পার্ট:13
লেখক:Hridoy Bappy।
।।।।।
।।।।।
।।।।।
আমার পরিচয় পেয়ে সব থেকে বেশী অবাক হলো মেঘলা।আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।খারাপ সময়ে পরিচয়টা দিয়ে ফেললাম।আগের কথা মনে না পরলে এই কাজ করতাম না।কিন্তু এখন একটু বেশিই ইমোশোনাল হয়ে গিয়েছিলাম তাই তো নিজের পরিচয়টা দিয়েই ফেল্লাম।
.
:-বাবা তুই এতো দিন কোথায় ছিলি।(আম্মু)
.
:-এইসব বলার সময় এখন না।সময় হলেই বলবো আমি।(আমি)
.
:-অন্তত বল কি হয়েছিলো।(বাবা)
.
:-না সব পরে একসময় বলবো।আগে আমার কাজ আমাকে করতে দাও।(আমি)
.
:-বাসায় যাবি না।(আম্মু)
.
:-না বাসায় গিয়ে এখন আর কি করবো।(আমি)
.
:-মেঘলার কথাটা একবার ভাব।আমাদের জন্য না হলেও ওর জন্য তো বাসায় আয়।(বাবা)
.
:-বাদ দাও তো আমি তোমাদের কাছে মারা গিয়েছি।আর কোনো প্রমাণ ও নাই যে হৃদয় বেচে আছে।আমার ও প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে।সো তোমরা তো ভেবে নিয়েছিলে যে আমি মারা গিয়েছি।আর এই যে মেঘলা ও তো অনেক আগে থেকেই তার আকাশ কে পেয়েছিলো।আমি আর বাসায় গিয়ে কি করবো।আমার এখন নতুন পরিবার আছে।তারাই আমাকে জীবনদান দিয়েছে।এই জীবনটা তো তাদের জন্যই পেয়েছি।তাই আমি চাই না তাদেরকে ছেড়ে তোমাদের কাছে যাই।(আমি)
.
:-এমন কথা বলতেছিস কেনো আমরা তো তোর বাবা মা।(আম্মু)
.
:-তোমরা তো মেনে নিয়েছো।সব কষ্ট ও মেনে নিয়েছো।আমাকে যারা জীবন দিয়েছে নতুন করে তাদেরকে কষ্ট দিতে চাই না।আর তাছাড়া আপনাদের তো একটা মেয়ের দরকার ছিলো।কিন্তু আমি তো ছেলে হয়েছিলাম।আপনাদের বউ মা তো আছেই।ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিন ওকে।(আমি)
.
:-তুই কি বলতেছিস বাবা এই সব তোদের তো বিয়ে হয়েছে তুই থাকতে ওকে আর একটা বিয়ে কেনো দিবো।(বাবা)
.
:-আমি মারা গিয়েছি আপনারা হয়তো জানেন।আর আমি এখন হৃদয় না।আমি হলাম বাপ্পী।সুতরাং আপনাদের ছেলে মারা গিয়েছে।আর আমি যেহেতু মারা গিয়েছি সুতরাং মেঘলার রাস্তাটা একদম ক্লিয়ার হয়ে গেছে।মেঘলা এখন তোমার ঔ নতুন বফ আকাশ কে বিয়ে করে ফেলো।(আমি)
.
:-তুমি এইসব বইলো না প্লিজ।(মেঘলা)
.
:-তোমার একটা কথা ও আমি শুনতে চাই না।এক সপ্তাহের মধ্যেই আমি দিভোর্স পেপার দিয়ে দিবো।তোমার আকাশ টাকে তুমি বিয়ে করে ফেলো।(আমি)
.
:-বাবা এইসব কি বলতেছিস।(বাবা)
.
:-হ্যা তোমাদের এই গুনধর বউমা আমার নিখোজ হওয়ার আগে থেকেই প্রেম করতো অন্য একটা ছেলের সাথে।তো আমি কেনো তাদের মধ্যে আসবো।আমি তো মারা গিয়েছি।তারপরও দিভোর্সটা দিয়ে দিবো যাতে কোনো ধরনের সন্দেহ না থাকে।(আমি)
.
:-প্লিজ তুমি এমন কথা বইলো না।আমি সত্যি একটা ভুল করে ফেলেছিলাম।ঔ ভুলের জন্য আমাকে এখন এতো বড় শাস্তু দিয়ো না।(মেঘলা)
.
:-বন্ধ করো তোমার এইসব নাটক।আমার সামনে এইসব একটু ও করবা না।আমি আগের হৃদয় না যে গলে যাবো তোমার এই মিথ্যা নাটকে।সো আমার সামনে এইসব চলবে না।(আমি)
.
:-বাবা তুই এমন করিস না যা হয়েছে তা ভুলে গিয়ে চল আবার আগের জীবনে ফিরে আই।(বাবা)
.
