#সিজন_৪#
পার্টঃ০১
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।।।।
।।।।।।।
।।।।।।।
১৫ বছর পরের কোনো একটি দিনের বিকালের সময়। আমি বসে আছি একটা জাহাজের উপরে। জীবনে পুরানো কিছু সময় মনে করলে এখনো নিজের কাছে অবাক লাগে। সাধারন একটা জীবন ছিলো আমার। কিন্তু হঠাৎ করেই সব আস্তে আস্তে বদলে গেলো। আমি সাধারন মানুষ থেকে হয়ে গেলাম একজন রাজা। এমন একটা রাজা যার সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষ গুলো জানে না। পুরানো কিছু সময় আমার এখনো জ্বালিয়ে যায় শুধু। সব কাজ কর্ম ছেড়ে আজকে একটু শান্ত হতে এসেছি। পুরো পরিবার সহ এসেছি ঘুরতে। সবাই অনেক করে বলেছিলো যে একটা বড় এডভেঞ্চারে গেলে আমাদের ভালো হতো৷ তাই আজ আমরা চলে আসছি সাধারন সব মানুষদের সাথেই আটলান্টিক মহাসাগর ভ্রমন করতে। সবাই অনেক উত্তেজিত এই ট্রিপের জন্য। পরিবারের সবাই এসেছে। সবাই বলতে আমার আম্মু, আব্বু, বোন হৃদি বাদে। আমার চার রানী আছে এখানে। আর আমার ছোট ছোট তিন সেনাবাহিনীও তো আছে। দুই মেয়ে আর এক ছেলের বাবা হয়ে গেছি এটা ভাবলেও কেমন জেনো লাগে। এখনো তো সেই পিচ্চি ছেলেই আছি। আমার ছেলে নীল, মেয়ে হিয়া আর রিতু। তিনজনই খুব দুষ্ট আমার মতো।
.
--বড় আম্মু আমরা কি আমাদের পাওয়ার গুলো ব্যবহার করতে পারবো না এখানে?(নীল নিলাকে জিজ্ঞেস করলো)
.
--ভাইয়া তুমি কি জানো না আমরা এখানে এসেছি শুধু সময় কাটানোর জন্য কোনো দুষ্টুমি করতে আসি নি।(হিয়া)
.
--আমার প্রিন্সেস টা তো অনেক বুদ্ধিমান হয়ে গেছে😊😊😊। নীল তুমি এখানে তোমার পাওয়ার ব্যবহার করলে তো সবাই ভয় পেয়ে যাবে।(নিলা)
.
--তাহলে তো কোনো মজাই হবে না।(নীল রেগে চলে যাচ্ছিলো অনুর কাছে)
.
--কে বলছে তুমি তোমার ক্ষমতা গুলো ব্যবহার করতে পারবা না? তোমরা সবাই সব করতে পারবে। কোনো মানুষ বুঝতেই পারবে না। বরং এই ট্রিপের পরে সবাই ভুলে যাবে সব কিছু।(অনু)
.
--লাভ ইউ ছোট আম্মু। বাবা দেখছো ছোট আম্মু বড় আম্মুর থেকে কত ভালো😊😊😊।(নীল)
.
--তোমার সব আম্মুই ভালো।(আমি)
।।।
।।।
আমাদের জাহাজটা আটলান্টিক মহাসাগরের একটা সুন্দর জায়গাতেই দাড়িয়ে ছিলো। সবাই এখানের সুন্দর্য উপভোগ করছে। অনেকে ঠান্ডা পানিতে গোসলও করছে। নীল অনুর কথা শুনে পানিতে ঝাপ দিলো। ছেলেটা আমার মতোই হয়েছে। সব সময় ছেলেমানুষী করে। এমনিতেও বয়স তো ওর বেশী হয় নাই। এই বয়সে তো এসব করবেই। পানিতে ঝাপ দিয়েই কয়েকটা ডলফিনের সাথে খেলা শুরু করে দিলো নীল। ওর সাথে হিয়াও চলে গেলো। কিন্তু রিতু দাড়িয়ে আছে।
.
