পার্টঃ২২(অন্তিম পর্ব)
লেখকঃজাহিদ আহমেদ
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
হাওয়ার ওপর ভাসমান অবস্থায় ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম রাজপ্রাসাদ টির দরজা টির সামনে,আর আমার পেছন পেছন সেনাপ্রধান সহ ডার্ক বার্ড টি আসতে লাগলো। দরজা টির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই,বিশাল বড় দরজাটা ক্যাচক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো। এতে করে খুব একটা অবাক হলাম না,কেননা এখানে অবাক হওয়ার মতো কোনো জিনিসের অভাব নেই।
দরজা টার অপর পাশে নিজের পা'টা রাখতেই শরীরের মধ্যে অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হলো। দরজা টির অপর পাশে একদম পুরোভাবে ঢুকে গেলাম,আর আমার পেছনে সেনাপ্রধান আর ডার্ক বার্ড টি তো আছেই।
,
দরজা টির এপাশে আসতেই মনে হচ্ছে,ঘন নিকষ কালো অন্ধকারের কোনো এক জায়গায় ওপরে দাঁড়িয়ে আছি আমি। এতোটাই অন্ধকার যে,সামনে কি আছে সেটা আন্দাজ ও করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। হঠাৎ ধুপ করে অদ্ভুতরকম শব্দ করে রাজপ্রাসাদের গেটটা বন্ধ হয়ে গেলো। আর ঠিক এমন সময় আমাদের চারপাশে থেকে বিভিন্ন ধরনের সব অদ্ভুত অদ্ভুত আওয়াজ আসতে লাগলো। ঠিক তখনই আমাদের চারপাশ টা সম্পূর্ণ আলোতে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। আর এতে করে আমরা আমাদের আশেপাশের সবকিছু একদম স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম।
,
রাজপ্রাসাদ টি বাইরে থেকে যতোটা বড় দেখা যাচ্ছিলো,ভেতরটা তাঁর থেকেও অনেক গুণ বড়। আর সবচেয়ে আশ্চর্য জনক বিষয় হচ্ছে,আমরা একটা রুমের ভেতরে আছি ঠিকই কিন্তু কোন দরজার মাধ্যমে ভেতরে ঢুকেছি সেটা বুঝতে পারছি না কোনো ভাবেই। কেননা আমাদের রুম টির শুরু কোথায় আর শেষ কোথায় সেটা বুঝা যাচ্ছে না,যাঁর মানে হলো,রুমটি বিশালাকার বড়। আমার পেছনের দিকে তাকাতেই দেখলাম যে,একটা নয় দু'টো নয় কয়েকশো দরজা একসাথে রয়েছে,এটা যে আশ্চর্য হওয়ার মতোই। কথা না বাড়িয়ে সামনের দিকে তাকালাম সেই সাথে আবারও অবাক হলাম,একটু আগেও তো দেখলাম যে সামনে কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না তাহলে এই দরজা গুলো কোথা থেকে এলো। অপর পাশের মতো এখানেও কয়েকশো দরজা রয়েছে। এটা দেখার পর নিজের প্রতি নিজেরই রাগ হতে লাগলো,যাঁর কারনে রাগের বশে একটা দরজার ওপর লাথি মেরে বসলাম,এতে করে দরজাটি একদম ভেঙে উল্টে পড়ে গেলো,আর কিছু অংশ রয়ে গেলো তাঁদের জায়গা মতো। দরজা টির অপর পাশে দেখতে পেলাম যে,একটা খোলা মাঠের মতো জায়গা রয়েছে। কোনো কিছু না ভেবেই ভাঙা দরজা টির ভেতরে প্রবেশ করলাম।
,
,
বিশাল বড় আকারের একটা মাঠের মধ্যে এসে পড়লাম। খেলার একটা স্টুডিয়াম যতোটা বড় আকারের হয়,তাঁর চাইতেও এই মাঠটি দুগুণ বড় হবে। হঠাৎ করে আমার কান দু'টো খাড়া হয়ে গেলো,কেননা কেউ একদম থমথমে গলায় আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো যে,
আরে কে এসেছে,এতো দেখছি মনুষ্য জাতের ছোট একটা বাচ্চা ছেলে এসেছে আর তাঁর সাথে একজন বুড়োও আছে দেখছি,আরে একি বুড়ো টা কাঁধে করে দেখছি একটা পাখিকে নিয়ে এসেছে। আচ্ছা এই বাচ্চা টি নাকি ভবিষ্যৎ ড্রাগন কিং শুনলাম। কিন্তু সেটা কোন ড্রাগনদের কিং শুনি,হোয়াইট ড্রাগন কিং,নাকি ব্লাক ড্রাগন কিং,নাকি গোল্ডেন ড্রাগন কিং যাঁরা কিনা হাজার বছর আগে মারা গেছে। আমার তো মনে হয় তুই মরার পরে যে ড্রাগন দের সাথে থাকবি তাঁদের কিং হবি। তাই জন্য তোর নামটা ভালোভাবে দেওয়া হয়নি। আর আমার নামটা শুনতেই সব ড্রাগন রা তাঁদের মাথা ঝুঁকিয়ে ফেলে। আর তোর কি মরার এতোটাই সখ জেগেছে নাকি,যে সোজা মৃত্যু পুরিতে এসে গেছিস(অচেনা ব্যক্তির গলায় স্বর)!
