পার্টঃ০৭
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী(পিচ্চি)
।।।।
।।।।
।।।।
.
--কি?(জারা)
.
--আমি মনে হয় তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। কালকে সারারাতই তোমাকে নিয়ে ভেবেছি।(আমি)
.
--বউ থাকতে অন্য কারো কথা ভাবতে লজ্জা করে না।(জারা)
.
--আমার কি দোষ। তুমিই তো আমার বিয়ে হয়েছে জানার পর ও কাছে আসলে।(আমি)
.
--আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আমার থেকে বাচার জন্য মিথ্যে বলেছিলেন যে আপনার বিয়ে হয়ে গেছে।(জারা)
.
--আমার তো বিয়ে হয়েছে। তবে ডিভোর্স ও তো হয়ে যাবে।(আমি)
.
--দেখুন আপনার বিয়ে হয়েছে একবার। আমি মেনে নিলেও আমার বাসা থেকে আমাদের সম্পর্ক কখনো মেনে নিবে না।(জারা)
.
--তাহলে আমার সাথে দেখা করেছিলে কেনো। শুধু শুধু আমার মনে মায়া জন্মে দিলে কেনো?(আমি)
.
--আমি তো আর আপনাকে দেখার আগে জানতাম না যে আপনার বিয়ে হয়েছে। আপনি যেভাবে বলছেন আমি তো ভেবে নিয়েছিলাম আপনি মজা করছেন।(জারা)
.
--তাহলে পরে যখন জানলে তারপর ও আমায় চুমু দিলে কেনো?(আমি)
.
--ওইটা আসলে???(জারা)
.
--নিরবতা মানে তুমি ও আমাকে ভালোবাসো। কতটা ভালোবাসো আমি জানি না। তবে আমি বলতে পারবো প্রথম কোনো মেয়েকে নিয়ে আমি এতো ভাবছি। ভালোও তাকে আমি অনেক বাসবো।(আমি)
.
--আপনার বউ যদি পরে ডিভোর্স না নেই। যদি ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে ধোকা দিয়ে চলে যায়। আর ও যদি আপনার সাথে সংসার করতে চাই তখন?(জারা)
.
--এমন হবে না সেটা বলতে পারি৷ কিন্তু যদি হয়েই যায়, তাহলে তোমাকে বলছি আমি আর ঔ মেয়েকে কখনো বউ হিসাবে মানতে পারবো না। বিয়ে তো আমি আম্মুর চাপে পরে করেছি। আমার জীবনটা যে এমন হবে সেটা কে জানে। আমিই মেনে নিতে পারছিলাম না বিয়েটা। কিন্তু দেখি আমার বউ ই আমাকে মেসেজ দিয়ে বলে সে মানতে পারবে না আমাকে।(আমি)
.
--হাহাহা।(জারা)
.
--কি হলো হাসো কেনো এভাবে।(আমি)
.
--আপনার দুঃখ দেখে।(জারা)
.
--আগে বলো ভালোবাসবে নাকি আমায়?(আমি)
.
--এভাবে কেউ কি ভালোবাসা চাই??? আগে রোমান্টিক ভাবে প্রপোজ করেন। পরে দেখবো অন্যের বরের প্রপোজালে রাজি হবো কিনা ঝুলিয়ে রাখবো।(জারা)
.
--আমি প্রপোজ করতে পারি না।(আমি)
.
--তাহলে আমাকে ও ভুলে যান। আমি আপনাকে আর ভালোবাসতে পারবো না।(জারা)
.
--ওকে ওকে করছি। তুমি বাইকে বসো তো।(আমি)
।।।।
।।।।
জারা বাইকের উপরে বসলো। আমি আশে পাশে তাকালাম। জানি প্রপোজ ফুল দিয়ে করতে হয়। তাই সেটাই খুজতে লাগলাম। অবশ্য ফুল ও আমার থেকে লুকাতে পারলো না। রাস্তার নিচে পুকুরের পাড়ে কচুরিপানা ফুল দেখা যাচ্ছে। এই ফুল গুলো অনেক সুন্দর কিন্তু যাদের শরীরে এলার্জি রয়েছে তাদের অবস্থা টাইট করে দেই। আমি দুইটা ফুল নিয়ে আবার জারার কাছে আসলাম।
.
