পার্টঃ০৯
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী(পিচ্চি)
।।।।
।।।।
।।।।
ভাবলাম এখন যাবো বাস স্টেশনে। কিন্তু না সেটা হলো না। জারা আমাকে নিয়ে রিক্সায় উঠলো। রিক্সা ওয়ালা মামাকে ওপার বাজারের র্যাফেলস হোটেলের সামনে দাড় করালো। স্টেশন তো আরো সামনে তাহলে এখানে দারালাম কেনো?
.
--এখানে কেনো?(আমি)
.
--আমরা পালাবো আগে বিয়ে করে নিবো না। তারপর তো পালাবো।(জারা)
.
--ও হ্যা বিয়ে ও তো করতে হবে।(আমি)
.
--তাহলে নামো। ঔযে দোতলার কাজি অফিসে আমার বন্ধুরা দাড়িয়ে আছে।(জারা)
.
--হুমমম চলো।(আমি)
।।।
।।।
জারাকে নিয়ে উপরে উঠতে যাবো। কিন্তু অবাক হলাম কারন আমার বাইক আমি এখানে দেখলাম। তাহলে আবিদ ও এখানে। কিছুই মাথায় ঢুকতেছে না। ভিতরে ঢুকলাম দেখি আবিদ আর দিয়া দাড়িয়ে আছে। সাথে মনে হয় জারার দুই বান্ধুবী ও আছে। আমি আবিদকে দেখে অবাক হলাম।
.
--কিরে তুই এখানে?(আমি)
.
--হ্যা দুজনে তো পালিয়ে যাবি। কিন্তু বিয়ের সময় বয়সের ঝামেলা হয় সেটা তো জানোস। তোর দ্বারা সেটা কি সমাধান সম্ভব হতো। তাই তোর প্রেমিকা আমাকেই বলেছিলো যাতে তোদের বিয়েটা দিয়েই তোদের পাঠিয়ে দি।(আবিদ)
.
--মানে তোরা আগে থেকে প্লান করে রাখছোস।(আমি)
.
--হ্যা আবার না। তারা তারি করতো।(আবিদ)
।।।
।।।
আমাদের বিয়েটা রেজিস্ট্রি করা হয়ে গেলো তার পর,
.
--যাক তোর বোনের মতো বউ তো আর পেলাম না। যাকে ভালোবাসি তাকেই পেলাম।(আমি)
.
--হ চান্দ বুঝবা তুমি পরে।(আবিদ)
.
--কি বুঝবো রে।(আমি অবাক হয়ে)
.
--কিছুই না তুমি চলো তো আধা ঘন্টা পর আমাদের বাস ছেড়ে যাবে।(জারা)
.
--হুমমম চলো।।। ঔ তোরা থাক। আমরা হানিমুন করে আসি৷ আম্মু জিজ্ঞাসা করলে বলিস বউমা নিয়ে পালাইছি।(আমি)
.
--আচ্ছা।(আবিদ)
।।।
।।।
।।।
আমার হাতে লাগেজ ধরিয়ে দিলো জারা। আবারো রিক্সা নিলাম বাস স্টেশন পর্যন্ত। নতুন স্টেশনে পৌছেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাসটাতে উঠে পরলাম। একটু পর ই বুঝলাম এটা কাপলদের জন্য ঠিক করা। সব কাপলরা কক্সবাজারে যাবে তাই এটা ভাড়া করেছে। আমাদের সব ব্যাগ আমরা রেখে বসে পরলাম। জারা বসলো জানালার পাশে। আমার হাতের মধ্যে দিয়ে ওর হাত দিয়ে আমার কাধে মাথা দিয়ে শুয়ে রইলো জারা। সে কি মুহুর্ত সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। আমি চুপ ছিলাম তাই ওর চোখ বন্ধ করে ও শুয়ে রইলো আমার কাধে। আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।
।
হঠাৎ একটু দুষ্টুমি করতে মন চাইলো। তাই ওর কপালে দিলাম হালকা পরে একটা চুমু। কিন্তু নরলো না। হালকা একটু হেসে দিলো। তারপর দিলাম দুই চোখের উপরে চুমু। এখনো নরলো না। তারপর দিলাম নাকের উপরে। তারপর ঠোটের দিকে দিতে যাবো তখনি চোখ খুলে ফেললো। আমি চুমু দেওয়ার জন্য ঠোট তৈরী করেছিলাম। আমার এমন অবস্থা দেখে ও সরে গিয়ে বসলো।
.
--কি করতে ছিলে?(জারা)
.
--তোমাকে উঠাচ্ছিলাম।(আমি)
.
--তাই বলে এভাবে সবার সামনে আমার লজ্জা করে না বুঝি?(জারা)
.
--ওরে আমার লজ্জাবতি। দেখবোনে এতো লজ্জা যায় কোথায়।(আমি)
.
--জানো কত অপেক্ষা করেছি এই দিনের আমি।(জারা)
.
