ওয়েবসাইট কাস্টমাইজেশন এর জন্য। Contact Us Welcome!

গল্পঃ ভালোবেসেছি তোরই মতো পর্বঃ ০৭

Bangla Dub Novels

 #ভালোবেসেছি_তোরই_মতো

#পর্বঃ০৭

লেখিকাঃ #শাদিয়া_চৌধুরী_নোন

________________________________

আজ জায়িন ভাইয়ার বিয়ে। বংশের বড় ছেলের বিয়ে বলে সবার মাঝেই এক ধরনের উচ্ছ্বাস কাজ করছে। নানুমণি এইবাড়ির কর্তী। তিনি উঠোনের এককোণে নারকেল গাছের নিচে পাতানো চৌকিটাতে বসে, সবাইকে কাজের নির্দেশনা দিচ্ছেন। দুপুরের আগেই বরযাত্রী রওনা দেবে। বিকেল গড়াতেই নতুন বউ নিয়ে বাড়ি ফিরবে সবাই। অথচ, এখনো অনেক মেহমান আসা বাকি। বেছে বেছে বরযাত্রীর মানুষ নেওয়া হচ্ছে। কনের বাবা গরীব মানুষ। তাই নানুমণি বলে দিয়েছেন, এতোমানুষ যাওয়ার দরকার নেই। বউ তো অন্য কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে না, বাড়িতেই আসছে। দরকার পড়লে, বৌভাতের অনুষ্ঠান আরো বড় পরিসরে করা হবে। 


নোরিন, জেরু, মিমহা, রাইদা আর মহিমা ; ওরা পাঁচজন মিলে একসাথে রেডি হচ্ছে। মহিমা বড়নানুর নাতি অর্থাৎ নিবিড়ের চাচাতো বোন। তারা কিছুক্ষণ আগেই এসেছে। চাকরিসূত্রে তার বাবা শহরে থাকে। জেরুদের সাথে বেশ কয়েকবার কথা হলেও নোরিনের সাথে এই প্রথমবার দেখা হয়েছে। নোরিন যেমন তাকে কোনোদিন দেখেনি,  তেমনি সেও নোরিনকে কোনোদিন দেখেনি। কারণ গ্রামে নোরিনের যাতায়াত বলতে গেলে একেবারেই কম আর ছোটবেলায় মা বেঁচে থাকাকালীন সময়েও বড় নানুর পরিবারের সাথে তেমন মিল মহব্বত ছিলো না। 

মহিমার চোখ বারবার এককোণে সোফায় বসে থাকা নোরিনের দিকে যাচ্ছে।  মেয়েটার চোখ মোবাইলের দিকে স্থির। ভাবলেশহীন, গম্ভীর করে রাখা মুখ। যেন আশেপাশের পৃথিবীর প্রতি তার কোনো আগ্রহ নেই। ছোটবেলায় দিলারা আন্টিকে একবার দেখার সুযোগ হয়েছিলো। গ্রামের বাছাই করা সুন্দরী ছিলেন তিনি। বংশের ছোট মেয়ে হলেও তিনি ভীষণ সাংসারিক ছিলেন আর রুপেও সবার চেয়ে এগিয়ে। নোরিন তার মায়ের চেয়েও বেশি পেয়েছে। কিন্তু.... 

 


জেরু ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে বললো,

--- এই আমাকে ডিপ রেড লিপস্টিকে কেমন লাগছে বলতো? 


নোরিন চোখ তুলে তাকাতেই, মহিমা চোখ সরিয়ে ফেললো। 


নোরিনঃ ভালো।


মহিমা এবার মুখ খুললো,

--- আমার মনে হয় তোমাকে এই লিপস্টিকে ভালো মানাবে।

বলে বক্স থেকে আরেকটা লিপস্টিক এগিয়ে দিলো। নোরিন মহিমার দিকে তাকালো। মিনিট কয়েক তাকিয়ে ঠোঁটটা ঈষৎ বেঁকিয়ে নজর সরিয়ে ফেললো। এই মেয়েটাকেও তার একটুও পছন্দ হচ্ছে না। মোবাইলে তাকিয়েও বুঝতে পারছিলো, মহিমা তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকালে তাকাক! এসব নজরে নোরিনের অভ্যাস আছে। 


রাইদাঃ নোরিন তুমি রেডি হবে না? লেহেঙ্গাটা পড়ে বসে আছো যে? 


----- সমস্যা নেই। আমার বেশিক্ষণ লাগবে না। 


জেরুঃ আজ না আমার বয়ফ্রেন্ডও যাবে বরযাত্রী তাই, ভালোভাবে সাজছি। আমাকে সুন্দর লাগছে না? 


