ওয়েবসাইট কাস্টমাইজেশন এর জন্য। Contact Us Welcome!

গল্পঃ ভালোবেসেছি তোরই মতো পর্বঃ ০৮

Bangla Dub Novels

 #ভালোবেসেছি_তোরই_মতো

#পর্বঃ০৮

লেখিকাঃ #শাদিয়া_চৌধুরী_নোন

_______________________________

বাড়িতে নতুন বউ আনা হয়েছে। সবার মধ্যে হুলস্থুল কান্ড বেঁধে গেছে। যারা বরযাত্রী যেতে পারেনি, বিশেষ করে মামী, খালামণিরা বউ দেখবে বলে বসে আছে। গ্রামের মহিলারা ভীড় জমিয়েছে। নানুমণি জাইমাকে নিয়ে মানে নতুন বউকে নিয়ে উঠানের চৌকিতে বসে আছে। সবাই একে একে এসে নতুন বউকে দোয়া করে দেখে যাচ্ছে।  নানুমণির জাইমাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে কারণ, তার আচারণ খুবই মার্জিত এবং যথেষ্ট ধর্মপরায়ণ। সেই কখন থেকে দৃষ্টি নত করে রেখেছে, চোখ তুলে তাকায়নি পর্যন্ত। 


নোরিন ক্লান্ত পায়ে রুমে এসে শাওয়ার নিতে ঢুকলো। সারা গা ঘামে চিটচিটে হয়ে গেছে। লেহেঙ্গার নিচের দিকটা, পায়ের হিলে কাঁদামাটি লেগে যা-তা অবস্থা৷ এমন জায়গায় কেউ যায়! একেবারে অঘা জায়গা যাকে বলে আরকি! শুধু নোরিন না, সব বরযাত্রীর একই অবস্থা।  সেখানে গিয়ে নোরিন কিছু না বললেও জেরুদের মুখ থামেনি। একেবারে কনের মা'কে শুনিয়ে শুনিয়ে বলেছে,

--- ওহ মাই গড! এমন জায়গায় কেউ আসে? আমার প্রচন্ড গরম লাগছে। ফ্যান ও নেই। কারেন্ট নেই...


রাইদা মুখে বিরক্তি ভাব এনে বললো,

--- ভাই!  মাংস বেশি ঝাল হয়েছে। আমার জিহ্বা জ্বলছে। 


--- আশপাশের কোথাও কোনো দোকানও দেখলাম না।


--- সব ক'টা একেকটা বেয়াদব আসছে! এই তোরা চড় চিনিস? থাপ্পড় মেরে গাল লাল করে দেবো। বাপের টাকায় খাস আবার এতো কীসের ফুটানি মারিস! আর একটা কিছু বললে সবার সামনে গিয়ে এমন লজ্জা দেবো দেখিস তোরা! বাড়িতে পৌঁছায় একবার... তোদের হচ্ছে! 

নিবিড়ের ধমকে আর একটা টু শব্দ পর্যন্ত করেনি। সব চুপচাপ। নোরিন বসে বসে এসব ভাবছিলো৷ ভাবনার মাঝেই গুমরে কেঁদে উঠলো। ফোঁটার পর ফোঁটা নির্বিকার ভাবে কেঁদেই গেলো শুধু্।  নিঃশব্দে কেঁদে মনে মনে আওড়ালো,

--- নিবিড় ভাইয়া আপনি এমন কেনো? আপনি কি আমার অনুভূতি একটুও বুঝেন না? আপনার সামনে গেলে আমার বুক থরথর করে কাঁপে। পুরো দুনিয়া লন্ডভন্ড হয়ে যায় আপনি বুঝেন না? আপনার সামান্য উপস্থিতিতেও আমার মনে তুফান চলে। আপনার সব কথা মেনে নিই৷ কতবার ভাবি, আপনাকে নিয়ে ভাববো না তবুও বারবার আপনার কথায় মনে পড়ে৷ এটাকে কি আমি ভালোবাসা বলবো না? শুনেছি ভালোবাসলে নাকি মানুষ বেহায়া হয়ে যায় আপনাআপনি।  আমিও বেহায়া হয়ে গেছি নিবিড় ভাইয়া।  আমি কিছুতেই এই কথা বলবো না যে, আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি লজ্জায় মরে যাবো। আমি কিছুতেই নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করবো না। 


