পার্টঃ০৫
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী(পিচ্চি)
।।।।
।।।।
।।।।
আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে চলে আসলাম মিমির স্কুলে।।।অনেকক্ষন দারিয়ে আছি।।।কিন্তু এই বাচ্চাটা আসছে না কেন।দুর এতো অপেক্ষা করা আমার ভালো লাগে না।পাশের টং এর দোকান থেকে চা নিলাম এক কাপ।।।আমি আবার হেটে হেটে চা খেতে পছন্দ করি।।।তাই করছিলাম।।।চা খাওয়া শেষ করার পরই দেখলাম মিমি আসছে।।কিন্তু ওর পাশের ছেলেটাকে।ঔটাকে তো কখনো দেখি নি।আর এভাবে হেসে হেসে কথা বলছে কেনো মিমি ছেলেটার সাথে।
।
খুব রাগ হচ্ছে মিমির উপর।।।ঔ ছেলের সাথে এভাবে হেসে কথা বলার মানে কি।হয়তো ওরা বন্ধু।।।কিন্তু আমার কেনো ভালো লাগতেছে না।।আমাকে দেখে ওর সাথে কথা না বলে চলে আসলো আমার কাছে।একটা রিক্সা নিয়ে উঠে গেলাম আমি।।।।খুব রাগ হচ্ছে আমার।।।।কেনো ও ছেলেটার সাথে এভাবে হেসে কথা বলবে।।।আমি কি বলছি ওকে হেসে কথা বলতে।কিংবা আমি কোনো মেয়ের সাথে এভাবে হেসে কথা বলি।
.
--ছেলেটা কে ছিলো?(আমি)
.
--কোন ছেলে।(মিমি উদাস হয়ে বললো)
.
--এতোক্ষন যার সাথে প্রেম করে আসলি।(আমি)
.
--একদম বাঝে কথা বলবা না।।।ও আমার খুব ভালো বন্ধু।(মিমি)
.
--কেমন বন্ধু সেটা তো আমি ও বুঝেছি।দেখে নিবো কেমন বন্ধু।(আমি)
.
--এই দেখো তুমি আমার সাথে যায় করো।।।সৌরভকে কিছু করবে না।।।ও খুব ভালো ছেলে।(মিমি)
.
--খুব ভালো ছেলে।।।এতো কেনো পুরছে ওর জন্য তোর।।।ভালো লাগে নাকি তোর ওকে।(আমি)
.
--একদম ফালতু কথা বলবা না।।।তোমার সাথে কথা বলায় ভালো লাগে না।।।।সব সময় উল্টা পাল্টা কথা বলো।।।আমার মন খারাপ ছিলো সেটা দেখে সৌরভ ভালো করার চেষ্টা করেছে।(মিমি)
.
--ভালো।।।।(আমি আর রাগে কিছু বল্লাম না।।।কারন এখন কিছু বললে মনে হয় ঝগড়া হবে আমাদের।।।আর আমি চায় না আমাদের কোনো ঝগড়া হোক)
।।।
।।।
চুপচাপ বাসায় চলে আসলাম।।।।মিমি কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে।আগে আমাকে সময় দিতো সব সময়।।।আমার পিছনে লেগে থাকতো।।এখন পুরো পাল্টে গেছে।।।আমার ভালোই লাগতো ওর পাগলামী গুলো।।তাই তো একটু ঘুরাতে চেয়েছিলাম।।।কিন্তু এখন ও পুরো পাল্টে গেছে।।।নতুন ফেসবুক আইডি খুলেছে।সব সময় এই ফেসবুক নিয়েই পরে থাকে।।আমার সাথে তেমন কথায় বলে না।
.
--মিমি টাউয়েল টা দে তো।(আমি)
.
--নিজের টাউয়েল নিজেই নিয়ে নাও আমাকে কেনো বলতেছো।(মিমি)
.
--এটা কেমন কথা।।।তুই না আমার বউ।আমার সব কাজ করবি তো তুই।(আমি)
.
--বউ বললেই বউ হয় না।।আপাতোতো আমি এই বাসায় মেয়ে।।।আর আমি তোমার কোনো কাজ করে দিতে পারবো না।(মিমি)
.
--এমন করতেছোস কেনো।(আমি)
.
--তাহলে কেমন করবো।(মিমির একটা ফোন আসলো মিমি বেলকনিতে চলে গেলো।।।।কি হলো এটা বুঝলামই না)
।।।।
।।।।
মনে হচ্ছে নতুন প্রেম শুরু করেছে।ঔ সৌরভ ছাড়া আর কে হবে।।।।গিয়ে ধরলাম ঔ সৌরভকে।
.
