পার্টঃ০৬
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী(পিচ্চি)
।।।।
।।।।
।।।।
.
--এখন এটা বলে কি কোনো লাভ হবে। যা হওয়ার সেটা তো হয়েই গেছে। এখন আমাকে না মানা ছাড়া আর কি কোনো উপায় তোমার আছে।(আমি)
.
--দেখুন আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে কথা দিয়েছি। আমি ওর ছাড়া কারোই হতে পারবো না।(নিলা)
.
--তাহলে কি এখন ডিভোর্স চাচ্ছো?(আমি)
.
--হ্যা।(নিলা)
.
--এটা ছাড়া কি কোনো উপায় বের করতে পারবে না।(আমি)
.
--হুমমম আপনার বউ হিসাবে থাকতে পারবো। তবে আমার ভালোবাসার সাথে আমার সম্পর্ক তখনো থাকবে সেটা হয়তো আপনি মেনে নিতে পারবেন না।(নিলা)
.
--তোমার ভাই তো অনেক বড় বড় কথা বললো তুমি নাকি অনেক ভালো মেয়ে। নিজের ভাইয়ের থেকে ও তো অনেক এগিয়ে গেছো তুমি।(আমি)
.
--দেখুন এখানে ভাইয়াকে টানবেন না। আপনি কত ভালো ছেলে সেটাও আমার জানা হয়ে গেছে। আমাকে ডিভোর্স দিবেন কিনা সেটা আগে বলেন।(নিলা)
.
--তুমি যখন আমাকে মানতে পারছো না তাই আর আমি তোমাকে মেনে কি করবো। এমনিতে আমার ও বিয়ের কোনো ইচ্ছা ছিলো না। যে করেই চেয়েছিলাম বিয়েটা ভাঙার। কিন্তু পারি নি। এখন যখন তুমি নিজে থেকেই ভাঙতে চাচ্ছো তাই আমার খুশি আর দেখে কে।(আমি)
.
--আপনি খুশি থাকলে আর কি। ডিভোর্স পেপার টা পাঠিয়ে দিবেন আমার কাছে।(নিলা)
.
--হুমমম দিবো।
।।।
।।।
আর মেসেজ দিলাম না। অবশ্য খুশিতে এখন লুঙ্গি ডান্স দিতে মন চাচ্ছে। কিন্তু লুঙ্গি তো আমি পরা নাই। আবার রাগ ও লাগতেছে আমার মতো এতো স্মার্ট আর হেন্ডসাম হাসবেন্ড পাওয়ার পরেও আমাকে মানতে পারছে না সে। অনেক দেমাগি ওয়ালা মেয়ে সেটা তো বলতেই হবে। আমি সোজা নিচে চলে আসলাম। আম্মুকে ডাক দিলাম।
.
--কিরে ডাকছিস কেনো?(আম্মু)
.
--আরে দুঃখের খবর শুনে যাও।(আমি)
.
--কিসের দুঃখের খবর।(আম্মু)
.
--এইযে দেখো তোমাদের বউমা কি চাই।(আমি)
.
--কি চাই।(আম্মু আমার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে সব মেসেজ গুলা পরলো)
.
--ডিভোর্স চাচ্ছে।(আমি)
.
--এমন মেয়ে তো আমাদের ঘরের বউ হতে পারে না। আমি কালকেই আমার উকিলের সাথে কথা বলবো। ৬ মাসের আগে তো ডিভোর্স পেপার হাতে পাবো না। তুই ৬ মাস অপেক্ষা কর। তারপরই ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিবি।(আম্মু)
.
--তাহলে শুধু শুধু বিয়েটা দিলে কেনো তুমি?(আমি)
.
--তোর তো রিনিতা আর মিম এর সাথে বিয়ে ঠিক করেছিলাম ওরা তো ভালো মেয়ে ছিলো। ওদের সাথে করলি না তাই নিলার সাথেই দিলাম।(আম্মু)
.
--ঔ দুইটা তো আরো খারাপ মেয়ে।(আমি)
.
