#জলপরীর_প্রেমে#
#সিজন_৪#
পার্টঃ১৮
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।
।।।।
।।।।
আমি সেই স্পেলটা আবারো ব্যবহার করলাম। যেটার সুবাধে নিরাম্বা নামের সেই লোকটা এসেছিলো। আমার মনে হয় আমার এই স্পেলের সাথে নিরাম্বার কোনো কানেকশন ঠিকই আছে। হয়তো বড় কোনো সম্পর্ক। কিন্তু এবার উক্ত স্পেল ব্যবহার করায় কিছুটা উল্টো ঘঠনা ঘটে গেলো। আমি দাড়িয়ে আছি আমার জায়গাতেই। কিন্তু আশে পাশের সব কিছু থেমে গেছে। সব কিছু নিশ্চুপ হয়ে গেছে। আগের বার এটা কিছু সময়ের জন্য হয়েছিলো কিন্তু পুরো ২ মিনিট হয়ে গেলো তারপরও সময় আটকে রয়েছে। আমার মাথায় কিছুই যাচ্ছে না। স্পেলটাও আননোন। আমার কাছে থাকা সব স্পেলের নামই আমি জানি। কিন্তু এই একটা স্পেল যেটার নাম আমার অজানা। এটার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। হঠাৎ করেই আমি একটা অপরিচিত জায়গায় চলে আসলাম। একদমই অপরিচিত একটা শুনশান জায়গা। দেখে মনে হচ্ছে আমি মঙ্গলে চলে আসছি। কারন মাটির রং এখানে লাল। আর যেখানে সেখানে লাল পাথরের মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। আমি এখানে কিভাবে আসলাম সেটা নিজেও বুঝতে পারছি না। তখন তো স্পেলটা আমাকে নয় বরং নিরাম্বাকে নিয়ে এসেছিলো এখানে। আর এখন তো আমি নিজেই চলে আসছি অন্য এক জায়গায়। তাহলে কি তখন নিরাম্বা যেভাবে এসেছিলো আমাদের সময়ে। আমিও কি নিরাম্বার সময়ে চলে আসছি? ব্যাপারটা একটু প্যাচালো করে দিচ্ছে। কিন্তু সেটা বেশী ক্ষন ভাবতে পারলাম না। কারন সময়টা রাতের ছিলো। কিন্তু রাত মনে হচ্ছিলো না। মাথার উপরে তিনটা চাদ আলো দিচ্ছিলো। আর তিনটা চাদের মাঝেরটার রঙ হচ্ছে লাল। হয়তো সেই লাল রঙের চাদের আলোতেই এই মাটির রঙ লাল মনে হচ্ছে। জানি না আমি শুধু ভাবতেছি। তিনটা চাদ দেখবো এটা আমি আশা করি নাই। এর মানে আমি কোনো ভাবেই পৃথিবীতে না। বরং আমি অন্য কোনো একটা প্লানেটে আছি। কিন্তু জিনিসটা কিভাবে সম্ভব হবে? আমি তো সময়ের স্পেল ব্যবহার করেছিলাম তাহলে সেটাতে আমি অন্য প্লানেটে কিভাবে যাবো? আমি চাইলে পৃথিবীর যেকোনো সময়ে যেকোনো স্থানে ট্রাভেল করতে পারবো আমার টাইম ট্রাভেল স্পেল দিয়ে। কিন্তু এই স্পেলটা আমার মাথায় ধরলো না। জানি না কি তবে আস্তে আস্তে চাদের আলো গুলো থাকতে শুরু করেছে। চাদ আস্তে আস্তে কালো হতে শুরু করেছে। একটু ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম কোনো বিশাল একটা জিনিস তিনটা চাদকেই খেয়ে ফেলেছে। আর সেটা আসছে আমি যেখানে দাড়িয়ে আছি সেই প্লানেটের দিকে। আমার পা একদম ভয়ে কেপে উঠলো৷ আমি সাথে সাথে আবারো সেই স্পেল ব্যবহার করলাম। সাথে সাথে আমি আমার পূর্বের জায়গায় চলে আসলাম। সবাই নরা চরা করছে। আর সবচেয়ে কৌতহলের বিষয় হলো নিরাম্বা কেরেলার সাথে লড়ছে। সেনাপতি রনইক দে আমাকে দেখে বললো
.
--মহারাজ কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারতেছি না।(রনইক)
.