,
এই বলে সে অনেক জোরে জোরে হাসতে লাগলো। আর হাসির শব্দ টা খুবই ভয়ানক ছিলো যে,সাধারন মানুষ সেটা ভুলেও শুনতে পেলে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে।
আর এদিকে আমি কথা বলা এবং হাসির কন্ঠটির মালিককে খুঁজতে লাগলাম আমার চারদিকে। আমার পেছনে সেনাপ্রধান আর ডার্ক বার্ড টি ছাড়া কাউকে দেখতে পেলাম না,আর সামনে শুধু খোলা মাঠ। এরই মাঝে হঠাৎ করে হাসির শব্দ টা একদম বন্ধ হয়ে গেলো। আবারও সেই কন্ঠটা শুনতে পেলাম। সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে যে,
যদি নিজের প্রানের একটু মায়াও থাকে,তাহলে আত্মসমর্পণ কর। নয়তো এর হিসাব চুকাতে তোর নিজের প্রাণ টায় দিয়ে দিতে হবে। যা বলছি তাই কর,নিজেকে বাঁচা আগে(অচেনা ব্যক্তির গলায় স্বর)!
,
অচেনা ব্যক্তির কথা শুনে রাগে আমার শরীরের রক্ত গুলো সব টকবক টকবক করে ফুটতে লাগলো,যাঁর কারনে আমিও বলতে লাগলাম যে,
কে কাকে মারবে সেটা পরে দেখা যাবে,আগে তুই আমার সামনে তো একবার আয়,আমি জানি তুই ই হলি ব্লাক ড্রাগন কিং। নিজেকে সামনে আনতে ভয় পাচ্ছিস নাকি,আর যদি তুই সামনে না আসিস তাহলে তোর একদম সামনে গিয়ে তোকে মারব(আমি)!
,
বাহ্ তুই দেখি তোর বাবার মতো প্রথম দেখা'র আগেই চিনতে পেরেছিস আমাকে,কিন্তু তোর বাপ'টা কোনো কাজেরই ছিলো না। যাঁর কারনে তাঁকে আমার হাতে মরতে হলো,সাথে তোর মাকেও,আর আমাকে দেখতে চাচ্ছিস,আবার আমাকে মারতেও চাচ্ছিস দেখি। আগে নিজে বেঁচে দেখা,আমার চাঁদবদন করার আগে আমার চেলা দের সাথে আগে লড়াই করে জিতে দেখা। যদি তুই জিততে পারিস তাহলে তোকে কষ্ট করে আমার কাছে আসতে হবে না,আমি নিজেই তোকে মারার জন্যে ওখানে চলে আসবো। আর আমার মনে হয় না যে,তুই আমার চেলা দের সামনে টিকতে পারবি(অচেনা ব্যক্তির গলায় স্বর। যে কিনা ব্লাক ড্রাগন কিং)!
,
তাহলে দেখা যাক,কে হারে আর কে জিতে(আমি)!
