#সিজন_৪#
পার্টঃ০৩
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।।।।
।।।।।।।
।।।।।।।
আমি চোখ খুল্লাম। নিজেকে নিজের বিছানাতেই পেলাম। সেই পরিচিত বিছানা। রুমের মধ্যে দুটো বিছানা রয়েছে। একটাতে আমি শুয়ে আছি। অন্যটাই আমার বোন হৃদি ঘুমাচ্ছে। আমি ঘেমে উঠেছি। একটা আজব এবং ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখেছি ঘুমে। সুপারম্যানের মতো উড়ছিলাম স্বপ্নে। স্বপ্নে আমি জলপুরী, আকাশপুরী, এবং দানবদের রাজা ছিলাম।এতো আশ্চর্যজনক স্বপ্নের কথা আমি কোনোদিন শুনি নাই। হয়তো আমিই প্রথম ব্যক্তি। কিন্তু সব কিছু কেমন জানি সত্য সত্য মনে হচ্ছিলো। আচ্ছা এই স্বপ্ন নিয়ে ভাবলে তো হবে না আজকে আমার প্রথম কলেজের দিন। কলেজে যেতে হবে উঠে। তবে একটা কাজ ঠিকই করা যায়। আমি হাটতে হাটতে বেলকনিতে আসলাম। এখানেই আমার চারুকাজের সারন্জাম রয়েছে। স্টান্ডে কনভ্যাস লাগানো আছে। আমি ভোরের মনরম পরিবেশে কিছু আকার চেষ্টা করলাম। এবারে চোখে দেখে কিছু আকার চেষ্টা করলাম না বরং আমার স্বপ্নে দেখা কিছু জিনিস আকার চেষ্টা করলাম। মনে জোর দিয়ে অনেক চেষ্টার পর একটা ছবি আমি শেষ করলাম। এবার আমি সেটাকে সেখানেই রেখে চলে আসলাম ফ্রেস হতে। ফ্রেস হয়ে আসার পরই দেখলাম হৃদি উঠে গেছে।
.
--কিরে আজকে তারাতারি উঠে গেছিস তুই।(হৃদি)
.
--আমি প্রতিদিনই তারাতারি উঠি। তুই তো নাক ডেকে ঘুমাস। তোর নাক ডাকে কি আমার বেশী ঘুম হয়।(আমি)
.
--কি বললি তুই? তুই খাটাসের মতো নাক ডাকোস আমি না।(হৃদি)
.
--কি বললি। যা আজকে একা কলেজে যাবি। আমি রেডি চলে যাচ্ছি আমি।(আমি)
.
--আরে না। আমার লক্ষি ভাই তুই। তুই কি নাক ডাকতে পারোস।(হৃদি)
.
--আরেকবার বল।(আমি)
.
--আমার লক্ষি ভাই। তুই একটু wait কর আমি এখনি ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে আসছি।(হৃদি)
.
--হুহ তারাতারি কর।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি নিচে আসলাম। নিচে বাবা আর আম্মু খাবার টেবিলে বসে আছে। আমাদের জন্যই দুজনে অপেক্ষা করছে।
.
--তো আজকে তো তোদের প্রথম কলেজ ভয় করছে নাকি?(বাবা)
.
--আরে কি যে বলো বাবা।(আমি)
.
--ক্লাস বাদ দিয়ে আবার দুজনে আর্ট করতে চলে যেয়ো না। এবার কলেজের প্রিন্সিপাল কিন্তু তোমার বাবার বন্ধু। তোমার বাবা কিন্তু বলে দিয়েছি ভালো করেই। প্রত্যেকটা ক্লাস করবা দুজনে।(আম্মু)
.
--ঠিক আছে।(আমি)
।।।।
।।।।
বসে ছিলাম আমি। হৃদি রেডি হয়ে আসলো টেবিলে। এরপরে জ্যাম দিয়ে তিনটা রুটি খেয়ে নিলাম।
.
--নে আর কতখাবি মোটা হয় যাবি তো।(আমি)
.
