#জলপরীর_প্রেমে#
#সিজন_২#
পার্টঃ০২
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।
।।।।
।।।।
এতো বড় একটা বিপদ যে আমাদের দিকে আসছিলো সেটা আমাদের অজানা থাকলেও জানি যে আসবে। আমি চলে আসলাম জলপুরীতে। সেই পুরাতন জায়গা যেখানে প্রথম এসছিলাম। আমি রাজপ্রাসাদে ঢুকলাম। সবাই আমাকে দেখে কুর্নিশ করছে। ভালোই লাগছে রাজা হতে পেরে। এতো সম্মান পাচ্ছি এটা কি কম কথা। আমি সোজা রাজ সিংহাসনে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে বসলাম। মাথায় মুকুট টুকুট এগুলো আমার ভালো লাগে না। তবে জারার মাথায় রয়েছক শাহী রানীর তাজ। আমি গিয়ে আমার সিংহাসনে বসলাম। তারপর আমার রাজ সভা শুরু করলাম।
.
--দুঃখিত আমি এতোদিন সফরে থাকায় আপনাদের রানী জিয়াইনিয়া(জারা) রাজ্যের সকল কিছু দেখাশোনা করছে। তবে সামনে যে সময় আসতেছে আমার মনে হয় তা থেকে বাচার জন্য আমাদের এখনি চেষ্টা করতে হবে।(আমি)
.
--হুজুর মাফ করবেন কিন্তু কি ধরনের বিপদ আসবে আমাদের উপরে।(সেনাপতি রুদ্রিস)
.
--সেনাপতি সামনে কি হবে সেটা বলা মুশকিল তবে আমাদের সেটা থেকে বাচতে হবে। কোনো ভুলই করা যাবে না।(আমি)
.
--হুজুর আমার মনে হয় জলপুরীটাকে পুরো সিল করে দিলেই হবে। কেউ অনুপ্রবেশ করতে পারবে না তখন।(রুদ্রিস)
.
--সেটা ঠিক আছে এখন আপনার চিন্তা কি শুধু জলপুরী নিয়ে আমাদের সব থেকে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা দেয়াল কিন্তু দানব দুনিয়া। আকাশপুরী নিয়েও তেমন চিন্তা নেই। তবে চিন। তবে আমার চিন্তা শুধু পাতালপুরী নিয়ে। অনেক মানুষই জানে কিভাবে পাতালপুরীতে ঢুকতে হয়।(আমি)
.
--হুজুর মাফ করবেন তবে। পাতালপুরীর ডিফেন্স নরমাল হলেও ওদের অস্ত্র এবং আক্রমনের যে নিয়ম তাতে ওরা আমাদের থেকে শক্তিশালী।(সেনাপতি)
.
--সেনাপতি রুদ্রিস এখানে কথা সেটা না। আমি আমার চার রাজ্যের সুরক্ষা তো করতেই চাই। সেই সাথে আমি আমার সকল সেনা থেকে আক্রমনের জন্য সেনা চাই। আর সেটার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আপনার।(আমি)
.
--জ্বী হুজুর।(সেনাপতি)
.
--তাহলে আপনার সেনা তৈরী রাখুন। আর জলপুরীর চারপাশে প্রতিরক্ষা দেয়ালটা চালু করে দিন।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি রাজ সভা থেকে আমার শয়নকক্ষে আসলাম। একটু পর জারা ও আসলো। সাথে করে খাবার নিয়ে আসলো। বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। আমার আদেশ মতো সেনাপতি প্রোটেকশন ওয়াল চালু করে দিয়েছে। এটাই জলপুরীটাকে বাইরে থেকে পুরো অদৃশ্য করে দিবে। আর বাইরে থেকে আক্রমনের কোনো কিছু ভিতরে আসতে পারবে না।
।
জারা দেখলাম আমার পাশে এসে বসলো। মনটা খারাপ করে বসে আছে জারা। বুঝলাম রাগ করেছে। মেয়েটা তো শুধু আমাকেই চেয়েছিলো কিন্তু তাতেও ওর ভাগ দিতে হচ্ছে। আমার ও বা উপায় কিসের। একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দানব রাজ্যের সবচেয়ে সুন্দরী দানবীকে বিয়ে করবো। কিন্তু পরে মাথায় টোকে দিয়ে ভাবলাম সাইজের ও একটা ব্যাপার স্যাপার আছে। নিজের সাইজের একটাকে নিয়েই পারি না আবার তো একটা দানবী। এখন মহারানী রেগে আছেন। তার রাগ থামাতে হবে তাই আগে খেয়ে নিলাম। অবশ্য আমার খাওয়ার পরই খাবে ও।
.
