পার্টঃ১২
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।।
।।।।।
।।।।।
আমি আবারো হাটতে লাগলাম হোল্ডার বিল্ডিং এর দিকে। আমি অনেকটা অসহায় হয়ে পরেছি এই সময়ে। আমার পরিবারের কেউই আমাকে চিনতে পারছিলো না আর এই বিষয়টা আমার কুর কুর করে খাচ্ছিলো। তবে কি বয়স্ক লোকটার কথা মতো এটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় কোরবানি? বুঝতে পারছি না কিছুই। সব কিছু এভাবে বদলে যাবে সেটা আমি কোনো ভাবতেই পারি নাই। আমি সামনে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন আমার একটাই সহায় আর সেটা হলো অনু। অনু মনে হয় অনেক বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে। আমার মনে হয় অনু আর হাসানের মধ্যে কিছু একটা ছিলো। ভাই বোনের সম্পর্ক হয়তো না সেটা। সেটার থেকেও গভীর কিছু ছিলো। তাই অনু ব্যাপারটা হয়তো মেনে নিতে পারছে না।
।।।
।।।
দেখতে দেখতে আমি পৌছে গেলাম হোল্ডার কম্পানিতে। আর একদম উপরের তালায় চলে আসলাম যেখানে অনুর রুম। অনেক আজব একটা বিল্ডিং। উপরে বাসা, মাঝে অফিসের ব্যবস্থা ছিলো আর মাটির নিচে গোপন ল্যাব। অনুর রুমের দরজা খোলায় ছিলো। ভিতরে যা আশা করেছিলাম তা পেলাম না। ভিতরে পুরো অন্ধকার হয়ে আছে। চারিদিকে মোমের আলো জ্বলছে। দেখে মনে হচ্ছে কালো জাদুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফ্লোরের মাঝখানেই দেখতে পেলাম মোমগুলো দিয়ে ত্রিভুজ বানানো হয়েছে। আর তার মাঝখানেই অজ্ঞান হয়ে পরে আছে অনু। আমি কাছে গেলাম। দেখতে পেলাম নিজের হাতের রক্ত বের হচ্ছে। আর সেই রক্তে ওর চারপাশে একটা ত্রিভুজ হয়ে গেছে। আমি ওকে ধরতে চেষ্টা করলাম কিন্তু সেই রক্তের যে ত্রিভুজ হয়েছে সেটার ভিতরে হাত দিতে পারলাম না। একটা অদৃশ্য ঢাল হয়ে গেছে সেখানে। আমাকে হয়তো বসে অপেক্ষা করতে হবে। আমি পাশে থাকা একটা চেয়ার নিয়ে বসে পরলাম। পাচঁ মিনিট অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু না এখনো অজ্ঞান অবস্থায় আছে। হঠাৎ করে কাপতে লাগলো অনু। অনেক বেশী কাপা শুরু করলো। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। সাদির ক্ষমতাটা ব্যবহার করে ওকে ভিতর থেকে বের করে নিলাম। বের করে আনার পরপরই অনুর জ্ঞান ফিরে আসলো। অনেকটা ধুরমুরিয়ে উঠলো অনু। এমন মনে হলো ভয়ানক কোনো স্বপ্ন দেখে উঠেছে ও।
.
--কি করছিলে। আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।(আমি)
.
--ধন্যবাদ আমাকে বাচানোর জন্য। আর একটু হলে তো আমি মরেই যেতাম।(অনু)
.
--কি করছিলে? আর মরছিলে কেনো?(আমি)
.
--আমি ডার্ককিউমের সাথে লড়ছিলাম। ও অনেক শক্তিশালী। আমাকে এক আঘাতেই মেরে ফেলতে যাচ্ছিলো। তখনি তুমি বাচালে আমাকে।(অনু)
.
--ডার্ককিউম???(আমি আশে পাশে তাকি কিছু দেখতে পেলাম না)
.
--হয়তো ভাবছো এখানে আমি আর তুমি ছাড়া আর কেউ নেই তাহলে ডারকিউমের সাথে আমি লড়ছিলাম কিভাবে?(অনু)
.
--হ্যা।(অামি)
.