--I love u...(ফুল গুলো জারা কে দিয়ে বল্লাম)
.
--এটা কি ধরনের প্রপোজ ছিলো। কোনো স্বাধ নেই।(জারা)
.
--আমি তো আর ভালো করে করতে পারি না প্রপোজ।(আমি)
.
--থাক এতেই আমার হবে। আমি রাজি তবে আমার শর্ত আছে একটা?(জারা)
.
--হুমমম বলো?(আমি)
.
--আমার প্রত্যেকটা কথা আপনাকে শুনতে হবে। যদি না শোনেন তাহলে কিন্তু আমি রিলেশন ভেঙে দিবো।(জারা)
.
--হুমমম তোমার সব কথায় আমি শুনবো।(আমি)
.
--এই তো গুড বয়।I love u too..... আচ্ছা আগে বলেন তো নিলার সাথে তেমন কিছু করেন নি তো?(জারা)
.
--তেমন কিছু মানে?(আমি)
.
--আরে বিয়ে করেছেন দেখা গেলো?(জারা)
.
--আরে পাগল হয়েছো নাকি ওর সাথে তো আমার এখনো দেখাই হয়নি।(আমি)
.
--সত্যি তো। ও বাদে আর কোনো মেয়ের সাথে তো কিছু করেন নি তো?(জারা)
.
--তোমাকে দিবো একটা মাইর। আমার সাথে দুইদিন কাটিয়ে কি তোমার এই মনে হয় আমি ঔ রকম ছেলে।(আমি)
.
--না তা ও জেনে নেওয়া তো ভালো তাই না। যার সাথে রিলেশনে গেলাম একটু জানবো না ভালো করে তার ব্যাপারে।(জারা)
.
--ওকে কি কি জানতে চাও বলো আমি তোমাকে জানাচ্ছি।(আমি)
।।।।
।।।।
কতো রকম গল্প আমাদের মাঝে হলো। যাগ্গে ভালোই হলো। জারা না থাকলে হয়তো একটু খারাপই লাগতো আমার। কারন নিলা তো আর কাজটা ঠিক করে নাই। ওর কাজে ভালো লাগলেও একটা কষ্ট থাকেই। বউ এর মুখখানি ও সামনে থেকে দেখতে পারি নাই। বিয়ে তো করলামই বিয়ের মজাটাই পেলাম না। কিরকম বিয়েই না করলাম। সব রাগ তো এখন আম্মুর উপরে যাচ্ছে। বাসায় ফিরলাম জারাকে স্কুলের সামনে নামিয়ে দিয়ে।
।
রাতে খেতে বসলাম আমি বাবা আর আম্মু। আম্মু আমাকে বললো,
.
--বাপ্পী?(আম্মু)
.
--হ্যা আম্মু বলো।(আমি)
.
--আমি লয়ারের সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাকে তোর ডিভোর্স পেপারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তোর টেবিলের উপরেই রাখা আছে পেপার টা। সাইন করে আমার কাছে দিয়ে দিস কালকে সকালে।(আম্মু)
.
--কিন্তু আম্মু ডিভোর্স পেপার এতো তারাতারি কিভাবে পেলে। বেশী ক্ষমতা থাকলেও তো তিন মাসের আগে পাওয়া যায় না। আর সাধারন ভাবে তো ৬ মাস লেগে যায়।(আমি)
.
--টাকা থাকলে সবই হয়।(বাবা)
.
--তুই সাইন করে দে। দেখবি এর পর ওর থেকেও আমরা ভালো মেয়ের সাথে বিয়ে দিবো তোর।(আম্মু)
.
