পার্ট: ০৪
লেখকঃ হৃদয় বাপ্পী
।।
--আজকে রাতে মজা বুঝাবো তোমাকে।(মেঘলা)
.
--এই মজা বুঝাবা মানে কি করবা আমার সাথে।(ভয়ে ভয়ে বললাম)
.
--সেটা রাতেই দেখাবো।(মেঘলা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে চলে গেলো)
।।
আমি ফ্রেস হয়ে জামা কাপড় চেন্জ করে একটু শুয়ে পরলাম।বাবা তো বলেছিলো।এখানে এসেই সিম টা বন্ধ করে দিতে।তাই মোবাইল থেকে সিমটা খুলে ফেললাম।শুয়ে ছিলাম একটু।মনে হলো আমার বুকে ভারি কিছু পরেছে।চোখ খুলে দেখি মেঘলা আমার বুকে শুয়ে আছে।
.
--তুমি এখানে কেনো।আর আমার বুকে শুয়ে আছো কেনো।(আমি)
.
--এটা আমার রুম আমার যখন মন চাবে আমি তখন আসবো।(মেঘলা)
.
--আচ্ছা রুম তোমার বুঝলাম।কিন্তু এই বুকটাতো তোমার না।তাহলে শুয়ে আছো কেনো।(আমি)
.
--এটাও আমারই হবে।(আসতে করে বলল মেঘলা)
.
--কিছু বললা।(আমি)
.
--না কিছু না।।আর আমার মন চাইছে আমি তোমার বুকে শুয়েছি তাতে তোমার কি হ্যা।(মেঘলা)
.
--না তুমি আমার বুকে শুতে পারবা না।(আমি)
.
--একশো এক বার শুবো আমি।যদি শুতে না দাও তাহলে আমি আম্মুকে বলে দিবো যে তুমি আমাকে জরিয়ে ধরেছিলে।(মেঘলা)
.
--আমি কখন জরিয়ে ধরলাম।তুমিই তো জরিয়ে ধরেছো আমাকে।(আমি)
.
--সেটা আমি জানি আর তুমি জানো।আম্মু তো আর জানে না।(মেঘলা)
.
--এভাবে ব্লাকমেইল করা কিন্তু ঠিক হবে না।(আমি)
.
--ঠিক না বেঠিক সেটা আমি বুঝি না।আম্মু তোমাকে আর আমাকে নিচে গিয়ে খেয়ে আসতে বলেছে।(মেঘলা)
.
--আমি এখন খাবো না।(আমি)
.
--এই আমি কিন্তু যেতে বলতেছি।না গেলে কিন্তু আম্মুকে ডাক দিয়ে সব বলে দিবো।(মেঘলা)
.
--আচ্ছা যাচ্ছি।
।।
কি আর করার এতো জেদি আর ফাজিল মেয়ে আমি আমার জীবনে দেখি নায়।খাবার টেবিল এ আরেক জামেলা,
.
--আম্মু ওকে সব বেশী করে দাও।,এই তো ভাত শেষ ওর আরো দাও।এটা দাও ওটা দাও।(মেঘলা)
.
--হুমমম দিচ্ছি তো।।।তোর তো একদম পুরে যাচ্ছে ওর জন্ ।এতো বলতেছোস তুই সব উঠিয়ে দে আই।(ফুপি)
.
--আরে আম্মু তুমি আছো না।।আর এখন কেনো দিবো আগে বিয়েটা হোক তারপর দিবো।(মেঘলা)
.
--(ওর কথা শুনে আমার গলায় ভাত আটকে গেলো)
.
--এই নাও পানি আর আসতে আসতে খাওয়া যাই না।(মেঘলা)
।।।
পানি খেয়ে নিলাম,
.
--ফুপি বিয়ে মানে।(আমি)
.
