পার্টঃ০৪
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী(পিচ্চি)
।।।
।।।
।।।
বাইক স্টার্ট দিলাম। কোথায় যাবো জানি না। আমার তো একটু ও আশা নেই এই মেয়েকে সাথে নিয়ে ঘোরার। আম্মু দেখলে কি বলবে একটা মেয়ের সাথে ঘুরতেছোস। অবশ্য হেলমেট মাথায় দেওয়া আছে কোনো সমস্যায় হবে না।
.
--কোথায় যাবেন।(আমি)
.
--ধলার মোড়ের নাম শুধু শুনেই গেছি। সেখানে নাকি সমুদ্রের পাড়ের বিচ এর মতো সুন্দর করে সাজানো। আমাকে সেখানে নিয়ে যান।(জারা)
.
--সেখানে তো প্রেমিক প্রেমিকারা যায়। আমি আপনাকে সেখানে নিয়ে গেলে তো সবাই আমাদের লাভ বার্ডস ভাববে।(আমি)
.
--ভাবুক সমস্যা কোথায়। আপনি না ভাবলেই তো হলো।(জারা)
.
--আচ্ছা আমাকে ব্লাকমেইল করে যে এসব করছেন কোনো লাভ কি হচ্ছে আপনার?(আমি)
.
--হবে না কেনো। চলুন তো তারাতারি।(আমাকে জরিয়ে ধরলো শক্ত করে)
.
--এভাবে জরিয়ে ধরছেন কেনো।(আমি)
.
--না ধরলে পরে যাবো তো।(জারা)
.
--আমি বাইক আসতেই চালাচ্ছি। পরবেন না।(আমি)
.
--আসলে ভয় লাগছে প্রথম কারো বাইকে উঠেছি তো।(জারা)
.
--তাহলে উঠছেন কেনো। আমি কি উঠতে বলছি।(আমি)
.
--আপনি এমন কেনো বলেন তো।(জারা)
.
--কেমন?(আমি)
.
--এতো সুন্দরী একটা মেয়ে আপনাকে সময় দিতে চাইছে আপনি কোনো পাত্তাই দিচ্ছেন না।(জারা)
.
--আমি ওমন ছেলেই না।(আমি)
.
--এই তাহলে কি আপনি ঔ টাইপের ছেলে?(জারা)
.
--ঔ টাইপের বলতে কি বোঝাতে চাইছেন?(আমি)
.
--মানে যাদের ছেলেদের ভালো লাগে?(কিছুটা হেসে বললো জারা)
.
--ঔ একদম ঠিক হচ্ছে না কিন্তু আমি কিন্তু নামিয়ে দিয়ে চলে যাবো।(আমি)
.
--আরে রাগছেন কেনো। আমি তো মজা করলাম। আমাকে নামিয়ে দিলে আমি ঘুরবো কার সাথে।(জারা)
.
--আরো অনেক ছেলে আছে। আমাকে যেমন ব্লাকমেইল করে বাধ্য করছেন এমনি একটাকে খুজে নেন।(আমি)
.
--সবাইকে তো আর এখন বলতে পারবো না। যার উপরে অধিকার আছে তাকেই বলতেছি।(জারা)
.
--অধিকার আছে মানে? আমার উপরে আপনার কি অধিকার?(আমি)
.
--সেটা জানতে হবে না। চলুন তো তারাতারি।(জারা)
.....
।।।।
আর কিছু বল্লাম না। কারন বুঝে গেছি এটার সাথে কথা বলে আমি পারবো না। তার চেয়ে আজকের মতো কথা শুনি। আজকেই পিছু ছুটে যাবে যখন বলবো আমার বিয়ে হয়েছে। হ্যা এই বুদ্ধি আগে প্রয়োগ করলেই তো হতো। শুধু শুধু আমি এখানে আসছি। ওকে নিয়ে ধলার মোড়ে চলে আসলাম। অনেকদিন ধরে এখানে আমার ও আসা হয় না। আর জারা যেভাবে দেখছে মনে হচ্ছে প্রথমবার এসেছে এখানে। আমি বাইকটা পার্ক করলাম বাইকস্টান্ডে।
।
জারা আমার পাশে এসে দারালো। আমার থেকে ৫ ইঞ্চির ছোট হবে হয়তো ও। এখন সামনা সামনি একটু দেখলাম। মায়াবী চোখ দুটো। বেশ গাড় করে কাজল নেওয়া তাতে। গাড় কাজলে ওর চোখ দুটোকে আরো সুন্দর করে দিচ্ছে। হিজাব দিয়ে মুখ ঢাকা। কিন্তু মুখের খোলা জায়গা আর হাত দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক সুন্দর হবে। কিন্তু আমার এতো কিছু দেখে কি লাভ। এটা তো মনে হয় আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেছে। আমি কিছু খাওয়াইয়ে এটাকে শান্তনা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দি।।। হঠাৎ দেখা হলো আগের একটা বন্ধুর সাথে।
.
