#সিজন_৪#
পার্টঃ০২
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।।।।
।।।।।।।
।।।।।।।
আমার সাথে এখন কি হচ্ছে সেটা নিয়ে আমি ভাবলেও কিছুই পাই না। হঠাৎ করেই আমি অনেক বদলে যায়। বুকের চারপাশের কালো ছায়া প্রায় সারা শরীরে ছড়িয়ে পরা শুরু করেছে। এই জিনিসটা এখন অনেক কষ্ট দেই আমাকে। কারন এটা মাঝে মাঝে আমার শরীরে ব্যথা দেই অনেক। আস্তে আস্তে সময় আরো খারাপ হতে শুরু করলো। আমি কেমন জানি পরিবর্তন হতে শুরু করলাম। বেশীরভাগ সময় আমি নিজের উপরে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতে শুরু করলাম। অনেক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেও কিছুতেই কিছু হলো না।
.
--হৃদিতা এটার কি কোনো চিকিৎসায় হবে না?(আমি)
.
--আমরা তো চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি কোনো জাদুর স্পেল ও পাচ্ছি না এটাকে ঠিক করার জন্য। আমার মনে হয় এটা মিয়ারা ছাড়া কেউ ঠিক করতে পারবে না।(হৃদিতা)
.
--এটা যাই হয়ে থাকুক না কেনো এটা তোমার শরীরকে ভিতর থেকে অনেক ডেমেজ করে যাচ্ছে। সেই সাথে তোমার ব্রেনের উপর দিয়েও অনেক চাপ ফেলছে। যদি এমন বেশী দিন হয়ে যায় তাহলে তোমার শরীরের মধ্যে থেকে তুমি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে।(সাইনা)
.
--সেটা হলে তো কেরেলা তোমার শরীরে ভর করবে।(নিলা)
.
--আমাকে তারাতারি এই জিনিসটা থেকে মুক্ত হতে হবে। কারন এটা আমার সারা শরীরে অনেক ব্যথার সৃষ্টি করছে।(আমি)
.
--আমাদেরকে মিয়ারাকে খুজতে হবে। সেই রহস্যময় মেয়েটাই এই সব কিছু ঠিক করতে পারবে হয়তো। কিন্তু আমাদের কোনো টেকনোলজি কিংবা ম্যাজিক খুজতে পারছে না তাকে।(হৃদিতা)
.
--আচ্ছা এখন একটা কাজ করো তো। আমাকে বেশী করে একটা ঘুমের ডোজ দিয়ে দাও। আমি একটু ঘুমাতে চাই শান্তি মতো।(আমি)
.
--ঠিক আছে।(নিলা)
।।।।
।।।।
নিলা আমার হাতে একটা ইনজেকশন পুশ করে দিলো। এতে করে আমি ঘুমিয়ে পরলাম। অনেক গভীর একটা ঘুমে চলে গেলাম। টাইম টেবিল আমি ব্যবহার করছি না কারন তাতে মাথায় অনেক ব্যথা করে। ঘুম থেকে উঠার পরে যা ঘঠলো......
.....
.......
.....