--বোঝার দরকার নাই সেনাপতি। এই নিরাম্বা নামের কুৎসিত দানবাকৃতির লোকটা আমাকে মারার জন্য পাগল। সে একটা হৃদয়কে মেরেছেও। কিন্তু তার রাগ কমছে না। আমি তার চোখে যে রাগ দেখেছিলাম সে সেই রাগেই লড়ছে কেরেলার সাথে। কেরেলার তো এবার ফেটে যাবে।(আমি)
.
--কিন্তু আমি তখন থেকে খেয়াল করছি এই লোকটা কেরেলার ক্ষমতা গুলো নিজের মধ্যে নিচ্ছে প্রতি আঘাতেই।(রনইক)
।।।।
।।।।
আমি রনইকের কথা শুনে না শোনার ভান করলাম। কারন কেরেলা পাশের নদীর পুরো পানি নিয়ে এসে হামলা করে দিলো নিরম্বার দিকে। কিন্তু নিরাম্বার তাতে কিছুই হলো না। বরং কিছু এনার্জি কেরেলার থেকে আরো নিরাম্বার দিকে চলে গেলো। কেরেলার কাছেও ডার্ক এনার্জি আছে। আর মিয়ারা বলেছিলো ওর সব ডার্ক এনার্জি চলে যাচ্ছিলো। আর ডার্ক এনার্জি ছাড়া ওরা বাচতে পারবে না। কিন্তু এভাবে তো নিরাম্বা আরো ভয়ানক হয়ে যাবে। জিনিসটা মোটেও ঠিক হবে না। আমাকে সামনে যেতে হবে।
।।।
।।।
নিরাম্বা কেরেলাকে ধরে একটা আছাড় দিলো মাটিতে। সাথে সাথে কেরেলা বেহুস হয়ে গেলো। আর নিরাম্বা এরপর কেরেলার মাথায় হাত দিয়ে কেরেলার এনার্জি ফিড করতে লাগলো। আমি সেটা দেখে পুরো আশ্চর্য হয়ে গেলাম। সে কোনো স্পেল ছাড়াই কারো এনার্জি কিভাবে এবজোর্ব করতে পারে? কেরেলাকে এভাবে মরতে দেওয়া যাবে না। আমাকে কিছু একটা করতে হবে। আমি ওদের লড়াই এর বেশ কিছুটা দেখেছি। নিরাম্বা সব সময় তলোয়ারের ভয়ে ছিলো। তলোয়ার দিয়ে আঘাত করতো যখন কেরেলা তখন নিরাম্বা ভয়ে ছিলো অনেক। কেরেলাকে পুরো মরতে দেওয়া যাবে না। এভাবে সে মরে গেলে তো তার পুরো ক্ষমতা এই দানবের কাছে চলে যাবে। আমি এটা হতে দিতে পারবো না। আমি উড়তে উড়তে নিরাম্বার দিকে চলে আসলাম। আমার সাথে রনইক দে ও আসলো। কারন ও ব্যাপারটা সুবিধার মনে করছিলো না।
.
--আমি ভাবলাম রাজা হারকিউমাসকে মারার পর এটা প্রিন্স নিয়াক ছিলো। কিন্তু তুমি আবার কে?(নিরাম্বা)
.
--প্রিন্স নিয়াক? সে আবার কে?(আমি)
.
--ohhh my god।।। এখন এইটা বইলো না আমি সময়ের অনেক পিছনে চলে আসছি।(নিরাম্বা)
.
--হ্যা।(আমি)
.
--তাহলে তো এটাই ভালো। আগে বলো তুমি কে?(নিরাম্বা)
.
--আমি রাজা হারকিউমাস।(আমি)
.
--তাহলে এইটা প্রিন্স নিয়াক? তাহলে আগে যাকে মারলাম সেটা কে?(নিরাম্বা)
.
--এইটা তো আমার কপি আর আমার শত্রু কেরেলা।(আমি)
.
--তাহলে আগে যেটাকে মারছি সেটা প্রিন্স নিয়াক আর তুমি হারকিউমাস। হ্যা তোমাদের দুজনকে অতীতেই মেরে ফেলবো যাতে ভবিষ্যতে তোমরা আমার কিছুই করতে না পারো।(নিরাম্বা)
.
--ব্যাপারটা অনেক কম্প্লিকেটেট। কিন্তু আমি এবার বিশ্বাস করবো যে এমন কিছু একটা ভবিষ্যতে আমার সাথে হবে।(আমি)
.
--তো রাজা হারকিউমাস মরার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও।(নিরাম্বা)
.
