পার্টঃ১৮
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
।।।।।
।।।।।
।।।।।
যখন আমি উঠলাম তখন দেখতে পেলাম আমাকে বেধে রাখা হয়ছে। আর আমার পাশে হিমারো কেও বেধে রাখা হয়ছে। খুব শক্ত করে বাধা হয়েছে আমাদের। আমি শিকলটাকে টানতে লাগলাম কিন্তু পুরো জোর লাগানোর পরেও আমি খুলতে পারলাম না। আমার সামনে একটা লোক এসে বলতেছে।
.
--এটা খুব ইন্টারেস্টিং। তোমাদের দুজনের মধ্যেই এমন কিছু আছে যেটা তোমাদের অনেক শক্তিশালী বানায়। আমার পরের কাজ গুলোতে তোমাদের দুজনেরই অনেক কষ্ট হবে।(লোকটা)
.
--আপনি কে?(আমি)
.
--আমি এই প্রিজনের একমাত্র বিজ্ঞানী।(লোকটা)
.
--আমাদের সাথে কি করবেন?(আমি)
.
--কিছু না শুধু তোমাদের দুজনের ডি এন এ এনালাইসিস করবো। এবং সেটা দিয়ে নতুন প্রজন্ম বানানোর চেষ্টা করবো।(ডাক্তার)
.
--আমি দুঃখিত কিন্তু এমন কিছুই করতে পারবেন না।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি আমার টেলিপ্যাথি ক্ষমতা দিয়ে লোকটাকে কন্ট্রোল করতে শুরু করলাম। লোকটা প্রথমে আমাদের শিকল খুলে দিলো। এরপর আমাদের গলায় থাকা শকিং ডিভাইসটাও খুলে দিলো। লোকটার মাথায় একটু ঢুকেই আমি বুঝতে পারলাম সে কি ভাবছিলো। আমি লোকটার মাথার সব স্মৃতি ভুলিয়ে দিলাম। এরপরে পাশে থাকা জামা নিয়ে পরে হিমারোকে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
.
--কি হলো তুমি কি ওর মনের মধ্যে কিছু পেলে?(হিমারো)
.
--হ্যা। অনেক কিছু পেয়েছি।(আমি)
.
--কি?(হিমারো)
.
--তোমার কি কোনো ধারনা আছে আমরা কোন প্লানেটে আছি?(আমি)
.
--না?(হিমারো)
.
--আমরা ক্লোসিক নামের প্লানেটে আছি। আর এই প্লানেট পুরোটাই একটা জেলখানা। এখানের কয়েদীদের সাথে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে।(আমি)
.
--তাহলে অনু আমাদের এখানে পাঠিয়েছে কেনো?(হিমারো)
.
--হয়তো এটাই আমাদের গন্তব্য ছিলো। কিংবা টেলিপোর্টেশন ডিভাইস আবারো নষ্ট হয়ে গেছে।(আমি)
.
--কি? এখানে কি করবো আমরা?(হিমারো)
.
--কাজের কাজ আমি একটা পেয়েছি। চলো আমার সাথে।(আমি)
.
--কোথায়?(হিমারো)
.
--এই প্লানেট শুধু একটা জেলখানা না। এটা নীল পৃথিবীর পুরাতন রাজ্য ও। হয়তো আমরা যে জিনিসের জন্য এসেছি সেটা এখানেই।(আমি)
.
--তুমি তোমার ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতাটা ব্যবহার করো না কেনো?(হিমারো)
.
--আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু এটা আমি ব্যবহার করতে পারছি না যখন থেকে আমরা ভবিষ্যতে আসছি।(আমি)
.
--তাহলে এখন কোথায় যাবো?(হিমারো)
.
--প্রথমত আমার ক্ষুদা লাগছে। আগে কিছু খেয়ে আসি।(আমি)
.