হাতে তলোয়ারটা নিয়ে আমি বসে আছি একটা পাথরের উপরে। আমার হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে শুধু। একটু আগেই আমার লড়াই হয়েছিলো কয়েকটা সাধারন মানুষের সাথে। সাধারন মানুষ বললে ভুল হবে। ওরা নিজেদেরকে নিনজা বলে পরিচয় দেই। আমি বর্তমানে আছি হয়তো জাপান কিংবা চাইনাতে। এখানে কিভাবে আসছি আমি নিজেও জানি না। ঘুমের ইনজেকশন নিয়ে কয়েকদিন ঘুমিয়ে ছিলাম উঠেই দেখি আমি একটা বিশাল বাশ বাগানে চলে আসছি। তারপরই হঠাৎ দেখলাম আমার উপরে শত শত নিনজা ঝাপিয়ে পরলো। আমার কিছুই করার ছিলো না। প্রথমে আমি লড়াই করতে চাই নি। কিন্তু এই নিনজা গুলো থামার কোনো নামই নিচ্ছিলো না। তলোয়ার দিয়ে এক আঘাতেই আমি একটাকে কেটে দু টুকরো করে ফেললাম। তার শরীরের রক্ত আমার সারা শরীর মাখিয়ে গেলো। কিন্তু এতে বাকি সবাই ভয় পেলো না। বরং তারা আরো আক্রমন করা শুরু করলো। আমি সবাইকেই কাটতে শুরু করলাম। এমন সময় পিছন থেকে আস্তে করে একটা কাট দিলো আমার পিঠে। তাতে আমার রাগটা এবার চরমে চলে গেলো। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না আর। আমি আমার তলোয়ার মাটিতে গেড়ে দিলাম এবার আমার সারাশরীর আস্তে আস্তে আগুন হতে শুরু করলো। পুরো শরীর আস্তে আস্তে জ্বলতে শুরু করলো। এটা আগে কখনো হয় নি। নিজের প্রথম এমন ক্ষমতা দেখে ভালোই লাগছিলো৷ আস্তে আস্তে লাল আগুন কালো হতে শুরু করলো। ভাবি নি জিনিসটা অনেক ভয়ানক হবে। আমি জোরে করে একটা চিল্লানি দিলাম। কারন আমার সারা শরীরেও ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সেখানে চরম একটা ব্লাস্ট হয়ে গেলো। আমার শরীর থেকেই বড় সড় একটা এনার্জি ব্লাস্ট হয়েছে। এতে করে আমি যে বাশ বাগানে ছিলাম এতোক্ষন সেটার পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেলো। আশে পাশে যত নিনজা ছিলো সব মারা গেলো।
।
আস্তে আস্তে আমার শরীরও ঠান্ডা হতে শুরু করলো। আমি বসে পরলাম একটা পাথরের উপরে। বসে বসে ভাবতে লাগলাম কিভাবে আসলাম আমি এখানে। পুরানো কথা ভাবতে লাগলাম কিন্তু কোনো কাজই হলো না আমার। আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না আমি আমার শরীরের উপরে কন্ট্রো হারিয়ে ফেলছি কেনো বারবার। এখানেও তো আমি নিজে আসি নি। কেউ বার বার আমার শরীর আমার থেকে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তো দিন দিন আমার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যাবে। আমি কি করবো নিজেও বুঝতে পারছি না।
।।।
।।।