--আমাকে হয়তো চিনোস।(আমি)
.
--হ্যা চিনবো না কেনো।।।।মিমি বললো আপনি ওর খালাতো ভাই।(সৌরভ)
.
--ওর খালাতো ভাই এটা বলেছে ও।(আমি)
.
--হ্যা ভাইয়া।
.
--ও ভালো।আরো অনেক কিছু হয়তো মিমি বলে নি আমার ব্যাপারে।।।ও তো বাচ্চা মেয়ে ভুল করবেই।কিন্তু তোর ভুলটা ঠিক হয় নি।।।
।।।।
।।।।
শুরু করলাম মাইর।।।।কতগুলো গুশি দেওয়ার পর ও বলতে লাগলো।
.
--ভাইয়া ভাইয়া আর মারবেন না প্লিজ।।।।।আসলে এসবের কিছুই সত্যি নয়।।।।মিমি আপনাকে রাগানোর জন্য আমার একটু নাটক করছে।।।
.
--মানে??
.
--মিমি আমাকে সবই বলেছে আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে ওর।।।মেয়েটা সত্যি আপনাকে খুব ভালোবাসে।।।।আপনাকে যে কোনো হারেই এখনই পেতে চাই।।।।ওর মা মারা যাওয়ার ওর ও ভালোবাসাটা কি সেটা ভুলেই গেছে।।কিন্তু আপনার থেকে পেতে চাই সব ভালোবাসা।(সৌরভ)
.
--আমি দুঃখিত ভাইয়া।।।আমি না জেনে মারলাম তোমাকে।(আমি)
.
--ভাইয়া এটা আমি মিমিকে ও বলেছিলাম ভাইয়া আমাকে সিওর মারবে।কিন্তু ওর যেভাবে বললো না করতে পারলাম না।।আপনাকে অবহেলা করা আমার সাথে হেসে হেসে এই চারদিন কথা বলা সবই প্লান ওর।(সৌরভ)
.
--আমি বুঝতে পারছি ভাইয়া।।।সত্যি আমি দুঃখিত।।।তোমার যেকোনো সমস্যা হলে বইলো আমাকে।।।আচ্ছা থাকো।(আমি)
।।।
।।।
।।।
ওর কাছ থেকে চলে আসলাম।।।।।বাচ্চাটা আমাকে পেতে এতো নাটক করছে।।।কিন্তু সত্যি ওর নাটকে ওর প্রতি ভালোবাসা আরো বেরে গেছে আমি।।।এখন তো ওকে না বলে থাকতেই পারবো না আমি।।।কালকে তো ওর জন্ম দিন।।।সবার পরে ওকে wish করে সারপ্রাইজ দিবো আমি।আজকে সারা মার্কেট ঘুরে ওর জন্য একজোড়া নুপুর কিনলাম।খুব ইচ্ছে ছিলো নিজের বউকে নিজ হাতে নুপুর পরিয়ে দিবো।।।।কিন্তু ইচ্ছা ইচ্ছাই ছিলো।।।কালকে পুরন হয়ে যাবে ইচ্ছেটা।।।।আজকের দিনটা কোনো রকম কেটে গেলো।।।।
।।।
।।।
সকালে ঘুম থেকে উঠলাম।।।উঠেই আমি বাইরে চলে গেলাম মিমির সামনে দিয়ে।।।মেয়েটার জন্মদিন আজকে হয়তো ভেবেছিলো সবার আগে আমিই wish করবো ওকে।।।কিন্তু সেটা তো করলাম না।।।।মন খারাপ করে বিছানায় বসে পরলো মেয়েটা।তখনই সৌরভ ফোন দিলো ওকে।
.
--happy birth day to u my dear friend।
.
--রাখ তোর happy birthday।।।যার টা আশা করলাম সেই করলো না।।।(মিমি)
.
--ভাইয়া মনে হয় ভুলে গেছে।(সৌরভ)
.
--আগে তো কোনোদিন ভুলতো না।।।প্রত্যেক জন্মদিনে সবার আগেই আমাকে wish করতো।(মিমি)
.
--তখন তো বোন ছিলি এখন তো বউ তাই হয়তো মনে নাই।।।(সৌরভ)
.
--ও ভুলে গেলে ওর সাথে আর কথায় বলবো না আমি।(মিমি)
.
--না রেগে একটু মনে করিয়ে দে ভাইয়াকে তাতেই দেখবি সব হবে।(সৌরভ)
.