নোরিন বাইরে আনমনে তাকালো। বিলে সবুজ ধানের সমারোহ৷ সকলে একসাথে বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে নাচছে যেনো। কি অপরুপ সুন্দর এই বাংলা! কি সুন্দর এই বাংলার মাটি! এই রুপের মোহে পড়েই তো শতশত জোয়ান নিজের জীবন দেশমায়ের নামে বিসর্জন দেয়। এই দেশকে রক্ষা করতে গিয়েই  তারা তাদের পরিবার পরিজন সবকিছুকে ছেড়ে নিজের জীবন বাজি রাখে। স্বার্থক তাদের এই আত্মত্যাগ। মরতে তো একদিন সবাইকে হবে। কিন্তু এমন মৃত্যু কয়জনের ভাগ্যে জোটে!!!  

অতঃপর নোরিন জেগে জেগে স্বপ্ন দেখলো। তার পরনে থাকবে খাকি-জলপাই রঙের পোশাক, কুচকুচে কালো বুট জুতো,  ব্যাজ আর স্বার্থ রক্ষায় মরণঘাতী অস্ত্র। সবকিছু পরিধান করে নোরিন যখন হাঁটবে, গর্বে তার বাবার বুকটা ফোলে উঠবে। সে ট্রেনিংয়ে যাবে, দেশে বিদেশে মিশনে নামবে; দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। মুচকি হাসি নিয়ে নোরিন স্বপ্নজগৎ থেকে ফিরে এলো। তখনই এপিজে আবদুল কালাম স্যারের একটা উক্তি মনে পড়লো, " স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো,স্বপ্ন সেটাই যা তোমাকে ঘুমাতে দেয়না।" হ্যাঁ, এই স্বপ্নটাই তো নোরিন বহুদিন ধরে দেখে আসছে। সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অফিসার হবে। যা তাকে বহুদিন ধরে ঘুমোতে দেয়না। আর মাত্র দুটো বছর। তার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। 


--------------------------------

নতুন বউয়ের সাথে  দেখা করবে বলে নোরিন রাত আটটার দিকে ঘর থেকে বেরিয়ে, জায়িন ভাইয়ার রুমে গেলো। ঘরের দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখে জায়িন ভাইয়ার বন্ধু বান্ধবে ঘর ভরপুর। এককোণে জেরু'রাও দাঁড়িয়ে সবার মশকরা দেখছে। নোরিন চলে যেতে চাইলো তখনি জায়িন ডাক দিলো,

---- নোরিন? চলে যাচ্ছিস কেনো! আয় ভেতরে। 


নোরিন স্মিত হেসে ঘরের ভেতরে ঢুকলো, মুখে বিরক্তির ছাপ। জায়িনের বন্ধুদের মধ্যে বেশ কয়েকজন তার দিকে তাকিয়ে আছে। নোরিন যেন তাদের খেয়ালই করলো না। এমন ভঙ্গিতে জেরুর পাশে দাঁড়ালো।  জেরু কানে কানে ফিসফিস করে বললো,

---- বোন, মন মেজাজ ভালো না। নিবিড় ভাইয়া আমাদের কি শাস্তি দিয়েছে জানিস? 


নোরিন কোনো উত্তর দিলো না। নিবিড় নাম শোনেই উথাল-পাতাল করছে মনে। 


---- নিবিড় ভাইয়া বলেছে কাল  ভোর পাঁচটা বাজে, পুকুরপাড়ে গিয়ে গুণে গুণে পঞ্চাশটা শাপলা তুলে আনতে। আমি, রাইদা, মিমহা এই তিনজনের একই শাস্তি। তুই বল বোন এই শীতকালে পাঁচটা বাজে কেমনে উঠবো? আমরা তো সরি বলে দিয়েছি।  তারউপর কাল বৌভাত। তুই একটু ভাইয়াকে বল প্লিজ। আমাদের শাস্তিটা যাতে মওকুফ করে। 


---- আমি কি নিবিড় ভাইয়ার ইয়ে লাগি যে আমি বললেই মাফ করবে? 


