ওয়েবসাইট কাস্টমাইজেশন এর জন্য। Contact Us Welcome!

গল্পঃ ভালোবেসেছি তোরই মতো পর্বঃ ০৯

Bangla Dub Novels

 #ভালোবেসেছি_তোরই_মতো

#পর্বঃ০৯

লেখিকাঃ #শাদিয়া_চৌধুরী_নোন

______________________________

বৌভাতে নোরিনের আর থাকা হলো না। রাত এগারোটায় হুট করে আজমল আলী সেরনিয়াবাত অর্থাৎ নোরিনের বাবা এসে হাজির। তিনি কিছুতেই মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারছেন না। মা-মরা মেয়েটাকে এতোদিন থাকতে দিয়েছেন এটাই অনেক। দিলারা চলে যাওয়ার পর নোরিনই এই পৃথিবীতে একমাত্র বেঁচে থাকার সম্বল। তাইতো নিজের  প্রাণপ্রিয় কন্যাকে একবার দেখতে শতশত মাইল পেরিয়ে, গাড়ি ছুটিয়ে চলে এলেন। 

বাবা এসেছে শুনে নোরিন খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চুলগুলো এলোমেলো হাত খোপা করে বিছানা ছেড়ে উঠলো। এতো রাতে উনার আসার সংবাদে নোরিন কেনো কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না?  এটা নিয়ে জেরু আর মিমহা খানিকক্ষণ ভাবলো। নোরিন নিজের কয়েকটা কাপড় বিছানায় রেখে, জেরুদের লাগেজ গুছিয়ে দিতে বললো। জেরুদের এবার বিস্ময় হওয়ার পালা,

----- এতোরাতে এসেছেন আংকেল। থাকবেন না? কালতো বৌভাত। 


নোরিন একটা ডায়েরী থেকে একটা পৃষ্ঠা ছিড়তে ছিঁড়তে বললো,

---- না, বাবাকে একশোটা অজুহাত দিলেও বাবা এখানে থাকবে না। 


আজমল আলী সত্যি সত্যিই থাকলেন না। এই বাড়িতে এক মুহূর্ত থাকা মানে এক যুগের সমান। দরজায় দাঁড়ালে মনে হয়, দিলারা সামনে দিয়ে হেঁটে গেলো। চৌকিতে বসলে মনে হয়, দিলারা তার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। বরই গাছ তলার দিকে চোখ যেতেই মনে হলো , দিলারা তাকে ডাকছে৷ আজমল সাহেব সত্যিই গেলেন৷ কিন্তু ওখানে দিলারা নেই। আশ্চর্য! স্পষ্ট দিলারাকে দেখলাম। কোথায় গেলো? না, থাকা যাবে না। এখানে থাকা যাবে না। এই বাড়ির প্রতিটি কোণে দিলারা। দিলারার প্রতি অনেক অভিমান আজমল সাহেবের। অনেক অভিযোগ জমা হয়ে আছে। দেখা হলে আগে এসবের উসুল নিবেন তিনি। কেনো আমাকে ফেলে, নিজের মেয়েকে ফেলে এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলে তুমি? আমার মেয়েটাকে কেনো মা-হারা করে গেলে? কেনো তাকে এতো শক্ত পাথরের মতো তৈরি করে গেলে? আমার উপর কি একটুও মায়া কাজ করেনি দিলারা? 


রাত ঠিক বারোটায় আজমল আলী সেরনিয়াবাত, তার মেয়ে নোরিন আলী সেরনিয়াবাতকে নিয়ে; সকলের কাছে বিদায় জানিয়ে গ্রাম ছেড়ে নিজের শহরে পাড়ি জমালেন। আসার সময় নোরিন নানুমণিকে জড়িয়ে ধরলো বেশ কিছুক্ষণ৷ নানুমণি সেই কখন থেকে কেঁদেই চলেছে। সকল মামাকে সালাম করতে করতে নোরিন বেশ হাঁপিয়ে উঠলো। এই বংশে সব ছেলে। তারউপর দিলারা ছিলো বংশের  ছোট মেয়ে। সবার আগে,  ছোট মেয়েটাকে চলে যেতে হলো । সে বোধহয় এদিক থেকে প্রথম হতে চেয়েছিলো। জেরু বেশ কিছুক্ষণ কাঁদলো, মিমহা'রা আবার আসার জন্য বললো। নোরিন চুপ করে শুধু শোনেই গেলো। চোখে একফোঁটা পানি নেই। নানুমণির প্রতি ভালোবাসা থেকে অথবা তার প্রয়াত মায়ের নিজ বাড়ি হিসেবে কিংবা সকলের প্রতি মায়া থেকে হোক বা তার প্রতি সবার ভালোবাসা থেকে,কোনোটাই তার চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু বিসর্জন করাতে পারলো না। মকবুল তার তুতলানো স্বর দিয়েই নোরিনকে বিদায় জানালো। 