--আরে বাবা ওর বিয়ে দিবো তো তাই বিয়ের পর ওর জামাই কে সব উঠিয়ে খাওয়াবে তাই।(ফুপি)
।।।
যা আমি তো ভেবেছিলাম আমার সাথে বিয়ের কথা বলতেছিলো।দুর বলা যায় না এর কখন কি করে ফেলে।আমার তো কাউকে সুবিধার মনে হচ্ছে না।বাবা তুমি আমাকে কোন বিপদে ফেলে দিলে।এতো বিপদের থেকে তো আম্মুর পছন্দ করা মেয়েটাকেই বিয়ে করা ভালো ছিলো।কোনো রকম সব খেয়ে আমি ফুফার সাথে কতক্ষন গল্প করলাম।তারপর ঘুমাইতে আসলাম।অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো।মেঘলা দেখি ঘুমিয়ে পরেছে।মনে হয় বেশী রাত জাগতে পারে না।ওর পাশেই বালিশ রেখে দিয়েছে।খুব ভয় করতেছে বিয়ের আগেই কোনো মেয়ের সাথে এভাবে থাকাটা কি ঠিক হবে।।আরে ও তো আমার বোন হয় কিছুই হবে না।কিন্তু ওর চেহারার মায়ায় পরে যাচ্ছি আমি। আসার পর থেকেই শুধু ওর পাগলামির কথা গুলো মনে পরতেছে।মনে হয় ও আমাকে ভালোবাসে।আসলেই কি ও ভালোবাসে।।এসব ভালোবাসা না হলে তো ও এমন করতো না।আমার তো মনে হয় ওর মাথায় সমস্যা আছে।ওর সাথে আমার ফুপি আর ফুফার ও মাথায় সমস্যা আছে।আমার তো মনে হয় ওদের গুষ্ঠির মধ্যে সবাই পাগল।বাবা আমাকে এখানে কেনো পাঠালো।আর কোনো জায়গা কি পেলো না।শুয়ে পরলাম কোনো কথা ছাড়ায়।
।।
কেনো জানি না এই জেদি মেয়েটার কথা শুধু মনে পরেতেছে।চোখ বন্ধ করলেই আমার সামনে ওর একটু আগের করা দুষ্টমি গুলা ভেসে আসতেছে।পাশেই ও আছে।কিন্তু চোখ খুলে দেখতে খুব ভয় করতেছে।কিছুই করার নাই।ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরলাম খেয়াল নাই।সকালে উঠে দেখি আমাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে ও,আমি ও দিলাম একটা ধাক্কা,
.
--বাবু এতো সকালে কি কেউ ঘুম থেকে উঠে আজকে তো তোমার অফিস নেই।আমাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে থাকো।(আমাকে ঘুমের মধ্যে কথাগুলো বলে আবার জরিয়ে ধরলো)
।।।
এতো সত্যি পাগল হয়ে গেছে।এখানে থাকলে তো আমিও পাগল হয়ে যাবো।
.
--এই আমি তোমার কোন কালের বাবু হ্যা।(আমি এবার জোরে ধাক্কা দিয়ে বললাম)
.
--এতো সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখতেছিলাম দিলা তো ভেঙে।(মেঘলা)
.
--স্বপ্ন দেখো ভালো।কিন্তু আমাকে জরিয়ে ধরে উল্টা পাল্টা বলো কেনো।(আমি)
.
--আমি তোমাকে জরিয়ে ধরলাম কোথায় আমি তো আমার বর কে জরিয়ে ধরেছিলাম।(মেঘলা)
.
--কি আমি তোমার বর।(আমি)
.
--আরে তুমি কেনো হবা আমি তো স্বপ্নে আমার বরকে জরিয়ে ধরেছিলাম।(মেঘলা)
.
--(কি ফাজিল মেয়ে।এটা তো বাসায় থাকলে আমার অবস্হা খারাপ।)
.
--কিছু বললা।(মেঘলা)
.
--না আমি কি বলবো।(আমি)
।।।।।।।
বলেই বিছানা থেকে চলে আসলাম।দুর এটা যে কখন স্কুলে যাবে।শুনলাম এবার নবম শ্রেণীতে পরে।আর এতো কম বয়সেই মেয়ে এতো পেকে গেছে।
।।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম।দেখি মেঘলা একটা বুরকা পরে চলে আসলো।একদম সুন্দর করে সেজেছে ও।একদম পরী পরী লাগতেছে।আমি তো আবারও ক্রাশ খাইলাম ওকে দেখে।
.