,
কথাটা শেষ করতে পারলাম না,তাঁর আগেই আমার চোয়াল বরাবর কিছু একটা অনেক স্পিডে আঘাত করলো,যাঁর কারনে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেলাম আমি। তখনই মাটি থেকে তারাতাড়ি ওঠে দাঁড়িয়ে গেলাম,আর সাথে সাথে বুকের মধ্যে আবার কেউ আঘাত করলো,যাঁর কারনে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম তখন। মাটিতে শোয়া অবস্থায়ই কান দু'টো খাঁড়া হয়ে গেলো,বুঝতে পারলাম কিছু একটা খুবই দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। মাটিতে শোয়া অবস্থায়ই ওপরের দিকে দিলাম এক লাফ,মাটির ওপরে একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। চোখ দু’টো আমার এখনো বন্ধ অবস্থাতেই আছে,এমন সময় অনুভব করতে পারলাম যে,আমার চারপাশে একটা নয় মোট পাঁচ টি কালো ধোঁয়া উড়ে বেড়াচ্ছে,এদের মধ্যে তিনটা আমার চারপাশে উড়ে বেড়াচ্ছে আর দু'টো একটু দূরে আছে,হ্যা ওই দু'টো মিলে সেনাপ্রধান এবং ডার্ক বার্ড কে হামলা করছে। এসব দেখছিলাম ঠিক তখনই হঠাৎ করে আমি আমার ডান হাত টা উঁচু করে খপ করে ধরে ফেললাম একজনকে। নিজের চোখ দু'টো খুললাম,চোখ দু'টো একদম লাল টকটকে হয়ে গেছে। আর ব্লাক ড্রাগনের চ্যালারা ধোঁয়াগুলোর সাহায্যেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অনেক দ্রুত গতিতে যেতে পারে এরা,সেই সাথে হামলাও এতোটা ফার্স্ট করে যে,বুঝতে পারার কোনো উপায়ই নেই কে আক্রমন করলো। কিন্তু আমাকে ফাঁকি দেওয়া একেবারেই অসম্ভব,দিলেও সেটা ভুলবশত হবে হয়তো। ধোঁয়াটা যেহেতু একজন ব্লাক ড্রাগন সৈন্য সেই সাথে ব্লাক ম্যাজিক ব্যবহার কারী,সেহেতু একে ধংস করাটা অনেকটায় সহজ।
,
,
আমি এদের মধ্যে একজনের গলা ধরে রেখেছি,তাঁকে কি করবো ভাবছিলাম। তখনই সে
আমার হাত থেকে ছোটার জন্য ছটফট করছিলো তখন আমি আমার ডান হাত টা আস্তে করে চাপ দিলাম। মট করে একটা শব্দ হলো শুধু,ঠিক তখনই কালো ধোঁয়াটা একটা মানুষের রূপ নিলো,হ্যা সে মারা গিয়েছে। এটা দেখে তাঁর বাকি সঙ্গীরা আমার প্রতি একটু ক্ষেপে গেলো,যাঁর কারনে আমার কাছের দু'টো আমার দিকে একসাথে তেড়ে আসতে লাগলো। কাছে আসতেই চুটকী বাজালাম আর সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে যেনো একটি বড় কাচের বোতল এসে সেটার ভেতরে দু'জন একসাথে পুড়ে নিলো। ধোঁয়া দু'টো বোতল টা থেকে বের হওয়ার জন্য বোতলের দু'দিকে দু'জনে ঠেলে যাচ্ছে। কিন্তু এতে করে কোনো লাভ হচ্ছে না দেখে ধোঁয়া দু'টো একসাথ হয়ে ছোট্ট একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলী হলো তারপর সে ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো। আরে একি কাচের বোতল