--নাও এবার খেয়ে নাও।(আমি)
.
--উহু আমার ক্ষুদা নাই।(জারা)
.
--বললেই হলো ক্ষুদা নাই। তারাতারি খেয়ে আসো।(আমি আদেশের সুরেই বললাম)
.
--......(প্লেট দুইটা নিয়ে আসছিলো ও। তাই খেতে বসলো ও)
.
--দেখেছো এবার ভালো লাগছে তাইনা?(আমি জারার হাতটা ধরলাম)
.
--একদম ধরবে না আমায়।(জারা)
.
--বললেই হলো।(আমি)
.
--এতোদিন পর মনে পরেছে আমার কথা।(জারা)
.
--আরে এজন্য রেগে আছো। আমি কি তোমার সতিন দুইটার কাছে গিয়েছিলাম বলো। কারো কাছেই তো যায়নি?(আমি)
.
--তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়। আর পুরো ১৫ দিন ছিলে আমার থেকে দূরে। জানো কতটা কষ্টে ছিলাম আমি।(জারা)
.
--হুমম বুঝতে তো পারছি। তাই আমি দূরে গেলেও যাতে তোমার কষ্ট না হয় সেই সিদ্ধান্ত নিবো ভাবছি।(আমি)
.
--কি করবে?(জারা)
.
--ভাবছি আমাদের জলপুরীর একটা রাজকুমারকে নিয়ে আসবো।(আমি জারাকে জরিয়ে ধরে বল্লাম)
.
--এতো তারাতারি?(জারা)
.
--হ্যা বাবা হওয়ার জন্য যে আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।(আমি)
.
--হ্যা বাবা তো তুমি হবেই। কিন্তু সামনে নাকি আমাদের উপরে বিপদ আসবে। সেটা না যাওয়া পর্যন্ত ভাবছি এসব না ভাবাই ভালো।(জারা)
.
--হ্যা সেটাও ঠিক বলেছো। তবে রোমান্স তো আমি করতেই পারি।(আমি)
.
--এই না না ছাড়ো আমাকে।(জারা)
.
--আর ছাড়াছাড়ি নাই।(আমি)
.
--আচ্ছা বাবা আমি তো তোমারই।(জারা)
.
--চলো ঘুরে আসি।(আমি)
.
--কোথায়?(জারা)
.
--সেই প্রথম দিন যেখানে নিয়ে গিয়েছিলে।(আমি)
.
--সেখানে যাবে?(জারা)
.
--হ্যা। আজকে তোমার সাথে সারা রাত চাদের মজা নিবো।(আমি)
.
--আজকে হঠাৎ এতো রোমান্টিক হলে কিভাবে?(জারা)
.
--এতো সুন্দর বউ যার রোমান্টিক না হলে তো পালিয়ে যাবে বউ।(আমি)
.
--বলছে তোমারে পালিয়ে যাবো।(আমার কাধে একটা ঠাপ্পর দিয়ে)
।।।।
।।।।
দুজনে বের হলাম জলপুরী থেকে। আবারো সেই ছোট দ্বীপটাই চলে আসলাম। সেই প্রথম দিনের কথা এখনো মনে আছে। রাত হয়েছে। তবে জোৎসনা রাত বলে উপভোগ করার মতো একটা রাত হয়েছে। জারা সেই ওর বানানো বেঞ্চিটাই বসলো। আমি ওর কোলে মাথা দুলাম। দুজনে গল্প করে যাচ্ছি। অনেকক্ষন পর ওর বানানো ঘরটাতে গেলাম। ভরে গেলো ঘরটা ভালোবাসার আলোতে। যেই আলো সবাই দেখতে পারবেন না। তাই বলতেও চাই না।
।
।
সকালে আমি আর জারা চলে গেলাম আবার জলপুরীতে। গিয়ে সকালের নাস্তা করে আবার রাজ সিংহাসনে বসলাম।
.