--তারাতারি নাস্তা করে স্কুলে যা সময় তো হয়েই গেলো।(ফুপি)
.
--আমি একা যাবো না স্কুলে।হৃদয়কেও বলো আমার সাথে যেতে।(মেঘলা)
।।
আমি ভাবতেছিলাম এমন একটা কথায় বলবে ও।
--আচ্ছা বাবা তুই যা ওকে স্কুলে দিয়ে আই।(ফুপি)
.
--আমি তো চিনি না পরে আসবো কিভাবে।(আমি)
.
--আরে স্কুল পাশেই তো।(মেঘলা)
।।।।।।
মেঘলা নাস্তা করে নিলো।
.
--এই নাও আমার ব্যাগ তুমি নিয়ে চলো।(মেঘলা)
.
--আমি কেনো নিবো।তুমি নাও তোমার ব্যাগ।(আমি)
.
--আমি বলেছি তাই নিবা।(মেঘলা)
.
--আচ্ছা দাও তাহলে।(আমি)
.
--গুড বয়।(মেঘলা)
।।।।।
আমরা হাটা শুরু করলাম।কেউ কোনো কথা বলতেছি না।দেখি মেঘলা আমার দিকে আড় চোখে একটু পরপর তাকিয়ে থাকে।আমি তাকালেই চোখ সরিয়ে ফেলো।বাবা এতো কিছু করলো কোনো লজ্জা পেলো না আর এখন আমার দিকে তাকাতেই লজ্জা লাগছে।হঠাৎ মেঘলা বলে উঠলো,
.
--আমাকে কেমন লাগছে আজকে।(মেঘলা)
.
--ভালো।(আমি)
.
--শুধুই ভালো।(মেঘলা)
.
--হুমমম
।।।।
আবার ও চুপ হয়ে গেলাম।ওর স্কুলেও চলে আসলাম।দেখি আমাদের দুজনকে দেখে ওর বান্দুবীরা আগিয়ে আসলো।
.
--কিরে মেঘলা এটাই তোর হৃদয়।(ওর এক বান্ধুবী)
.
--মানে বুঝলাম না আপনাদের কথা।(আমি)
.
--আরে না ওরা জিজ্ঞাসা করতে চাইছে তুমি ই আমার মামাতো ভাই কিনা।(মেঘলা)
.
--ওওওও।।।হ্যা আমিই হৃদয়।(আমি)
.
--ভাইয়া আপনাদের না অনেক মানিয়েছে।(মেঘলার আরেক বান্ধুবী)
.
--মানে।(আমি)
.
--আরে কিছুই না ওরা ফাজলামি করতেছে আমার ব্যাগটা দাও আর সোজা বাসায় চলে যাও।এদিক ওদিক তাকাবা না একদম বলে দিলাম।।আর কোনো মেয়ের দিকে তো তাকাবাই না।বুঝছো কি বলছি।(মেঘলা)
.
--হুমমম।(আমি)
.
--তাহলে এখন সোজা বাসায় যাও।(মেঘলা)
।
।
ওরা হাসতে হাসতে চলে গেলো।আমিও ফুপির বাসায় চলে আসলাম।আসার সময় একটু আশে পাশে ঘুরে দেখেছি।বাসায় আসলাম।এসে রুমে আসলাম।কালকে খেয়াল করি নাই।সব জায়গায় দেয়ালে সুন্দর করে লেখা H+M।রুম টাও খুব সুন্দর করে সাজানে।আচ্ছা M এ মেঘলা।H এ তাহলে মেঘলার বফ এর নাম।মনে হয় ওর ব্রেকআপ হয়ে গেছে আর সেই দুঃখে বেচারি পাগল হয়ে গেছে।তাইতো এখন আমার সাথে এমন করতেছে।আমি রুম টা দেখতে লাগলাম।মনে হয় ও আমার জামা কাপড় গুলো গুছিয়ে আলমারিতে রেখেছে।অনেক সুন্দর করে রুমটা ঘুছানো।আমার রুমটাও যদি এমন সুন্দর হতো।আর কিছু না দেখে ঘুমিয়ে পরলাম।ঘুমথেকে উঠে গোসল করে নিলাম।গ্রাম তো তাই পুকুরে এলাম গোসল করতে।না নিচে নামলে উঠতে পারবো কিনা জানি না কারণ আমি তো সাতার পারি না।তাই আবার মগ এনে গোসল করে বাসায় গেলাম।দেখি মেঘলাও ও স্কুল থেকে চলে এসেছে,
.