টার মধ্যে তো আস্তে আস্তে ফাটল ধরছে। কিছুক্ষনের ভেতরে বোতল টা একটা শব্দ করে একদম ভেঙে গেলো। ধোঁয়ার কুণ্ডলীর দু'টোর শক্তি একসাথে হওয়ার জন্য তাঁদের শক্তি দিগুণ হয়ে গেছে। এরইমধ্যে দূরের দু'টো ধোঁয়া এসে এদের সাথে একসাথ হলো। সবগুলো ধোঁয়া একসাথ হওয়ার কারনে এদের শক্তি অনেক হয়ে গিয়েছে। এর কারনে ছোট টর্নেডোটা ধীরে ধীরে বিশাল বড় টর্নেডোর রূপ নিতে লাগলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই চারপাশের সবকিছু তাঁর নিজের দিকে টানতে লাগলো টর্নেডোটা। সেনাপ্রধান এবং ডার্ক বার্ড তাঁরা দু'জন তাঁদের ড্রাগন ফর্মে ডানার সাহায্যে নিজেদেরকে টর্নেডোর হাত থেকে বাঁচাচ্ছে। এটা দেখে তাঁদের দু'জন আমার হাতের ইশারায় আমার থেকে অনেক দূরে নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দিলাম। আর টর্নেডো টা দেখার পরপরই আমার চোয়ালগুলো শক্ত হয়ে গেলো। সেই সাথে আমার শরীর ধীরে ধীরে কাঁপতে লাগলো একসময় আমার পুরো শরীর এতোটাই স্পিডে কাঁপতে লাগলো যে,যাঁর কারনে আমার শরীরের কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না,এককথায় আমাকে অদৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
,
,
পিঠ থেকে নিজের লাল টকটকে দু’জোড়া ডানা বের করে আনলাম এবং সেই সাথে নিজের পুরো স্পিড। এতে করে আমার স্পিড এতোটাই দ্রুত যে,এককথায় অসাধারণ। দিলাম দৌড় সামনের ভয়ংকর টর্নেডোর দিকে,টর্নেডোর স্পিড মুটামুটি ভালোই কিন্তু সেটা আমার থেকে বেশি না। টর্নেডোর সাথে দিলাম পাল্লা করে ছোট,এতে দেখা গেলো যে,টর্নেডোটা তাঁর নিজের চারপাশে একবার ঘুরতে যতোটা সময় নেই সেটুকু সময়ের মধ্যে আমি টর্নেডোটাকে ঘিরে তিনবার ঘুরতে পারি। এসবের মধ্যেই আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসে গেলো,নিজের জায়গায় একদম থেমে গেলাম এবং টর্নেডো টার বিপরীতে দৌঁড়েতে লাগলাম। আমার স্পিড এতোটাই দ্রুত ছিলো যে,যাঁর কারনে টর্নেডো টা ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই টর্নেডো টা একদম ছোট হয়ে আগের ধোঁয়া রূপে চলে গেলো সবাই। এবং ধোঁয়া গুলো মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে।
হঠাৎ ব্লাক ড্রাগন কিং এর আওয়াজ টা আবার শুনতে পেলাম।
,
বাহ্ বাচ্চাটার ভালো তেজ আছে দেখছি। কিন্তু বেশি তেজ তো ভালো না(ব্লাক ড্রাগন কিং)!
,
ব্লাক ড্রাগন কিং এর কথা শুনে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললাম যে,
এখনো কি তোর কোনো শক্তিশালী চ্যালাকে পাঠানো বাকি আছে নাকি এবার তুই নিজে আসবি(আমি)!
,
আর না আর কাউকে না,আমি নিজেই আসছি তোকে মারার জন্যে (ব্লাক ড্রাগন কিং)!