খুব স্বাভাবিক ভাবে গাড়িতে বসলো নোরিন। বাবাকে ইচ্ছে করে সামনে ড্রাইভারের পাশে বসিয়ে, নোরিন পেছনে বসলো। তার কারণ সে এখন কাঁদবে।  এই জীবনে সে শুধুমাত্র মায়ের জন্য কেঁদেছে।  শত কঠিন সময়েও সে কাঁদেনি। বাবার জন্যও কাঁদেনি। কাঁদতে হয়নি কখনো। আজ সে মায়ের সাথে আরো একজনকে যোগ করলো। সে ব্যক্তি নিবিড়। এই অসহ্য, অভদ্র, বজ্জাত ছেলেটার জন্য সে কাঁদতে কাঁদতে সারা হলো। সে  নোরিনকে কষ্ট দেয়। শুধুই কষ্ট দেয়। গ্রামের আলোহীন, অন্ধকার পথে চলতে চলতে তাদের গাড়িটাও যখন আঁধারের সাথে মিশে গেলো, তখন নোরিনও নিজের অশ্রুকে আঁধারের সাথে লুকিয়ে ফেললো। কেউ দেখলো না। এমনকি সামনে বসে থাকা তার বাবাও না। এতোটাই নীরব, এতোটাই নিস্তব্ধ সেই কান্না। 

গাড়িতে উঠার আগে নোরিন আরো একটা কাজ করে এসেছে। যে তরুণী নিজেকে লজ্জা পায়;যে নিজের অনুভূতিকে লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসে;যে কি-না কাউকেই এতোদিন একান্ত নিজস্ব পৃথিবীতে ঢুকার অঙ্গীকার দেয়নি, সেই নোরিনই আজ নিজের সমস্ত আত্মহংকার, লাজলজ্জাকে দূরে ঠেলে দিয়ে কাজটা করেছে। 

উপমা। শুধুই একটি উপমা লিখতে গিয়ে তার হাত থরথর করে কেঁপেছে। সম্পূর্ণ হাত ঘামে ভিজে কলম পিছলে গেলো। কপাল বেয়ে গলা পর্যন্ত ফোঁটার পর ফোঁটা ঘর্মবিন্দু বইলো। এযেনো কোনো উপমা নয়, এটা তার প্রথম নিষিদ্ধ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। সে যা কাউকে কোনোদিন জানাতে চায়নি, যা একান্ত নিজের করে রাখতে চেয়েছিলো ; তাই যেনো নিজ হাতে বলে বেড়ানোর প্রমাণ। অসংখ্যবার বানান ভুল হয়েছে। নিজের সমস্ত অনুভূতিকে মিশিয়ে শুধু দুটো লাইনই লিখতে পেরেছে ।  লজ্জা তার মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে প্রতিটি শিরা-উপশিরা; রন্ধ্রে রন্ধ্রে পর্যন্ত বইতে লাগলো।

 

  " প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস,

   তোমার চোখে দেখেছিলাম নিজের সর্বনাশ।"


নোরিন চলে আসার সময় নিবিড়কে কোথাও দেখতে পায়নি। কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারেনি৷  এই দুটো লাইন লিখে চুপিচুপি নিবিড়ের ঘরে গিয়ে, শুধুমাত্র এই দুই লাইনের কাগজটায় রেখে আসতে পেরেছে।  "ভালোবাসি " কথাটা সে কোনোদিনও বলতে পারবে না। এই শব্দটা উচ্চারণ করতেও এক ধরনের সাহসের প্রয়োজন। নোরিনের সেই সাহস নেই। দরকার পড়লে সে মরে যেতে পারে, তবুও কিছুতেই  নিবিড়কে ভালোবাসার কথা বলতে পারবে না। কেউ একজন ঠিকই বলেছিলো, কাউকে ভালোবেসেও, ভালোবাসি বলতে না পারাটা সবচেয়ে দুঃখজনক। 

নিবিড়কে ভালোবাসার কারণটা তার অজানা। নোরিন জানে না, সে কেনো এমন একটা ছেলেকে ভালোবেসে ফেললো। কখন ভালোবেসে ফেললো? এতো এতো ছেলে থাকতে, এতো প্রেম নিবেদক'কে উপেক্ষা কেনো সে এমন একজনকে ভালোবাসতে গেলো, যে কি-না তাকে সহ্যই করতে পারে না, কথায় কথায় বকা দেয়, চাটি মারে। নিবিড় যতই তাকে উপেক্ষা করতে চায়, ততই কেনো নোরিন কাছে আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে নোরিন জানে না। 


নোরিনের ঘরে ফেরার ঠিক দুদিন পরের কথা। সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ নিবিড় এসে হাজির। চোখের দৃষ্টি এলোমেলো, কপালের চুলগুলো অবহেলিত;উষ্কখুষ্ক।  


#চলবে........

#Sadiya_Chowdhury_Noon

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.