আমি বসে বসে ভাবতে ছিলাম। এতোক্ষনে যে পাথরে বসে ছিলাম সেটা রক্তে ভিজে গেছে। এতোক্ষনে আমি খেয়াল করলাম আশে পাশে বিশাল একটা বাশ বাগান ছিলো। কিন্তু এখন জায়গাটা মরুভূমি বলা যায়। অনেকটা জায়গা আমি নষ্ট করে দিয়েছি। আমার পক্ষে ভালো হবে যদি আমি এখন এই জায়গাটা ছেড়ে দি। কারন এখানের লোকজনও এখানে আসা শুরু করবে এখন। পরে বড় সর একটা সমস্যা তৈরী হতে পারে। আমি সেখান থেকে উড়তে যাবো ঠিক তখনি আমার সামনে একটা পোর্টাল খুললো। আমি প্রথমে ভাবলাম পোর্টাল মনে হয় আমার রাজ্যেরই। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই আমার ধারনা ভুল হয়ে গেলো। কালো একটা পোর্টালের মধ্যে আমি ঢুকে গেলাম। অনেক অন্ধকার একটা জায়গায় এসে আমি পরলাম। শুধু অন্ধকার নয় জায়গাটা অনেক ভয়ানকও। আমি কোনোদিনও ভাবি নি একটা ভুতুরে জায়গায় আমি আসবো। বরাবরই ভূত আর পেত্নীতে আমি অনেক ভয় পাই। আর সেই ভুতুরে একটা বাড়িতেই আমি এসেছি। সামনে দুটো দরজা আছে। বাম দিকে তো যাবো না কারন ভিতরে একদম অন্ধকার। কিন্তু ডান দিকের দরজার ভিতর থেকে আলো বের হচ্ছে।আমি হাটা শুরু করলাম। একটু ভিতরে যাওয়ার পরই দেখতে পেলাম সামনে সিড়ি রয়েছে। আর সিড়ির পাশ দিয়েই বড় বড় মশাল লাগানো। যেটার আলোতে আলোকিত হয়েছে। আমি হৃদিতার সাথে যোগাযোগ করতে যাবো কিন্তু আমার কাছে যোগাযোগ করার কোনো কিছুই নাই। কি করার উপরে উঠে দেখা যাক। উপরে উঠতে লাগলাম। আমার কাছে সব কিছু হরোর মুভির মতো লাগছিলো। দেওয়ালে কিছু ভয়ানক মূর্তি বানানো আছে যেগুলো দেখে আমার খুব ভয় হতে লাগলো। কিন্তু মনে সাহস নিয়ে আমি উপরে উঠতে লাগলাম। উপরে উঠে আরো দুটো দরজা পেলাম আমি। ডান পাশে আর বাম পাশে। ডান পাশেরটাই খুললাম আমি। খুলে ভিতরে গেলাম আমি। দরজাটা খুলেই আমার ভিতরে কেমন জানি মনে হলো। নতুন কিছু পরিবর্তন হলো এমন অনুভব করতে লাগলাম আমি। আমি ভিতরে ঢোকার পরে যা আশা করেছিলাম ভিতরে একদম তা নেই। আমি যেটা আশা করেছিলাম তার থেকে অনেক সুন্দর জায়গা এটা। একটা পাহাড়ের উপরে চলে এসেছি আমি। সামনেই একটা বেঞ্চ রয়েছে। সেখানে একটা মেয়ে বসে আছে। পিছনে দাড়িয়ে আছি বলে আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি না।
।।।।
।।।।
আমি আস্তে করে সামনে গেলাম। মেয়েটা আমাকে বললো তার পাশে বসতে। আমি তার পাশে বসে পরলাম। মেয়েটা আমার দিকে তাকালো। মেয়েটার মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা ছিলো৷ আমি বসে ছিলাম। মেয়েটাকে দেখেই বুঝলাম ও মিয়ারা। ওকেই তো এতোদিন খুজছিলাম আমি। আর আজ ও আমার সামনে।
.
--তোমাকেই তো আমি খুজতে ছিলাম। আমার সাথে কি করেছো তুমি। আমি আস্তে আস্তে খারাপের দিকে চলে যাচ্ছি। নিজের শরীরকে আমি নিজেই কন্ট্রোল করতে পারছি না।(আমি)
.
--কিছুই তো করি নি। অধিকাংশ মেয়েরাই যা করে সেটাই করেছিলাম। ছোট খাটো একটা লাভ বাইট দিয়ে ছিলাম তোমার বুকে।(মিয়ারা)
.
--তাহলে সেই কামড়ে আমার সারা শরীর কালো হয়ে যাচ্ছে কেনো?(আমি)
.
--আমি কিভাবে বলবো?(মিয়ারা)
.