--আমি তো কথা বলি না এখন জানোস না।(মিমি)
.
--আর নাটক করিস না।।।ভাইয়া সব জেনে ফেলছে।এখন তুই নাটক করলে আমাকে মেরে ভূত বানিয়ে দিবে।(সৌরভ)
.
--বাংলা সিরিয়াল দেখে এতো সুন্দর নাটক করলাম তাও বুঝেই গেলো আমি নাটক করছি।।।।হয়তো তুই বলে দিছোস।।।তোকে হাতের কাছে পেয়ে নি।(মিমি)
.
--হয়ছে।।।তোর জামাই এর হাতের ঘুষি খাওয়ার থেকে জোর হাতের ঠাপ্পর খাওয়া ভালো।(সৌরভ)
.
--যা বেয়াদপ ফোন রাখ।(মিমি)
।।।।
।।।।
আমি জগিং করে ১০ টায় বাসায় ফিরলাম।।নাস্তা করতে বসলাম।।।।নাস্তা করে রুমে আসলাম।।।আমি তো এই কয়েকদিন কলেজেই যায় নি।।।।আজকেও যাবো না।।।কালকে থেকে কলেজে যাবো।মিমি ও আজকে স্কুলে যাবে না।।।আমার পিছ পিছ ঘুরছে মিমি।।।হয়তো আমার থেকে wish টা শুনতে চাচ্ছে ও।।।কিন্তু আমি তো এতো তারাতারি wish করছি না।।।
.
--শুনো।(মিমি)
.
--হুমমম কি হয়েছে বল।(আমি)
.
--আজকে যেনো কয় তারিখ।(মিমি)
.
--আজকে তো মনে হয় ৯ তারিখ।মোবাইল চালাস তারিখ ও দেখতে পারোস না।(আমি)
.
--আজকে কি কিছু ছিলো।(মিমি)
.
--কি থাকবে?(আমি)
.
--না কিছু না।
।।।।
।।।।
আমি মনে মনে সেই খুশিতে হাসতে লাগলাম।।।বাইরে গেলাম।।।বাসা থেকে বলেই আসলাম ফিরতে রাত হবে।।।মোবাইলটা ও বন্ধ করে রাখলাম।।।তারপর সারা শহর ঘুরে ১৪ টা গোলাপ ফুল কিনলাম।।।শুনেছিলাম ৭ রং এর গোলাপ ফুল পাওয়া যায় নাকি।।।খুজে ৫ রং এর গোলাপই পেলাম।।।বাকি দুইটাকে একটু রং করে নিয়ে আসলাম।।।এক এক রং এর দুইটা করে ফুল।।
।
তার পর এগুলো লুকিয়ে নিয়ে বাসায় ঢুকলাম।
.
--তোর কি আক্কেল জ্ঞান নাই।।।কোথায় গিয়েছিলি।।আর ফোন বন্ধ কেনো।।।।মেয়েটা সেই কখন থেকে কান্না করছে।।।দুপুর থেকে কিছুই খাই নি এখনো।।।শুধু বলছে তুই পচা।।।কি করছোস ওকে।।।(বাবা)
.
--আমি কিছুই করি নাই।।।আম্মু আমাকে একটা প্লেটে ভাত দাও তো।।আমি খাইয়ে দিচ্ছি ওকে।।।
।।।।
।।।।
আম্মু ভাত দিলো এক প্লেট।।।নিয়ে সোজা রুমে চলে আসলাম।।।ফুলগুলো একটু লুকিয়ে রাখলাম।।।দেখি শুয়ে আছে বিছানায়।।।আমাকে দেখে কান্নায় ভরা চোখ মুছে বসে পরলো।
.
--কোথায় ছিলো?(মিমি)
.
--চুপ খাও নি নাকি এখনো।(ধমক দিয়ে বল্লাম)
.
--.....(ভয় পেয়ে গেছে আমার ধমকে)
.
--নাও হা করো।।।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি খাইয়ে দিতে লাগলাম।।।লক্ষি মেয়ের মতো খাচ্ছে ও।।।
.
--আর পারবো না।।(মিমি)
.
--অর্ধেক ও খেতে পারলা না।(আমি)
.
--পানি দাও তো।(মিমি হাত ধুয়ে বাকি ভাত আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।।আমিও চুপচাপ ওর হাতেই খেয়ে নিলাম)
।।।।।
।।।।।
খাওয়া শেষ হলো দুজনেরই।।।ও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।।।কারন আমি তখন ওকে তুমি করে বলেছি।।।হয়তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওর।আমি প্লেট নিয়ে যাচ্ছিলাম।
.
