পার্টঃ০৩
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী(পিচ্চি)
।।।।।
।।।।।
।।।।।
ক্লাসটা শেষ করে আমি বাইক নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলাম। নিজের আজকে অনেকটা ভালোই লাগছে। আবারো অনেক দিন পর একটু মুক্ত হয়েছে। তবে পুরোটা মুক্ত হতে পারলে হয়তো ভালোই হতো। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। বসে বসে পড়তে ছিলাম। কারন সামনেই হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষা। রিসাল্টের চিন্তা আমার নেই। কারন এই পর্যন্ত প্রত্যেকবার টপ আমিই করেছি। কিন্তু নতুন কলেজ আবার অনেক মানুষকেই আমি চিনি না। এর মাঝে যদি কেউ আমাকে ছাড়িয়ে যায় তখন। আমি কারো কাছেই পরাজিত হতে চাই না। এবারো টপ আমাকেই করতে হবে। কানে হেডফোন দিয়ে জেমসের বাবা গানটা শুনছিলাম আর পদার্থ এর কিছু অঙ্ক করতেছিলাম। আমার একটা বদঅভ্যাস কিছু লেখলে আমি কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনি আর লেখি। গানের সাথে আমার লেখার একটা নিবিড় সম্পর্ক। পরীক্ষার হলেও যদি এই কার্যপ্রণালী আমাকে প্রয়োগ করতে দিতো তাহলে নিশ্চিত আমি এতোদিন ক্যামব্রিজ নাহলে অক্সফোর্ডে থাকতাম। এগুলো নিয়ে কখনো ভাবি না। তবে কাহিনীতে আসি।
।
পড়তে ছিলাম তখন কোন শালাই যেনো ফোন দিলো। গান শোনার সময় অবশ্য কেউ ফোন দিলে আমার রাগের সীমা থাকে না। রাগের সীমা পার করে দিলো যখন তিনবার ফোনটা বেজে উঠলো। রাগে গজ গজ করতে করতে ফোনটা হাতে নিলাম। একটু শান্তি মত পড়তেও দিবে না এই ফোন। দেখলাম একটা আননোন নাম্বার। আমি সাধারনত আননোন নাম্বারের কোনো ফোন রিসিভ করি না। কিন্তু এতোবার ফোন দিলো মনে হচ্ছে কোনো জরুরী কাজ তাই ফোন দিছে।
।
এসব ভাবতে ভাবতে ফোন কেটে গেলো।রিসিভ করতেই পারলাম না। ভাবলাম আবার মনে হয় ফোন দিবে তাই ফোনটা পাশে রেখে আমি আবারো গান শুনতে শুনতে অঙ্ক করতে লাগলাম। কিন্তু আর ফোন আসতেছে না। মনে হচ্ছে ঔপাশের মানুষটা মারা গেছে। সেটা নিয়ে ভাবনা বাদ দিলাম। একটু পর আবার ফোন আসলো এবার রিসিভ করতে যাবো এমন সময় কেটে গেলো।
।
আমি তো পুরো অবাক হয়ে গেলাম যা আমাকে বোকা বানানো হচ্ছে। দাও চান্দু আবার ফোন দাও আমি এবার তোমার ফোন ধরবোই। অনেকক্ষন ফোন হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। ঠিক আবারো ফোন আসলো। আমি সাথে সাথে ধরে ফেললাম। ধরেই কানে দিলাম।
.
--হ্যালো কেরে তুই আমাকে এভাবে রাতে বিরক্ত করতেছোস।(আমি)
.
--আপনি আমাকে কল করুন তো। আমার ফোনে টাকা নাই কেটে যাবে।(একটা মিষ্টি কন্ঠের মেয়ে)
.
--আরে আমি কেনো কল করতে যাবো আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নাই।(আমি)
.