--কি হয়েছে আমার ছোট প্রিন্সেসটার তুমি যাবে না তোমার ভাই বোনের সাথে?(আমি)
.
--বাবা তুমি তো জানো আমার পানি দেখলে অনেক ভয় হয়।(রিতু)
.
--ভয়। ঠিক আছে যদি আমি যায় তোমার সাথে তাহলে?(আমি)
।।।।
।।।।
আমার কথা শুনে রিতু আমার কাধে উঠে আসলো। আর আমি আমার মেয়েকে নিয়ে সোজা জাহাজ থেকে নামতে লাগলাম। পানি জাহাজের উপরে চলে আসলো যেটার উপরে আমি দাড়ালাম এবং তারপর সেটাকে আদেশ করলাম আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মজা করছিলাম অনেক। এমন সময় সেখানে টেলিপোর্ট হয়ে চলে আসলো আমার ডাইভার্সের সদস্যরা। সেখানে ছিলো প্রিন্স নিয়াক, হায়ান, প্রেয়া, মিচেল, সুজেন, রেনো, ডুইন। সবাইকে অনুই আসতে বলেছে। শুধু হিমারোকে অনেক মিস করলাম। বেটাকে নিজের হাতে মারতে হয়েছিলো আমার। অনুর অনেক ইচ্ছা ছিলো ওর কাছের সবার সাথেই এই ট্রিপটা কাটানোর। আমিও রিতুকে নিয়ে আবার জাহাজে চলে আসলাম। সবার সাথে ওরা কথা বলতেছিলো। কিছুক্ষন ওদের সাথে কথা বল্লাম।
.
--অনু তুমি জানো না আমি কত খুশি হয়েছি যখন তুমি আমাকে মেসেজ করলে যে আমি মামা হবো।(নিয়াক)
.
--শালা বাবু। আমিও তো শুনে অনেক অবাক হয়েছি।(আমি)
.
--তুমি কথা বলবে না আমার সাথে।(নিয়াক আমাকে বললো)
.
--আরে রাগ করো কেনো। সব ভুল বুঝাবুঝি এই সময়ে ভুলে যাও। শুধু শুধু সেগুলো মনে রাখলে কি হয়?(আমি)
.
--তোমার মতো লুচু আমি আমার জনমেও দেখি নাই।(নিয়াক)
.
--নিয়াক তোমার দুলাভাই হয় উনি। দুলাভাইকে কি এভাবে বলে?(অনু)
.
--তাহলে কিভাবে বলবো। আচ্ছা তোমার জন্য বিষয়টা আমি বাদ দিলাম। কিন্তু এরপরে যদি উনি এমন কোনো ভুল করে তাহলে কিন্তু শাস্তি দিবো সেটার জন্য।(নিয়াক)
.
--হুমমম পারলে দিয়ো।(আমি হেসে)
।।।।।
।।।।।
সবাই অনেক মজা করলাম। নিয়াক তো আমার উপরে রেগে আছে কারন ওর বোনকে আমি পটিয়ে বিয়ে করে ফেলছি। আবার আরেকটা অকামও করেছিলাম সেটা ডাইভার্স সিজন ২ পড়লে বুঝতে পারবেন। তবে রাগটা মনে হয় এখন কমেছে তাই তো দেখা করতে এসেছে আমাদের সাথে।
।
রাতে বসে ছিলাম সবাই একসাথে। সবাই গল্প করছিলাম। গল্প ছিলো সবার পুরাতন সময়ের কাহিনী নিয়ে। সবারটাই শুনতে ছিলাম। এমন সময় আমার পালা আসলো।
.
--তো মহারাজ হৃদয় টিটান আপনি তো সব সময় বলেছেন আপনার কাহিনী অনেক আকষর্নীয়। তো দেখি শুরু করেন এবার।(সুজেন)
.
--হুমমম তাহলে শুরু করা যাক।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি ওদেরকে বলা শুরু করলাম। জলপরীর প্রেমে সিজন ১, ২, ৩ এর কাহিনী সবই বলে ফেললাম।
.