--- ইয়ে মানে কি? 


নোরিন তীব্র অস্বস্তি নিয়ে বললো,

--- ইয়ে মানে ইয়ে....  আমি জানি না। 


নোরিন আনমনে জায়িন ভাইয়ার দিকে তাকালো। একি! জায়িন ভাইয়ার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা চোখ মারলো কেনো? নোরিন খুব কৌশলে চড়া গলায় বললো,

----- এইযে ভাইয়া আপনাকে বলছি! হ্যাঁ আপনি। চোখে সমস্যা?  দাঁতে ব্যাথা? হাড়ঁ দুর্বল? কোনো সমস্যা নাই। আমার এক চাচা শহরের বড় ডাক্তার। আপনি চাইলে চাচার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারি। 

বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। জায়িন ভাইয়া হালকা হেসে পাশে থাকা ছেলেটার কাঁধে হাত রাখলো। " ওর দিকে নজর দিস না৷ পারলে চিবিয়ে খাবে তোকে। আমার বোন বোম্বাই মরিচ।" ছেলেটা হালকা হেসে নজর সরিয়ে ফেললো। 


নোরিন বেরিয়ে নিবিড়কে খুঁজতে লাগলো। আসার পর থেকে একবারও দেখা হয়নি। গতদিনের তুলনায় আজ মানুষ বেশি। যাওয়ার পথে খালামণির সাথে দেখা হলো।

---- নোরিন মা, ধর এই চায়ের কাপটা নিয়ে যা। নিবিড়কে  দিয়ে আয়। নতুন বউকে এখনো খাওয়ানো হয়নি৷ আমি যাই কেমন? নিবিড়কে জামতলার সামনে পাবি। 


--- আচ্ছা খালামণি! 

নোরিন চায়ের কাপটা নিয়ে জামতলার উদ্দেশ্যে গেলো। দূর থেকেই দেখলো, নিবিড় বাচ্চাপার্টির সামনে বসে আছে জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে। এজন্যই তো বলি বাচ্চাদের কোনো হৈচৈ নেই কেনো! সবাই মাটিতে লেপ বিছিয়ে বসে আছে আর নিবিড় ভাইয়া ওদের সামনে কাঠের চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা তুলে বসে । একটা সবুজ রঙের পলো শার্টে নিবিড়কে মারাত্মক লাগছে। চুলগুলো বামদিকে ঠেলে তিনি থুতনিতে হাত রাখলেন৷ ঝাপসা আলোয় উনার মুখটা চকচক করছে। নোরিন কাছাকাছি আসতেই নিবিড়ের কথা শুনতে পেলো। 

---- এই আয়মান! তুই হাফসা কে একটা থাপ্পড় মার। গায়ের যত শক্তি আছে, তার চেয়ে বেশি মারবি। বুঝছিস?  তারপর, হাফসা তুই গিয়ে আয়মানকে ঠেঙাবি। জোরে জোরে ঠেঙাবি! নাও স্টার্ট। ঝগড়া লাগলে এভাবে ঝগড়া করবি। চিল্লাপাল্লা করবি না। 


আয়মান আর হাফসা নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে প্রায়,ধস্তাধস্তি শুরু করে দিলো। বাকিরা প্রবল উৎসাহ দেখিয়ে বলছে,

---- ভাইয়া আমি রোজাকে ঠেঙাবো! 

--- ভাইয়া আমি সামিনের চুল টানবো!

--- ভাইয়া আমি রাজিবের গলা টিপবো। ভাইয়া আমরাও ঝগড়া করি? 