,
কথাটি বলা শেষ হতেই ব্লাক ড্রাগন কিং এর কোনো আওয়াজ আর পেলাম না। তাই অপেক্ষা করতে লাগলাম তাঁর জন্য,ঠিক তখনই আমার পেছন থেকে কেউ একজন বলে ওঠলো যে,তাহলে খেলা শুরু করা যাক। পেছনের লোকটার কথা শুনেই মুখে আমার ছোট্ট হাসি ফুটে উঠলো। পেছনের দিকে না তাকিয়েই প্রতিউত্তরে বললাম যে,হু অবশ্যই কেন নয়।
,
,
এই বলে আমি আমার একটু আগের স্পিড ব্যবহার করে পেছনের দিকে ঘুরতেই দেখলাম য,কালো হুডি পড়ে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে,মুখমন্ডল সহ চোখদুটোও একদম পুরো ভাবে ঢাকা রয়েছে। এতোটা খেয়াল না দিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম স্পিডে। তাঁর সামনে গিয়ে তাঁর পেটের মধ্যে দিলাম এক লাথি।
এতে করে ব্লাক ড্রাগন কিং উড়তে উড়তে অনেক দূরে গিয়ে পড়লো। সে আবারও উঠে দাঁড়িয়ে যেতেই,নিজের স্পিড ব্যবহার করে আবারও গিয়ে তাঁর শরীর টা ধরে একটু ওপরে উঠিয়ে নিয়ে শরীর টাকে ছেড়ে দিয়ে তাঁর ডান হাতটা ধরে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে নিচের দিকে দিলাম টান। আবার উঠিয়ে একের পর এক আছাড় দিতেই লাগলাম,এভাবে কতক্ষন মারার পর লাফ দিয়ে ওপরে উঠে গেলাম তারপর নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ব্লাক ড্রাগন কিং কে দিলাম সর্চ্চ স্পিডে যেতে লাগলাম,কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পরে তাঁর মুখের ওপর নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দিলাম এক ঘুসি। নিচের দিকে সে অনেক দ্রুত গতিতে নামতে লাগলো,আমিও আমার ডানার সাহায্যে বুলেটের চেয়েও দ্রুত গতিতে তাঁর সোজা নিচের দিকে নামতে লাগলাম। ব্লাক ড্রাগন কিং এর কাছে যেতেই আমি আমার পা দু’টো একসাথ করে ওর বুকের ওপরে নেমে গেলাম,এবং হাল্কা একটু চাপ দিতেই আগের চাইতে আরো দ্রুত গতিতে নিচের দিকে নামতে লাগলাম। হঠাৎ ধুপ করে মাটিতে নেমে আসলাম দু'জনে। হ্যা ব্লাক ড্রাগন কিং আমার পায়ের নিচে পড়ে আছে,আর তাঁর চারপাশে গোলাকার বৃত্তের মতো মাটি ভেতরে ডেবে গিয়েছে,আর ওর কালো কুচকুচে রঙের ডানা দু'টো আর দেখতে পেলাম না।
,
,
মাটি থেকে উঠিয়ে ব্লাক ড্রাগন কিং কে সামনের দিকে ছুড়ে মারলাম। এতে করে সে মাটির মধ্যে কয়েকটা ডিগবাজি খেয়ে অনেক দূরে গিয়ে পড়লো। ধীরে ধীরে তাঁর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম,কিছুক্ষনের ভেতরেই সে মাটি থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে গেলো। এবং দু'হাত একসাথ করে কিছু একটা বানাতে লাগলো। আরে ওতো দেখছি ব্লাক ম্যাজিক ব্যবহার করে,ছোট ছোট ফায়ার বল বানাচ্ছে। অনেক শক্তিশালী এগুলো অন্যের কাছে হয়তো,কিন্তু সেটা আমার কাছে না সেটা মনে হয় ব্লাক ড্রাগন কিং জানেনা।
,
একেরপর এক ফায়ার বল এবং অগণিত ম্যাজিক বল দ্বারা আমার ওপর আক্রমন চালাতে লাগলো। আর সেগুলো আমার দিকে আসতে লাগলো,তারপরও কিছু বললাম না। সেগুলো আমার শরীরের সাথে স্পর্শ করার সাথে সাথে আমার শরীর সবগুলো ম্যাজিক বলের শক্তি এবজোর্ব করে নিলো। এটা দেখার পর ব্লাক ড্রাগন কিং বড়বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। এবং এর কিছুক্ষন পরেই সে তাঁর ড্রাগন ফর্মে চলে আসলো,আমিও আমার ড্রাগন ফর্মে যাওয়ার জন্য নিজের চোখ দু'টো বন্ধ করে নিলাম,কিছুক্ষন পর চোখ দু'টো খুললাম। কিন্তু একি আমিতো আমার মানুষ ফর্মেই আছি। অনেক চেষ্টা চালাতে লাগলাম ড্রাগন ফর্মে যাওয়ার জন্য কিন্তু কোনো ভাবেই সফল হলাম না।