--তো এবার সিজন ৪ এ কি হলো?(ডুইন)
.
--সিজন ৪ এ তো অনেক ইন্টারেস্টিং কাহিনী হলো।।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি আমার কোলে বসে থাকা আমার দুই মেয়ে রিতু আর হিয়ার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলতে শুরু করতে যাবো। ঠিক তখনি আমাদের জাহাজটা কাপতে শুরু করলো। হঠাৎ করেই কোথা থেকে একটা কালো ছায়া উড়ে আসলো। এবং সেটা আমার ছেলে নীলকে ধরে উদাও হয়ে গেলো। কোথায় গেলো সেটা কেউ জানে না। নীলকে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই সব ঠিক হয়ে গেলো আবার। এতোক্ষম জাহাজটা কাপতে ছিলো। হৃদিতা সাথে সাথেই ওর হাতে থাকা ফোনে দেখে বলতে শুরু করলো
.
--জিনিসটা নীলকে নিয়ে চলে গেলো। আমি নীলের জিপিএস ট্রাক করতে পারছি না।(অনেকটা কেদে কেদেই বললো হৃদিতা)
.
--কি ছিলো ঔটা আর নীলকে নিয়েই যাবে কেনো?(সাইনা)
.
--হৃদয় তুমি কিছু করো। আমার নীলকে নিয়ে আসো।(নিলা)
.
--নীলের কিছুই হবে না।(আমি)
.
--তুমি এভাবে কিভাবে বলতেছো যে নীলের কিছুই হবে না?(নিলা কেদে দিয়ে বললো)
.
--হৃদয় তোমার মাথা কি ঠিক আছে। জিনিসটা যায় হোক না কেনো সে তোমার ছেলে প্রিন্স নীলকে নিয়ে উধাও হয়ে গেলো আর জিপিএস ও তো কাজ করছে না এখন তার। আমি দেখছি ব্যাপারটা।(হায়ান)
.
--হায়ান তুমি ট্রাক করার চেষ্টা করো তো। হৃদয়ের মাথা আসলেই গেছে। ওর কোনো চিন্তা হচ্ছে না।(নিয়াক)
.
--তোমাদের চিন্তা করার দরকার নাই। তোমরা হৃদয় এর কথা শুনো।(অনু)
.
--তুমিও হৃদয় এর মতো কথা বলতেছো। নীলের জন্য কি তোমার চিন্তা হচ্ছে না?(নিলা)
.
--তোমরা একটু চুপ করো তো। আমি জানি নীলের কিছুই হবে না। কারন নীল এখন আছে ওর দাদা আর দাদুর কাছে। তোমাদের কাছে অনেক বড় একটা সত্য লুকিয়ে রেখেছিলাম আমি এতোদিন।(আমি)
.
--কি সেইটা? আর কিভাবে নীল চলে গেলো?(নিয়াক)
.
--ঔটা হৃদয় আর মিয়ারার কন্যা সন্তান আরোহী। প্রিন্সেস আরোহী। The Princess of Darkness।(অনু)
.
--কি মিয়ারার সেই শয়তানটা যে কিনা এই পৃথিবী পুরো ধ্বংস করে দেওয়ার পথে চলে আসছিলো।(নিলা)
.
--হ্যা। সেই মিয়ারা।(আমি)
.
--কিন্তু হৃদয় তুমি তো মিয়ারাকে মেরে ফেলছিলে। কিন্তু তার মেয়ের ব্যাপারে তো কখনো কিছু বলো নি আমাদের।(সাইনা)
.
--কিছু কিছু জিনিস আছে যেটা গোপনই রাখতে হয়। এখন যখন জিনিসটা আর গোপন রইলো না সেজন্য বলছি। শুনো তাহলে প্রথম থেকেই।(আমি)
........
.........
..........
.........
........
