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়েকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমার।(আমি)
....
।।।
আর কিছু বললো না হ্যারি।
.
--কি হলে সিগমা আপনি চুপ করে আছেন যে?(আমি)
.
--মহারাজ আমার শক্তি না থাকাতে আমি শেষ সময়ে আপনার কোনো সাহায্য করতে পারি নাই এজন্য আমি খুবই দুঃখিত।(সিগমা)
.
--আরে সেটা কোনো ব্যাপারই না। শক্তি নেই তো কি হয়েছে। আপনি এখনো আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।(আমি)
.
--কিভাবে মহারাজ?(সিগমা)
.
--সঠিক সময় হোক। আপনি সেটার সুযোগ ও পেয়ে যাবেন।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি সেখান থেকে বের হলাম। দূর থেকে হৃনিতাকে দেখতে পেলাম। ওর চেহারা যদি হৃদিতার মতো হতো তাহলে নিশ্চয় আমি ওকেও বিয়ে করতাম। কিন্তু চেহারার অনেক অমিল রয়েছে। সুন্দরী কিন্তু হৃনিতাই বেশী। কিন্তু আমি কেনো জানি প্রথম থেকেই ওর উপরে টান অনুভব করি নি। আচ্ছা সেটা বাদ দিলাম। কিছু বললো না সে আমাকে। আমি সিংহাসনে চলে আসলাম। দেখলাম সেখানে হিরোনাস বসে আছেন আমাকে দেখে বলতে লাগলেন।
.
--বাবা হারকিউমাস তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।(রাজা)
.
--হ্যা বলেন মহারাজ।(আমি)
.
--আমার বয়স হয়ে গেছে বাবা। নিজের রাজ্য চালাতেও এখন সমস্যা হচ্ছে। তোমার রাজ্য তো পানিতে ঢুবে গেছে। সব প্রজা আর সেনারা ও নিজেদের জীবন হারিয়েছে। আমি বলছিলাম কি তুমি আমার রাজ্যের রাজা হয়ে যাও। আমি একটু বিশ্রাম নিতাম শান্তি মনে।(রাজা)
.
--সেটা হয় কিভাবে আপনি আপনার রাজ্যের রাজা। আমি কিভাবে? আর আপনার বড় মেয়েও এখন আর জীবিত নেই।(আমি)
.
--আমার ছোট মেয়ে হৃনিতার বিবাহ তোমার সাথে দিবো। তারপর দুজনে মিলে এই রাজ্য শাসন করবে।(রাজা)
.
--আপনি হয়তো আমার ক্ষমতার কথা শুনেছেন। আমি আর এই মানুষদের রাজা হতে চাই না। আমি জলের রাজা। পানিতেই থাকতে পছন্দ করি মহারাজ।।(আমি)
.
--ও।(রাজা)
.
--হুমমম। আমি যাচ্ছি রাজা হ্যারিকাসের কন্যাকে আকাশ থেকে মুক্ত করতে।(আমি)
।।।।।।
।।।।।।
বলেই আমি বের হয়ে গেলাম। যা শালার একটা জিনিস তো জিজ্ঞাসা করতে ভুলেই গেলাম। হৃদিতা জলপরী হলো কিভাবে সেটা জিজ্ঞেস করার ছিলো। কিন্তু ভুলেই গেছি। আচ্ছা পরে জিজ্ঞেস করা যাবে। আগে আমি আমার তলোয়ার টা নিয়ে আসি। এখন তো আকাশপুরী তে হামলা করবো। শালারা এখানে এসে হামলা করেছিলো সাহস কত বড় ওদের। এখন আমি একা গিয়েই সবাইকে খতম করবো। আমি চলে আসলাম সেই গর্তের মধ্য দিয়ে পাতালপুরীতে। আমার তলোয়ার আর ট্রিশুল এখনো পরে আছে দুটো দুটোর জায়গায়। হিগমার শরীর দুটো এখনো পরে আছে। একদিন হয়ে গেছে। ভাবলাম আজকে ওর দু ভাগ হওয়া শরীরটাকে মাটি দিয়ে দি।
।
ভাবার পরের কাজটা করে ফেললাম। এভাবে থাকলে গন্ধ তৈরী হতো। আমি দাড়িয়ে তাকিয়ে ছিলাম যেখানে হৃদিতার জ্বলে যাওয়া অংশ দাফন করেছিলাম। হঠাৎ হাল্কা একটা বাতাস বয়ে গেলো। আমি অবাক হলাম। কারন এই পানির নিচে হঠাৎ বাতাস আসবে কোথা থেকে। কিছুই বুঝলাম না। হঠাৎ ধমকে গেলাম আমি। কারন সামনে আমি হৃদিতাকে দেখতে পেলাম। ঠিক সেই মুচকি হাসিটা দিলো যেটা ও শেষ আমাকে দেখে দিয়েছিলো। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছিলো না। এটা কিভাবে সম্ভব?
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((সমাপ্তি)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
সিজন 2 শেষ হয়ে গেলো। এবার পালা সিজন ৩ এর। অপেক্ষা করুন #সিজন_3# এর।