--হয়ছে আমি কালকেই নিলার আম্মুর সাথে কথা বলতেছি দ্বারা। তুই ঘুমা যা।(আম্মু)
।।।।
।।।।
আমার আর কি। যা করার করেই দিলাম। আম্মুরে জ্বালিয়ে দিলাম। যাক ঝামেলা তো গেছে সব। এক সাথে আজকে দুই ঝামেলা মুক্ত হলাম। বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম।
।
ঝামেলা মুক্ত হলেও কেনো জানি জারার কথা বারবার মনে পরছে। শুধু ওর ঝালে মুখর সেই চেহারাটার কথা মনে পরতেছে। মনে পরতেছে ওর দেওয়া চুমুটার কথা। কত মায়া মেয়েটার মুখে আমাকে কিছুতেই ভুলতে দিচ্ছে না। আমাকে তো মোহে ফেলে দিলো মেয়েটা। আচ্ছা আমি কি একদিনেই জারার প্রেমে পরে গেলাম। এতো যখন ওকে নিয়ে ভাবছি তখন নিশ্চয় আমি ওর প্রেমে পরে গেছি। আচ্ছা ওকে একটা ফোন দিয়ে দেখবো।হ্যা দিয়ে দেখি।
.
--আসসালামু আলাইকুম।(আমি)
.
--ওলাইকুম আসসালাম। স্বপ্ন দেখছি নাকি আপনি ফোন দিয়েছেন আমাকে।(জারা)
.
--হ্যা কেনো বিরক্ত করলাম নাকি?(আমি)
.
--আরে না। বিরক্ত করবেন কেনো?(জারা)
.
--তো কি করছো?(আমি)
.
--এইতো ভাবছিলাম আজকের কাটানো কিছু মুহুর্তের কথা।(জারা)
.
--ওওও।(আমি)
.
--আপনি কি করেন?(জারা)
.
--আমার ও কিছু মুহুর্তের কথা শুধু ভাবাচ্ছে।(আমি)
.
--এতো ভাবা কিন্তু ঠিক না।(জারা)
.
--আসলেই আচ্ছা তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছো।(আমি)
.
--আরে না আপনার উপরে কেনো রাগ করে থাকবো।(জারা)
.
--না মনে হলো তাই বল্লাম।(আমি)
.
--ওওও।ডিনার করছেন।(জারা)
.
--হ্যা। তুমি?(আমি)
.
--না এখনো করি নি। যা খেয়েছি এখন আর কিছু খেতেই মন চাচ্ছে না।(জারা)
.
--কালকে কি দেখা করতে পারবে?(আমি)
.
--ব্যাপার কি আমাকেই বললেন আমি যেনো আর বিরক্ত না করি আর আমার সাথে দেখা করবেন নিজে থেকেই।(জারা)
.
--না মন চাইলো। কিছু কথা বলার ছিলো।(আমি)
.
--এখনই বলে দেন।(জারা)
.
--না সামনা সামনি বলতে মন চাচ্ছে।(আমি)
.
--ওকে তাহলে আবারো ১২ টায় এসে আমাকে পিক আপ করুন। ভালো একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে তারপর একটা লং ড্রাইভে নিয়ে যাবেন।(জারা)
.
--ওকে ঠিক আছে নিয়ে যাবো।(আমি)
.
--তাহলে এখন রাখি।(জারা)
.
--কেনো ব্যস্ত। আরেকটু কথা বলতে পারবে না।(আমি)
.
--কালকে স্কুলে একটা পরীক্ষা আছে। এখনো পড়া শেষ হয় নি। আপনি কালকে আসুন। কালকে কথা হবে।(জারা)
.
--ওকে ঠিক আছে।(আমি)
।।।।
।।।।
কেটে দিলাম। ব্যাপারটা খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে এখন মনে হয় না। নিলা তো ডিভোর্স চেলোই। আর আম্মু ওকে দিয়ে দিবে। তাহলে পরে আর ভুল করতে চাই না। আমি অন্যের গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে চাই না। বিয়ে করলে যে আমাকে ভালোবাসে তাকেই বিয়ে করবো। এখন তো জারা শুধু আমাকে নয় আমিও জারাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।
।
জারা তো আমার মনে ওর জন্য জায়গা করে নিয়েছে। মনে হয় জাদু জানে ও। একদিনেই জায়গা করে নিলো আমার মনে। আমাকে ওকে নিয়ে ভাবাতে জোর করলো। এই মন কখন কি বলে সেটা বলা ভারী মুশকিল। রাতে ঘুমিয়ে পরলাম। পরের দিন সাড়ে ১১ টার সময়ই সেজে গুজে বের হলাম বাসা থেকে। বাইক নিয়ে স্কুলের সামনে এসে দাড়িয়ে রইলাম। আজকে ১৫ মিনিট আগে এসেই দাড়িয়ে আছি। কিন্তু জারার আসার কোনো নাম নাই। ১০ মিনিট পর দেখি জারা বের হলো ওর বান্ধুবীদের সাথে। আমাকে দেখে ওর বান্ধুবীদের সাথে কি যেনো আলাপ করলো তারপর ও একা আমার পাশে চলে আসলো।
.