--দাও আমার কাছে দাও আমি রেখে আসছি।তুমি চেন্জ করো।(মিমি)
.
--হুমম যাও।।।(আমি)
।।।।
।।।।
মিমি চলে গেলো।।।।।আমি ও দারিয়ে আছি দরজার সামনে।একটু পরেই আসলো মিমি।
.
--কি হলো এখনো চেন্জ করো নাই।আর এভাবে দরজার সামনে দারিয়ে আছো কেনো?(মিমি)
.
--তোমার জন্য দারিয়ে আছি।(মিমির এক হাত টান দিয়ে আমার বুকে ওকে নিয়ে আসলাম।।এভাবে হঠাৎ টান দেওয়ায় হুস সামলাতে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো মিমি)
.
--কি করছো এসব।(মিমি)
.
--বউ এর উপর অধিকার খাটাচ্ছি।(দরজাটা বন্ধ করে দিলাম)
.
--কিন্তু......(মিমি আর কিছু বলতে পারলো না।।।ওর ঠোট আটকে দিলাম)
.
--আজ কোনো কিন্তু নয়।।।এখানে বসো।(বিছানায় বসালাম মিমিকে)
।।।।
।।।।
আমি হাটু গেরে ১৪ টা গোলাপ ফুল নিয়ে ওর সামনে বসলাম।।।
.
--মিমি এই দিনটার অনেক দিন অপেক্ষা করেছি জানো।।।আমার কোনো রাগ অভিমান ছিলো না তোমার উপর।।।আমার খালাতো বোন ছিলো বলে যে আমার তাতে সমস্যা হবে সেটাও না।।।তুমি বাচ্চা বলে যে আমার সমস্যা হবে সেটাও না।।।আমি শুধু আমার বউকে ভালোবাসি।।সেটা যেই হোক না কোনো।।।তুমি হয়তো ভেবেছো আমি ভুলে গিয়েছি আজকের দিনটার কথা।।।আগে কোনোদিন ভুলি নি আজকে কিভাবে ভুলি বলো।।।তোমার নতুন বছরের দিন গুলো নতুন ভাবে কাটুক নতুন ভালোবাসায় কাটুক সেটাই তো চেয়েছিলাম তাই বলছি,
Happy Birthday To my dear বাচ্চা বউ,Happy Birthday to u।।।
.
--ফুল গুলো দাও।(মিমি)
.
--উহু।।।।এখন না।পা দাও তো তোমার।(ফুল গুলো পাশে রেখে নুপুর জোড়া পরিয়ে দিলাম।
.
--নুপুর(অনেকটা খুশি হয়ে বলল)
.
--হ্যা।।।আমার পাশ দিয়ে যখনই থাকবে এই নুপুরের হালকা মধুর আওয়াজে আমি যেনো বুঝতো পারি সে জন্য।(আমি)
.
--আমাকে অনুভব করতে তোমার নুপুর লাগে।(মিমি)
.
--হুমমম।(আমি)
.
--জানো তুমি যখন আমার পাশে থাকো তখন আমার হার্ট বিট জোরে জোরে কাপে।তাতেই বুঝতে পারি তুমি আমার পাশে।নাও এবার উঠো।(মিমি)
.
--উহু।।।।মিসেস হৃদয় বাপ্পী।আপনি কি আমাকে নিজের স্বামী হিসেবে মানেন।।।আপনি কি আমাকে আমার বাচ্চা বউ এর সন্তানদের বাবা হওয়ার সুযোগ দিবেন।।।আমাকে কি ভালোবাসি বলার মতো সুযোগ দিবেন।(ফুল গুলো ওর দিলে আগিয়ে)
.
--হুমমম।(মিমি)
.
--I love u মিমি।।।।।(আমি)
.
--I love u tooo....(কান্না করে দিলো মেয়েটা)
।।।।।
।।।।।
জরিয়ে ধরলো মিমি আমাকে।।।।কান্না করে দিলো।।।এটা তো কষ্টের কান্না না।।।এটা ভালোবাসা পাওয়ার সুখের কান্না।।।কান্নায় মুখোমিত হলো পরিবেশ।।নতুন ভালোবাসা জন্ম নিলো দুই স্বামী স্ত্রীর মাঝে।।।বেচে থাকুক আজীবন এ সম্পর্ক।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(চলবে)
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ৬ নং পার্টের।।।