#সিজন_৪#
পার্টঃ০৪
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।
।।।।
গল্প শুরুর প্রথমেই কিছু কথা বলে রাখি। আগের পার্টের অনেক কিছু বুঝেন নি অনেকে। পার্ট ২ এ মিয়ারা বলেছিলো সে হৃদয় এর সবচেয়ে বড় চাওয়াটাকে পূরন করে দিবে। মানে হৃদয় সব সময় চাইতো স্বাভাবিক জীবনের। যেটা কখনো সম্ভব না পাওয়ার। কিন্তু মিয়ারা সেটা সম্ভব করে দেই। মিয়ারা নিজের ব্লাক ম্যাজিক ব্যবহার করে হৃদয় এর ক্লোন বা কপি বানায়। এবং সেটাকেই হৃদয় এর সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে দেই। সেই শরীর থাকে কেরেলার দখলে আর মিয়ারা আসল হৃদয়কে পাঠিয়ে দেই টাইম স্পেল ব্যবহার করে সময়ের সেই প্রথমে যেখান থেকে সব শুরু হয়েছিলো। আর রিয়েলিটি স্পেল ব্যবহার করে পুরো রিয়েলিটি চেন্জ করে দেই। রিয়েলিটি মানে যা বাস্তব সেই পুরো বাস্তবতাকেই সে বদলে দেই। মানে হৃদয় এর রাজ্য গুলোতে কেরেলা ঠিকই সেই সময়ে আছে। আর পুরাতন সময়ে হৃদয় তার পরিবারের সাথে স্বাভাবিক জীবনে আছে। এতে দুটো জিনিসের কোনো পরিবর্তন হবে না। সব কিছু এখন এভাবেই চলবে। আশা করি এবার একটু হলেও বুঝতে পারছেন জিনিসটা আরো পরে বুঝাতে চাইছিলাম। কিন্তু আপনাদের মাথা ব্যথা বেশী শুরু হইতো এই রহস্য নিয়ে ভাবলে।☺☺☺☺
।।।।
।।।।
সুন্দরী মেয়েদের সাথে কোনো ছেলে ঘুরলে সবার নজর প্রথমে মেয়েদের উপরে পরবে। এবং পরে তাদের নজর সেই ছেলেটার উপরে পরবে। আপনি যত ভালোই হন না কেনো আপনার মনেও চাইবে সেই ছেলের জায়গায় নিজেকে দেখতে। ক্লাসের সবাই আমার দিকে কেমন করে জানি তাকিয়ে ছিলো। হয়তো মেয়ে দুটোর সাথে আমার সম্পর্ক বের করছে চোখ দিয়েই। আমি আর আমার বোন হৃদি দেখতে ঠিক এক রকম। তাই তাদের এটা বুঝতে বাকি রইলো না আমরা দুজন ভাই বোন। তবে হৃদির থেকে সবার নজর জারার দিকে। কারন হৃদি অনেক সুন্দর তবে জারার মতো ওতো সুন্দর না। সবার চোখ জেনো আর নিচে পরছে না। সব সময় স্বপ্ন দেখতাম এমন একটা বউ হবে আমার যার দিকে সবাই হা করে তাকিয়ে থাকবে। কিন্তু আজকে বুঝলাম সেই স্বপ্নটা স্বপ্নতেই ভালো মানাবে। কিন্তু কারন পছন্দের মেয়েটার দিকে বাকি সবাই হা করে তাকিয়ে আছে এটা দেখে আমার অনেক কষ্ট লাগলো। ক্লাসের কয়েকটা ছেলে আমার পূর্ব পরিচিত ছিলো। আমি তাদের ভালো বন্ধুত্ব শুরু করলাম। এভাবে দেখতে দেখতে আমাদের প্রথম দিনের কলেজ শেষ হয়ে গেলো। গেইটে দাড়িয়ে আছি আমি।
.
--চল না আজকে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।(জারা)
.
--নারে আম্মু বকবে।(হৃদি)
.
--আরে কিছুই বলবে না।(জারা)
.
--উহু।।। অন্য একদিন যাবো।(হৃদি)
.
--আচ্ছা।(জারা)
।।।।।
।।।।।
আমি হৃদিকে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম। দুজনে বাড়ি ফিরছিলাম। বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে আমি দিলাম একটা ঘুম। বিকালে হৃদির ডাকে আমার ঘুম ভাঙলো।
.
--কি হলো ডাকছিস কেনো?(আমি)
.
--আরে উঠবি তো। বেলকনিতে আয় তারাতারি।(হৃদি বেলকনিতে চলে গেলো)
.