:-আপনারা এখন চুপ করুন।এইটা থানা।আপনাদের পারিবারিক কথা বলার যাইগা না এইটা।আমাকে যে এতো বড় কষ্টের মধ্যে ফেলেছে তাকে আগে ধরে নি।।তাকে এমন শাস্তি দিবো যে বাপের নামও ভুলে যাবে।হোক সেটা আমার আপন কেউ তাও তাকে শাস্তি পেতেই হবে।আর আপনারা যদি আসামি কে তা না জানার আগেই এমন কথা আবার বলেন তাহলে লকআপে আমি আগে আপনাদেরকে ডুকাবো।সো এই মমতা ভরা কথা এখন আমি শুনতে চাই না।আর কেস সলভ হওয়ার আগে কেউ যেনো শহর থেকে না যান।(আমি)
।।।।।।
আমার কথায় সবাই দুঃখ পেলো।কিন্তু আমার কিছু করার নাই।তাদের সবার কাজে আমি ও কষ্ট পেয়েছি।তাদের ও তো একটু পেতেই হবে।।।মেঘলা যে এমন হবে তা কখনও ভাবি ও নাই।স্বামি রেখে অন্য কারো সাথে ভালোবাসা করে বেরিয়েছে।তাও ফেসবুকে।যাতে কেউ জানতে না পারে যে ও অন্য কারো সাথে প্রেম করে তাই তো ফোনে কোনোদিন কথা ও বলে নাই।শুধু ফেসবুকে কথা।আমি ভাবতেও পারছি না মেঘলা এমন করবে।কিন্তু কেনো করলো।আমার মধ্যে কি কোনো কম ছিলো।আমি কি ওকে কম ভালোবাসতাম।ভাবতেছিলাম তখনই,
.
:-বাপ্পী তুই ঠিক আছোস তো।(নিলয়)
.
:-হুমমমম ঠিক আছি।কিন্তু মেঘলা যে এমন করবে আমি ভাবি ও নাই।(আমি)
.
:-হয়তো এখানে মেঘলার কোনো দোষ নাই।মেয়েরা একটু বোকা টাইপের হয়।আর ছেলেরা মেয়েদের সেই দুর্বলতাকে কাজে লাগাই।(নিলয়)
.
:-ওর কথা মনে পরলেই শুধু আমার ঘৃণা হচ্ছে।(আমি)
.
:-হয়তো এর মধ্যে অনেক বড় ষড়যন্ত্র আছে।তুই শুধু শুধু ভাবিকে সন্দেহ করিস না তো।(নিলয়)
.
:-হুমমমম করলাম না।কিন্তু এই আকাশ টা কে ওর সব খবর আমার লাগবে।(আমি)
.
:-ওকে কালকেই পেয়ে জাবি সব খবর।(নিলয়)
.
:-হুমমমম ওর একটা ছবি আর মোবাইল নাম্বারটা ও লাগবে।(আমি)
.
:-ওকে পেয়ে জাবি।(নিলয়)
।।।।।।।
খুব রাগ হচ্ছে।তাই কারো সাথে কথা বললাম না আর।বিকালে নিধিদের বাসায় চলে আসলাম।কারো সাথে কথা বললাম না।নিধি অনেকবার কথা বলতে চাইছিলো।কিন্তু আমি কোনো ধরনের সুযোগ দিলাম না।বেচারী খুব কষ্ট পেয়েছে মনে হয়।আরো কষ্ট পাবে যদি শুনে আমি হৃদয়।এতো কষ্ট দিনো কিভাবে আমি ওকে।যতই হোক আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো নিধি।কি করে বলবো ওকে যে আমি হৃদয়।কোনো কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না।রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলাম।।সকালে উঠে নাস্তা করে চলে আসলাম থানায়।খুব চুপ চাপ থাকি।কিছু কথা হয়েছিলো নিধির সাথে।কিন্তু থানায় চলে আসাতে বেশী কথা বলা হয় নাই।
.
:-নিলয় কিছু কি পেয়েছিস।(আমি)
.
:-হ্যা আকাশ এর ছবি এইটা আর ওর নাম্বার এইযে।(নিলয়)
.
:-ছবিটা দিয়ে ওই হোটেল এর ভিডিও ফুটেজ এর সাথে মেচ কর তো।(আমি)
.
:-ওকে সময় দে আমাকে দেখতেছি।(নিলয়)
।।।।।।
আমি আমার কক্ষে চলে আসলাম।২০ মিনিট পর নিলয় আসলো।
.
:-কিরে পেয়েছিস। নাকি।(আমি)
.
:-হুমমমম তোরা যেদিন রাতে গিয়েছিলি হোটেলে।সেদিন সকালেই এই আকাশ হোটেলে চেক ইন করে।(নিলয়)
.
:-ও তাহলে তো আসামী ফেসে গেছে।তাও এই প্রমাণ যথেষ্ট না আমাদের জন্য।আকাশ কে ফোন দিয়ে ওর কন্ঠ আমাকে যে ফোন দিয়েছিলো তার সাথে মেচ কর।মিলে গেলেই এই আকাশ টাকে যে আমি কি করবো তা আমি তোকে কি বলবো।(আমি)
.