--আমি কি কম করেছি।(আমি)
.
--আমার থেকেও কম করেছো।(জারা)
.
--জ্বী না আমি বেশী করেছি।(আমি)
.
--কখনোই না। আমি বেশী করেছি।(জারা)
.
--তোমার সাথে ঝগড়া করে আমি পারবো না।(আমি)
.
--কি আমি ঝগড়া করি।(জারা)
.
--হ্যা তা নয় তো কি করো?(আমি)
.
--তোমাকে কি করতে মন চাচ্ছে জানো?(জারা)
.
--চুমু দিতে মন চাচ্ছে।(আমি)
.
--না মারতে মন যাচ্ছে।(আমার গলায় টিপ দিতে দিতে)
.
--আহহহহ।(আমি একটু মরার নাটক করলাম)
.
--এই নাটক কইরো না তো।(জারা)
.
--....(আমি নরছি ও না কথাও বলছি না)
.
--কি হলো মজা কইরো নাতো।(জারা)
.
--.......
.
--এই কি হয়েছে তোমার।(কান্না মাখা সুরে বললো)
......
।।।।
আমি চোখ খুললাম দেখি চোখ লাল হয়ে গেছে। এখনি চোখ দিয়ে বৃষ্টি পরতো। আমাকে নরা দেখে আমাকে আলতু পালতু কিল ঘুষি দিতে লাগলো জারা।
.
--শয়তান,বাদর,হনুমান জানো কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।(জারা কাদতে কাদতে আর আমাকে মারতে মারতে বললো)
.
--ভালোবাসো আমাকে?(আমি)
.
--জানো না কতটা ভালোবাসি।(জারা)
.
--তাহলে আসো।(জারাকে বুকে জরিয়ে নিলাম)
।।।।
।।।।
এখন তো আর কোনো বাধা নেই আমাদের ভালোবাসায়। এখানে শুধু আমি আর আমার ভালোবাসা। যাকে শুধু আমি ভালোবাসি। যাকে ভালোবাসি তাকেই আমি পেয়েছি এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া আর কি চাই আমার।। বাস চললো তার যাত্রা পথে। আমরাও চলে আসলাম কক্সবাজারে।।।
।।।।
।।।।
টুইস্ট এখানেই
।।।।
।।।।
এই পর্যন্ত কাহিনীটা বলছিলাম এক লেখিকা এর কাছে। অনেক জোর করেছিলো আজ অনেকদিন যাবৎ। তিনি নাকি আমার জীবন নিয়ে একটা গল্প লেখতে চান। আসলেই তো আমার জীবনটা অনেক রহস্যের মাঝেই ছিলো।
.
--স্যার আপনি থামলেন যে?(লেখিকা)
.
--আমার আজকে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং রয়েছে। আজকের মতো এই পর্যন্তই। আপনি পরে একদিন দেখা করুন।(আমি)
.
--ঠিক আছে স্যার।(লেখিকা)
।।।।
।।।।
লেখিকার সাথে কথা বলে চলে আসলাম আমার মিটিং রুমে। অনেক বড় একটা ডিল হবে আজকে। আমার ম্যানেজার তো বললো এই ডিল আমাদের আর যে কম্পানির সাথে হতে যাচ্ছে দুজনের জন্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতোক্ষন লেখিকাটার সাথে কথা হয়েছিলো আমারই পূর্বের কাহিনী নিয়ে যেটা আজ থেকে ৭ বছরের আগের কাহিনী। অনেক দিন ধরেই আমার সাথে ফেসবুকে পরিচয়। একদিন বলেছিলাম আমার জীবনে অনেক রহস্য। সেটা জানার জন্যই সে আজকে আমার অফিসে আসছিলেন। তা ও তো পুরো টুকু জানাতে পারলাম না। অবশ্য তিনি একজন মেয়ে, নাম সুনাইনা রহমান। ডাকনাম ইনা। অনেক বড় মানের লেখিকা তিনি। এখন আমার জীবন নিয়ে গল্প লেখতে চান তিনি। তাই তো আমার পিছনে ঘুরছেন অনেক দিন থেকেই।
।
।
আমি বোর্ড রুমে চলে আসলাম। ১ মাস হয়েছে আমি আম্মুর কম্পানি টেকঅভার করেছি। আম্মু আর এখন মানসিক চাপ নিতে পারছে না। এতোদিন লন্ডনে ছিলাম ১ মাস আগেই ফিরেছি। এই বিজনেসে এতো জ্ঞান না থাকলেও ঠকার অভ্যাগ ৭ বছরে আর হতে দি নি। সবার পরেই মিটিং রুমে এসে বসলাম। এসেই আমার সিটে এসে বসলাম।
.
--Good afternoon ladies and gentleman. Sorry I am late. There was an interview to attend. So plz start the metting.(আমি)
.
