পার্টঃ০৫
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।।
।।।।।
।।।।।
আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে রইলাম। মাথায় কিছুই কাজ করছে না তাই সাথে সাথে ১০০ টা পুশ আপ দেওয়া আরম্ভ করলাম। ব্যায়াম করলে নাকি মাথায় সব কিছু তারাতারি কাজ করে। তাই পুশ আপ শেষ করে হালকা উচু করা বেলকনির দেওয়ালে বসে পরলাম। লোকটার বলা কথা গুলো ভাবতে লাগলাম। তার কথা শুনে আমার নিজের ক্ষমতা গুলোর প্রতি অনেকটা টান অনুভূত হলো। আমি যে কি কি করতে পারি সেটা এখনো আমার অজানা। তবে চেষ্টা করে দেখতে তো দোষ নাই। ছোট বেলায় একবার এতো রেগে গিয়েছিলাম যে আমার চোখ দিয়ে নাকি আগুন বের হচ্ছিলো। অবশ্য এগুলো জ্বীন বিষয়ে কোনো জিনিস ভেবে আমার পরিবার তখন সেটা অবহেলা করেছিলো। কিন্তু আমি তো পরে বুঝতে পেরেছিলাম সেটা আসলে আমার একটা লুকায়িত ক্ষমতা। এই ক্ষমতা গুলো আমি আজ ও ব্যবহার করতে পারি না ঠিক মতো। রাত মনে হয় একটার মতো বাজে এখন। আমার ঘরের লাইটটা এখনো জ্বলতেছে। হঠাৎই আমি কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি আবার সাধারন মানুষের থেকে দিনে দ্বিগুন ভালো শুনতে পাই। আর রাত হলে সেই ক্ষমতা বেড়ে পাচগুন হয়ে যায়। এজন্য আমার বেশীর ভাগ মিশন গুলো রাতেই হয়। শত্রুপক্ষের হাটাচলা,কথোপকথন আমি দূর থেকেই শুনতে পাই কিছুটা। যার দরুন আমার জন্য সব সহজ হয়ে যায়। আমি আমার হাতটাকে শক্ত করে মুঠো করলাম চোখ বুঝে। কিছুটা মনোযোগ ও দিতে হলো। সাথে সাথেই আমার হাত দুটো দিয়ে কিছুটা আগুন বের হতে লাগলো। আমি তাকিয়ে আছি সেটার দিকে। এটা অনেক আগেই করেছিলাম। কাউকে এটা দেখাই নি এখনো। কারন আমার কাছে যেসব ক্ষমতা আছে সেগুলো আমার সেনাবাহিনীর কেউ জানতে পারলে নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে গবেষনা করবে তারা। এখন তো তারা জানে যে আমার হিয়ারিং টা অনেক ভালো। এবং আমি অনেক লাউড চিল্লাইতে পারে। আমার চিল্লানিতে যে কারো কানের পর্দা ফেটে যাবে। এ দুটো তেমন কোনো বড় ক্ষমতা না তাই আমাকে একজন সাধারন সুপার হিউম্যান ভেবে আমার উপরে গবেষনা চালাই নি আর। কিন্তু আমার কাছে এসব ক্ষমতা আছে সেটা জানতে পারলে কালকে থেকেই আমার উপরে গবেষনা শুরু করবে।
।
আমি আমার আগুন জ্বলা হাতের দিকে তাকিয়ে রইলাম। অনেক আশ্চর্যকর আগুন। পৃথিবীর কোনো কিছুই পুরে না এই আগুনে। বিশেষ করে আমার হাতের জামার উপরে ধরলেও সেটা পুরে না। দেখতে কিন্তু একদম আগুনের মতোই। আমি হয়তো এখনো এটার ব্যবহার শিখতে পারি নাই। আমাকে আস্তে আস্তে শিখতে হবে। কি আর করার একবার এই আগুন বের করলে আমি আর এটা নিভাতে পারি না। কেউ আমাকে এভাবে দেখলে খবর আছে। আমাকে শান্ত হতে হবে। সেটার জন্য যোগব্যায়াম করতে হবে। আমি আমার মাথা নিচে পা দুটো উপরে তুলে দিয়ে কিছুক্ষন যোগব্যায়াম করলাম। এটাই কাজে দেই আমাকে শান্ত করতে।
।
পায়ের আওয়াজটা এতোক্ষন আমার ঘরের দরজার ওপারে ছিলো। কিন্তু এবার হৃদির ঘরের বেলকনির দরজা খোলার শব্দ পেলাম। তার মানে হৃদি নাহলে নিলা দুজনের একজন বের হচ্ছে। নিলা হৃদির ঘরেই থাকে।
.