:-ওকে সময় দে একটু। (নিলয়)
।।।।।।
নিলয় আবার চলে গেলো।আমি দোয়া করতে ছিলাম যেনো মিলে যাই।তাহলেই আমার চিন্তাটা কমে যাবে।একটু পর নিলয় আসলো।ওর মুখে হাসির ছাপ।বুঝতে পারলাম কেসটা সলভ হয়ে গেছে।কে আমাকে সেদিন ফেলে দিয়েছিলো সেটা এখন আমার সামনে ক্লিয়ার।কিন্তু তার সাথে যে কে কে আছে সেটা তো আকাশই আমাদের কে বলবে।
.
:-হুমমম কেসটা সলভ হয়ে গেছে।আমার বিশ্বাস হচ্ছে না চার বছর পুরানো কেসটা আমরা ৩০ দিনেই সলভ করে দিলাম(নিলয়)
.
:-না সলভ হলো কোথায়।(আমি)
.
:-আরে আসামী কে সেটা তো ধরা পরেই গেছে।প্রমাণ ও আছে।এখন শুধু তাকে লকআপে ভরে সাইজ করবো।(নিলয়)
.
:-হুমমম কিন্তু আমার মনে হয় এর মধ্যে আরো কিছু আছে।শুধু যে আকাশ এই কাজটা করেছে বলে আমার মনে হয় না।(আমি)
.
:-তোর এটা কেনো মনে হলো।(নিলয়)
.
:-পরে জানতে পারবি।এখন আকাশটাকে ধরার ব্যবস্হা কর।কিন্তু ও যেনো জানতে না পারে আমিই হৃদয়।(আমি)
.
:-ওকে দুপুরের মধ্যেই আকাশ এখানে উপস্হিত থাকবে।(নিলয়)
.
:-থাকলেই ভালো।(আমি)
।।।।।
নিলয় চলে গেলো আকাশ কে ধরতে।আমি ও ভাবতে লাগলাম।আচ্ছা এর মধ্যে আর কে থাকতে পারে।সেটা জানার জন্য আমার একটু মেঘলার সাথে কথা বলতে হবে।কিন্তু আমার তো একটু মন চাচ্ছে না যে মেঘলার সাথে গিয়ে কথা বলি।কিন্তু কি করার কিছু তো বলতে হবে।তাই চলে গেলাম আমার বাসায়।আম্মু আমাকে দেখেই খুব খুশি।
.
:-বাবা তুই এসেছিস।ভিতরে আয় বাবা।(আম্মু)
.
:-মেঘলা কোথায় ওর সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল আমার।(আমি)
.
:-ও রুমে আছে।সেদিন এর পর থেকে আরো কেমন যেনো হয়ে গেছে মেয়েটা।খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে না আর।রুমে শুয়ে আছে।(আম্মু)
।।।।।।
চলে আসলাম রুমে দেখি শুয়ে আছে।একদম শুখিয়ে গেছে একদিনেই।আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়ে উঠে বসলো।
.
:-আমি জানতাম তুমি আসবা।প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।আমার তো কোনো দোষ নাই এখানে।(মেঘলা)
.
:-আকাশের সাথে সম্পর্ক কতদিনের।(আমি)
.
:-দেখো আমি চাই নি করতে কিন্তু ঔ আমাকে ব্লাক মেল শুরু করেছিলো।(মেঘলা)
.
:-আমি যা বলছি তার উত্তর দাও।(আমি)
.
:-ও চার বছর যাবৎ আমার পিছনে লেগে ছিলো।ছয় মাস হয়েছে আমি রাজি হয়েছিলাম।(মেঘলা)
.
:-তাহলে বিয়ে করে ফেলো।(আমি)
.
:-প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।আমি চাই নি তাও ও আমাকে ভুলভাল বুঝিয়ে রাজি করিয়ে দিয়েছে।(মেঘলা)
.
:-তাই তো বলতেছি।তুমি তো রাজি।বিয়েটা করে ফেলো।(আমি)
.
:-তুমিই তো আমার সব।তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কারো হবো সেটা ভাবলা কিভাবে।(মেঘলা)
.
:-তুমি হবা না।আকাশের হয়েই গেছো।তাকে তুমি ভালোবাসো।শুধু শুধু ওকে কষ্ট দিয়ে কোনো লাভ আছে।তোমার বিয়েটা আকাশের সাথে হওয়াটাই ভালো আমি মনে করি।(আমি)
.
:-প্লিজ তুমি এমন করে বলো না তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি না।(মেঘলা)
.
:-ও আমি তো ছিলাম না।সেই সময় তো আকাশকে ঠিকই ভাবতে পারছিলা তাই না।আবার ও চলে যাবো তখনও ঠিকই ভাবতে পারবা।আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো তোমাকে বিশ্বাস করা।তোমার নাটক টা যে আমি ধরতে পারি নাই সেটাই আমার ভুল ছিলো।(আমি)
.
:-তুমি আমাকে এভাবে বইলো না।আমি কিন্তু কিছু একটা করে ফেলবো।(মেঘলা কান্না করতে করতে বলতে লাগলো)
.
:-ওকে তাহলে খুলে বলো সিলেটে সেদিন এর পর থেকে কি কি হয়েছিলো।(আমি)
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(চলবে)
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
wait for the next