--আমাদের সাথে আপনার আম্মা মিসেস সামেলা চৌধুরী যে চুক্তি করেছিলো আমরা তাতেই খুশি আছি। শুধু আমাদের কাজটা ঠিক মতো হলেই হলো।(আলটাফ সরদার)
.
--হ্যা আমরা সেটা গুরুত্ব সহকারে করবো। তাহলে এখানে আর কোনো সমস্যা আছে। কেউ কি নতুন কন্ট্রাক করতে ইচ্ছুক।(আমি)
.
--না।(সবাই এক সাথেই বলে উঠলেন)
.
--তাহলে জামান মামা সবার সাথে পুরোনো কনট্রাক টাই নতুন করে নিন।(আমি ম্যানেজারকে বললাম)
.
--হ্যা স্যার করছি। কিন্তু স্যার এখনো তো খান গ্রুপের কেউ আসলো না।(ম্যানেজার)
.
--যাদের মধ্যে সময়ের কোনো জ্ঞান নেই তাদের সাথে আমি ডিল করতে পারি না।(আমি)
.
--কিন্তু স্যার ওনারাই আমাদের শহরের টপে আছে। আর আমরা আপনার দ্বিতীয়তে আছি। মিসেস চৌধুরী মানে আপনার আম্মু তো এই চিন্তাতেই অসুস্থ হয়ে গেছেন।(ম্যানেজার)
.
--এখন আমি এসে গেছি তো কোনো চিন্তা নেই জামান মামা। ঔ কম্পানির মানুষের সাথে কিছু বোঝা পোড়া আমার ও রয়েছে। কিছু জিনিস পাবে ওরা আমার থেকে।(আমি)
.
--স্যার মিসেস নাসরীন খানের মেয়ে নিলাঞ্জলা জারা এসেছেন।(ম্যানেজার)
।।।।
।।।।
নামটা শোনা মাত্রই আমি তাকালাম। সেই চিরচেনা মানুষটা আজকে আমার সামনে। সেই মানুষটা যাকে ছাড়া একটা মুহুর্ত অন্ধকার ছিলো। সেই মানুষ যাকে নিয়ে আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম। সেই চিরচেনা মেয়েটা আজ আমার সামনে দাড়িয়ে। আমাকে দেখে অনেকটা অবাক হলো। কারন আমি বেচে আছি সেটা দেখে অবাক হওয়ারই কথা। আমি তো সবার কাছে মারা গিয়েছিলাম। তবে বেচে কিভাবে ফিরলাম এটাই ভাবছে সবাই। হ্যা ভাবার কারন আছে কিন্তু সেটা খুব রহস্যজনক। অনেকটা ভয় পাচ্ছে নিলা সেটা ওর দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু আমি স্বাভাবিকভাবেই বসে আছি। আমার মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই। থাকবেই না কেনো। আমি যে বেচে আছি এটাই তো রহস্য তাই না। আমার সবচেয়ে চেনা মুখ আমার সামনে দেখছি যার উপরে আজকে আমার রাগার কথা ছিলো আমি কেনো রাগছি না তার উপরে রহস্য তো এখানেই। যেই নিলা হানিমুনে নিয়ে তার স্বামীকে হত্যা করতেও দ্বিধা বোধ করে না তাকে দেখে রাগ হবে না কার। রাগ সবারই হবে। সেই রাগটা আমার ও হচ্ছে। তবে লেখিকাকে বলার বাইরেও আমাদের কিছু কাহিনী ছিলো যেটা খোলামেলা হবে এখন থেকে।। আমার পরিবারের পাওয়া প্রত্যেকটা কষ্টের প্রতিশোধ আমি নিবো। কেনো করছে নিলা সেটাও জানবো যেটা আমার ভাই না জানতে পেরেই মারা গিয়েছিলো।
।।।
।।।
নিলা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আমার দিকে তাকিয়ে তো থাকবেই। কারন ভূত দেখেছে।
.
--এখানে একটা মিটিং হচ্ছে। এটা আপনার বাসা না যে আপনি যে কোনো সময় আসবেন আর যাবেন। সময় ঠিক ঠাক করবেন নাহলে মিসেস চৌধুরীর ছোট ছেলের বউমা আপনি সেটা আমি ভুলে যাবো।(আমি)
.
--আমি দুঃখিত রাস্তায় একটু জ্যাম ছিলো।(নিলা)
.
--সেটা বাদ দিন। সামনে মিটিং থেকে যেনো আর লেট না হয়।(আমি)
.
--হুমমম।(নিলা)
।।।।।
।।।।।
আমাদের কম্পানির ২০% শেয়ার নিলার নামেই। কারন আম্মু তাকে এখনো নিজের বউমাই ভাবে। শুধু আমি ছাড়া কেউ ওর আসল পরিচয় জানে না। অবশ্য আমিও জানতাম না। কিন্তু সেদিনের ফোন কলের পর থেকে অনেক কিছুই জেনেছি আমি।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((((চলবে)))))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।