--কি হলো আপনার মাথা ঠিক আছে নাকি পাগলের মতো মাথা নিচে দিয়ে আর পা উপরে তুলে আছেন কেনো?(নিলা)
.
--Its yoga.(আমি)
.
--এতো রাতে কোন পাগলে yoga করে?(নিলা)
.
--কি?(আমি)
।।।।
।।।।
নিলার মুখে পাগল শব্দটা শুনে কিছুটা রাগ হলো আমার। আমার রুমের বেলকনি আর হৃদির রুমের বেলকনির দূরত্ব প্রায় ৯-১০ হাতের মতো হবে। আমি লাফ দেওয়ার চিন্তা করছিলাম।
.
--আরে কি করছেন। সত্যি তো পাগল হয়ে গেছেন। এমন করলে নিচে পরে হাত পা ভাঙবে আপনার।(নিলা)
।।।।
।।।।
আমি কথা না বলে এক লাফে ঔ বেলকনিতে চলে গেলাম। অবশ্য নিচেই পরে যেতাম তবে হাত দিয়ে বেলকনির দেওয়াল ধরেছিলাম তারপর উপরে উঠে গেছি।
.
--আপনি তো আসলেই পাগল একটা। কিছু যদি হয়ে যেতো আপনার?(নিলা)
.
--আমাকে পাগল বলা তাই না। আমার কি হবে? এখন আপনার কি হবে সেটা ভাবুন।(আমি)
.
--কেনো পারবেন নাকি আমাকে?(নিলা)
.
--মারবো কেনো এখান থেকে তুলে ফেলে দিবো।(আমি কিছুটা হেসে বললাম)
.
--এই না না। আমি মাফ চাচ্ছি। প্লিজ ওমন করবেন না।(নিলা)
.
--হাহাহহাহা। মজা করলাম।(আমি)
।
।
কথাটা বলেই আমি হাসতে লাগলাম। নিলাও আমার বুকে কিল মারতে লাগলো। মেয়েরা এতো শক্তি পায় কোথায়। এভাবে কিল মারলে তো মানুষের বুকের খাচা ভেঙে যাবে। হঠাৎই নিলা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম
.
--কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?(আমি)
.
--আমি তো আপনার ছোট তুমি করে বলুন না আমাকে। কেনো জানি আপনার কথায় নিজেকে বড় মনে হয়।(নিলা)
.
--আচ্ছা ঠিক আছে। তবে আগে বলো আমার দিকে ঔভাবে তাকিয়ে ছিলা কেনো?(আমি)
.
--পরশু তো আমার জন্মদিন কি গিফট দিবেন আমাকে?(নিলা)
.
--গিফট কি কেউ চেয়ে নেই?(আমি)
.
--হুমমম আমি চেয়ে নি।(নিলা)
.
--আচ্ছা চেয়ে যখন নাও। তাহলে কি লাগবে বলো যদি দিতে পারি তাহলে ঠিকই দিবো।(আমি)
.
--না না সেটা বললে হবে না। আমাকে প্রমিজ করেন দিবেন।(নিলা)
.
--আচ্ছা যাও করলাম। কি লাগবে তোমার?(আমি)
.
--আমার জন্মদিনের রাতেই বলবো সেটা আপনাকে।(নিলা)
.
--ওকে।(আমি)
.
--যান এখন ঘুমান।(নিলা)
.
--হুমমম।(আমি)
।।।।
।।।।
এবারো লাফ দিয়ে আমার বেলকনিতে চলে আসলাম। তারপর সেখান থেকে আমার রুমে। সকালে উঠে নাস্তা করে ভাইয়ার সাথে যেতে হলো তার অফিসে। আমাকে সব ভিডিও গুলো দেখাবে ভাইয়া।
.
--নে বসে বসে দেখ সব ফুটেজ। মামুন ও যেভাবে দেখতে চাই সেভাবেই দেখাও ওকে।(ভাইয়া)
.
--ঠিক আছে স্যার।(মামুন)
.
--না ভাইয়া ওনার প্রয়োজন পরবে না। সব ফুটেজ তো এখানেই আমাকে সময় দে একা কিছুক্ষন। আমি একাই দেখে নিতে পারবো।(আমি)
.
--আচ্ছা ঠিক আছে।(ভাইয়া)
.....