আর এদিকে ব্লাক ড্রাগন কিং তাঁর বিশাল বড় মুখ খুলে আমাকে উদ্দেশ্য করে মুখ থেকে বর্জ্যপাত নিক্ষেপ করতে লাগলো একেরপর এক। অন্যখেয়ালে থাকর কারনে আক্রমন গুলো থেকে নিজেকে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলার আগেই সেগুলো আমাকে আঘাত করে নিলো। আর আমি ছিটকে গিয়ে পড়লাম অনেক দূরে। সাথে সাথে মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম,ব্লাক ড্রাগন কিং আমার থেকে একটু দূরে এসে দাঁড়িয়ে গেছে। ব্লাক ড্রাগন কিং কে দেখে মাথা,মুখমন্ডল সহ পুরো শরীর আগুনের মতো লাল রঙের হতে লাগলো। নিজের সর্বোচ্চ স্পিডে দৌড়ে গিয়ে ব্লাক ড্রাগনটির পিঠের ওপরে চড়ে দু'হাত দিয়ে একেরপর এক আঘাত করতে লাগলাম ব্লাক ড্রাগনের পিঠের মধ্যে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্লাক ড্রাগন কিং ড্রাগন ফর্মেই কাবু হয়ে গেলো,ধুপ করে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো।
আর আমি তাঁর পিঠ থেকে লাফ দিয়ে তাঁর থেকে একটু দূরে গিয়ে নামলাম। রাগের কারনে আমার নিশ্বাসের সাথে অনেক গরম হাওয়া বেরুতে লাগলো। হঠাৎ করে ব্লাক ড্রাগন কিং মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালো এবং সাথে সাথে সে তাঁর ড্রাগন ফর্মে থেকে মানুষ ফর্মে চলে গেলো। আর সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,
অনেক হয়েছে তোর সাথে দৌড়াদৌড়ি। তুই তোর পুরো শক্তি পাওয়ার পরে যে,এতোটা শক্তিশালী হবি সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। আমার মানুষ ফর্ম সহ আমার শক্তিশালী ড্রাগন ফর্মে থাকার পরও তুই হারিয়ে দিলি আমাকে,কিন্তু এবার আর নয় এখন আমার পালা। তোকে আর কোনো সুযোগ দেবো না,পারলে নিজেকে বাঁচিয়ে দেখা(ব্লাক ড্রাগন কিং)!
,
এই বলে ব্লাক ড্রাগন কিং মাটির একটু ওপরে হাওয়ার মধ্যে ভাসতে লাগলো,হঠাৎ করে তাঁর শরীরের মধ্যে আগুন লেগে গেলো এবং সাথে সাথে সে কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই সেখানেই পুড়ে ছাই গেলো। এটা কিভাবে সম্ভব,এতো তারারা কেউ কিভাবে আগুনে জ্বলে ছাই হয়ে যেতে পারে। এসব কথা ভাবছিলাম। ঠিক তখনই খেয়াল করলাম যে,ব্লাক ড্রাগন পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ছাই গুলো ধীরে ধীরে একটা মানুষের রূপ নিলো। পুরোপুরি মানুষ হতেই তাঁকে দেখে আমি হা হয়ে গেলাম। আমি দাঁড়িয়ে আছি আমার সামনে,এটা কিভাবে সম্ভব। ব্লাক ড্রাগন কিং আমার চেহারা কি করে কপি করে নিলো। এরই মধ্যে ব্লাক ড্রাগন কিং এর (আমার চেহারার মানুষ টার) শরীরের মধ্যে ধীরে ধীরে ফাটল ধরতে থাকে। শরীরের চামড়া ফেটে সেখান দিয়ে আঠালো আগুন বের হচ্ছে,আঠালো আগুন বলার কারন হলল,আগুন গুলো ওর শরীরের চামড়ার সাথে মিশে রয়েছে কিন্তু মাটিতে পড়ছে না। আর সাথে শরীরের গঠনটি আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেতে লাগলো,সাথে করে তাঁর মাথার দু'দিকে দু'টো শিং ও জ্বালাচ্ছে। একি একে তো দেখতে শয়তানের দেবতা লুসিফারের মতো লাগছে,তখনই মনে হলো যে,ব্লাক ড্রাগন কিং ই লুসিফার শয়তানের শক্তিকে কন্ট্রোল করতে পারে পুরোভাবে। তাঁর মানে এখন আমাকে সাক্ষাৎ শয়তানের দেবতা লুসিফারের সাথে লড়াই করতে হবে।
,
,
