ওয়েবসাইট কাস্টমাইজেশন এর জন্য। Contact Us Welcome!

গল্পঃ ভালোবেসেছি তোরই মতো পর্বঃ ১১

Bangla Dub Novels

 #ভালোবেসেছি_তোরই_মতো

#পর্বঃ১১

#লেখিকাঃশাদিয়া_চৌধুরী_নোন

______________________________

নিবিড় টেবিলে একটা বারি মারলো। চোখ টকটকে লাল আকার ধারণ করেছে।

---- আমি কোনো বিশ্বাসঘাতককে আমার লাইফে আসতে দেবো না। সব মেয়েই খারাপ! সবাই!


নিবিড় বাকরুদ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো। নিজের অজান্তেই আচমকা ঝর্ণার বেগে অশ্রুকণা পড়তে লাগলো। আষাঢ়ের কালো মেঘের ন্যায় তার মনেও হুরহুর করে বজ্রপাত হলো। নিজেকে সামলাতে চেয়ে আরো আরো বেসামাল হয়ে পরলো নোরিন। টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো। 


নিবিড় চলে গেছে। নোরিনের দিকে একবার ফিরেও দেখলো না। ভালোবাসা?  কীসের ভালোবাসা?  এসব ভালোবাসার কোনো দরকার নেই। ভালোবাসা ছাড়া সবাই থাকতে পারে। কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না। জীবন নিজের নিয়মে চলবে। সব আবেগ। কয়েকদিন পরে এমনিই কেটে যাবে। 


নোরিন আলুথালু পায়ে ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে কাতরাতে লাগলো। মেঝেতে গড়াগড়ি খেলো, ইচ্ছে মতো কাঁদলো। তার হৃদয় পোড়ে ছারখার হয়ে গেলো। কারণ নিবিড়ের ফেরত আনা শার্টের বুকপকেটে তার ঐ দুইলাইনের লিখা কাগজটাও আছে।  অবুঝ নয় সে। নিবিড় খুব কৌশলে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে, বেশ ভালোমতো বুঝতে পারলো। কেনো নিবিড়? আমি কি ভালোবাসার যোগ্য নই? আমার সমস্ত আবেগ দিয়ে লিখা কাগজটা তুমি কেনো ফেরত দিয়ে দিলে? কেনো আমাকে বুঝোনি? শতশত প্রেমিক পুরুষকে পেছনে ফেলে আমি তোমাকে বাছাই করেছিলাম নিবিড়! তুমি আমার ভালোবাসাকে ফেলনা ভাবতে পারো না। আমি সেই অধিকার তোমাকে দিইনি। নিবিড় তুমি কেনো ভালোবাসো না? তুমি তো না বলে চলে গেলে,  আমাকে খুন করলে আমি এখন কি করবো? তুমি যে আমার মনটাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলে কীভাবে জোড়া লাগাই? নিবিড় তুমি মিলিয়ে নিও, আমার মতো করে কেও তোমাকে ভালোবাসতে পারবে না। একদিন তুমিও আমাকে ভালোবাসবে, ঠিক আমার মতো। কিন্তু হয়তো আমি সেই ডাক আর শুনবো না। যে ভালোবাসাকে আজ তুমি ফেলনা ভেবে ছেড়ে গেলে, সেই ভালোবাসাকেই তুমি কুড়িয়ে নিতে চাইবে। কিন্তু আমি ফেরত নেবো না। আমি তোমাকে একটুও ভালোবাসবো না নিবিড় ভাইয়া৷ তুমি আমার ভালোবাসার যোগ্য নও। আমি তোমাকে আর ভালোবাসবো না।


নোরিন ঠিক তেমনটাই কাতরাতে লাগলো, যেমনটা সে মায়ের সামনে  করে। নোরিন কাগজটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললো। তারপর জ্ঞান হারালো। প্রচন্ড মানসিক চাপে, অবহেলায় সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। 