--গোসল করে ফেলছো।(মেঘলা)
.
--হুমমম(আমি)
.
--গোসল করছো কেনো আমি কতো আশা করেছি দুজন একসাথে গোসল করবো।(মেঘলা)
.
--আমি তো করে ফেলছি।কালকে নাহয় একসাথে করবো।(আমি)
.
--না কালকে না আবার করবা তুমি গোসল আমার সাথে।(মেঘলা)
.
--আমি তো করেছি একবার।(আমি)
।।।।।
কে শুনে কার কথা আমাকে টেনে নিয়ে আসলো পুকুরপাড়ে।
.
--আমি সাতার পারি না আমি তো একবার গোসল করেছি প্লিজ আমি আর গোসল করবো না।(আমি)
.
-- না তুমি আমার সাথে সাতার কেটে গোসল করবা।(মেঘলা)
.
--কিন্তু আমি তো সাতার.....
।।।।।
আমাকে আর কিছুই বলতে না দিয়ে এক ধাক্কায় পানিতে ফেলে দিলো।আমি তো ভয়ে হাত পা নারাতে থাকলাম কিন্তু কিছুই হচ্ছিলো না ঢুবে যাচ্ছিলাম আমি।আমার এমন অবস্হা দেখে মেঘলা আমাকে ধরলো পানিতে নেমে।আমি ও ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম।
.
--আরে ভয় পাচ্ছো কেনো।দেখো পা টা নামাও অল্প একটু পানি এখানে।(মেঘলা)
.
--হুমমম সত্যিই তো বুক পর্যন্ত পানি।আমি শুধু শুধু ভয় পেয়েছি।(আমি)
.
--চলো তোমাকে সাতার সিখিয়ে দিই।(মেঘলা)
।।।।।
আমার সাতার শিখার অনেক ইচ্ছা তাই আর মানা করলাম না।২ ঘন্টা ধরে মেঘলা আমাকে সাতার শিখালো।আমি ও শিখলাম হাল্কা হাল্কা।এখন ভালোই লাগছে ওর পাগলামী গুলো।গোসল শেষে বাসায় আসলাম।
.
--আম্মু আম্মু।(মেঘলা)
.
--আমি স্কুল থেকে দুই সপ্তাহ এর ছুটি নিয়েছি।(মেঘলা)
.
--কেনো এতো ছুটি নিলি কেনো।(ফুপি)
.
--আরে হৃদয় এসেছে।আমি স্কুলে থাকলে ও তো বোর হয়ে যাবে।এজন্য ছুটি নিয়েছি যাতে ওকে সব সময় সময় দিতে পারি।(মেঘলা)
.
--ভালো করেছোস ওকে পুরা গ্রামটা সুন্দর করে ঘুরিয়ে দেখাবি।(ফুপি)
।।।।।
এখন কি বলে ছুটি নিয়েছে মানে ২৪ ঘন্টা এখন আমাকে জ্বালাবে।না এ তো হতে পারে না।আজকেই তো আমাকে পুকুরে ডুবিয়ে মারতে চেয়েছিলো।সামনে যে কি করবে কে যানে।আম্মু বাবা তোমরা আমাকে এই জেদি মাইয়া থেকে বাচাও।আমি তো মরে যাবো এই বাসায় থাকলে।এই মেয়ে তো আমাকে বাচতে দিবে না।।।।।।।।।।।।।।
।।।।
।।।
।।
(চলবে)