--বাব্বা আজকে তো খুব তারাতারি চলে আসছেন।(জারা)
.
--দরকার আজকে আমার ছিলো তাই চলে আসছি।(আমি)
.
--কি দরকার বলে ফেলেন।(জারা)
.
--আগে চলো ঘুড়ে আসি তারপর বলি কি দরকার।(আমি)
.
--ওকে চলেন।(জারা)
....
।।।
জারা আমার পিছে বসলো। আমি ও বাইক স্টার্ট দিলাম। জারা ওর এক হাত আমার পিঠের উপরে রেখেছে। আজকে আর শক্ত করে ধরলো না। আমি ও কম কিসের। বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দিলাম। আর জারাও আমাকে শক্ত করে ধরলো।
.
--একি আজকে এতো জোরে চালাচ্ছেন কেনো। আমি পরে যাবো তো।(জারা)
.
--আমাকে শক্ত করে ধরে বসো। পরবে না।(আমি)
.
--আপনাকে ধরলে তো আপনি রাগ করেন।(জারা)
.
--করবো না। আমাকে ধরে বসো শক্ত করে।(আমি)
।।।।
।।।।
আর কিছু বলতে হলো না। আমি বাইক জোরেই চালাতে লাগলাম আর জারা ও আমাকে ধরে বসলো শক্ত করে।। আমরা ফরিদপুর এর একটা নামি দামী রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম যার নাম এবলোম। আমি তো কাচ্চি খাবো। কারন এটাই আমার ফেবারিট। কিন্তু আজকে তো আমার পছন্দের খাবার খাওয়া যাবে না।
.
--কি খাবে বলো?(আমি)
.
--আপনি যেটা খাবেন সেটাই।(জারা)
.
--আরে কালকে তো আমি যেটা খেলাম সেটাই খেলে। আজকে তুমি যেটা খাবে সেটা খাবো।(আমি)
.
--না আপনিই অর্ডার দেন।(জারা)
.
--বলছি না অর্ডার দিতে।(ধমক দিয়ে বল্লাম)
.
--ওয়েটার ভাইয়া।(জারা)
.
--জ্বী কি খাবেন আপু?(ওয়েটার)
.
--একটা কাচ্চি আর একটা চিকেন নুডুলস নিয়ে আসুন।(জারা)
.
--হুমমম অপেক্ষা করুন আপু।(ওয়েটার)
।।।।
।।।।
গল্প করছিলাম হালকা পাতলা। খাবার ও চলে আসলো। খাবার খেয়ে বিলটা দিয়ে বের হলাম দুজনে। হঠাৎ দেখি জারা একদিকে যাচ্ছে।
.
--কি হলো কোথায় যাচ্ছো জারা।(আমি)
.
--....
.
--কথা বলছো না কেনো।(আমি)
।।।।
।।।।
কথা না বলে জারা হাটতে হাটতে একটা ছোট হোটলের সামনে চলে আসলো। আমি ও পিছন পিছন আসলাম। দেখি ও এসেই একটা ছোট মেয়ে আর ছেলের সাথে কথা বলতেছে। দুজনের গায়ে জামা কাপড় ছিড়া। মানে দেখেই মনে হচ্ছে গরীব পরিবারের ছেলে মেয়ে। ভিক্ষা চাচ্ছিলো দুই ভাই বোন। আমার ও দেখে অনেকটা খারাপ লাগলো। কিন্তু দেশই এমন এদের প্রতি মায়া হলেও কেউ এগিয়ে আসবে না ওদের কাছে। দেখি জারা দুজনকে নিয়ে পাশের হোটেলে ঢুকলো।
.
--তোমরা দুজন কি খাবে বলো?(জারা বাচ্চা দুটোকে বললো)
.