--এতো তারা কিসের। তোমাকে বাতাস দিয়ে হারাতে পারবো না। পানি দিয়ে হারাতে পারবো না। কিছু দিয়েই পারবো না কারন তুমি আমার সব ক্ষমতা এবজোর্ব করে নিবে।(আমি)
.
--হুমমম। আগের বার তো তুমি তোমার আগুনের তলোয়ার দিয়ে আমায় মেরেছিলে কিন্তু এবার তেমন কিছু হবে। তোমার তলোয়ার তো এটার কাছে ছিলো। আর সেটাকে আমি আমার ইউনিভার্সে পাঠিয়ে দিয়েছি।(নিরাম্বা)
।।।।
।।।।
ওয়েট ওয়েট। লোকটা কি বললো? ওর ইউনিভার্স? মানে ও অন্য ইউনিভার্স থেকে এসেছে? আমি একটু হাসি দিলাম। ওর দুর্বল পয়েন্ট আমি পেয়ে গেছি। আর সেটা হলো ও আমার তলোয়ার মানে আগুনে ভয় পাই। তাহলে তো খেলা হবে।।।।।
।।।।
।।।।
আমি আমার হাত মুথো করলাম। সাথে সাথে আমার তলোয়ার চলে আসলো। সেটা দেখে নিরাম্বা অবাক। কারন সে তো ভাবে নও এটা হবে। আমার তলোয়ার সে উঠাতে পারে নি কিন্তুসেটাকে টেলিপোর্ট ঠিকই করেছে। কিন্তু তাতে কি আমার কাছে আমার তলোয়ার তো আছে। সয়মের ক্ষমতার এই একটা লাভ। কোনো জিনিসই হারানো যায় না। এবার আমি আমার তলোয়ার শক্ত করে ধরলাম। সাথে সাথে তলোয়ার আগুনে জ্বলতে লাগলো। সেই সাথে আমার শরীর ও জ্বলতে শুরু করলো আগুনে। আর আগুন দেখে এবার নিরাম্বা ভয় পেয়ে গেলো। এমনিতেও এখানের সময়টা সন্ধার। কিন্তু আমার শরীর আগুনে জ্বলায় চারিদিকে আলোকিত হয়ে গেলো। আমি তলোয়ার নিয়ে আস্তে আস্তে নিরাম্বার দিকে আগাতে লাগলাম। নিরাম্বাও প্রস্তুত ছিলো। এতোক্ষনে হয়তো ওর কাছেও পানির ক্ষমতা চলে গেছে। পাশে যত পানি ছিলো সব আমার দিকে ছুরে মারলো। আর সেটায় আমার তলোয়ারের আগুন বাদে সব আগুনি নিভে গেলো। সালায় এক আঘাতেই দিলো আমার সব আগুন নিভিয়ে। বুদ্ধি তো ওর মাথাতেও আছে। এবার একটা ভয়ানক কাজ করলো।
.
--আমার পুরো ক্ষমতা তো আমি দেখাচ্ছি না। আমি এই ইউনিভার্স থেকে গেলে কখনো এখানে ফেরত আসতে পারবো না আর। কিন্তু আমি যাওয়ার আগে সব কিছু ধ্বংস করে যেতে চাই।(নিরাম্বা)
।।।।
।।।।
নিরাম্বা ওর দু হাত দিয়ে হাল্কের মতো মাটিতে একটা বিশাল স্ম্যাশ করলো। আর তাতে মাটি ফেটে সব কঙ্কাল বের হতে শুরু করলো।
.
--যেহেতু এটা একটা যুদ্ধ তোমার সেনারা দাড়িয়ে থাকবে কেনো?(নিরাম্বা)
।।।
।।।
।।।
মুহুর্তের মধ্যেই কঙ্কালের বিশাল একটা সেনা দাড়িয়ে গেলো একপাশে। যেটা আমার সব সেনার থেকেও বেশী ছিলো। কঙ্কাল গুলো আবার সব কালে ছায়ায় বন্ধী ছিলো। একটা কঙ্কাল এগিয়ে গিয়ে আমার একটা সেনাকে গিয়ে ধরলো সাথে সাথে দেখতে পেলাম সেও কালো ছায়ায় বন্ধী হয়ে গেলো। আর নিরাম্বা চোখ বুঝে রইলো কারন একটা এনার্জি তার মাঝে চলে আসলো। ব্যাপারটা মাথায় ঢুকলো আমি জোরে চিল্লিয়ে বলতে লাগলাম।
.