নোরিন বেশ শান্তভাবে নিবিড়ের পেছনে দাঁড়িয়ে বললো,

---- নিবিড় ভাইয়া আপনার চা। 


নিবিড় ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। সাথে সাথে নোরিনের বুকে ব্যাথাটা আবার জাগ্রত হলো। বলতে ইচ্ছে হলো," নিবিড় একটু হাসো! আমার আর পেইন কিলার খেতে হবে না। স্মাইল প্লিজ!" নোরিন ঠিক করলো, লুকিয়ে লুকিয়ে নিবিড়ের কয়েকটা ছবি তুলতে হবে। হাসিমুখের ছবি। যাতে বাড়ি ফিরে গেলে এসব ছবি দেখতে পারে। 


---- চা তো পুরো পানি পানি হো গ্যায়া! এই তুই গরম থাকতে আনতে পারলি না চা-টা?  তোরা একটাও কাজের না! 


নোরিন চলে যেতে চাইলো। 


---- এই কোথায় যাচ্ছিস? সামনে বড় ভাই বসে আছে একটু যত্নআত্তি কর। আমার ঘাড়টা একটু টিপে দে তো! সারাদিন কত কাজ করলাম। 


নোরিন বেশ গম্ভীর স্বরে ভাব নিয়ে বললো,

---- ভাইয়া আমি এসব পারি না। আপনাকে চা এনে দিয়েছি, এটাই আপনার ভাগ্য।  


নিবিড় স্বকৌতুকে হাসতে লাগলো। নোরিন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো। আহা নিবিড়! তুমি...  


---- বুড়ি সত্যি তুই হাসালি! তোকে আমি এতো টাইড দিই তবুও এতো ঘাড়ত্যাড়া স্বভাব তোর। চুপচাপ যা বলছি তা কর। 


নোরিন একটা হামি দিয়ে নিবিড়ের পেছনে দাঁড়ালো। এইতো শুরু!  হাত কাঁপতে শুরু করেছে৷ গলা শুকিয়ে গেছে। এবার কি তাহলে মৃগী রোগীর তকমাটাও পেয়ে গেলো নোরিন? 


নিবিড়ের ঘাড়ে হাত দিতেই যেনো একটা শিহরণ বয়ে গেলো শরীরে। গায়ে আলতো চাপ দিয়ে দিয়ে ঘাড় টিপতে নিবিড় নোরিনের হাত টেনে বললো,

---- আহ কি হাতরে তোর মাইরি! তুলা নাকি অন্য কিছু? তুই কি তুলা খাস নাকি? আমার বোনটা কত ভালো!


নোরিনের ইচ্ছে হলো পুরো ঘাড়টায় মটকে দেয়। বোন? কীসের বোন? 

পাঁচ বছরের অলি দৌড়ে এসে বললো,

---- নুলিন আপু! নুলিন আপু! আমাকেও দাও নিবি ভাইয়ার মতো করে প্লিজ? 


এতো স্পষ্ট করে প্লিজ শব্দটা উচ্চারণ করলো যে নিবিড় হেসেই দিলো। অলিকে কোলে নিয়ে বললো,

---- না বাবু! তোমার নোলিন আপু পঁচা। ও তোমাকে টাচ করলে তুমিও পঁচা হয়ে যাবে। 


--- নোলিন আপু তো সুন্দল! মাম্মা বলেছে, নোলিন আপু অনেক মিষ্টি। মাম্মা মিথ্যে বলে না।


--- না বাবু। ও পঁচা। আমাকে খালি গালি দেয়। তুমি কি পঁচা হতে চাও? 


--- না, নিবি ভাইয়া। আমাকে নামিয়ে দাও। নোলিন আপুর পঁচা লেগে যাবে।


অলি নাক সিটকে দৌড়ে চলে গেলো। নোরিন পারেনা নিবিড়কে চিবিয়ে খায়। বজ্জাত একটা! ভদ্র শয়তান! তোর মুখে ঝাঁটার বারি!  


#চলবে....

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.