--কি মাত্রই দুটো খেলাম।(হৃদি)
.
--আর খেতে হবে না। পরে মোটা হইলে কেউ বিয়ে করবে না।(আমি হৃদির মাথায় একটা টোকা দিলাম)
.
--আরে দারা আমাকে রেখেই চলে যাচ্ছিস কেনো তুই?(হৃদি)
.
--গেলে তারাতারি আয়।(আমি)
.
.
.
হৃদি মুখে রুটি নিয়েই চলে আসলো। আজকে প্রথম কলেজ। তাই একটু আগে আগে যেতে হবে কলেজে। আমি বাইরে এসে একটা রিক্স ঠিক করলাম। হৃদি এসেই উঠে বসলো রিক্সায়। আমিও ওর পাশে এসে বসলাম।
.
--কলেজে আমার একটা বান্ধুবী আছে।(হৃদি)
.
--তোর আবার বান্ধুবী। তুই তো সব মেয়ের সাথে ঝগড়া করোস।(আমি)
.
--তোর জন্যই তো ঝগড়া করি। আমার বান্ধুবীরা তোর উপরে লাইন মারে। আমাকে ননদ বানাইতে চাই সব গুলা।(হৃদি)
.
--হাহাহাহা।।।। আমি দেখতেই তো হিরোর মতো। তাই তোর বান্ধুবীরা লাইন মারে।(আমি)
.
--উহু আমার উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।(হৃদি)
.
--তোর নতুন বান্ধুবী দেখতে কেমন রে?(আমি)
.
--কেনো নতুন বান্ধুবীর নাম শুনেই মনে লাড্ডু ফুটলো নাকি?(হৃদি)
.
--ফুটেও কি হবে তোর আগের বান্ধুবীদের সাথে তো কথায় বলতে দিতি না।(আমি)
.
--যা এবার একটা ব্যবস্থা করে দিবো।(হৃদি)
.
--কি? আমি কি কানে ভুল শুনলাম? আমার তো সন্দেহ হচ্ছে। তুই নিজে থেকে ব্যবস্থা করে দিবি। যে কিনা আমাকে একটা মেয়ের সাথে ও কথা বলতে দিতো না। সে আজ নিজে থেকে বলতেছে। ব্যাপারটা কিরে?(আমি)
.
--কিছুই না।(হৃদি)
.
--তুই তো জানিস তোর মিথ্যা আমি খুব সহজেই ধরতে পারি। তাই সত্য বল।(আমি)
.
--আসলে আমি না একটা ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছি।(হৃদি)
.
--কি?(আমি)
.
--হ্যা রে। তোকে তো সেদিন বল্লাম চল শপিং এ যায়। তুই আসলি না সেদিন তোর সাথে দেখা করাতে চাইছিলাম ওর সাথে।(হৃদি)
.
--তারমানে সব হয়ে গেছে?(আমি)
.
--কি?(হৃদি)
.
--মানে ভালোবাসা দুজনেরই হয়ে গেছে।(আমি)
.
--হ্যা।(একটু লজ্জা পেয়ে বললো হৃদি)
.
--এমন কোনো কথা নাই যেটা আমরা দুজন শেয়ার করি না। আর তুই এতো বড় একটা কথা আমার থেকে লুকিয়ে রাখছোস।(আমি)
.
--লক্ষি ভাই আমার রাগ করিস না।(হৃদি)
.
--আচ্ছা যা রাগ করবো না। কিন্তু এখন মেয়েদের সাথে কথা বললে তুই কিছু বলতে পারবি না আর।(আমি)
.
--ঠিক আছে যা।(হৃদি)
।।।
।।।
হৃদির কথায় কিছুটা খারাপ লাগলো। কারন আমাকে শেয়ার করে নাই কথাটা। কিন্তু আমার এখন লুঙ্গি ডান্স দিতে মন চাচ্ছে। কোনো ছেলের সাথেই কথা বলতো না হৃদি। ওর কাছে প্রেম ভালোবাসা একদম দু চোখের বিষ ছিলো। তাই আমাকেও কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দিতো না। এখন তো ওর প্রেম হয়ে গেছে। মানে এখন ওর বয়ফ্রেন্ড নিয়ে বিজি থাকবে ও। আর আমি মেয়ে নিয়ে।😊😊😊😊
।।।।
.