--সেনাপতি রুদ্রিস আমি দুইদিন পর জলপুরী ত্যাগ করবো। আমার অনুপস্থিতিতে আমাদের সুরক্ষার দায়ভার আপনার উপরে।(আমি)
.
--জ্বী হুজুর আমি বুঝেছি।(সেনাপতি)
।।।
।।।
।।।
আর অন্যদিকে সেই দূরবর্তী গ্রহের ব্যাখ্যায় চলে যায়। সেখানের মেয়েরা দেখতে অনেকটা আমাদের মানুষের মতই। কিন্তু পুরুষরা অনেকটা স্বাস্থবান আর আমাদের থেকে শক্তিশালী। চেহারার গঠনের ও মিল নেই তাদের সাথে আমাদের আমাদের কাছে সেই পুরুষরা বিভৎস। তাদের আলোচনায় আশা যাক। মহারাজ লু চিন আর তার সেনাপতি সেপাই এর মধ্যে কথা হচ্ছে।
.
--জেনারেল সেপাই আপনি কি স্পেসশীপ গুলো রেডি করেছেন?(লু চিন)
.
--ইয়েস মাই লর্ড। আমাদের বারো হাজার স্পেসশীপ তৈরী। এখন শুধু আমাদের যাওয়ার পালা।(সেপাই)
.
--প্রিনসেস লু সাইনা গ্রহটার কত কাছে পৌছালো?(লু চিন)
.
--মাই লর্ড আমি প্রিনসেস এর সাথে ভিজিওয়াল কন্ট্রাক করছি।(সেপাই)
।।।
।।।
সেপাই তার হাতে থাকা নোটপ্যাডের মতো কিছু একটা ছিলো যেটা আমাদের ফোনের মতো নয় পুরো ভার্চুয়াল। সেটাতে ক্লিক করলো সাথে সাথে হোলোগ্রাফের মতো প্রিনসেস লু সাইনা জীবন্ত চলে আসলো রাজা লু চিনের সামনে।
.
--প্রিনসেস আপনি এখন কোথায় আছেন?(সেপাই)
.
--লু সাইনা তুমি কি পৌছে গেছো?(লু চিন)
.
--নো dad। মাত্র গ্রহটার সোলার সিস্টেমে পৌছালাম। স্পিড পোর্টাল ব্যবহার করে এই অবধি এসেছি। কিন্তু এখন স্পিড পোর্টালের ব্যাটারি রিচার্জ করতে হবে তারপর এখান থেকে সোজা ঔ পৃথিবীতে।(লু সাইনা)
.
--গুড তোমাকে ঔখানে পাঠানো হয়ে গুপ্তচর বানিয়ে। ঔখানের সকল খবরাখবর আমাকে দিবে। আমরা আজই রওনা দিচ্ছি সকল দুর্বল পয়েন্ট গুলো বলবে আমাদের।(লু চিন)
.
--ইয়েস মাই লর্ড।(লু সাইনা)
.
--প্রিনসেস তবে সাবধান ওরা হয়তো আমাদের থেকে ও বেশী চালাক হতে পারে। আপনি যে অন্য গ্রহ থেকে এসেছেন এটা যেনো ওরা না জানতে পারে। তাহলে সতর্ক হয়ে যাবে।(সেপাই)
.
--ইয়েস জেনারেল আমি বুঝতে পারছি।(লু সাইনা)
.
--তো জেনারেল রাজকুমার লু চেইনকে তৈরী হতে বলেন। আজই তো রওনা দিচ্ছি ১২ হাজার স্পেসশীপ নিয়ে।(লু চিন)
.
--মাই লর্ড এই মাত্র খবর পেলাম কাছেরই একটা গ্রহ যেটা আমাদের পাশের সোলার সিস্টেমে রয়েছে নাম ইরাইনাস। সেটার ডিফেন্স খুবই খারাপ। আমরা আক্রমণ করতে পারি তাদের উপরে।(সেপাই)
.
--তাহলে দেরী কিসের। শুধু আমাদের সোলার সিস্টেম জয় করলে চলবে না। আমরা বাকি একটাও ছারবো না।(লু চিন)
.