।।।।
ভাইয়া আর মামুন চলে গেলো। আমি এক এক করে সব ফুটেজ দেখতে লাগলাম। ভিডিও দেখে মজা পাচ্ছিলাম কারন টয়লেটের ভিতরে লাগাতে চাইছিলো ভাইয়া ক্যামেরা কিন্তু মির্জা সাহেবের ধমকে বাইরেই লাগিয়ে দেই ভাইয়া। এটাও একই রকম কাহিনী হলো মির্জা সাহেব টয়লেটে গেলো কিন্তু আর বের হলো না। বুঝতে পারলাম না টয়লেটের সাথে কিডন্যাপ হয়ে যাওয়ার কি সম্পর্ক। মনে হয় মির্জা সাহেবও ফ্লাশ হয়ে ভিতরে চলে গেছেন। কিংবা কোনো ভূত তাকে নিয়ে গেছে।
।।।।
।।।।
হৃদয় তুই আগে কেনো ভাবলি না এটা। কেসটা আমি ধরলে তো সব ব্যাপারই খুলে দিতে পারতাম এখন। ইনভিন্সিবিলিটির ব্যাপার আসছে এখানে। আমি তো এতোদিন জানতাম এই আশ্চর্যকর ক্ষমতা গুলো শুধু আমার কাছেই আছে। কিন্তু নিলার আব্বু যখন বললো হোল্ডার গ্রুপের বর্তমান সিইও এর কাছেও কিছু ন্যাচারাল ক্ষমতা রয়েছে। তাই পৃথিবীতে শুধু আমরা দুজনই এমন না সেটা কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যাচ্ছে। কিন্তু প্রমান ছাড়া তো কোনো কিছু বললে লোকে আমাকে পাগল বলবে। যদি আমি এখন সবার সামনে বলি যে একজন অদৃশ্য মানুষ এসে সব কিডন্যাপ করছে তাহলে সবাই আমাকে পাগল ভাববে। তাই এটা নিয়ে কিছু বলা যাবে না। আমি বের হলাম।
.
--কিরে কিছু পেলি?(ভাইয়া)
.
--হুমমম পেলাম তো।।।। টয়লেটে ফ্লাশ হয়ে গেছে।(আমি)
.
--ফাজলামি বাদ দে। কি পেলি সেটা বল?(ভাইয়া)
.
--আরে তোকে তো বলেছিলাম টয়লেটে ক্যামেরা দিতে। মির্জা টয়লেটে ঢুকলো আর বের হলো না।(আমি)
.
--এটাই তো বুঝতে পারতেছি না।(ভাইয়া)
.
--বুঝতে হবে না। তোর মির্জা সাহেব টয়লেটে ফ্লাশ হয়ে গেছে।(আমি হাসতে হাসতে বললাম)
.
--তাহলে তো পাইপ চেক করতে হবে।(ভাইয়া ও হাসতে হাসতে বললো)
।।।।
।।।।
ভাইয়ার সাথে এরপরে স্পটে গেলাম। আলী মির্জার বাড়িতে আসছি আমি। মির্জা সাহেবের বাড়িতে তেমন কিছু পেলাম না। তবে সবচেয়ে জরুরী জিনিসটাই আমি টয়লেটে ঢোকার বাইরের দেওয়া পেলাম। একটা কাগজের মতো কিছু একটা দেখতে পেলাম টয়লেটের ডান পাশের দেওয়ালের মধ্যে। কিন্তু এই কাগজটা দেওয়ালের ভেতরে ঢুকে রইছে কি করে। এটাকে বের করতে হবে যেভাবেই হোক। মনে হয় না এটা আগে থেকেই ছিলো এখানে। কারন টাইলস করা দেওয়ার সুন্দর্য নষ্ট করে দিচ্ছে জিনিসটা। ভাইয়া আমাকে ঔটা নারতে দেখে বললো
.
--এটাই আজব করার বিষয় জানোস। এই কাগজটা এখানে আগে ছিলো না। কিন্তু কালকেই এটা দেখতে পেয়েছি। টাইলস কেটে এটা বের করতে হবে মনে হয়।(ভাইয়া)
.
--হ্যা আমার ও তো তাই মনে হচ্ছে।(আমি)
।।।।
।।।।
ভাইয়া বের হয়ে গেলো। আমি কার্ডটাই হাত দিলাম একটু। কার্ডটাই হাত লাগার সাথে সাথেই আমি কার্ডটা ধরে ফেললাম। হ্যা সেটা তো সবাই জানে যে হাত দিলে তো ধরবোই। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো আমার হাত দেওয়ালের ভিতরে চলে গেছে। এবং আমি পুরো কার্ডটা ধরেই বের করে এনেছি। কিন্তু এতে দেওয়ালের কোনো পরিবর্তন হলো না। শুধু দেখতে পেলাম আমার হাতের কিছুটা জায়গা ঝাপসা হয়ে গেলো। আমি কার্ডটা হাতে নিলাম। বুঝতে বাকি রইলো না এই কার্ডটা কার। এবং এই কিডন্যাপের পিছনে কাদের হাত।
.