--আম্মু বিয়ে কি আমি সারাজীবন ধরেই করে যাবো। প্লিজ তুমি এই মেয়ে দেখা বন্ধ করো তো আমার জন্য। আমি নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করে নিবো।(আমি রাগ করে চলে আসলাম)
।।।
।।।
আমি রাগ করে খাবার রেখেই হাত ধুয়ে চলে আসলাম। কয়েকদিন আম্মু আমাকে ধমক ও দিচ্ছেন না। ব্যাপার বুঝতে পারলাম না। থাক এতো বুঝে হবেই বা কি? আমি টেবিলে রাখা পেপারটা হাতে নিলাম। কলম নিয়ে সাইন করে দিলাম। যেভাবেই হোক মুক্তি তো পেলাম। আর যাইহোক অন্যের প্রেমিকাকে তো আর বিয়ে করা যায় না। কবে আমাকে রেখে পালিয়ে চলে যাবে তখন লোকজন আমার উপরে হাসবে। আবার এমন ও তো হতে পারে আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরলাম একটু তারাতারি। এক্সট্রা চাবি দিয়ে ঘরে চুপিচুপি ঢুকলাম বউকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য, কিন্তু বউ তার বফের সাথে চরম অবস্থায় থেকে আমাকেই সারপ্রাইজ দিয়ে দিলো, তখন তো দুইটা নিরীহ ভালোবাসা আমার মতো হিটলার এর হাতে মারা যাবে।।। তার চেয়ে বিয়ে না করাই ভালো। কিংবা নিজের প্রেমিকাকে বিয়ে করা যায় তাহলে আরেক কথা। যাক এই মহা ভারত বাদ দি।
।।।
।।।
আজকে শান্তি মনে ঘুম দিলাম। কয়েকদিন হলো বিয়ে করলাম আবার কালকেই ব্যাচেলার হয়ে যাবো। আর আম্মু কি বলতেছিলো বিয়ে দিবে আমায় আবার। এবার ওমন কিছু করলে সোজা পালিয়ে যাবো আমি। কোনো কথায় হবে না।।।।
।।।
।।।
সকালে উঠলাম আম্মুর হাতে ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দিলাম। সে যা মনে হয় করুক। জীবনে প্রথম এমন ডিভোর্স এর অভিজ্ঞতা হলো। অনেকটা আশ্চর্যের বিষয় হলেও ভালো লাগছে এটা ভেবে যে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। তাই জারাকে ফোন দিলাম।
.
--কোথায় তুমি?(আমি)
.
--এইতো স্কুলে যাবো। আপনি কোথায়?(জারা)
.
--আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো এখন।(আমি)
.
--আমার স্কুল শেষ হলে আসেন।(জারা)
.
--না আজকে স্কুল করতে হবে না।(আমি)
.
--কিন্তু।(জারা)
.
--কোনো কিন্তু নয়। তুমি বাসার সামনে দারাও আমি আসছি।(আমি)
.
--আপনি স্কুলের সামনে আসেন। সেখান থেকেই নিয়ে যাবেন।(জারা)
.
--ঠিক আছে।(আমি)
.....
।।।।
আমি জারার স্কুলে চলে আসলাম। আগে থেকেই দারিয়ে ছিলো। অবশ্য আমারই একটু আসতে দেরী হয়ে গেছে। আমি জারাকে নিয়ে আবারো চলে আসলাম ac রোডে।
.
--কি হলো এতো খুশি লাগছে কেনো?(জারা)
.
--লাগবেই তো। খুশির সংবাদ আছে।(আমি)
.
--খুশির সংবাদ?(জারা)
.
--হ্যা।।।(আমি)
.
--তাহলে বলে ফেলুন।(জারা)
.
--আম্মু কালকেই ডিভোর্স পেপারের ব্যবস্থা করেছিলো। রাতে সাইন করেছি আর সকালে আম্মু সেটা নিলাদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। সো আজকের পর থেকে আমি ব্যাচেলর।(আমি)
.
--সেটা তো দারুন সংবাদ।(জারা)
.
--হ্যা। এখন থেকে আমি তোমার।(আমি)
.
--হ্যা। তবে কালকে থেকে।(জারা)
.
--হুমমম। আজকে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।(আমি)
.