--আফা আমরা কিছুই খাবো না।(ছোট মেয়েটা)
.
--আরে মাত্রই তো বললে খুব ক্ষিদে পেয়েছে। তুমি আর তোমার ছোট ভাই নাকি একদিন ধরে কিছুই খাও নি। দেখো ভয় পেতে হবে না। আপনি ওদের জন্য খাবার অর্ডার দিন তো।(জারা আমাকে বললো)
।।।।
।।।।
জারা ওদের দুজনকে নিয়ে একটা টেবিলে বসলো। এই খাবার হোটেলে বসা আর সবাই একটু অবাকই হলো। কারন এভাবে কজন আর এমন অসহায়দের সাহায্য করে। জারা দুজনের সাথে হাসিমুখে কথা বলতেছে। এতোক্ষনে ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। আমি ও এখানের সবচেয়ে ভালো খাবার যেহেতু এটা একটা ভাতের হোটেল তাই ভাত আর মুরগীর মাংসের অর্ডার দিলাম দুইটা। খাবার দুইটা দুজনের সামনে দেওয়া হলো কিন্তু কেউ খাচ্ছে না।
.
--কি হলো খাও তোমরা।(জারা)
.
--....(দুজনে হয়তো ভয় পেয়ে খাচ্ছে না)
.
--ওকে দারাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমাদের দুজনকে। নাও হা করো।(জারা হাত ধুয়ে ওদের খাইয়ে দিতে লাগলো)
।।।
।।।
আমি শুধু জারার কাজ কর্ম দেখছি। অবশ্য ভালো লাগছে। ওর মন যে এতোটা ভালো হবে সেটা জানতাম না।।।।খাওয়া শেষ হওয়ার পরে দুজনেই অনেকটা দৌড়ে পালালো। বুঝলাম না জারা তো কম আদর করলো না তাও পালালো না।
.
--কি হলো ওরা পালালো কেনো এভাবে?(জারা)
.
--হয়তো ভয় পেয়েছে।(আমি)
.
--আমরা কি ওদের মারছি নাকি যে ভয় পেলো?(জারা)
.
--বাচ্চা তো দুইজনই। হয়তো বুঝে নি।(আমি)
.
--হুমমম চলেন এখন।(জারা)
.
--হুমমম।(আমি)
।।।।
।।।।
অবশ্য ভালোই লাগছে এতোক্ষন জারাকে দেখতে। চুপিচুপি অনেকগুলো ছবি তুলেছি যেটা ও দেখতে পাই নি।।।।আমি বাইক স্টার্ট দিয়ে ওকে নিয়ে AC রোডে চলে আসলাম। ফরিদপুরের এটাই সবচেয়ে রোমান্টিক জায়গা। এর থেকে বেস্ট জায়গা হতে পারে না কোথাও। উচু রাস্তা করা হয়েছে যেটা বন্যার সময় পদ্মার পানি শহরের দিকে যেতে পারে না। আর এটাই এখন এসি রোড নামে পরিচিত।
.
--এটা কোন জায়গা?(জারা)
.
--এটা হলো এসি রোড।(আমি)
.
--এটা তো কাপলদের জায়গা। এখানে আনলেন কেনো?(জারা)
.
--কিছু বলতে চাই তাই।(আমি)
.
--কি বলবেন?(জারা)
.
--নিলার ব্যাপারে বলছিলাম না?(আমি)
.
--হ্যা আপনার বউ।(জারা)
.
--ও ডিভোর্স চাচ্ছে।(আমি)
.
--মাত্র বিয়ে হলো আর এখনি ডিভোর্স। নাকি আমার সাথে ঘোরা দেখে ফেলছে আপনার বউ।(জারা)
.
--না ওর নাকি বয়ফ্রেন্ড আছে। আম্মুকে বলছি আম্মু বললো ৬ মাস পরে ডিভোর্স হবে আমাদের।(আমি)
.
--সেটা তো ভালো খবর।(জারা)
.
--কেনো ভালো খবর কেনো?(আমি)
.
--বুঝবেন না। তো এটাই বলার জন্য আমাকে ডাকছেন।(জারা)
.
--না।(আমি)
.
--তাহলে?(জারা)
.
--আসলে তুমি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছো। সেটাই বলতে আসছিলাম।(আমি)
.
--কি??(জারা)
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((((চলবে)))))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ৭ম পার্টের জন্য।