--টুট.টুট.টুট.টুট।(যা লাইনটা কেটে গেলো)
।।।
।।।
দুর এই মেয়েটা আবার কে? জানা নাই শোনা নাই আমাকে ব্যাক করতে বলতেছে। আমার তো কোনো কাজ নাই ওর সাথে। আমি কেনো ফোন দিতে যাবো। আমি মোবাইলে আবারো গান বাজিয়ে দিয়ে অঙ্ক করতে লাগলাম। হঠাৎ ভাবলাম যদি কোনো বিপদে পরে আমাকে ফোন দিয়ে থাকে মেয়েটা। দেখি একটু কথা বলে মেয়েটা কি বলে। যদি কোনো সাহায্য করতে পারি।।।। আমি মানবতার ক্ষাতিরে তাকে ফোন দিলাম।
.
--এতোক্ষন লাগলো আপনার ফোন দিতে। নাকি আমার মতই আপনার ফোনে টাকা থাকে না।(মেয়ে)
.
--আচ্ছা কে আপনি বলুন তো আর আমাকে ফোন দিয়েছেন কেনো?(আমি)
.
--আমি কে সেটা শুনে লাভ নাই। আর ফোন দিয়েছি আপনার সাথে কথা বলতে।((মেয়ে)
.
--জ্বী আমার সাথে কোনো কথা আপনার থাকতে পারে না। কারন আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলি না।(আমি)
.
--হ্যা সেটাও জানি। কিন্তু আপনি অনেক বড় পাপ করে ফেলছেন।(মেয়ে)
.
--কি আমি পাপ করেছি। আমি আবার কি করলাম।(আমি)
.
--কি করেন নি বলেন। আমার ফোনে ৪৯ পয়সা ছিলো। সেইটা দিয়ে আব্বুকে,আম্মুকে,মামাকে,বড় ভাইয়াকে,খালামনিকে সবাইকে মিসড কল দিতাম। আর আপনি আমার মিসড কল ধরে কথা বলে আমার সব টাকা কেটে দিছেন।(মেয়ে)
.
--মাত্র ৪৯ পয়সা কাটার জন্য আমি পাপ করে ফেললাম। আপনাকে আমি ৪৯ টাকা রিচার্জ করে দিবো যান। এখন আমাকে পড়তে দেন বাই।(আমি)
.
--এই ফেন কাটবেন না। কারন আমি আর এখন মিসড কল দিতে পারবো না।(মেয়ে)
.
--কিছু বলার থাকলে বলেন নাহলে আমি কেটে দিচ্ছি।(আমি)
.
--আসলে আমি আপনাকে দেখতে চাই কালকে। আমার সাথে একটু দেখা করবেন।(মেয়ে)
.
--পাগল নাকি আমি আপনাকে চিনি না জানি না। কিসের জন্য আপনার সাথে দেখা করবো আমি।(আমি)
.
--আপনি কি দেখা করবেন কি না সেটা বলেন।(মেয়ে)
.
--না আমি এইসব ফালতু কাজ করি না।(আমি)
.
--কি আমার সাথে দেখা করা ফালতু কাজ।ওকে ঠিক আছে। আমি কালকেই যাচ্ছি আপনার বাসায়।(মেয়ে)
.
--আপনি আমার বাসা চিনেন।(আমি)
.
--চিনবো না কেনো? আপনি তো মিসেস সামেলা চৌধুরীর একমাত্র ছেলে। আপনার বাসা কে না চিনে।(মেয়ে)
.
--দেখেন ফোন রাখেন।আপনি যা করার করেন কিন্তু আমাকে বিরক্ত করতেছেন।(আমি)
.
--কি আমি বিরক্ত করতেছি তাই না। আমাকে তো চিনেন না। আমি কালকে আপনার বাসায় গিয়ে কি বলবো জানেন। আমি আপনার বাচ্চার মা হতে চলেছি।আপনি আমার সাথে কুকর্ম করে পালিয়ে আসছেন।(মেয়ে)
.
--What....এসব কি বলতেছেন। আমি আপনার সাথে আবার কি করলাম।(আমি)
.
--কিছু করেন নি তবে আমার কথা না শুনলে আমি এইটাই করবো।(মেয়ে)
.