--আরে বাপ্পী যে।(রানা)
.
--আরে মামা তুমি। কতদিন পরে দেখা। কেমন আছোস?(আমি)
.
--এই তো আছি। তুই কেমন আছোস? মনে হচ্ছে ভাবিকে নিয়ে ঘুরতে আসছোস। ভাবি কেমন আছেন?(রানা)
.
--আরে ভাবি হতে যাবে কেনো?(আমি)
.
--থাক থাক বুঝি আমি। কাউকে জানাতে চাস না। কিন্তু আন্টিকে জানিয়ে দিস। পরে একা জানলে কিন্তু কষ্ট পাবে।(রানা)
.
--আরে কি শুরু করলি ভাই। বাদ দে তুই এখানে?(আমি)
.
--আরে ঔযে দোকানে দেখ আমার গফ তার বান্ধুবী নিয়ে আসছে সেখানেই যাচ্ছি।(রানা)
.
--তাহলে যা। সময় দে।(আমি)
.
--হ তুমি ও দাও। ভাবি কিন্তু পছন্দ হয়ছে।(রানা)
।।।।
।।।।
শালা চলে গেলো। আমার তো রাগে মাতা হিট হয়ে যাচ্ছে। রানা তো জারাকে আমার গফ ভেবে নিয়েছে। অবশ্য আমার কোনো বোন নাই এটা ওরা জানে। যে দেখবে সেই ভেবে নিবে ও আমার গফ। ব্যাপার টা ভালোর দিকে যাচ্ছে না। জারার মিষ্টি হাসি শুনতে পেলাম। ওর হাসি আমাকে অসহায় করে দিলো আরো। হ্যা বেশী করে হাসো একটু পরে কান্না করবে।
.
--আচ্ছা আমরা তো দুপুরে এসে ভুল করলাম মনে হয়।(জারা)
.
--কেনো ভুল করবো কেনো?(আমি)
.
--কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না। শুনেছি এখানে নাকি অনেক ভির হয়।(জারা)
.
--সেটা বিকালে হয়। এখন তো দুপুর। এখন লোকজন পাওয়া যাবে না।(আমি)
.
--তাহলে আমরা এখন কেনো আসলাম।(জারা)
.
--এখন লোকজন কম এখন একটু ঘুরিয়ে আপনাকে বাসায় দিয়ে আসবো।(আমি)
.
--উহু।।। আপনি আমাকে যখন এখন নিয়ে আসছেন আমি তো এখানের মজাটাই দেখতে পারবো না। আমি এখানে ঘুরবো আর বিকালে আমাকে বাসায় দিয়ে আসবেন।(জারা)
.
--এটা কিন্তু ঠিক না। আমি আপনাকে বেশী ক্ষন নিতে পারবো না?(আমি)
.
--কেনো আমার প্রেমে পরে যাচ্ছেন মনে হচ্ছে?(জারা)
.
--প্রেমে সেটা তো প্রশ্নই উঠে না। আমার তো তোমাকে ধরে পিটাইতে মন চাচ্ছে।(আমি)
.
--কি আমাকে চিনেন। পুরো ১৩৩ টা মামলা করবো আপনার নামে। তখন বুঝবেন কত মজা আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার।(জারা)
.
--তুমি তো দেখছি অনেক ডেন্জারাস।(আমি)
.
--হ্যা। চলুন তো আমার ক্ষিদে পেয়েছে খুব। লান্স করবো দুজনে।(জারা)
.