সবাই রেডি হয়ে চলে র‍ুম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর নোরিন রেডি হতে লাগলো। লাল শার্টিনের ঘেরওয়ালা লেহেঙ্গা পড়ে দোপাট্টা'টাকে ভাঁজ করে সুন্দরমতো একপাশে নিলো।  সিল্কি চুলগুলোকে একপাশে সিঁথি করে ছোট ছোট চুল গুলো একসাইডে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিলো৷ জন্মগত ভাবে নোরিনের চুল হালকা লাল। আর বেশ কয়েকবছর আগে থেকেই আর্মি মেয়েদের রুল অনুসারে নিজের চুলগুলো ছোট করে কেটে রাখতো। দুই কাঁধের সামান্য নিচ অব্দি পৌঁছায় মাত্র চুলগুলো।  


নোরিন ব্রাইডাল লুকে  হাই হিলের ঠকঠক শব্দে, লেহেঙ্গাটা দুইহাতে একটু উপরে উঠিয়ে যখন সাবধানী পায়ে বাইরে বেরিয়ে এলো দেখা গেলো, প্রায় সব মানুষের চোখ তার দিকে। নানুমণি তার কপালে চুমু আকঁলো। বিয়েতে আসা গ্রামের অপরিচিত অর্ধশিক্ষিত ছেলেগুলো শিষ মারলো অগণিত। এমন পরী বাস্তবে এই গ্রামেগঞ্জে কোথাও দেখেছে নাকি ওরা? এমন মেয়ে তো সিনেমাতে দেখা যায়।  নোরিন চারদিকে তাকিয়ে  দেখে পুরো বাড়িতে হুলস্থুল কান্ড।  কানের পাশে চিল্লানির ট্রেনটা আবার ভোঁ ভোঁ করছে। পুরো বাড়ির মানুষ সবাই কি একসাথে চিৎকার করছে নাকি? মানুষের হৈচৈ, বাচ্চাদের কান্না, ঘামের গন্ধে নোরিনের গা গুলিয়ে আসছে। একটু আগে খাওয়া কোলাটা গলা অব্দি এসে গেছে। এই গল্পের লেখিকা শাদিয়া চৌধুরী নোন। সবার অলক্ষ্যে নোরিন হাত দিয়ে মুখ ঢেকে পাহাড়ের নিচে বড়ই গাছের আড়ালে চলে এলো। এদিকে মানুষের চলাচল একেবারেই কম। প্রাণভরে শ্বাস নিয়ে এদিকওদিক তাকাতেই দেখে এককোণায় একটা বাইকের সাথে ঠেস দিয়ে নিবিড় দাঁড়িয়ে। পেছন থেকে নিবিড়কে দেখেই নোরিনের বুকে ব্যাথাটা আবার নাড়া দিলো। স্কাই ব্লু রঙের ফুলহাতা শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত গোটানো, হোয়াইট ডেনিমে  নিবিড়কে যেন আবার নতুনরূপে আবিষ্কার করলো নোরিন। ফর্সা ঘাড়টার দিকে নোরিন দুমিনিট যাবৎ তাকিয়ে রইলো। ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটাও ভীষণ ভালো লাগলো। হঠাৎ নোরিনের চোখে আষাঢ়ের কালো মেঘ ঘনিয়ে এলো। মহিমা দাঁড়িয়ে আছে নিবিড়ের পাশে। এমন নির্জনে দাঁড়িয়ে কি কথা বলছে ওরা? মহিমা নিবিড়ের এতো কাছাকাছি কেনো? নোরিনের মনে হরেক রকমের প্রশ্ন উঁকি দিলো। 


---- নিবিড় তু-তুমি! 

নোরিনের ডাকে মহিমা আর নিবিড় দুজনেই পেছনে ফিরে তাকালো। নোরিনের বুকে ঢোল পেটানো শুরু হলো। একটা লাল রঙের টাইও পরেছে নিবিড়। শার্ট ইঙ্ক করা। কি দুর্দান্ত হ্যান্ডসাম লাগছে! নোরিনের ইচ্ছে করলো বুকে হাত দিয়ে মাটিতে বসে যায়। হোক জামাকাপড় ময়লা! 


--- এই বেয়াদব!  তোকে কতবার বলেছি আমি? বারবার তুমি তুমি করিস কেন? থাবড়ায় দাঁত ফেলে দেবো৷ তারপর ফোকলা দাঁত দিয়ে বুড়ি সাজবি। মহি দেখেছিস বেয়াদবটার অবস্থা?  


মহিমা বিস্ময়মাখা দৃষ্টিতে তাকালো। নোরিন ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। শেষমেষ এই মেয়েটার সামনে নিবিড় ভাইয়া অপমান করলো? 


নিবিড় কোনোদিকে না তাকিয়ে চলে গেলো। নিবিড়ের পেছন পেছন মহিমা সহানুভূতির হাসি দিয়ে , সেও চলে গেলো। নোরিনের আকাশে তাকিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। এই জীবনে সে কারো কাছে এতো অপমানিত হয়েছে কিনা মনে পরছে না। কি অসভ্য এই ছেলে! নোরিন যে এতো ভালো সেজে এসেছে একবার তাকায়নি পর্যন্ত। এই ছেলেটাকে কচুরিপানা ভর্তি পুকুরে চুবাতে হবে, সেখানে পঞ্চাশটা সাপ কিলবিল করবে। অশান্ত নিবিড় কোথাকার! 


চলবে....

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.