পার্টঃ১০
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।
।।।।
।।।।
.
--তো আপনি কি কোনো ধরনের নতুন কনট্রাক করতে চান আমাদের সাথে।(আমি)
.
--আপাতোতো কোনো ইচ্ছাই নেই এই কম্পানির সাথে কনট্রাক করতে। যদি কখনো খারাপ অবস্থা হয় তখন সেটা ভেবে দেখবো।(নিলা)
.
--তখন তো আমি কনট্রাকে রাজি নাও থাকতে পারি।(আমি)
.
--ভুলে যাবেন না আমিও এই কম্পানির ২০% শেয়ার হোল্ডার। আমার ও কিছু অধিকার রয়েছে এই কম্পানিতে।(নিলা)
.
--আপনি আপনার স্বামীর অস্থায়ীত্বে শেয়ার পেয়েছেন সেটা নিশ্চয় জানেন।(আমি)
.
--হ্যা।(নিলা)
.
--তো আপনার স্বামী এখন ফিরে আসছে সেটা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।(আমি)
.
--মানে?(নিলা)
.
--Every body metting is over. Will u guys give us some privacy...(আমি)
।।।।
।।।।
সবাই চলে গেলো। শুধু নিলা আমার সামনে বসে আছে। এটা ওর কাছে বড় সারপ্রাইজ। কারন কেউই জানে না মিসেস সামেলা চৌধরীর যমজ ছেলে হয়েছিলো। আর সেই দুইজনের একজন হলাম আমি। পুরো দুনিয়া এই বিষয়ে অবুঝ। কিন্তু আমরা ছিলাম দুই ভাই। যেটা শুধু আমাদের পরিবার ছাড়া কেউই জানতো না। আমার জন্মের পরেই আমার ছোট খালামনির বাচ্চা না থাকায় আম্মু আমাকে মানে আকাশ চৌধুরীকে তুলে দেন আমার খালামনির হাতে। একদম হসপিতাল থেকেই আমাকে দান করে দেন আমার খালামনির কাছে যাতে আমার বাবা আর আম্মু মায়া বেরে না যায়। তবে হাল্কা বড় হওয়ার পর থেকেই ব্যাপারটা জানতে পেরেছি। আমার ও একটা যমজ ভাই রয়েছে যার নাম হৃদয় চৌধুরী। কিন্তু আমার ঘঠনা সবার কাছেই চুপ থাকে। আমার খালামনি আর খালু আমাকে বাবা মায়ের মতোই বড় করেছেন আমার এক বছর হওয়ার পরই তারাই আমার বাবা মা হয়ে যায় আর আমি চলে আসি তাদের সাথে লন্ডনে। তবে বড় হওয়ার পর অনেকবার আমার আসল বাবা মা ভাই এর সাথে দেখা করেছি। এমনকি একবার ২ মাস ভ্রমন করেও গেছি। তখন হৃদয় ছিলো বাসার মধ্যে। মূলত আমিই বড় আর হৃদয় ছিলো ছোট। লেখিকার কাছে মিথ্যে বলার অনেকটা কারন ছিলো সেটা খোলাসা করতে চাই না। অনেকদিন যাবৎ ঘুরতে ছিলো মেয়েটা পিছনে পিছনে একটু ঘুরালে ভালোই লাগে।
।
নিলা চুপ চাপ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। কি করবে বুঝতে পারছে না ও। কারন তার মৃত স্বামী তার সামনে। যাকে নিজ হাতে মেরেছিলো আজ সে তার সামনে জীবিত হয়ে আছে। অনেকটা রহস্য রয়েছে এর মাঝে। কিন্তু নিলা সেটা বের করতে পারছে না। অনেকটা রহস্য রয়েছে যেটা আমিও এখনো বের করতে পারি নি। তবে সময় তো আছেই বের করার।
.
--মনে হচ্ছে অনেকটা অবাক হয়েছো তাই না।(আমি)
.
--হ্যা।(নিলা)
.