লুসিয়াস টি তাঁর জায়গায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। একে তো ও আমার চেহারা কপি করেছে,আমার বাবা-মা কেও মেরেছে,আর সেনাপ্রধান এবং ডার্ক বার্ড টিকেও এসব কথা ভাবতে ভাবতে সবমিলিয়ে আমার রাগটা একদম চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। লুসিফারকে উদ্দেশ্য করে সর্বোচ্চ স্পিডে দিলাম দৌড়। ওর সামনে গিয়ে ওর চোয়াল বরাবর লক্ষ্য করে দিলাম এক ঘুসি। ঘুসি টা ওর চোয়ালে লাগার আগেই ও আমার হাতটা খপ করে ধরে নিয়ে বললো যে,না না সব বেলায় তো তোকে ছোট বাচ্চা হিসেবে ছাড় দিলে হবে না। এই বলে সে তাঁর অপর হাত দিয়ে আমার চোয়াল বরাবর লক্ষ্য করে দিলো এক ঘুসি। উড়তে উড়তে অনেক দূরে গিয়ে পড়লাম। আবার সাথে সাথে ওঠে দাঁড়িয়ে গেলাম,আবারও তেড়ে গেলাম লুসিফারের দিকে। আবারও তাঁর লাথি খেয়ে অনেক দূরে গিয়ে পড়লাম। ওঠে দাঁড়ানোর আগেই লুসিফার এসে আমার বুকের ওপর চড়ে একহাত দিয়ে আমার গলা চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে একের পর এক ঘুসি দিতে লাগলো আমার পুরো মুখের মধ্যে। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে এখন,নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছি না,খুব কষ্ট হচ্ছে। চোখ দু'টো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলো আমার।
,
,
চোখ দু'টো বন্ধ হতেই,আমার পালিত বাবা-মার মুখটা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পেলাম,সেই সাথে দেখতে পেলাম আমার জন্ম দাতা পিতামাতা কেও,আমাকে দিয়ে কতো আশা ছিলো তাঁদের,সেই সাথে সেই কলেজের মেয়েটার চেহারা স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠলো। আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে।
হঠাৎ করে চোখ দু'টো খুললাম। আর আমার চোখ দু'টো লাল রঙের নয় পুরো সবুজ রঙের হয়ে গেছে চোখ দু'টো। আর চোখ দু'টো খুলতেই দেখতে পেলাম যে,লুসিফার তাঁর হাতটা উপর থেকে ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আনছে। তাঁর হাতটা নিজের একহাত দিয়ে ধরে অপর হাত দিয়ে লুসিফারের মুখের মধ্যে দিলাম এক ঘুসি। কিন্তু একি সে-তো দেখছি,ধীরে ধীরে উড়তে উড়তে মাটিতে পড়ছে,এটা দেখে দৌড়ে গিয়ে তাঁর পা ধরে একেরপর এক আছাড় দিতে লাগলাম। তারপর তাঁর বুকের মধ্যে দু'হাত দিয়ে একেরপর এক ঘুসি দিতেই লাগলাম। সবশেষে দু'হাত একএ করে শরীরের পুরো শক্তি একত্র করে দিলাম ঘুসি।
,
,
চারপাশটা আবারও আগের মতো ঠিক হয়ে গেছে,
লুসিফারটি তাঁর শরীর নিয়ে কাতরাতে কাতরাতে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো,তাঁর শরীরের মধ্যে অনেক জায়গায় ফাটল ধরে গেছে আমার ঘুসির কারনে। ডান হাতটা আকাশের দিকে উঁচু করে ধরতেই,হাতে বিশাল বড় আকারের একটা তলোয়ার এসে গেলো। তলোয়ার'টার হাতটা শক্ত করে ধরতেই ধপ করে তলোয়ার টির মধ্যে আগুন ধরে গেলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলাম লুসিফারের দিকে। লুসিফারের সামনে গিয়ে ওর মাথা থেকে ঘাড় টা আলাদা করার জন্য তলোয়ার টা উঁচু করে ধরলাম। এমন সময় লুসিফার আমাকে উদ্দেশ্য করে যা বললো,তাতে আমি অবাকের একদম চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম।
,
,
দেখো আমাকে মেরো না,আমি তোমার বাবা-মা,সহ সেনাপ্রধান এবং সেই ছোট্ট পাখিটাকেও ছেড়ে দিবো। দয়া করে তারপরও আমাকে মেরো না(লুসিফার/ব্লাক ড্রাগন কিং)!