--আমি ব্লাক ম্যাজিকের সাহায্য নিয়েছিলাম। এটা জেনেও যে আমাকে অনেক বড় কিছু হারাতে হবে। আমি সেটা ব্যবহার করতে ছিলাম হাসানকে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম এটা সম্ভব নয়। কারন সেটার জন্য আমাকে আরো বড় একটা কোরবানি দিতে হবে। আর আমি একজনের জন্য দুটো ইউনিভার্সকে কোরবানি দিতে পারবো না। তাই ভিতরে ভিতরে খুব ভয় পেতে শুরু করেছিলাম। তখনি আমার দেখা হলো ডার্ককিউম দ্যা ফিয়ারেয়ার এর সাথে। যাকে ভয়ের রাজা বলা হয়। আমি তাকে দেখে অনেক বেশী ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কারন আমাদের বাবা অনেক আগেই তাকে বন্ধী করে রেখেছিলো। তাকে মুক্ত আমার সামনে দেখে আমি এতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে আমার দম ও বন্ধ হয়ে আসছিলো। তখনি ডারকিউম আমার উপরে হামলা করে। ওর কালো ছায়া আমাকে ধরতে শুরু করে। আর শরীরটা ওর মুখের মধ্যে নিতে শুরু করে। আর তখনি তুমি বাচালে আমাকে।(অনু)
.
--ভয়ের রাজা মানে?(আমি)
.
--তোমাকে এগুলোও এখন শেখাতে হবে?(অনু)
.
--থাক আস্তে আস্তে শুনবো। আগে তোমার ট্রিটমেন্টের দরকার।(আমি)
.
--সেটার প্রয়োজন নেই। আমার কাছে হিলিং ক্ষমতা আছে। বেশ কিছু সময়ের পর আমি পুরো সুস্থ হয়ে যাবো।(অনু)
.
--ওওও। তাহলে বলো শুনি?(আমি)
.
--কি বলবো?(অনু)
.
--কে এই ডার্ককিউম? মানে ভয়ের রাজা(আমি)
.
--Darkkym The Fearear হলো ভয়ের রাজা। ভয়ের রাজা মানে সেই রাজার এমন একটা রাজত্ব আছে যেখানে তার দাস শুধু ভয়। প্রত্যেক ইউনিভার্সেই এমন একটি রাজা থাকে। আর তার বিপরীত ইউনিভার্সে থাকে একটি রানী। এই ইউনিভার্সে থাকে ডার্ককিউম আর আমাদের ইউনিভার্সে থাকে ডার্ককুইম। আমাদের বাবা আর তার সেনা মিলে দুজনকেই তাদের রাজ্যে বন্ধী করে রেখেছিলো। কিন্তু ব্লাক নাইটস মনে হয় তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে।(অনু)
.
--এই ভয়ের রাজা কি করবে?(আমি)
.
--যে গ্রহের বাসিন্দারা বেশী আতংক+ভয়ের মদ্ধে থাকবে ডার্ককিউম সেই গ্রহকে খেয়ে ফেলবে।(অনু)
.
--কি?(আমি)
.
--হ্যা(অনু)
.
--একটা পুরো গ্রহকে খেয়ে ফেলতে পারে?এটা কোনো ভাবেই সম্ভব নই।(আমি)
.
--তোমার তো এই ইউনিভার্স সম্পর্কে ধারনাই নেই। আর বাকি গুলোর সম্পর্কে কিভাবে জানবে।(অনু)
.
--হ্যা সাধারন একজন মানুষের কাছে এতো কিছু সম্পর্কে জানার সুযোগ আসবে কি করে?(আমি)
.
--ডার্ককিউমের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে হলে তার সামনে থেকে দেখতে হবে।(অনু)
.
--আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম বয়স্ক একটা লোক আমাকে বলেছিলো নিরাম্বাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই আমার এই বিশ্বের ইতি ঘটবে। এই নিরাম্বা কে?(আমি)
.
--নিরাম্বা একজন Soul Hunter। সে আমাদের এই দুই ইউনিভার্সের কালো গুহায় থাকে। সেখানেই সে এক হাজার বছর পার করে দেই। এবং হাজার বছর পর সে বের হয় এবং পুরো একটা গ্রহের প্রানীর soul গুলো সে খেয়ে নেই। আর এতে করে সে আবার সেই কালো গুহায় চলে যায়।(অনু)
.
--তো নিরাম্বা আসলোও তো একটা গ্রহের সব soul গুলো কনজিউম করে আবার চলে যাবে। কিন্তু স্বপ্নে তো আমাকে বলেছিলো এই পুরো বিশ্বই ধ্বংস করে দিবে সে।(আমি)
.
--আগের বার যখন নিরাম্বা এসেছিলো তখন আমার পরদাদা তার সেনাকে দিয়ে নিরাম্বাকে কালো গুহার মধ্যে বন্ধী করে রেখেছিলো। কারন সে এসেছিলো আমাদের গ্রহকে কনজিউম করতে। তাকে আটক করে রেখে দেওয়া হয়েছিলো যাতে তার ক্ষুদার জন্য সে মারা যায়। আর সেটা আজ থেকে প্রায় আরো ১০ হাজার বছর আগের ঘটনা। আমি একটা বইয়ে পড়েছিলাম এই ব্যাপারে।(অনু)
.