--চলো?(হিমারো)
।।।।
।।।।
হিমারোর সাথে হাটতে লাগলাম। বেশ আশ্চর্য জনক কিছু জিনিস আমি দেখেছি বিজ্ঞানীটার মনে। জীবনে কত রকম আজব পরীক্ষা করেছে সবই আমি দেখতে পেয়েছি। এখন আপাতোতো আমাদের যেতে হবে যেখানে আমরা লড়াই করেছিলাম। শুধু হলুদ জামা পড়া সবাইকেই রুমের মধ্যে আটকে রাখা হয়। কিন্তু বাকিরা যখন ইচ্ছা রুম থেকে বেরিয়ে ঘুরতে পারে। তবে কারো শাস্তি মাফ না হলে কেউ এই প্লানেট থেকে যেতেই পারবে না। আমরা দুজন আবারো এসে খাবার নিচ্ছিলাম। খাবার নিয়ে দুজনে একটা টেবিলে বসলাম। তারপর আস্তে আস্তে খেতে লাগলাম। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে এবার। হঠাৎই পিছন থেকে কেউ একজন বন্ধুক ধরলো আমার মাথায়।
.
--হাত তুলে দিয়ে দাড়িয়ে যাও।(একটা মেয়ে)
.
--খাওয়ার সময় কাউকে ডিসট্রাব করতে হয় না।(আমি)
।।।।
।।।।
এবার মেয়েটা রেগে হাতের বন্ধুক দিয়ে আমাকে মারতে গেলো। আমি সাথে সাথে ভুতুরে রূপে চলে গেলাম। পিছনে ঘুরে দেখলাম এটা গুয়েন ছিলো। ওর আঘাত আমার শরীরের মধ্য দিয়ে গেলো। কিন্তু আমার শরীরে ছোয়াও লাগলো না। এটা দেখে বাকি সবাইও আমাদের দিকে আগাতে লাগলো। মনে হয় আক্রমন করবে হাজার হাজার মানুষ আমাদের উপরে। হিমারো আমার হাতটা ধরলো সাথে সাথে। বুঝলাম আমার একটা ক্ষমতা ও নিজের করে নিয়েছে। সাথে সাথেই হিমারো জোরে চিল্লানি দিতে লাগলো। ওর মুখ দিয়ে চিল্লানির সাথে সাথে কম্পন বের হতে লাগলো। তাও বিশাল বিশাল কম্পন। সবাই নিজের নিজের কান ধরে বসে পরলো। অর্ধেকের বেশী বেহুস হয়ে গেছে। আর বাকি সবাই কান ধরে বসে আছে। অনেকের কানের পর্দা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। আমি হিমারোর পিছনেই দাড়িয়ে ছিলাম।
.
--অনেক হয়েছে আর ভালো লাগছে না এসব। নিয়াক এই সবাইকে কিন্তু আমি এখন মেরে ফেলবো এরা যদি না থামে।(হিমারো)
.
--আর কিছু করবে না এরা হয়তো।(আমি)
।।।।
।।।।
দেখলাম গুয়েনও মাটিতে পরে আছে। ওর কানের পর্দাও ফেটে গেছে। আমি ওর মনের সব কথাগুলো দেখতে লাগলাম। আমি আমার হাত দিলাম ওর দুই কানে। ওর কান দুটো আমি হিল করতে শুরু করলাম। একটু সময় লাগে এতে। রাতের সময় এই ক্ষমতাটা অনেক বেশী কাজ করে। কিছুক্ষনের মধ্যেই গুয়েন ঠিক হয়ে উপরে উঠে বসলো।
.
--ঔটা কি ছিলো?(গুয়েন)
.
--কারো ক্ষমতা সম্পর্কে না জেনে তার সাথে লড়তে গেলে এমনিই হয়। আমরা তো কারো ক্ষতি করতে আসি নি এখানে। তাই আমাদের ক্ষমতা গুলো ব্যবহার করতে ছিলাম না।(হিমারো)
.
--কারা তোমরা?(গুয়েন)
.
--আমরা তো মানুষ। তবে একটা জিনিস আমার জানার ইচ্ছা আছে রাজা টেট্রোনিয়াম কোথায় আছে এখন?(আমি)
.
--কেনো টেট্রোনিয়ামকে দিয়ে কি করবে তোমরা?।(হঠাৎই পাশ থেকে একটা বয়স্ক লোক বলে উঠলো)
।।।
।।।
যারা বেহুস হয়ে গেছিলো হঠাৎ করেই দেখতে পেলাম সবাই জ্ঞান ফিরে পাচ্ছিলো। তারা একদম সুস্থ হয়ে গেলো। বয়স্ক লোকটার কাছেও হিলিং ক্ষমতা আছে। কিন্তু সেটা আমার থেকেও অনেক বেশী শক্তিশালী। এক নিমিষেই হাজার হাজার মানুষকে সে ঠিক করে ফেললো। তবে অবাক করার বিষয়ও হলো। কারন সবাই এখন কুর্নিশ করতে লাগলো বয়স্ক লোকটাকে।
.