সময়টা ছিলো লু চিন কে হারানোর পরের সময়। এলিয়েনদের আঘাতে পৃথিবীর সবার মনেই আঘাত লেগেছে। কিন্তু মানুষের মনে এই সাহসও এসেছে তাদের বাচানোর জন্য কেউ তো আছে। অনেকেই দেখেছে আমাকে লড়তে লু চিনের সাথে। কিন্তু সেটা অনেক দূর থেকেই। মানুষের বিশ্বাসে চলে আসছে তাদের বাচানোর জন্য সুপার হিরো আছে। তাই কিছুটা হলেও তারা সাহস পেয়ে গেছে। অনেক দিন পর আমি দানব রাজ্যে আসলাম। এই সময়ে এটা বেশী দিন হয় নাই। ২ মাসের কিছুদিন বেশী হবে হয়তো আমি দানবরাজ্য থেকে বের হয়েছিলো। কিন্তু আসলে তো আমি দেড় বছরের চেয়ে বেশী সময় কাটিয়ে দিয়েছি এই দানব রাজ্য ছেড়ে। নিজের বাবা মাকে অনেক দিন দেখা হয় না। তাই আমি রনইক দের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম। আর তাকে এটাও বলে দিলাম যে একন পোর্টাল খুলতে।
।
সাথে সাথে আমার সামনে একটা পোর্টাল চলে আসলো। যেটার পিছনে দাড়িয়ে ছিলো রনইক দে আমার দানব সেনারা। আর সাথে ছিলো আমার বাবা মা আর বোন হৃদি।হৃদিতা আমাকে দেখেই এসে জরিয়ে ধরলো।
.
--আমাদের ফেলে এভাবে কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই। কতো চিন্তা হচ্ছিলো তোর জন্য জানোস?(হৃদি)
.
--তোদের জন্য আমার চিন্তা হয় বলেই তোদের এখানে রেখে গিয়েছিলাম।(আমি)
.
--এমন আর কখনো করবি না। আমাদেরকে এখন থেকে স্বাভাবিক ভাবেই থাকতে দে। এতো চিন্তা আমি আর নিতে পারবো না।(বাবা)
.
--হ্যা বাবা তোমাদেরকে এখন থেকে স্বাভাবিক ভাবেই রাখবো। আমি চাই না সামনে থেকে আমার জন্য কোনো বিপদ তোমাদের উপরে কোনো বিপদ আসুক।(আমি)
.
--তুই ঠিক আসিস তো বাবা।(আম্মু)
.
--হ্যা আম্মু।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি তাদের তিনজনকে রেখে আসছিলাম আমাদের সেই পুরাতন সৃতি ভরা বাড়িতে। তাদেরকে আমি একাই রাখতে চাই। কারন রাজার লাইফ মোটেও সহজ কাজ না। আমার উপরে এ দায়িত্ব পরেছে বলে আমি এটা করতে পারছি। কিন্তু তারা তো সাধারন মানুষ। আমি তাদেরকে জ্বীন পরীদের মধ্যে রেখে কোনো ভুল করতে চাই না।
।।।
।।।
এরপর দিন গুলো আস্তে আস্তে চলতে শুরু করলো। ছয়মাস সময় পার হয়ে গেলো এদিক ওদিকের জিনিস গুলো ঠিক করাতে। জলপুরী আবার নতুন করে করা হলো। সেই সাথে আমার বিয়েও হয়ে গেলো লু চিনের মেয়ে সাইনার সাথে। সব কিছু ঠিক ঠাকই ছিলো। সেই রহস্যময় মেয়েটারও কোনো খোজ ছিলো না। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম জিনিসটা স্বাভাবিক কিছু। কিন্তু আস্তে আস্তে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করলো। আমি মাঝে মাঝেই আমার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলি। কি করে ফেলি আমি নিজেও জানি না। আমার মধ্যে এক নতুন সত্বা বার বার আমার জায়গা দখল করে নেওয়া শুরু করলো। প্রত্যেকবার সে আমার জায়গায় আসলে আমাকে পাঠিয়ে দেই গভীর ঘুমে। অনেক লড়ছিলাম আমি নিজের মধ্যেই। কিন্তু সেটা কতদিন লড়া যায়। একটা সময় তো হার মানতেই হয়।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করবেন ২য় পার্টের জন্য।😊😊😊😊