--কেনো আগের কয়েকদিন বুঝি লাগে নি।(জারা)
.
--হ্যা লেগেছে কিন্তু আজকে বেশী লাগছে।(আমি)
.
--কালকেই তো বয়ফ্রেন্ড হলেন আমার। আর আজকে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে বের ঘুরতে বের হবো একটু সেজে আসবো না।(জারা)
.
--ওওও।(আমি)
.
--হুমমম।(জারা)
.
--তুমি করে বলো এখন থেকে।(আমি)
.
--না আপনি তেই ঠিক আছি। বর কে তুমি করে বলতে কেমন জেনো লাগে?(জারা)
.
--বর।(আমি)
.
--আরে হবু বর।।। বিয়ে তো আমাদের হবে এখন তাই না।(জারা)
.
--হ্যা। তবে বিয়ের পর নাহয় আপনি করে বললে। এখন তুমি করে বলো।(আমি)
.
--ওকে ঠিক আছে।(জারা)
.
--হুমমম।(আমি)
.
--আমাকে কালকের ঔ ফুল এনে দিবা।(জারা)
.
--ঔ ফুল?(আমি)
.
--হ্যা খুব ভালো লেগেছে ঔ ফুলটা। বাসায় রেখেছিলাম আমার রুমে। কিন্তু কাজের আপুটা ফেলে দিয়েছে। পরে অনেক বকেছিলাম ওকে।(জারা)
.
--ওকে তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি।(আমি)
।।।।
।।।।
অনেক খুজলাম। তবুও কাছে পেলাম না একটা ফুলও। সব পুকুরের মাঝে। কি করি৷ ফুল চাইছে ফুল তো দিতে হবে। ফুল না নিয়ে ফিরে গেলাম ওর কাছে।
.
--কি হলো ফুল পাও নি।(জারা)
.
--হ্যা পেয়েছি তবে ঔগুলো পুকুরের মাঝে। আনতে গেলে গোসল করে আসতে হবে।(আমি)
.
--আমি জানি না আমার ঔ ফুল লাগবে। আঃআঃ।(কান্না শুরু করে দিলো জারা)
।।।
।।।
এতো আসলেই বাচ্চা মেয়ে। এভাবে কেউ কান্না করে। কিছুতেই বুঝতেছে না। ফুল ওনার লাগবেই। কি করি।
.
--আচ্ছা নাও ফোন আর মানিব্যাগ ধরো।(আমি)
.
--কেনো কি করবা?(নাক টেনে বললো)
.
--ধরো তোমার জন্য ফুল নিয়ে আসছি।(আমি)
.
--হুমমম।(আমার থেকে ফোন আর মানিব্যাগ হাতে নিলো জারা)
।।।।
।।।।
আমি ও পুকুরে দিলাম এক ঝাপ। যেটাকে রকেট জাম্প বলে। কিন্তু পেটে পেলাম ব্যথা। কারন পুকুরে যেখানে লাভ দিয়েছি সেখানে পানি মাত্র পায়ের গিড়া পর্যন্ত। ব্যথায় যখন উঠলাম পানির গভীরতা পর্যবেক্ষন করেই আমার চোখ চরাকগাছ হয়ে গেছে। এই পানিতে আমি লাফ দিয়েছি অবশ্য লাফটা আসতেই দিয়েছিলাম তাই বেশী ব্যথা পাই নি। সামনে আগাতে লাগলাম দেখলাম কচুরি ফুল রয়েছে। কিন্তু পানি হাটু পর্যন্ত। কিন্তু আমি এক লাফেই আমার সব শরীর ভিজিয়ে ফেলেছি। অবশ্য ব্যথাও করতেছে। কয়েকটা ফুল ছিরলাম। তারপর ফিরে আসলাম। জারা তো আমার অবস্থা দেখেই অবাক হয়ে গেলো। ভিজে আমি একদম চুপচুপ করতেছি। তবে হাতে ফুল দেখে খুশি হলো। আর আমার অবস্থা দেখে মুশকি মুশকি হাসছে।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((((চলবে)))))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ৮ম পার্টের জন্য।