--কি হয়ছে। তোর ছবি কিন্তু আমি একে দিতে পারবো না।(আমি)
.
--আরে না। এই ছবিটা কখন আকলি?(হৃদি)
.
--কেনো?(আমি)
.
--আরে বল না।(হৃদি)
.
--তুই যখন ঘুমাচ্ছিলি নাক ডেকে সকালে।(আমি)
.
--ভাই আমাদের লাইফ সেট হয়ে যাবে এই ছবিতেই।(হৃদি)
.
--মানে?(আমি)
.
--এই দেখ। আমি একটু আগে একটা সেলফি তুলেছিলাম এই ছবিটার সাথে। আর সেটা আমার instragram এ ছেড়েছি। এর মাঝেই ছবিটা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।(হৃদি)
.
--কি? তুই এটা কেনো করছোস। আমি ছবিটা পাবলিসিটির জন্য আকি নি।(আমি)
.
--তো কি হয়ছে? দেখ অনেকে এটা কিনার জন্য এক লক্ষ টাকাও দিতে রাজি। তাহলে ভাব ছবিটার মাঝে কি আছে। সামনে থেকে না দেখেই ১ লক্ষ টাকা দিতে রাজি তারা।(হৃদি)
.
--কি? আচ্ছা এই ছবি বিক্রীর কোনো সাইট আছে তাহলে? সেখানে একটা পিক তুলে ছেড়ে দে।(আমি)
.
--আচ্ছা দ্বারা। তুই এক কাজ কর এমন আরো কয়েকটা ছবি আক।(হৃদি)
.
--উহু। কালকে রাতে আমি বিশাল স্বপ্ন দেখেছিলাম সেটা দেখেই এটা একেছিলাম।(আমি)
.
--হুমমম ছবিটাতে অনেক নির্মম দৃশ্য ফুটে তুলেছিস। মেয়েটা মাস্ক পরা। ছেলেটা কিসের ধাক্কা খেয়ে পরে যাচ্ছে?(হৃদি)
.
--ঔটা বাতাস। বাতাসের ধাক্কায় পরে যাচ্ছে পাহাড় থেকে।(আমি)
.
--মেয়েটা হাত বারিয়ে কি ধরার চেষ্টা করছে?(হৃদি)
.
--কি জানি। স্বপ্নে ঠিক এমন একটা দৃশ্য দেখেছিলাম আমি। তাই সেটা একেছি। আর কিছুই মনে নাই।(আমি)
.
--পাশে এইটা কি একটা তলোয়ার?(হৃদি ছবির এক কোনে একটা তলোয়ার দেখে)
.
--হ্যা।(আমি)
.
--কেউ ধরে আছে তলোয়ারটা। মনে হয় এই তলোয়ার দিয়ে এই ছেলের উপরে নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে।(হৃদি)
.
--হ্যা হতে পারে।(আমি)
.
--তবে মেয়েটার কিন্তু উচিত ছিলো ছেলেটাকে ধরার।(হৃদি)
.
--আমার কথাও সেটা। কেনো ধরলো না সেটাই বুঝলাম না।(আমি)
.
--এমন কয়েকটা স্বপ্ন দেখলে তো আমাদের অবস্থা আরো ভালো হয়ে যাবে।(হৃদি মুচকি হেসে)
.
--ভুলেও ওমন স্বপ্ন দেখতে চাই না। অনেক ভয়ানক ছিলো স্বপ্নটা।(আমি)
.
--আচ্ছা সুন্দর একটা ছবি তুলতে দে এটা। আমি এটাকে ছেড়ে দিচ্ছি।(হৃদি)
.
--হ্যা তাই কর।(আমি)
।।।।
।।।।
হৃদি ওর ফোন দিয়ে ছবি তুলে নিলো পেইন্টিং এর। অনেক নিখুতভাবেই আকা হয়েছে ছবিটা। আমারও অনেক মন চাচ্ছে জায়গাটা ঘুরে আসার। অনেক সুন্দর জায়গাও বটে। কিন্তু জায়গাটা কোথায় সেটা আমার অজানা। স্বপ্নে অনেক কিছুই দেখেছিলাম। কিন্তু এখন সঠিক মনে করতে পারছি না কিছুই। সাধারন স্বপ্ন গুলোর মতোই আমি সব ভুলে গেছি। হৃদি পেইন্টিং টা ওয়েবসাইটে ছেড়ে দিলো। সাইটটা অনেক নামকরা। বড় বড় লেখকদের পেইন্টিং এখানেই বিক্রি হয় অনলাইনে। জানি না আমারটা কেমন মূল্য হবে। কিন্তু আশা করি ভালোই হবে। কারন আসলেই হৃদির পোস্ট করা ছবিতে ভালো মূল্যের কথা বলেছে ছবিটার। সেদিন রাতেই একটা ফোন আসলো আমার ফোনে। হৃদি আমার নাম্বারটা সাইটে দিয়েছিলো। বিদেশী একটা নাম্বার দিয়ে আমাকে ফোন করা হয়েছে। আমি ফোন ধরলাম।
.