--চলো।(আমি)
।।।।
।।।।
আমাদের ফরিদপুরের এই জায়গাটা অনেক পরিচিত এর মনোমুগ্ধকর পরিবেশের জন্য। পদ্মা নদীর বড় একটা শাখার পাশেই এই ধলার মোড়ের অবস্থান। নদীর পাড়ে অনেকটা জায়গা নিয়ে চর জেগে আছে। যারা কখনো কক্সবাজার যায় নি তাদের জন্য এই জায়গাটাই মিনি কক্সবাজার। জারা তো শুধু আশে পাশে তাকাচ্ছে আর দেখছে। আমি রাস্তা থেকে নিচে নেমে গেলাম। বালুর এই রাস্তাই নেমে গেছে। এখানের নামকরা একটা অস্থায়ী রেস্টুরেন্ট এই বালুর চরের উপরেই হয়েছে। আমি জারাকে সেখানেই নিয়ে গেলাম।
.
--এটাই এখানের সবচেয়ে নামী দামী রেস্টুরেন্ট কি খাবে বলো?(আমি)
.
--wow জায়গাটা তো সেই সুন্দর। মনে হচ্ছে আমি সমুদ্রের পাড়ের কোনো এক বিচে এসেছি। আর এমন জায়গায় রেস্টুরেন্ট হবে সেটা তো ভাবি ও নি।(জারা)
.
--হ্যা বলো কি খাবে এখন।(আমি তো আপদটা বিদায় করতে চাচ্ছি তারাতারি)
.
--এখানের কি সবচেয়ে ভালো।(জারা)
.
--সবই সবচেয়ে ভালো।(আমি)
.
--আপনি যেটা খাবেন আমি ও সেটাই খাবো।(জারা)
.
--এটা কেমন কথা। আমি যেটা খাবো সেটা যদি খেতে না পারো।(আমি)
.
--হ্যা পারবো। না পারার কি আছে। মানুষের খাবারই তো খাবেন।(জারা)
.
--ওকে ঠিক আছে।(আমি)
।।।।
।।।।
আমার এক ছোট আমাকে দেখেই এগিয়ে আসলো।
.
--আরে ভাইয়া আপনি এখানে?(হিমেল)
.
--আরে হিমেল যে। এখানে কি?(আমি)
.
--ভাইয়া এটা আমাদের রেস্টুরেন্ট। কয়েকজন বন্ধু মিলে খুলেছি।(হিমেল)
.
--হুমমম অনেক নাম হয়ে গেছে। শুধু শুনেই এসেছি এখানের রেস্টুরেন্ট টা অনেক ভালো। আজকে এসে দেখা ও হয়ে গেলো।(আমি)
.
--ভাইয়া কি খাবেন বলেন। আর ভাবী এইযে নিন অর্ডার মেনু।(হিমেল)
.
--আবার।(যা আবারো মাথা হিট করে দিলো। ওরে ভাবী বলতেছে কেরে মানুষ। দেখলাম জারা বেশ ভালোই মজা নিচ্ছিলো)
.
--আমার মেনু কার্ড লাগবে না। আপনার ভাইয়া যা অর্ডার করে সেটাই দুটো নিয়ে আসেন।(জারা পুরো আমার বউ এর মতো কথাটা বললো। আমি তো রাগে দাত করমর করতেছি)
.
--ভাইয়া কি খাবেন আপনারা?(হিমেল)
.
--আমি তো কাচ্চি আর রুইমাছের কাবাব খাবো। শুনেছি এটা নাকি এখানের স্পেশাল।(আমি)
.
--ওকে আমি নিয়ে আসছি।(হিমেল)
.
--সাথে দুটো স্পুন আর সসের ব্যবস্থা করিস।(আমি)
.
--ওকে ভাইয়া। ঔ রাজীব ভাইয়ার দুটো স্পেশাল অর্ডার হয়েছে। তারাতারি হাত চলা। ভাইয়া আপনারা গল্প করেন আমি ২ মিনিটেই আপনাদের খাবার নিয়ে আসছি।(হিমেল চলে গেলো)
.
--মাছ কি খুব পছন্দ করেন আপনি?(জারা)
.
--হ্যা কেনো করবোনা। মাছ আমার অনেক ভালো লাগে। কেনো তুমি পছন্দ করো না।(আমি)
.
--করবো না কেনো আমি ও অনেক পছন্দ করি।(জারা)
.
--দেখো সবাই আমাদের লাভ বার্ডস ভাবতেছে। আমি বেশীক্ষন থাকতে পারবো না এখানে। পরে আমার ইজ্জত থাকবে না।(আমি)
.
--ভয় পাচ্ছেন কেনো। নাকি আমার প্রেমে পরে যাওয়ার ভয়ে আছেন।(জারা)
.
--মোটেও সেটা নয়। আমি বিবাহিত। সো প্রেমের পরার মতো কারন হতেই পারে না।(আমি)
.