--তাহলে কবে পরিচয় করাবি দুলাভাই এর সাথে।(আমি)
.
--কয়েকদিন পর। ও ঢাকায় গেছে?(হৃদি)
.
--কথা বলোস কখন? সব সময় তো আমার সাথেই থাকোস।(আমি)
.
--রাতে তুই ঘুমালে।(হৃদি)
.
--তাই তো বলি সকালে এতো দেরীতে উঠোস কেনো। দারা বাসায় গিয়ে বাবার কাছে বলবো ব্যাপারটা।(আমি)
.
--বল। তাতে আমার বিয়ে আরো তারাতারি হয়ে যাবে।(হৃদি)
.
--তুই তো দেখি বিয়ের প্লান ও করে ফেলছোস।(আমি)
.
--আচ্ছা চল কলেজে চলে আসছি। এ নিয়ে পরে কথা হবে।(হৃদি)
।।।।
।।।।
রিক্সা থেকে কলেজ গেইটে নামলাম। সাথে সাথে হৃদিকে একটা মেয়ে এসে জরিয়ে ধরলো৷ মেয়েটাকে আগে কখনোই দেখি নি। কিন্তু তারপরও কেনো জানি মেয়েটাকে আমার চেনা চেনা লাগছিলো। অনেক চেনা চেনা লাগছিলো মেয়েটাকে। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দিলো।
.
--হৃদয় পরিচয় করিয়ে দি৷ ও আমার বান্ধুবী জারা। আর জারা ও আমার একমাত্র আদরের যমজ ভাই হৃদয়।(হৃদি)
.
--হাই।(জারা)
.
--আমাদের কি আগে কখনো দেখা হয়েছে?(আমি)
.
--না আমার তো মনে হয় না।(জারা)
.
--তোমাকে আমার অনেক চেনা চেনা লাগছে।(আমি)
.
--দূর কি ভাবছিস তুই। আমিই ওকে সামনে থেকে আজকে দেখলাম তুই ওকে দেখবি কবে?(হৃদি)
.
--আজকে দেখছোস তাহলে পরিচয় হলো কিভাবে তোদের?(আমি)
.
--কেনো ফেসবুকে।(হৃদি)
.
--ওওওও। আচ্ছা চল ক্লাসে চল।(আমি)
.....
.....
আমার মাথা কাজ করছে না। কারন এখন কেনো জানি আমার মাথা ব্যথা শুরু করে দিয়েছে। মনে হচ্ছে এই মেয়েটাকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি কিন্তু সেভাবে কিছুই মনে পরছে না। আচ্ছা আমি বাদ দিলাম জিনিসটা। মনের ভুল হতে পারে। মেয়েটা দেখতে কিন্তু পরীর মতো। এতো সুন্দর মেয়ে আমি আগে কখনো দেখেছি কিনা সেটা আমার মনে পরে না। হ্যা স্বপ্নে ওর মতো অনেক সুন্দরী দেখেছি আমি। কিন্তু বাস্তবে এমন মেয়ে আমি কোনোদিনও দেখি নাই। অনেকটা ইতস্তত বোধ হচ্ছে। মনে কেমন জানি করছে। হয়তো ভালোবাসার উদয় হচ্ছে মনে। এতো সুন্দরী মেয়ে দেখলে সবারই এমন অবস্থা হবে। তবে ভয় ও হচ্ছে। কারন সুন্দরীদের দেমাগ বেশী হয়। তারা নিজেদের সুন্দরের গৌরবে কাউকে পাত্তাই দেই না। তারপরও হৃদি আছে। দেখি কোনো ব্যবস্থা হয় কিনা।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ৪র্থ পার্টের জন্য।