--ঠিক আছে কোথায় দেখা করতে হবে বলেন।(আমি)
.
--এইতো ভালো ছেলে। এভাবে কথা শুনলেই ভালো লাগে। কালকে আমাকে গভঃ গার্লস স্কুল থেকে পিক করে নিয়ে যাবেন।তারপর কোথায় যেতে হবে আমি বলে দিবো।(মেয়ে)
.
--ওকে তারপর তো আর বিরক্ত করবেন না?(আমি)
.
--সেটা নাহয় দেখা করার পরই বলবো।(মেয়ে)
.
--আমি চিনবো কিভাবে আপনাকে?(আমি)
.
--আপনার চিনার দরকার নাই।আমি নিজেই আপনার কাছে চলে আসবো। তাহলে কাল ১২ টাই চলে আসবেন। যদি না আসেন তাহলে কি করবো বুঝতেই পারছেন। পুরো ২৪ টা কেইস করে দিবো আপনার উপরে। আর জেনে রাখুন আমার মামা কিন্তু ডিসি।(মেয়ে)
.
--হুমমম বাই।(আমি)
.
--আজব তো আপনি।(মেয়ে)
.
--কেনো আমি কি করলাম।(আমি)
.
--এতোক্ষন একটা মেয়ের সাথে কথা বললেন এখনো মেয়ের নামটাই জিজ্ঞাসা করলেন না।(মেয়ে)
.
--আমার জানার কোনো ইচ্ছা নাই। কালকে দেখা করছি তারপর আর কোনো কথা হবে না আমাদের।(আমি)
.
--সেটা সময়ই বলে দিবে। আমার সাথেই তো সারাজীবন কথা বলবেন।(মেয়ে)
.
--কিছু বললেন কি?(আমি)
.
--না। কালকে আসুন তাহলে।আর হ্যা আমার নাম জারা।(মেয়ে)
.
--হ্যা এখন রাখছি।(আমি)
।।।।
।।।।
ফোনটা ফ্লাইট মুড দিয়ে আবারো গান শুনতে ছিলাম। দুর আমার কতটা সময় নষ্ট করলো মেয়েটা। আর কি মেয়ে সোজা বাসায় আসার হুমকি দিলো। এতো পুরো গুন্ডী মেয়ে। কিন্তু আমাকে মনে হয় ভালো করে চিনে না। তাই আমার সাথে এভাবে কথা বললো। কালকেই সব তেজ বের করে দিবো। আমাকে ফোন করে মিষ্টি মিষ্টি কথা শোনানোর ফল কালকেই বোঝাবো।।।।
।
আমি পড়া শেষ করে রাতের খাবার খেতে নিচে গেলাম।
.
--বাপ্পী।(আম্মু)
.
--হ্যা আম্মু।(আমি)
.
--আমি আর তোর বাবা আজকে গিয়েছিলার তোর শ্বশুরবাড়িতে।গিয়ে তোর বউকে নিয়ে আসতে চাইছিলাম।(আম্মু)
.
--কিন্তু বউমা বললো তুই যেদিন ইচ্ছা করে ওকে দেখতে যাবি সেদিনই ও বাসায় আসবে।(বাবা)
.
--তোমরা কি চাও আমি ওকে নিয়ে আসি।(আমি)
.
--ও বলেছে আমরা যেনো তোর উপরে চাপ না ফেলাই ওকে নিয়ে আসার জন্য। তুই যেদিন সেচ্ছায় যাবী ও সেদিনই আসবে।(আম্মু)
.
--তাহলে তো ভালোই। আমি আমার অনার্সের পরীক্ষার পর ওকে আনতে যাবো যাও।(আমি)
.
--সেটার জন্য তো এখনো ৪ বছর বাকি।(আম্মু)
.