--মহারাজ। আপনি বের হয়েছেন কেনো?আপনি তো অসুস্থ।(গুয়েন)
.
--এসব কথা বাদ দেওয়া যাক। শুনলাম এই বাচ্চা ছেলেটা নাকি জুরোকে মেরে কোমায় পাঠিয়ে দিয়েছে।(বয়স্ক লোকটা)
.
--হ্যা মহারাজ।(গুয়েন)
.
--আমি আগেও তোমাদের বলেছি। আমাকে এখন মহারাজ বলার দরকার নাই। কারন আমি আর তোমাদের রাজা নই।(লোকটা)
.
--তো আপনি জানেন টেট্রোনিয়ামের ব্যাপারে?(হিমারো)
.
--হ্যা। তবে আমি এখানে কোনো হান্টারের সাথে কথা বলতে বের হয় নি। আমি বের হয়েছি এখানে এই বাচ্চাটার জন্য।(লোকটা)
.
--আপনিই তাহলে টেট্রোনিয়াম।(আমিও কুর্নিশ করলাম। কারন আর যায় হোক আমার বর্তমান পরিচয় যেটা সেখানে আমি এই ব্যক্তির সন্তান। আর এ তো সেই রাজা যার ছেলের থেকেই তো আমি হয়েছি)
।।।।।
।।।।।
লোকটা কিছু বললো না। কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর আস্তে করে আমার মাথায় হাত দিলো। তারপরই কি যেনো হতে লাগলো আমার সাথে। আমার মনে আরো অনেক স্মৃতি আসতে শুরু করলো। ব্লাক নাইটের সেনারা কিভাবে আক্রমন করলো আমাদের উপরে। কিভাবে সেনাপতি আমাদেরকে নিয়ে গেলো সব। এগুলো আগেও অনু আমাকে একবার দেখিয়েছে। কিন্তু এবার এসব কিছু আমার অতীত হয়ে গেলো। পুরোপুরি আমার অতীতে সেটা যুক্ত হয়ে গেলো।
.
--তোমার জায়গা আমার বুকে। আসো।(রাজা)
।।।।
।।।।
বাবার কথা শুনে আমিও তাকে জরিয়ে ধরলাম। এবার সত্যিই সত্যি তাকে আমার বাবা মনে হচ্ছে। এতোদিন তো আমি হৃদয়ের জায়গা নিয়ে ভাবছিলাম। আমার অস্তৃত্ব হারানোর পর আমি নিয়াকের নামটা নিতে পারলেও ওর জায়গা আমি নিতে পারি নাই। তবে আমি এখন ওর নাম সহ ওর জায়গা নিয়ে নিয়েছি। আমার অতীত হয়ে গেছে ও এখন।
.
--এতো বছর পর হঠাৎ করে একবারে এখানে চলে আসলে কেনো?(রাজা)
.
--আমার এই দুটো জিনিসের দরকার ছিলো। অনু আমাকে এটার জন্যই এখানে পাঠিয়েছে।(আমি মোবাইলে থাকা ছবিটা দেখালাম)
.
--The pen of eyes। সারা ইউনিভার্সের সবচেয়ে মারাত্মক দুটো অস্ত্র। এটা আমাদের গ্রহে সবচেয়ে নিরাপদ ছিলো।(রাজা)
.
--নিরাম্বা আর ডার্ককিউমকে হারাতে হলে আমাদের এই দুটোর প্রয়োজন হবে।(আমি)
.
--আমি দুঃখিত। এই দুটোর মধ্যে হলুদটাই আমার কাছে আছে। কিন্তু লালটাকে টাইম পোর্টাল ধ্বংস করে দেওয়ার আগেই সেটা ব্যবহার করে সময়ের অনেক পিছনে আলাদা একটা ইউনিভার্সে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।(রাজা)
.
--নিরাম্বা আর ডার্ককিউমকে হারাতে হলে তো আমাদের সেই দুটোর অনেক প্রয়োজন হবে।(আমি)
.