--তুমি এভাবে বলবে না আমি বুঝেছি। কিছু তো তোমাকে করতেই হবে।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি আমার হাত দিয়ে মিয়ারার হাত ধরার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। ওর হাতে হাত দেওয়ার সময়ই ও আস্তে আস্তে কালো ছায়ায় পরিনত হয়ে গেলো। এবং সেখান থেকে দূরে গিয়ে দৃশ্যমান হলো। এবার আমি আমার তলোয়ার হাতে নিলাম। সাথে সাথে সেই তলোয়ার আমার হাত থেকে উদাও হয়ে গেলো। আমি যতই হাত শক্ত করে তলোয়ার আনার চেষ্টা করছি কিন্তু তারপরও সেটা আমার হাতে আসছে না। কোনো উপাই না দেখে আমি একটা এনার্জি বল বানালাম। কিন্তু সেটা হাতের মধ্যেই শেষ হয়ে গেলো। মিয়ারা একটু জোরে জোরে হাসতে লাগলো। মিয়ারার চোখের দিকে আমি তাকালাম। অনেক পরিচিত চোখটা আমার। কিন্তু চোখটা কার সেইটা আমি বের করতে পারছি না। একদম জিনিসগুলো আমার কাছে সব এলোমেলো লাগছিলো। আমি আমার ক্ষমতাগুলো ব্যবহার করতে পারছিলাম না। পাশেই পানি ছিলো। কিন্তু আমি সেই পানিকেও উঠাতে পারছি না। একদম সাধারন ছেলে হয়ে গেলাম আমি। আমার হাতেও কালো ছায়া ছিলো। এখন দেখতে পেলাম আমার সারা শরীরে এই কালো ছায়াটা চলে গেছে। এবং সেটা আমার পুরো ক্ষমতাগুলোকে শেষ করে দিয়েছে। এবার মিয়ারা তার মুখের রুমালটা সরালো। আমি ওর মুখ দেখেই অবাক হলাম। মিয়ারা দেখতে একদম জারার মতো।
.
--তুমি তো দেখতে একদম জারার মতো।(আমি)
.
--আমি জারার মতো দেখতে না। আমি জারাই।(মিয়ারা)
.
--কি?(আমি)
.
--হ্যা।(মিয়ারা)
.
--কিন্তু।(আমি)
.
--অনেক প্রশ্ন আছে তোমার মনের মধ্যে। একটারও উত্তর আমি দিতে পারবো না। তবে তুমি আমার ইচ্ছাকে পূরন করেছো৷ তাই আমি তোমার সবচেয়ে বড় ইচ্ছাকে পূরন করতে তোমাকে এখানে এনেছি।(মিয়ারা)
.
--আবার বড় ইচ্ছা?(আমি)
.
--হ্যা। তুমি তো সব সময় একটা স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চেয়েছিলে। এটাই তোমার সবচেয়ে বড় ইচ্ছা। জানি সেটা এখন পূরন হওয়ার কোনো উপায় নাই। কিন্তু আমার কাছে আছে। আমি আমার টাইম আর রিয়েলিটির স্পেল দিয়ে সেটাকে পূরন করতে পারবো।(মিয়ারা)
.
--মানে?(আমি)
.
--দেখা হবে খুব শীঘ্রই তোমার সাথে। মিয়ারা নয় জারা হয়েই তোমার কাছে আসবো আবার।(মিয়ারা)
।।।
।।।
মিয়ারা ওর হাত দিয়ে আমার দিকে একটা পুশ করলো। সাথে সাথে ঝড়ো বাতাস আমাকে উড়িয়ে ফেলে দিলো পাহাড় হতে। আমি উপরে তাকায়ে ছিলাম ওর মুখের দিকে সাথে সাথে আরেকটা জিনিস দেখতে পেলাম আমি। আমি নিচে পরছিলাম কিন্তু মিয়ারার পাশেই আবার আমিই দাড়িয়ে ছিলাম। মাথায় কিছুই ঢুকলো না আমার। আমি উড়তে চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। আমি চোখ বন্ধ করলাম। কারন এটাই আমার শেষ দেখা মনে হয়। যেভাবেই হোক মিয়ারা আমার একটা কপি বানিয়ে নিয়েছে। আর হয়তো তার কাছেই মিয়ারার কোনো স্পেলের জন্য আমার ক্ষমতাগুলো চলে গেছে। আর আমি এখন পাহাড় থেকে পরছি। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি মারা যাবো।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।