--হ্যালো হৃদয় বাপ্পী বলছেন?(অপরিচিত বিদেশী লোক)
.
--জ্বী বলুন।(আমি)
.
--আমার নাম ডক্টর সুচিরান। আমি আপনার পেইন্টিং এর ব্যাপারে কথা বলতে চাই।(সুচি)
.
--হ্যা বলুন।(আমি)
.
--জ্বী আমি পেইন্টিং টা কিনতে চাই। ভাগ্যক্রমে আমার একটা লোক বাংলাদেশেই আছে। আর সে আপনার ঠিকানায় কাল সকালেই চলে যাবে।(সুচি)
.
--কত দিবেন আপনি?(আমি)
.
--জ্বী আপনি যত চাইবেন তত দিতে রাজি আমি। মূল্য কত চান আপনি?(সুচি)
.
--১০....(১০ লক্ষ বলতে যাবো কিন্তু ১০ বলার সাথে সাথেই লোকটা বলে উঠলো)
.
--আপনার কয়েনবেজের btc wallet address টা দিন। আমি এখনি 111btc পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর কাল সকালে আমার একজন লোক গিয়ে আপনার ছবিটা নিয়ে আসবে। আমার email দিয়ে একটা মেইল করা হয়েছে আপনাকে সেই email এ wallet address পাঠিয়ে দিন।(সুচি)
।।।।।
।।।।।
লোকটা ফোন কেটে দিলো। আমি স্থির হয়ে রইলাম। ১১১ বিটকয়েন। এর মানে তো অনেক টাকা। আমি গুগুলে ক্যালকুলেশন করতে লাগলাম। পুরো ১০ কোটি। আমি তো ১০ লক্ষ বলতে চাইছিলাম। আসলেই কি পেইন্টিংটার এতো দাম। তাহলে তো আমার এতোদিনে আকা ছবি গুলোও অনেক দামী হবে। আমি ভাবতে ছিলাম গভীর চিন্তাই। এই ছোট বয়সে যে আমি কোটিপতি হবো সেটা কখনো কল্পনাও করি নাই। আমার কল্পনা ভাঙলো ফোনে email আসার শব্দে। আমি একটু আগেই আমার কয়েনবেজের ঠিকানা পাঠিয়েছিলাম। সেখানে পুরো ১১১ বিটিসি চলে আসছে। মনের ভিতর এক দিক দিয়ে খুশিও লাগছে। আরেক দিক দিয়ে দুঃখ ও লাগছে। কারন যে পেইন্টিংটা আকলাম এটা আমার নিজের কাছেও অনেক ভালো লেগেছে। এটাকে বিক্রি করতে মন চাচ্ছে না। সব জিনিস তো সব সময় আকা যায় না। যায় হোক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। ভাগ্য যে এভাবে পাল্টে যাবে সেটা কে জানতো। একটা ছবিতেই আমাকে কোটি পতি করে দিলো। এমন আরো কয়েকটা আকার চেষ্টা করা উচিত।
।।।।
।।।।
পরের দিন খুব সকালে একজন লোক আসলো। আমার থেকে ছবিটা নিয়ে গেলো। পেইন্টিংটা খুব যত্নে নিয়ে গেলো। প্রথমে কালো কাপড়ে পেচিয়ে নিলো। তারপর সেটাকে একটা বাক্সে রাখলো। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম একটা BMW গাড়ি। দেখে অবাক হলাম না। কারন যে ১০ কোটি দিয়ে একটা ছবি কিনতে পারে তার চাঙ্গু পাঙ্গুরা BMW চালাবে একটা অস্বাভাবিক কিছু না। গাড়িতে একটা বুড়ো লোক ও বসা ছিলো। গ্লাস নিচু করে অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। লোকটা ওভাবে তাকানোর মানে আমি বুঝলাম না।
।।।।
।।।।
ছবি দিয়ে তাদের বিদায় করে ভিতরে ঢুকলাম।
.
--ওরা কারা ছিলো?(আম্মু)
.
--আম্মু হৃদয় কালকে একটা পেইন্টিং বানিয়েছিলো আর সেটা ঔ লোকগুলো কিনে নিয়েছে।(হৃদি)
.
--কত টাকা বিক্রি করলি?(বাবা)
.