--এটা ভাবছো যে তোমার স্বামী মারা গেছে জীবিত হলো কিভাবে তাহলে?(আমি)
.
--হ্যা।(নিলা)
.
--তখন কি বলেছিলাম। মিসেস চৌধরীর ছোট ছেলের বউ।(আমি)
.
--ছোট ছেলে মানে তোমরা কি দুই ভাই?(নিলা)
.
--মনে হয় কনফিউশনে রয়েছো। আমি তোমার স্বামী নই। যে তোমার স্বামী ছিলো সে আমার ছোট ভাই হৃদয়। আর আমি আকাশ।(আমি)
.
--মানে টুইনস।(নিলা)
.
--ইয়েস।(আমি)
.
--বিশ্বাস হচ্ছে না!(নিলা)
.
--না হওয়ারই কথা। তবে এটাই সত্য।(আমি)
.
--কিন্তু আপনার খবর তো কেউ জানতো না। হৃদয় এর যে যমজ ভাই ছিলো সেটা ও তো কেউ জানতো না।(নিলা)
.
--হ্যা। আমি আমার কথা বলে দিয়েছি। আজকে আম্মু তোমাকে বাসায় যেতে বলছে। গিয়ে আম্মুর সাথে কথা বললেই ক্লিয়ার হয়ে যাবা।(আমি)
.
--হুমমম।(নিলা)
.
--তাহলে যাওয়া যাক এখন বাসায়।(আমি)
.
--এখন আমাকে বাবার কম্পানিতে যেতে হবে একটু।(নিলা)
.
--এখনো আপনি চৌধুরী বাড়ির বউ হয়ে আছেন। আপনার বিয়ে এখনো হয় নাই কারো সাথে। so আপনার স্বামীর ভাইয়ের আদেশের উপরে আপনার বাবার কম্পানি হতে পারে না।(আমি)
.
--হুমমম চলুন।(কিছুটা ভয় পেয়ে নিলা)
।।।।
।।।।
আমি ম্যানেজার কে বলে বের হলাম নিলাকে নিয়ে। আমার ভাই এর সাথে খুব ভালোই খেলেছিলো এই মেয়েটা। ওরা এই কোমল কোমল কথায় আমার আম্মু পরে ওকে সাহায্য করেছিলো। আম্মু যদি জানতো কাকে সাহায্য করেছিলো তাহলে নিশ্চয় এমন মেয়েকে কখনোই বউমা করতেন না। আমি নিলাকে নিয়ে সোজা বাসায় আসলাম। আম্মুর সামনে এসে দারালাম।
.
--আম্মা ওর যে যমজ ভাই ছিলো এটা তো কখনো আমাকে বলো নি তুমি আমাকে?(নিলা)
.
--তোকে বলতাম ঠিকই। আমাদের পরিবারের সাথে যখন মিশে যেতি তখন আকাশ বেরাতে আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার আগেই হৃদয় মারা যায়। কোনো কিছু ঠিক হচ্ছিলো না। আকাশ তখনি চলে আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু ওকে আমি মানা করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিলো শত্রুপক্ষ মনে হয় ওকেও হামলা করবে।(আম্মু)
.
--তো এখন কি আমাদের কম্পানি উনিই দেখবে।(নিলা)
.
--হ্যা। ওর সব পরিচয় ছিলো অন্য নামে। কিন্তু এখন থেকে হৃদয় চৌধুরী মরে নি। সে আমার আকাশের মাঝে বেচে আছে।(আম্মু)
.
--তাহলে আমার স্বামীর পরিচয়ে উনি থাকবে।(নিলা)
.
--হ্যা।(আম্মু)
.
--কিন্তু?(নিলা)
.
--আমি তোর মনের কথা বুঝতে পারছি। তাই তো তোদের বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতেছি।(আম্মু)
.
--আম্মু?(অবাক হলো নিলা)
.