রাতে যখন আজমল আলী সেরনিয়াবাত মেয়ের ঘরে গেলেন, দেখলেন ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।  তিনি বেশ কয়েকবার ডাকলেন নোরিনকে। জবাব এলো না। বাইরে থেকে মানুষ আনা হলো। দরজা ভাঙা হলো। মেয়ে তার অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পরে আছে। জানালা দিয়ে হুরমুর করে বাতাস ঢুকছে। মেয়ের গায়ে শাল নেই, মানকি টুপিটাও নেই, ঠান্ডা ফ্লোরে পা রাখা দুষ্কর সেখানে নোরিন শুয়ে আছে। সামনের চুলগুলো পুরো মুখ ঢেকে দিয়েছে। আজমল আলী শক্ত পাথরের মতো জমে গেলেন৷ এ কি দশা হয়ে গেলো মেয়ের৷ মেয়েটা হয়েছে ভীষণ চাপা স্বভাবের, কাউকে কিচ্ছু বলবে না। সে নিজেই যেনো সবজান্তা। তিনি নোরিন পর্যন্ত যেতে পারলেন না। লাইলা, রাধুনি মেয়েটাই নোরিনকে দিয়ে তুললো। আজমল আলী বুক অজানা আশঙ্কায় কাঁপছে। নোরিনকে রাত ন'টায় হসপিটালে ভর্তি করানো হলো। টানা দুইদিন সে জগতের আলো দেখলো না। দু'দিন পর যখন চোখ খুলে দেখলো, আজমল আলী তার হাত ধরে পাশে বসে আছেন। নোরিনের চোখের কোণা বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। বুকে সূক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব করলো। সবকিছু অর্থহীন মনে হতে লাগলো, মনের কোথাও যেন বিশাল একটা ফাঁকা জায়গাকে সে আবিষ্কার করলো।


--- মা তোকে কে কষ্ট দিয়েছে একবার বল! আমি তার লাইফ হেল করে ছাড়বো। তোকে কে কষ্ট দিয়েছে বল একবার শুধু।  


নোরিন বাবার হাত ধরে শুধু কেঁদেই গেলো। কোনো উত্তর দিতে পারলো না। আজমল আলী ভাবলেন, এতোদিন পর নানুবাড়িতে ঘুরে এসে নোরিন তার মায়ের জন্য কাঁদছে। মায়ের ভাবনায় তার অসুস্থতার কারণ। সুতরাং ব্যাপারটা ওখানেই চেপে গেলো। 


দিন কাটতে লাগলো। নোরিন খুব যত্নে  বদলে ফেললো নিজেকে। কে নিবিড়!  কোন নিবিড়! সে কাউকে চিনে না। নিবিড় নামক কোনো ছেলেকে নোরিন চেনে না। নিবিড়ের কথা মাথায় আসলেই নোরিনের নিজের প্রতি রাগ হয়। জীবনের প্রথম সে কাউকে মন দিয়েছিলো, সে কিনা রিফিউজ করে দিলো। তাও নোরিনকে? নোরিনের তখন ইচ্ছে হয় নিবিড়কে কুচি কুচি করে কচু গাছের মতো কেটে ফেলতে। কেনো সে নিজেকে প্রকাশ করে ফেললো? নোরিন প্রতিজ্ঞা করে ফেললো, সে নিজেকে কোনোদিন নিবিড়ের সামনে দাঁড় করাবে না।  

নোরিন পড়াশোনাই নিজেকে সম্পূর্ণরুপে বিলিয়ে দিলো। নিজের রুপে, গুণে দিনদিন নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে লাগলো। সব ছেলেদের কাছে সে এক স্বপ্ন। নোরিনের মনে একটুখানি জায়গার জন্য তারা কত কিছুই না করে। একদিন এক ছেলে তার সামনে হাত কেটে ফেললো। নোরিনের সামনে বসে হাতজোড় করে ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে লাগলো। পুরো কলেজে হইহই রইরই রব পড়ে গেলো৷ মেয়েরা গভীর চোখে ছেলেটাকে দেখছে৷ এভাবেও কেঁদে কেউ! কিন্তু নোরিনের মনে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। ছেলেটা তাকে বলতে লাগলো,

---- নোরিন কলেজে আসার সেই প্রথম দিন থেকে তোমাকে দেখে আসছি। একটু ভালোবেসে দেখো নোরিন৷ কোনোদিন ঠকাবো না৷ প্লিজ নোরিন আমি আর পারছি না! 