--তোমরা শুনলে পুরো অবাক হবে।(আমি)
.
--কেনো?(বাবা)
.
--অনেক টাকা দিয়েছে। হৃদয় আমাকেও বলছে না ঠিক মতো।(হৃদি)
.
--পুরো ১০ কোটি।(আমি)
.
--কি??????(সবাই অবাক হয়ে)
.
--সত্যি বলছিস নাকি ফাজলামি করছিস?(বাবা)
.
--সত্যি। আমি ১০ লক্ষ বলতে চাইছিলাম। ১০ বলবো এমন সময় সে নিজে থেকেই ১০ কোটি দিতে চাইছে।(আমি)
.
--ছবিতে তো তেমন কিছু দেখলাম না।(আম্মু)
.
--হয়তো তারা কিছু দেখেছে।(হৃদি)
.
--হতে পারে। আচ্ছা শোন তোদের আজকে কলেজে যেতে হবে না। আজ তোদের আফজাল আঙ্কেলের মেয়ের জন্মদিন।(আম্মু)
.
--তো?(আমি)
.
--তো সেখানে যেতে হবে আমাদের।(বাবা)
.
--পরে যাবো প্রথমে একটা গাড়ি এবং একটা বাইক কিনবো আমরা চলো।(আমি)
.
--গাড়ি টাড়ি কিনতে হবে কেনো? এমনিতেই তো ভালো আছি।(আম্মু)
.
--আমি বলছি তাই। বাবা তুমি চলো তো আমার সাথে।(আমি)
.
--এখনি?(বাবা)
.
--হ্যা।(আমি)
।।।।
।।।।
নাস্তা শেষ করে আমরা চলে আসলাম টয়োটার শোরুমে। খুব সকাল সকালই এসেছি। বেশী ঘোরার সময় নেই আমাদের। টাকা যখন এতো আছে সেগুলো তো খরচ করতেই হবে। Bitcoin এর দাম এখন তেমন বাড়ে নাই। তাই সব বের করার মানে হয় না। যেটুকু দরকার সেটুকুই ব্যাংকে ট্রান্সফার করলাম। প্রথমে আমরা টয়োটার শোরুমে ঢুকলাম। সেখান থেকে একটা টয়োটা ব্রান্ডের ছোট খাটো গাড়ি কিনলাম। পুরো পরিবারে আছি মাত্র আমরা চারজন। বড় গাড়ির তো কোনো প্রয়োজন পরবে না। গাড়ির পেইমেন্ট করে আমরা সেটা নিয়ে বের হলাম বাইকের শো রুমের দিকে। Aprillia ব্রান্ডের Aprillia RS4 125 মডেলের বাইকটা কিনলাম। অবশ্য মডেল থেকে বাইক কেনা হয় নাই। আমি তো দাম দেখে কিনলাম। এটার থেকে তো বেশী দামের বাইক এই বাংলাদেশে হয়তো বিক্রী করবে না। বাইরে থেকে আনানোর মতো ইচ্ছাও নেই। একবারে কাগজপত্র সব ঠিক ঠাক করে আমাদের বাসায় ফিরতে ঠিক দুপুর হয়ে গেলো। বাবা আর আম্মু দুজনে গাড়িতে করে বাড়ি ফিরেছে আর আমি আর হৃদি দুজনে বাইকে করে।
.
--এতোদিনে তোর ইচ্ছা তাহলে পুরন হলো।(হৃদি)
.
--হ্যা। বাবাকে কতো বলেছিলাম একটা বাইক কিনে দিতে। কিন্তু দেই নি।(আমি)
.
--তখন তো বাবার অবস্থা ভালো ছিলো না।(হৃদি)
.
--হ্যা। যা হয় সব ভালোর জন্যই হয়।(আমি)
.
--আমার তো আফজাল আঙ্কেলের বাসায় যেতে মনই চাচ্ছে না। মন চাচ্ছে আজকে আমার ভাইয়ের বাইকে সারাদিন ঘুরতে।(হৃদি)
.
--তোকে নিয়ে ঘুরাবো কেন রে?(আমি)
.
--আমাকে ঘোরাবি না তো কাকে ঘুরাবি বল?(হৃদি)
.
--কেনো তোর তো বফ আছে। ওর বাইকে ঘুরবি।(আমি)
.
--ওর ভাঙাচুরা বাইক।(হৃদি)
.
--হাহাহাহাহা।(আমি)
.
--কুত্তা হাসবি না। বাইক আমিও চালাইতে পারি। তোর বাইক তুই নিজেই পাবি না।(এবার হৃদি হাসতে শুরু করলো)
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।