,
লুসিফারের কথাই আমি অবাক হয়ে গেলাম। আর আমিও বললাম যে,না এটা আমি বিশ্বাস করি না কিভাবে এটা হতে পারে। আমার বাবা-মা কে তো তুই অনেক আগেই শেষ করে ফেলেছিস। তুই কি মনে করিস,আমি আবারও তোর ফাঁদে পা দিবো(আমি কান্না করতে করতে বললাম)!
,
বিশ্বাস না হলে তোমার পেছনে তাঁকিয়ে দেখো(লুসিফার)!
,
পেছনের দিকে তাকাতেই আমার হাত থেকে তলোয়ার মাটিতে পড়ে গেলো। কেননা আমার থেকে কিছু দূরেই আমার বাবা-মা দাঁড়িয়ে আছে,আর তাঁদের পেছনে হাসি মুখে সেনাপ্রধান এবং ডার্ক বার্ড টি তাঁদের ড্রাগন রূপে দাঁড়িয়ে আছে।
,
বাবা-মা কে স্বপ্নের মধ্যে একনজর দেখেছিলাম,তারপর আর তাদের মুখখানা ভুলিনি। তাঁদের কে জীবিকা দেখে আমি একদম নরম হয়ে গেলাম। দৌড়ে গিয়ে বাবা-মাকে একসাথে ঝাপটে ধরলাম। আর কান্না করতে করতে তাঁদের উদ্দেশ্যে বললাম যে,কেনো তোমারা আমাকে একা পৃথিবীতে পাঠালে কেন,সাথে তোমরা গেলে কি এমন দুষ হতো। এভাবে অনেকক্ষন থাকার পর,লুসিফারের কথা মনে হলো,আমার বাবা-মাকে ফিরিয়ে দেওয়াতে ওকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য পেছনের দিকে ঘুরে তাকাতেই আমার ফেলা আসা সেই তলোয়ারটি আমার বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো। আর ওর মুখ টা আমার কানের কাছে এনে বললো যে,মায়াজালে জড়ালে এমনি হয়। তোর বাব-মা'কে আমি বন্দী করে রেখেছিলাম ঠিকই,কিন্তু তুই যাদের সাথে এতোক্ষন সুখ দুঃখের গল্প করলি ওটার পুরোটাই ছিলো মায়াজাল। তোর বাবা-মা′কে দেখবি তাহলে সামনে তাকিয়ে দেখ,লুসিফারের কথা শুনে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম যে,বাবা-মা'কে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে,আর তাঁদের পুরো শরীর সিকল দ্বারা বাঁধা।
এটা দেখার পর কষ্ট হচ্ছিলো,অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু সেটা হয়তো কেউই বুঝতে পারবেনা,আর কেউ বুঝতেও চাইবেনা। মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলাম,ঘনঘন নিশ্বাস নিতে লাগলাম,একসময় থেকে গেলো সব নড়াচড়া,থেমে গেলো শ্বাসপ্রশ্বাস।
পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেলো জাহিদ নামের একটি ছেলের নাম। যে কিনা তাঁর শৈশবকাল থেকেই ধোঁকা খেয়ে আসছে,এবং তাঁর মৃত্যুটাও হলো ধোঁকার মাধ্যমে
,
এটি দেখে লুসিফার/ব্লাক ড্রাগন কিং বললো যে,এখন থেকে আমি তিনটি রাজ্যের রাজা। পৃথিবীটাকেও আমি আমার গোলাম বানিয়ে নেবো। আর আমাকে কেউ আটকাতে পারবেনা,কেউ না(লুসিফার/ব্লাক ড্রাগন কিং)!
,
,
,,,,,,,,,,,,,,সিজন ১ সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,
,
,,,,,,,,,,,,,শব্দ সংখ্যা মোট(৯,৭৬৭),,,,,,,,,,,,,,