--ইয়েস মাই লর্ড চলুন।(সেপাই)
।।।।
।।।।
আর এদিকে লু সাইনার স্পেসশীপের স্পিড পোর্টালের ব্যাটারী রিচার্জ হওয়ার পরেই নিমিষেই ক্রাস করলো আটলান্টিক মহাসাগরের পানিতে। যেটা আমাদের জলপুরী থেকে অনেক দূরে। সেটা থেকে লু সাইনা প্যারাসুট নিয়ে অনেক আগেই বের হয়ে গেছে। আশে পাশে দেখে তো সে মুগ্ধ। এতো পানি আর এতো গাছপালা সেটা আগে কখনো দেখে নি। এতো সুন্দর হবে এই গ্রহটা ভাবে নি সে। যেভাবেই হোক এটা তো ওদের দখল করতেই হবে আর সেটার জন্য যা করতে হয় করবে লু সাইনা।
।।।।
।।।।
আর এদিকে আমি দুইদিন জলপুরীতে কাটিয়ে রওনা দিলাম পাতালপুরী তে। অবশ্য টেলিপোর্টেশন মেশিন দিয়েই এসেছি। আসতে মন চাইছিলো না। তবে নিলার জরুরী ফোনে আমাকে আসতেই হলো। কি এমন জরুরী বিষয় হতে পারে সেটা বুঝতেছিলাম না। ভাবলাম হয়তো রাজ সিংহাসনে আমাকে টেলিপোর্ট করবে। কিন্তু না অনেক আশ্চর্য হলাম। কারন একটা গবেষনার রুমে আমাকে আনা হয়েছে। পাশে নিলা দারিয়ে ছিলো হেসে আমার কাছে আসলো।
.
--জরুরী কিছু বলতে চাইছিলে?(আমি)
.
--হ্যা। তোমাকে তো এটা বলায় হয় নি আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত এবং দামী গবেষনা গার হচ্ছে এইটা। এখানে সব উন্নত বিজ্ঞানীগন রয়েছেন। দেখো উনি হলেন সার্ফ রে। এখানের মূল বিজ্ঞানী।(নিলা)
.
--নামটা অদ্ভুদ।(আমি)
.
--মহারাজ আমার সালাম নিন।(সার্ফ রে)
.
--হুমমম কি হয়েছে?(আমি)
.
--খুব গুরুতর কিছু একটা হয়েছে আমার মনে হয়েছে।(বিজ্ঞানী)
.
--কি হয়েছে?(আমি)
.
--চলুন আমার সাথে?(বিজ্ঞানী)
।।।।
।।।।
আমি গেলাম বিজ্ঞানীর সাথে। সাথে নিলা আর সেনাপতি ও ছিলো পাতালপুরীর। একটা রুমে আসলাম। আমি দেখতে পেলাম ভালোই বড় একটা স্পেসশীপের মতো কিছু একটা।
.
--এটা কি আপনারা বানিয়েছেন?(আমি)
.
--জ্বী না মহারাজ এটা আমরা কিংবা আমাদের পৃথিবীর বানানো স্পিসশীপ না এটা।(বিজ্ঞানী)
.
--মানে। তাহলে কে বানালো?(আমি)
.
--এটা খুব উন্নত একটা স্পেসশীপ। আমি আরে কিছু তথ্য বের করতে পারতাম কিন্তু পানিতে এর পুরো সিস্টেম নষ্ট করে দিয়েছে।(বিজ্ঞানী)
.
--তাও তো কিছু বের করা যাবে।(আমি)
.
--হ্যা যাবে তবে এটা বলতে পারি পানি থেকে প্রতিরক্ষার জন্য বানানো হয় নি এটা। যারা বা যেখান থেকেই বানানো হয়েছে তারা আমাদের থেকে অনেক উন্নত।(বিজ্ঞানী)
.
--আপনি যেতা বলতে চাচ্ছেন এলিয়েন?(আমি)
.
--হ্যা মহারাজ।(বিজ্ঞানী)
.
--পাগল হয়ছেন। এমন কিছুর অস্তৃত্বই তো নেই।(আমি)
.
--সেটা আপনাদের মানুষের জন্য নেই। কিন্তু আমাদের অনুসন্ধানে আমরা অনেক আগেই জানতে পেরেছি।(বিজ্ঞানী)
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ৩য় পার্টের জন্য।