--কি বললেন আপনি বিবাহিত।(জারা কিছুটা অবাক হয়ে বললো)
.
--হ্যা আমি বিবাহিত। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তো প্রেমে পরার প্রশ্নই আসে না।(আমি)
.
--তো কি হয়েছে আপনি বিবাহিত। তাও তো আমার প্রেমে পরতে পারেন তাই না।(জারা)
.
--সেটা হবে না আশা করি।(আমি)
.
--হ্যা সেটাই হবে।(জারা)
.
--আমি বলছি তাই সেটাই হবে।(আমি)
.
-দুর আপনি এই টপিক বাদ দিন তো। আমি বিবাহিত সো এসব টপিক নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো।(যা আর মনে হয় জ্বালাবে না)
।।।
।।।
আর কিছু বলতে পারলাম না। এর মাঝে আমাদের খাবার চলে আসলো। কাচ্চি দেখে আমার মুখে পানি চলে আসলো।সাথে রয়েছে রুইমাছের কাবাব। আমি তো তর সইতে পারছি না। হুমরি খেয়ে পরলাম। সস দিয়ে শুরু করলাম খাবার। কি আর বলবো সে এক অসাধারন টেস্ট। কিন্তু জারা কাচ্চি তো ঠিকই খাচ্ছে। কিন্তু মাছ খেতে গিয়েও খাচ্ছে না। বুঝলাম মাছ ওর পছন্দ নয়। কিন্তু আমি কিছু করতে পারি না। যেহেতু বলেছে আমি যা খাবো সেটাই খাবে ও। তাই আমি আর কিছু বল্লাম না।
।।।
কিন্তু আমি অবাক হয়েছি ও যখন মুখ খুলো খাওয়ার জন্য তখন ওর চেহারা দেখে। এতো সুন্দর মেয়ে আমি আমার জীবনেও হয়তো একটা দেখি নি। এখন হয়তো নিজেরই আফসোস হচ্ছে কেনো যে এতো সুন্দরী মেয়ের সামনে বলতে গেলাম আমি বিবাহিত।এর সাথে একটু প্রেম করতে পারলেই তো জীবনটা ধন্য হতো।
।
কিন্তু সেটা করলাম কোথায়। একটা সিদ্ধান্তই তো সব উল্টে দিলো। খাবারটা খেয়ে হিমেলের থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বের হলাম।
.
--আপনার ফোনটা দিন তো।(জারা)
.
--কেনো?(আমি)
.
--কিছু ছবি তুলবো আমি।(জারা)
.
--তোমার ফোন আছে সেটা দিয়ে তুলো।(আমি)
.
--আমার ফোনে চার্জ নেই। ব্যাগের মধ্যে বন্ধ হয়ে পরে আছে। আপনারটা দিন।(জারা)
.
--ওকে বাট কয়েকটা তারপরই বাসায় দিয়ে আসবো। তারপর তুমি তোমার মতো। আমি আমার মতো। আমাকে ডিসট্রাব করবে না আর।(আমি)
.
--হুমম ডিসট্রাব করবো না। কিন্তু এক শর্তে।(জারা)
.
--আজকের পুরো বিকালটা আমাকে দিবেন। আমি এখন বাসায় যাবো না। আমাকে নিয়ে নৌকায় ঘুরতে যাবেন। যদি রাজী থাকেন তাহলে কোনো দিনও ফোন দিবো না আপনাকে।(জারা)
.
--আচ্ছা তাহলে বিকাল পর্যন্তই।(আমি)
.
--আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।(অনেকটা খুশী হয়ে গেলে জারা আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে আমার গালে হাত দিয়ে বোঝালে আমি কত কিউট)
।।।
।।।
ওর কার্যকলাপে আমি রেগে গেলাম। শুরু করলো সেলফি তোলা। আমাকে সাথে নিয়ে কিছু তুললো। যেহেতু আমার ফোন তুলুক যতো তোলার। আমি পরে ডিলিট করে দিবো। কিন্তু নৌকার আবদার মনে হলো বেশী হয়ে যাচ্ছে। এতো দুর যাওয়া ঠিক হচ্ছে না। এই মেয়েটাকেও তো বলে বোঝাতে পারছি না। কিছু বললে আবার উল্টা পাল্টা কিছু আম্মুর সামনে না বলে দেই সেই ভয়ে আছি।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((((চলবে)))))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ৫ম পার্টের জন্য।