--তাহলে ব্লাক নাইটের রাজা সেই দুই মনস্টারকে ছেড়ে দিয়েছে?(রাজা)
.
--হ্যা। তারা দুজনেই পালাক্রমে এ্যাস্টার ইউনিভার্সে হামলা করছে।(আমি)
.
--তাহলে একটা জিনিসই আছে যেটা তোমাদের সাহায্য করবে।
।।।।।।
।।।।।।
বাবা চোখ বুঝলেন। সাথে সাথে তার হাতে একটা হলুদ কলমের মতো জিনিস চলে আসলো।
.
--তবে এটা তোমার জন্য নয়। তুমি এটাকে প্রিন্সেসকে দিয়ে দিবে।(রাজা)
.
--আর আমি?(আমি)
.
--তোমাকে নিজেরটা খুজে বের করতে হবে।(রাজা)
.
--আপনাদেরকে কি এখান থেকে বের করতে পারবো না আমি?(আমি)
.
--আমরা এখানেই সুরক্ষিত আছি। আর বেশ ভালোই আছি এখানে সেটা তো দেখতে পাচ্ছো। এখান থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা আমাদেরও আছে। কিন্তু ব্লাক নাইট এর জন্য আমরা এখান থেকে বের হতে পারবো না।(রাজা)
.
--আমি আবারো আসবো আপনাদের জন্য।(আমি)
.
--হ্যা। আসতেই হবে। তোমাদের দুজনের উপরেই সব ভরসা।(রাজা)
।।।।
।।।।
তখনি অনুর একটা মেসেজ আসলো আমাদের ঘড়িতে।
.
--তোমরা কোথায়। পুরো এক মাস সময় লাগিয়ে দিয়েছো। এখানের অবস্থা খুবই ভয়ানক। আমরা নিরাম্বার সেনার কাছেই কিছু না। আমাদের হিমারোর প্রয়োজন হবে এখন। তোমরা তারাতারি চলে আসো।(অনু 3d মেসেজে এটাই বলছিলো)
।।।।
।।।।
১ মাস সময় লাগিয়ে দিয়েছে আমি এখানে। আমার তো মনে হচ্ছে দুইদিন হলো আমরা এখানে এসেছি।
.
--নিয়াক আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের এখানে আশা হয়েছে মাত্র দুইদিন। কিন্তু অনু বললো ১ মাস সময় হয়ে গেছে।(হিমারো)
.
--মনে হয় এই টেলিপোর্টেও আমরা টাইম ট্রাভেল করেছি।(আমি)
.
--তোমরা হয়তো জানো না। ডার্ককিউমের নিজেই একটা টাইম সোর্চ। ও যদি ইউনিভার্সে খোলা ঘুরতে থাকে তাহলে টেলিপোর্টেশন ডিভাইস গুলো টাইম মেশিনের কাজ করে। কখন কোন সময়ে চলে যাবে সেটা নিজেও বুঝতে পারবে না।(রাজা)
.
--এটা তো বেশ ভয়ানক ব্যাপার। তাহলে আমরা আরো ১ মাস ভবিষ্যতে চলে আসছি।(হিমারো)
.
--হ্যা।(আমি)
.
--তোমাদের যাওয়া উচিত। কারন তোমার বোন ঔদিকে অনেক বিপদে আছে। নিরাম্বার সাথে কোনো দিক দিয়েই সে পারবে না।(রাজা)
.
--ঠিক আছে। চলো হিমারো।(আমি)
.
--সাথে করে গুয়েনকেও নিয়ে যাও।(রাজা)
.
--কিন্তু মহারাজ আমাদের ভিতরে কেউ এখান থেকে টেলিপোর্ট যদি ব্লাক নাইট সে খবর পেয়ে যায়।(গুয়েন)
.
--এই গ্রহের মাঝে কোনো ডিভাইসই নেই যেটা দিয়ে কেউ টেলিপোর্ট হতে পারবে। আর এখানে কেউ টেলিপোর্ট হয়ে আস্তেও চাইবে না কারন এর বাইরে কেউ যেতে পারবে না। তাই তুমি এখান থেকে গেলে কোনো ক্ষতিই হবে না।(রাজা)
.
--ঠিক আছে।(গুয়েন)
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।