--আমার ইচ্ছা নাকি।(আমি)
।।।।
।।।।
।।।।
আম্মু ও হেসে সম্মতি দিলো। দুর এতো রহস্য আমি বুঝি না। আমার আম্মু হঠাৎ এতো বদলে গেলো কেনো। আমাকে বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই কেমন জেনো আগের মতো হয়ে গেছে। আগে যেমন আমার সব কথা,আমার সব আবদার শুনো এখনো আমি আমার আগের আম্মুকে দেখতে পাচ্ছি। দুর আর ভালো লাগে না। আমি উপরে এসে ঘুমিয়ে পরলাম।
।
পরের দিন আর কলেজে গেলাম না। রেডি হয়ে চলে গেলাম গার্লস কলেজের সামনে। বাজে ১২:১৫।আমি ১৫ মিনিট লেট।অনেক মেয়ে এতোক্ষন চলে গেছে। তা ও অনেক মেয়ে এখনো দারিয়ে আছে গেটের বাইরে। আমি তো চিনি না তাকে তাহলে কিভাবে বের করবো। কিছু না করে ভাবলাম ৫ মিনিট দারিয়ে থেকে তারপর চলে যায়। তো দারিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম স্কুল ড্রেস পড়া একটা মেয়ে তবে মুখে কালো হিজাব পড়া। আমি আর না তাকিয়ে ফোনটা বের করে ঘড়ি দেখলাম। মেয়েটা আমার পাশে এসেই বললো,
.
--এতো দেরী হলো কেনো আপনার?(মেয়ে)
.
--তাহলে আপনিই জারা?(আমি)
.
--হ্যা। আগে বলেন দেরী হলো কেনো?(জারা রেগে বললো)
.
--আমি কি আপনার বয়ফ্রেন্ড নাকি যে আপনি ডাকবেন আর আমি সময় মতো দারিয়ে থাকবো।(আমি)
.
--আমি যেহেতু বলেছি তো আপনি সময় মতোই আসবেন। আর বাইক স্টার্ট করুন।(জারা)
।।।
।।।
আমি কিছু বলবো তার আগেই আমার পিঠে হাত রেগে বাইকের পিছনে বসে আমাকে বাইক স্টার্ট দিতে বললো,
.
--মানে বাইক স্টার্ট দিবো কেনো। আর তুমি আমার পিছনে বসলা কেনো।তারাতারি নামো বলছি।(আমি)
.
--আমাকে তুমি করে বললেন।(জারা)
.
--আমার ছোট তুমি বলতেই পারি। ছোট বোনের মতো তুমি আমার।(আমি)
.
--কি একদম এই আলপিন দেখছেন এইটা দিয়ে মুখ সেলায় করে দিবো। আমি আপনার কোন কালের বোন লাগি হ্যা।(জারা)
.
--দেখো আমার পিছনে এভাবে পরে কোনো লাভ হবে না তোমার। শুধু শুধু সময় নষ্ট না করাই ভালো।(আমি রেগে বল্লাম)
.
--আচ্ছা যান আপনাকে বিরক্ত করবো না। কিন্তু আমাকে আজকের সারাদিন আপনার বাইকে ঘুরাবেন?(জারা)
.
--মোটেও না। তোমার বয়ফ্রেন্ডকে বলো সে ঘোরাবে।(আমি)
.
--থাকলে তো বলবো।(জারা)
.
--তোমার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগছে যদি ভাড়া না থাকে তাহলে বলো আমি ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি। বাসায় গিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করবা দেখবা মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে। আর সব ভূত ও চলে যাবে।(আমি)
.
--কি বললেন। আমার মাথায় ভূত আছে বোঝাতে চাইছেন। আপনার মায়ের নাম্বার ০১৭৪৫*****৮ না। দাড়ান এখনি কল দিয়ে বলতেছি আপনি আমার উপরে কি অবিচার করেছেন।(জারা)
.
--এই না একদম এটা করবেন না।(আমি)
.
--তাহলে আমাকে ঘোরাতে নিয়ে যান।(জারা)
।।।।
।।।।
মেয়েদের প্যারা আমার এইজন্য ভালো লাগে না।। মেয়ে যে এতো জেদি হবে সেটা কে জানে???
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((((চলবে)))))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ৪র্থ পার্টের জন্য।