--তাহলে তার ক্ষুদার কারনে সে পুরো ইউনিভার্স ধ্বংস করে দিবে?(আমি)
.
--হ্যা আমার তো তাই মনে হচ্ছে।(অনু)
.
--তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে শুনে তো মনে হচ্ছে আমরা দুজন তাদের সামনে কিছুই না।(আমি)
.
--কে বলছে আমরা কিছু না। আমরা আমাদের ইউনিভার্সের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষমতাবানদের মধ্যে দুজন। কিন্তু আমাদের পুরো শক্তি এখনো আমাদের কাছে আসে নি।(অনু)
.
--তাহলে কি আমরা পারবো?(আমি)
.
--আমি বলেছি আমাদের ইউনিভার্সের মধ্যে আমরা দুজন ক্ষমতাবান। কিন্তু এটা কিন্তু আমাদের ইউনিভার্স না। আমরা এখন এ্যাস্টারে আছি।আর এখানে ম্যাজিকের ক্ষমতা ৭০% কমে যায়। কারন এখানে বিজ্ঞানের কদর বেশী।(অনু)
.
--কিন্তু আমরা ঔ ইউনিভার্সে ফিরবো কিভাবে? তোমার কাছে কি টেলিপোর্টেশন ডিভাইস আছে?(আমি)
.
--হ্যা।(অনু)
.
--তাহলে কি আমরা ঔ ইউনিভার্সে যাবো?(আমি)
.
--এখানের বিপদ রেখে আমরা এই ইউনিভার্স ছারতে পারি না। কারন সবচেয়ে বড় দুই বিপদ সামনে আসতেছে।(অনু)
.
--তাহলে কি করতে হবে আমাদের?(আমি)
.
--আমাদের একটা টিমের দরকার পরবে।(অনু)
.
--আমার স্বপ্নে বয়স্ক লোকটা এটাও বলেছিলো।(আমি)
.
--আমি জানতাম জিদান কাউকে না কাউকে তো পছন্দ করেই রেখেছিলো।(অনু)
.
--জিদান কে?(আমি)
.
--সেই বয়স্ক লোকটা।(অনু)
.
--তার কি হয়েছিলো?(আমি)
.
--এই ইউনিভার্সে কোনো বড় জাদু ব্যবহার করতে হলে নিজের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটাকে সবসময়ের জন্য হারাতে হয়। আর জিদান আমাদের বাচাতে তার জীবন কোরবানি দিয়েছিলো। আমি ব্লাক ম্যাজিক ব্যবহার করার সময় আমার একটা ক্ষমতাকে কোরবানি দিয়ে দিয়েছি। এবং তুমি এই ক্ষমতার যোগ্য হওয়ার জন্য নিজের অস্তিত্বকে কোরবানি দিয়ে দিয়েছো।(অনু)
.
--তুমি এতো কিছু জানো কিভাবে?(আমি)
.
--জিদান সব সময়ই আমার স্বপ্নে আসে। আমি যখনি ঘুমিয়ে বা জ্ঞান হারিয়ে ফেলি তখনি জিদান আমাকে স্বপ্নে এসে বলে আমাকে সামনে কি করতে হবে।(অনু)
.
--ওওওও। তাহলে আমাকে এই পৃথিবীর কেউই চিনবে না আর?(আমি)
.
--না। ম্যাজিক ব্যবহার করলে সেটার দাম দিতেই হয় সব সময়। আর তুমি দাম দিয়েই সেগুলো পেয়েছো। তবে মনে রেখে ক্ষমতাগুলো তুমি ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু ম্যাজিক ব্যবহার করতে হলে তোমাকে সেটার দাম দিতে হবে এই ইউনিভার্সে।(অনু)
.
--বুঝেছি। তাহলে এখন কি করবো আমরা?(আমি)
.
--আমাদের একটা টিমের প্রয়োজন হবে। আর সেটার জন্য আমাদের খুজতে হবে আমাদের টিমমেট।(অনু)
.
--হুমমম তাহলে তো আমাদের বের হতে হবে।(আমি)
.
--সেটার দরকার পরবে না। আমাদের টিম রেডি হয়ে গেছে। এখন শুধু তাদের বলতে ডাকতে হবে এখানে।(অনু)
.
--সব আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলে?(আমি)
.
--হ্যা।(অনু)
.
--নাম কি আমাদের টিমের?(আমি)
.
--ডাইভার্স।(অনু)
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।