--কিরে তুই কার্ডটা বের করলি কিভাবে?(ভাইয়া)
.
--টান দিলাম আর বেরিয়ে আসলো।(আমি)
.
--আমিও তো টান দিয়েছিলাম কিন্তু বের তো হয় নি। কিন্তু দেওয়ালের ভিতরে ছিলো বের করার পর কোনো দাগ দেওয়ালে লাগে নাই এটা কি করে সম্ভব?(ভাইয়া)
.
--জানি না আমি টান দেওয়াতে তো বের হয়ে গেলো। আচ্ছা কি আছে সেটাই।(ভাইয়া)
.
--হোল্ডার কম্পানির কার্ড এইটা।(আমি)
.
--মানে এসবের পিছনে হোল্ডার কম্পানির হাত আছে।(ভাইয়া)
.
--হ্যা এবার আমি সিওর হয়ল গেছি। আর তোর পুলিশকে এখন এই হোল্ডারের কেস থেকে দূরে রাখ কারন কেসটা এখন আমার হাতে। বাসায় চল এটার ফাইল সব দেখাবো।(আমি)
.
--তারমানে এখানেও মিশন?(ভাইয়া)
.
--মিশনের জন্যই তো আসলাম বাসায় নাহলে কি আসতাম?(আমি)
.
--মানে এখনো রেগে আছোস আমার উপরে?(আমি)
.
--না তোর উপরে কেনো রাখবো বল।(আমি)
.
--দেখ ভাই আমি বিয়ে তখন কোনো ভাবেই করতে চাই নি। কিন্তু তোর ভাবি যতটা জেদি মেয়ে একবার বলেছে আমাকে এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে করতে হবে। আর আমি তো তোকে ছাড়া বিয়ে করতেই পারবো না। ওকে অনেক বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু সে শেষ পর্যন্ত নিজের হাতের শিরাও কেটেছিলো। তাই বাধ্য হয়ে বাবার আদেশে বিয়েটা করতে হয়েছিলো। আর তোকে তো অনেক কন্ট্রাক করার চেষ্টা করেছিলাম তুই তো পুরো ১ মাস একটা মিশনে ছিলি।(ভাইয়া)
.
--আরে আমি এটা নিয়ে রাগ করি নাই। যার যার ইচ্ছা। কে কখন বিয়ে করবে না করবে সেটা নিয়ে কি অন্য কেউ রাগ করতে পারে। আমি তো আমার বিয়েতে রাগ করবো(আমি হেসে বল্লাম)
।।।।
।।।।
ভাইয়াও চুপ হয়ে গেলো। এখন অথয়ের কাজকর্ম বুঝতে পারলাম। আমার সাথে ব্রেক আপ করার কারন মনে হয় এটাই ছিলো। সুন্দর, হ্যান্ডসাম বডিবিল্ডার সেই সাথে পুলিশের এসপি। এমন ছেলের সাথে যদি ছোট থেকেই বিয়ে ঠিক থাকে তাহলে একটা ফালতু লো ক্লাস টাইপের ছেলের সাথে কি কোনো মেয়ে প্রেম করবে। ভাইয়ার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে এটা ও জানতে পেরেছিলো তাই তো আমার সাথে ব্রেকআপ করেছিলো।
।
থাক যেটা হয়ে গেছে ভালো হয়েছে। আমাকে বর্তমান নিয়ে ভাবতে হবে। তবে এখনো ওর বলা কথাগুলো আমার কানে ভাসে। কোনো মেয়ের যোগ্য না আমি। আমার সাথে কোনো মেয়ের মিশতেও নাকি ইমেজে ভাসবে। কথাগুলো ও ভুলে গেলেও আমি আজও ভুলতে পারি নাই। প্রতিশোধ তো আমি ঠিকই নিতাম যদি ও আমার ভাইয়ের বউ না হতো। আমি আমার ভাইয়ের সংসার শেষ করতে চাই না। তাই এই জিনিসটা ভুলে যাওয়ায় ভালো।
।
তবে আমাকে এখন চোখ দিতে হবে একটু হোল্ডার গ্রুপের দিকে। আমার হোল্ডার এক্সের মিশনটা কালকে থেকেই শুরু করতে হবে।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ৬ষ্ঠ পার্টের জন্য।😊😊😊