--জানি আমার ছেলেকে অনেক ভালোবাসতি। কিন্তু তোর এতো দুঃখ দেখি কেমনে বল। আমি তো কত বল্লাম তুই একটা বিয়ে করে ফেল। কিন্তু করলি না। তাই ভাবলাম তোকে তোর হৃদয় ফেরত না দিতে পারলেও ওর মতো কাউকে তো দিতে পারবো।(নিলা).
.
--কিন্তু উনি কি রাজি?(নিলা)
.
--আমার কোনো সমস্যা নেই এসবের মধ্যে।(আমি)
.
--তাহলে আম্মু আমার ও কোনো সমস্যা নাই। তবে আমি আগে বাবা মার সাথে কথা বলতে চাই।(নিলা)
.
--ওদের সাথে আমার কথা হয়েছে। ওরাও রাজি এতে। বরং এখনি আসছে ওরা আমাদের বাসায়।(আম্মু)
.
--সব তাহলে আগে থেকেই ঠিক করে রাখছেন।(নিলা)
.....
।।।।
আর কোনো কথায় হলো না। নিলার বাসা থেকে লোক আসলো আর আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন আমার ছোট ভাইয়ের বউ এর সাথে। অবশ্য আম্মুকে এই বুদ্ধি আমিই দিয়েছিলাম। কারন এতে করে আমি অনেক কাছে আসতে পারবো ওর। যদি বিয়ের পর আমাকে মারার কোনো রকম চেষ্টা ও করে তাহলে তো ধরা খেয়েই যাবে। আর আমাকে মারা কি এতো সহজ হবে।
।।।
।।।
আমাকে যে করেই হোক বের করতে হবে আমার অজানা সব রহস্য। আমি তো অনেক কিছুই জানি না। সেগুলো আমাকে জানতে হবে। বিয়ে ছাড়া সেগুলো আমার জানার কোনো উপায়ই নাই। বিয়েটা সাধাসিদা হয়েছে। যাতে লোকজন না জানতে পারে। জানলে আমাদের জন্যও দুর্নাম আর নিলার বাবার জন্য ও। বিয়ে হতে হতে রাত হয়ে গেলো।
।
রাতে আমি বাসর ঘরে ঢুকলাম। কিছুটা ভয় করছে। দেখা গেলো মেয়ে আমাকে বাসর রাতেই মেরে ফেললো। বলা তো যায় না। তাই একটু সুরক্ষা নিয়ে ঢুকলাম বাসর ঘরে। এর মাঝেই আম্মু ওকে সুন্দর একটা শাড়ি পরিয়েছে। লাল টুকটুকে শাড়ি মাথায় ঘোমটা নিয়ে বসে ছিলো বিছানায় আমার দরজা আটকানোর আওয়াজ পেয়ে আমার পা ধরে সালাম করলো। যা বাবা আমি কি ভেবেছিলাম আর মেয়ে কি। তবে কি ও এই কাজ করে নি। না আমি তে সেদিন ফোনে স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিলাম হৃদয় এর কথা। সেখানে ও এই নিলার কথায় বলেছিলো। না হয়তো নতুন চাল। নাহলে আমাকে নিয়ে নতুন সংসার করবে সেটা ও হতে পারে। হতেও পারে এমন হৃদয় এর উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার ছিলো তাই তাকে হত্যা করেছে। কিন্তু এখন আমার সাথে সংসার করবে। আবার এমনও হতে পারে আমাকেও হত্যা করবে। জানি না তবে বিয়ে ছাড়া অনেক মজা লাইফে নিয়েছে। দেখি সেই মজাটা বিয়ে করলে পাল্টে যায় কিনা। আর কোনো কথা হব্বে না। লাইট অফ করলাম। তারপর রোমান্টিকতা দেখাতে শুরু করলাম। নিলা চুপই ছিলো। কারন তার স্বামী আমি এখন। আমার পুরো অধিকার আছে। রাত গেলো ভালোবাসার চরম পর্যায়ে পৌছে। অবশ্য আমার তরফ থেকে ভালোবাসা দেখানো হলো না। আমি তো আমার রাগ জেদ মিটাচ্ছিলাম।
।।।
।।।
সকালের মিষ্টি রোদে চোখ ঢলছিলাম। দেখি তখনি নিলা গোসল করে বের হয়েছে। পরনে একটা টাওয়েল। মাথার চুল গুলো একটা টাওয়েল দিয়ে প্যাচানো। আমার উঠা দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো ড্রেসিং টেবিলের সামনে। নিজের মাথার টাওয়েলটা খুলে চুল আচড়াতে লাগলো নিলা। আমি পিছনে গিয়ে দারলাম। আমার পিছনে দারানো দেখে নিলা উঠে আমার দিকে তাকালো।
.