নোরিন মনে মনে ছেলেটাকে বললো, " আমার মতো কখনো ভালোবেসেছো? নিশ্চয়ই বাসোনি।কাউকে গভীর ভাবে চেয়েও,  এক সমুদ্র ভালোবেসেও না পাওয়ার কষ্ট, অবহেলা অনুভব করতে পেরেছো? রাতের পর রাত কারো স্মৃতি আকড়ে ধরে বালিশ ভিজিয়েছো? তুমি তাকে ভালোবাসো জেনেও, শুধু তার দেয়া অবহেলাটা পেয়েছো? ভালোবাসার প্রকাশ করার পর অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছো? নিশ্চয়ই হওনি।" 

বাস্তবে নোরিন যেন খুব মজা পেলো। কাটা হাতটার দিকে আফসোসের দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর কৌতুক ভরা বাঁকা হাসি দিয়ে চলে গেলো। কলেজের টিচার'রা পর্যন্ত সেদিকে অবাক চোখে এক নিষ্ঠুর নোরিনকে পর্যবেক্ষন করছিলো। 


প্রতিরাতে নোরিন যখন ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করে,  তার চোখে আপনা আপনি ভেসে উঠে এক অশান্ত ছেলের মুখ। সেই গভীর চোখ যেন সবসময় হাসছে, পাগল করা হাসি, সুন্দর গোছানো চুল, খাঁড়া নাকের সে ছেলেটাকে৷ নোরিনের রাতে ঘুম হয়না৷ অদ্ভুত ব্যাকুল কষ্টে সে যেন দিনকেদিন পাথরে পরিণত হলো। আহা!  কি সে কষ্ট।  এই কষ্ট প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না, বলা যাবে না।  নোরিনের নিজেকে তখন খুব তুচ্ছ মনে হয়। যার কাছে তার বিন্দুমাত্র মূল্য নেই, তবুও কোনো সে ভাবনাতে আসে? আর কত বেহায়া হতে হবে? সে তো আর ভালোবাসতে চায়না। তবুও কেনো এই গোপন কষ্ট মুছে না? কেনো ভুলতে পারা যায় না? 

 তোমাকে ভুলতে গিয়ে তাই আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি, তোমাকে ঠেলতে গিয়ে দূরে আরো কাছে টেনে নিই, যতই তোমার কাছ থেকে দূরে যেতে চাই ততই মিশে যাই নিশ্বাসে প্রশ্বাসে। আমি তোমাকে সত্যি ভুলতে চাই নিবিড় কিন্তু পারছি না৷ তুমি প্লিজ আমার মন থেকে চলে যাও। 


#চলবে....

( আসসালামু আলাইকুম।  আমি এর আগে বলেছিলাম আমার ছোট পর্ব দেওয়ার কারণ। আপনারা যারা আমার আগের গল্পগুলো পড়েছিলেন, তারা জানেন আমি এতো ছোট পর্ব দিইনি কখনো৷ আমি আজ আবারো উত্তরটা বলছি,  আমার পরিবারে করোনা হানা দিয়েছে। কোনো কিছুই স্বাভাবিক নয়। তারউপর আমার এসাইনমেন্ট চলছে। সবকিছুর পরও আমি যতটুকু পারি লিখছি। আপনারা প্লিজ আমার পাশে থাকবেন৷ গল্পটি পড়লে অবশ্যই রেসপন্স করবেন৷ ধন্যবাদ।)

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.