--তোমরা সবাই দূর থেকে এই সব কঙ্কালদের কিমা বানাও। কেউ কাছে যাবে না।(আমি)
।।।
।।।
আমার আদেশ পেয়ে তারা তাদের কাজ করতে লাগলো।
.
--এই কাজের ফলে আমার এনার্জি কখনো শেষই হবে না।(নিরাম্বা)
.
--কিন্তু তুমি শেষ হবে।(আমি)
।।।
।।।
আমি নিরাম্বার কথা বলার সুযোগ দিয়ে বিশাল একটা লাফ দিয়ে তলোয়ার দিয়ে পর দিকে ঝাপিয়ে পরলাম। আমার কোপটা ওর মাথা বরাবর ছিলো। কিন্তু ও সরে যাওয়ায় সেটা ওর ডান হাতে লাগে। আর সেই কোপের ফলে ওর ডান হাত কেটে যায়। এবার ও বেশী ভয় পেয়ে যায়।
।।।
।।।
আমাকে কোনো কথা বলতে না দিয়েই নিরাম্বা সেখান থেকে টেলিপোর্ট হয়ে যায়। হয়তো তার নিজের ইউনিভার্সে টেলিপোর্ট হয়ে গেছে। তাহলে আমি কি তখন তার ইউনিভার্সে ছিলাম। হয়তো। যাওয়ার আগে সে কিছু বললো না। কিন্তু তার চোখে যেমন ভয় দেখেছিলাম ঠিকই আমার জন্য রাগ ও দেখালাম। হয়তো ভবিষ্যতে তার সাথে দেখা হবে। কিন্তু আপাতোতো সময়ে ভবিষ্যতের কথা ভাবলে হবে না। আমাকে ভাবতে হবে এখন কার সময় নিয়ে। কেরেলার অবস্থা টাইট করে দিয়েছে নিরাম্বা। ওর ভিতরে মনে হয় সামান্য এনার্জি বেচে আছে বাকিটুকু নিরাম্বা নিয়ে নিয়েছে। বাকি এনার্জি আমার ও নিতে মন চাচ্ছে না। কিন্তু ওকে আমি এভাবে খোলা রাখতে পারি না।এখন জাপান আর চীন নিজের করেছে পরে সময় পেলে সে পুরো দুনিয়া নিজের করে নিবে। মিয়ারা বলেছিলো আমার কাছে যে রকেটে ছিলো সেটা দিয়েই আমি কেরেলাকে বন্ধী করতে পারবো। আদৌও কি তাই। আমি রকেটটা বের করলাম। আমার হাতে এখন সেটা থাকায় উজ্জল হতে শুরু করলো। আমি বুঝতেছি না কি করবো। বুঝতেও হলো না। রকেটের গা আলোকিত হওয়ায় চারপাশ দিয়ে কিছু একটা লেখা দেখতে পেলাম। একটা স্পেল। হ্যা একটা স্পেল ছিলো সেটা। স্পেলটা দেখার সাথে সাথে বুঝে গেলাম সেটা কিসের। এটা কেরেলাকে এই রকেটে বন্ধী করার স্পেল। আমার মাঝেও একটা কেরেলা রয়েছে। কারন আমি তো অতীতের হৃদয় থেকে সব ক্ষমতা নিয়েছিলাম। তার মধ্যে ঘুমন্ত কেরেলাও তো আমার মধ্যে আছে। হ্যা স্পেলটা আমাকে ব্যবহার করতে হবে। এতে করে আমার ব্লাক ম্যাজিকের কিছুই যাবে না আমার থেকে। শুধু আমার মাঝে থেকে কেরেলার অস্তিত্ব চলে যাবে। আমি স্পেলটা ব্যবহার করলাম। সাথে সাথে কেরেলার পাতলা হয়ে যাওয়া শরীরটা একটা কালো ছায়ার মতো করে রকেটের মধ্যে চলে গেলো। সেই সাথে আমার মধ্যে থাকাও একটা হালকা কালো ছায়া বের হয়ে রকেটের মধ্যে চলে গেলো। আর তখন রকেটের আলো বন্ধ হয়ে গেলো। আমি তাকিয়ে আছি রকেটের দিকে। না তাকিয়ে পারবো কিভাবে? রকেটটা আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। হয়তে এটা একা একাই একটা নিরাপদ জায়গায় চলে যাবে। যেখানে কেউই এটাকে পাবে না। কিংবা হয়তো এটার মেয়াদ এই পর্যন্তই ছিলো।।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।