--কি হলো তাকিয়ে আছেন যে?(নিলা)
.
--না দেখছি।(আমি)
.
--কি দেখছেন।(নিলা)
.
--যাকে বিয়ে করলাম তাকে দেখছি।(আমি)
.
--ও।।। জানেন কখনো ভাবি নি আবার বিয়ে করবো। কিন্তু আপনার আর হৃদয় এর চেহারা এক তাই আমি আর মানা করতে পারলাম না।(নিলা)
.
--হুমমম।(আমি)
।।।
।।।
আমি তাকিয়ে ছিলাম নিলার দিকে। অনেক মায়াবী চেয়ারা সেটা বলতেই হবে। আমার ভাই এটার মোহে পরে গিয়েছিলাম। ভালোবেসেছিলো ওকে কিন্তু সেটার কোনো মূল্যই দেই নি এই পাষাণ মেয়েটা। চোখ পরলো নিলার গলার নিচের দাগ টাতে। আমার দেওয়া দাগটা। কালকে রাতে দিয়েছিলাম কামড়। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তবে অর্ধেক টাওয়েল দ্বারা ঢাকা পরেছে। আর বাকিটুকুতে আমি হাত বুলালাম। নিলা ব্যাথা পেলো মনে হয়।
.
--খুব লেগেছিলো মনে হয়।(আমি)
.
--কালকে তো আপনার দেওয়া কামড়টা বুঝতেই পারি নি। তবে আজকে সকাল থেকে অনুভব করছি কামড়ের ব্যথাটা।(নিলা)
.
--আমাকে কি ভালোবাসবে?(আমি)
.
--আপনার চেহারা পুরো হৃদয় এর মতো। আপনাকে হৃদয় ভেবেই ভালোবাসবো আমি।(নিলা)
.
--হুমমম।(আমি নিলার ঠোটে একটা চুমু দিলাম। তারপর জরিয়ে ধরলাম ওকে। আমাকে ও শক্ত করে জরিয়ে ধরলো নিলা। তখনই আম্মু ডাক দিলো নিচ থেকে)
.
--যান গোসল করে নিচে আসুন।(নিলা)
.
--হুমমম ড্রেস পরে তুমি যাও আমি আসছি।(আমি)
.
--হুমমম।(নিলা)
।।।।
।।।।
আমাকে নাকি হৃদয় এর মতো ভালোবাসবে। মানে আমাকেও মারবে এই নিলা। দারাও মেয়ে আমার উপরে তোমাকে পাগল করে ছারছি। আমাকে তো চিনো না। এমন কোনো মেয়ে নেই যাকে আমি পাগল করি নি আমার উপরে। তারা তো কোনো অপরাধ ছাড়াই শাস্তি পেয়েছে। কিন্তু তুমি তো অনেক বড় অপরাধ করে ফেলছো। তোমাকে কি করে আমি ছেড়ে দি বলো। কঠিন শাস্তি দিবো আমি তোমাকে। অনেক বড় শাস্তি দিবো। ভালোবাসার নামে যে আমার ভাইকে হানিমুনে নিয়ে খুন করেছে। সেটার শাস্তি ও আমি ওর ভাবেই দিবো।
।।।।।।।।।।
।।।। ।।।।
।।। ।।।
।। ।।
। ।
((চলবে))
। ।
।। ।।
।।। ।।।
।।।। ।।।।
।।।।।।।।।।
অপেক্ষায় থাকুন ১১তম পার্টের জন্য।