পার্ট: ০৬
লেখকঃ হৃদয় বাপ্পী
।।
আরো কিছুক্ষন ঘুরে বাসায় ফিরলাম।বাসায় আসার পরই মেঘলা ফুপির কানে কানে কিছু একটা বললো।আর ফুপি ও অনেক খুশি হয়ে গেলো কথা শুনে।যানি না কি বললো মেঘলা।যাইহোক আমি কোনো কথা না বলে রুমে গেলাম।একটু পর,
.
--এই আম্মু খেতে ডাকছে।(মেঘলা)
.
--আমি এখন খাবো না।(আমি)
.
--এই তোমার শ্বাশুরি তোমাকে খেতে যেতে বলতেছে।(মেঘলা)
.
--শ্বাশুরি আসলো কোথায় থেকে।
.
--কেনো আমাকে বিয়ে করলে তো আমার আম্মু তোমার শ্বাশুরি হবে তাই না।(মেঘলা)
.
--কিন্তু আমাদের এখনো বিয়ে হই নাই।(আমি)
.
--হয় নাই তাতে কি হয়ে যাবে তো।(মেঘলা)
.
--হুমমম।কিন্তু আমি ফুপি বলেই ডাকবো অন্য কিছু না।(আমি)
.
--আচ্ছা বাবা এখন তো চলো।(মেঘলা)
।।।।
দুজনে গিয়ে খেতে বসলাম।
.
--আম্মু আমাকে দাও আমি বেরে দিচ্ছি তুমি কেনো কষ্ট করবা।(মেঘলা)
.
--বাবা বিয়ের আগেই স্বামির প্রতি এতো দরদ হয়ে গেছে।(ফুপি)
.
--কিজে বলনা আম্মু।(লজ্জাই বলল মেঘলা)
।।।।
তাহলে তো মেঘলা তখন বলেছিলো আমাদের বিয়ের কথা।হায় আল্লাহ এই মেয়ে তো সত্যিই পাগল।
.
--আচ্ছা ফুপি স্বামি মানি বুঝলাম না তোমার কথ।(আমি)
.
--আরে তুই নাকি আমার মেয়েকে ভালোবাসোস।তোদের বিয়ে তো সেই ছোট বেলায় ঠিক করা ছিলো।কিন্তু তোর আম্মুর রাগের জন্য আর এটা নিয়ে কোনো কথা হলো না।তোর বিয়ে সে অন্য জায়গায় ঠিক করেছিলো।কিন্তু আমি জানতাম তুই আমার মেয়েকে ভালোবাসোস।তাই তো পালিয়ে এখানে এসেছিস।(ফুপি)
.
--তোমার কথার কিছুই তো আমি বুঝতেছি না।(আমি)
.
--মেঘলা তো বললো তুই আজকে নাকি ওকে বলেছিস ২ দিনের মধ্যেই তুই ওকে বিয়ে করবি।(ফুপি)
.
--আমি কখন বললাম।(আমি)
.
--না আম্মি আসলে ও তো লজ্জা পাচ্ছে।তাই এখন আর বলতে পারবে না।(মেঘলা)
.
--আমি বলে কি ওরা দুজন যখন রাজি তাহলে কালকেই ওদের বিয়েটা দিয়ে ফেলি।(ফুফা)
.
--হ্যা ওরা যখন রাজি তখন আর আমাদের কোনো আপত্তি রেখে লাভ নাই।(ফুপি)
।।।।।
মেঘলা আমাকে খাবার দিচ্ছে আর লজ্জা লজ্জা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।হায় আল্লাহ এই মেয়েকে আমি কখন বিয়ের কথা বললাম উল্টা ওই তো বললো ওকে বিয়ে করতে।কিজে হবে আমার আমিই জানি না।
.
--এই এতো কেনো দিচ্ছো।(আমি)
.
--এখন থেকে বেশী করে খেতে হবে।এতো দুব্লা হলে কি হবে।খাইয়ে খাইয়ে এখন তোমাকে মোটা করে দিবো।(মেঘলা)
.
--হুমমম।আমি এতো খেতে পারবো না।(আমি)
.
--আমি বলেছি খেতে খাবা তুমি কোনো কথা বলবা না।(মেঘলা)
.
--কি আর করার কষ্ট করে সব খেয়ে রুমে চলে এলাম।রুমে শুয়ে আছি এমন সময় ফুফা আসলো।
.
--কি বাবা আমার মেয়ের অপেক্ষা করতেছো।(ফুফা)
.
--ঃ্যা।।না ফুফা ওর অপেক্ষা করবো কেনো।(আমি)
.
--আরে বুঝি তো আমি সবই।কালকেই তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিবো।কালকেই ওর সাথে ঘুমাতে পারবা আজকে আর ঘুমানো যাবে না।(ফুফা)
।।।।
কি বলে সেদিন মানা করলো না আজকে মানা করতেছে।দুর এদের মাথায় যে কি ঘুরঘুর করে বুঝি না।সেদিন তো ঘুমালাম কিছুই হলো না।আজকে ঘুমালে এমন কি হতো।হ্যা অবশ্য কারণ টা তারা বুঝতে পারছে।থাক কি আর করার ঘুমে ঘুমে স্বপ্ন দেখি।
।।।।।
.
--তোর সাহস এতো কিভাবে হলো তুই আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছিস।তারপর আবার আমাকে না জানিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে এসেছিস।আজকে থেকে তোর এই বাসায় আসা বন্ধ।(আম্মু)
.
--এমন করতেছো কেনো এটা তোমার বউ মা আমরা বিয়ে করে এসেছি।এখন আর কতক্ষন বাইরে দারিয়ে থাকবো।(আমি)
.
--তুই আমাকে না জানিয়ে এমন কাজ করেছোস।অবশ্য জানলে তো করতেই দিতাম না।এখন তোর এই বাড়িতে কোনো জায়গা নাই।(আম্মু)
.
--আম্মু প্লিজ এমনে বইলো না।(আমি)
.
--কিসের আম্মু আমি আজ থেকে তোর আম্মু না।আমার ছেলে আজ থেকে মারা গেছে।(আম্মু)
.......
--না না না(বলে জোরে চিল্লাই উঠলাম)
।।।।।
না এসবতাহলে স্বপ্ন ছিলো।বিয়ে করলে তো মনে হয় আম্মু এভাবেই বলবে।তাই স্বপ্নে আমাকে বিয়ে করতে মানা করতেছে।না আমি এই বিয়ে কিভাবে করি বিয়ে করলে তো আমার আম্মু আমাকে মেনে নিবে না।আম্মু আমাকে সত্যি এমন কিছু একটা বলোক তার আগে আমি পালিয়ে যাই এখান থেকে বাসায়।না আমি আম্মুকে কষ্ট দিতে পারবো না।আমি তো বাবা আর আম্মুর একমাত্র সন্তাম।আমি যদি আম্মুর কথা না শুনি তাহলে হয়তো তিনি ওনেক কষ্ট পাবেন।সে তো আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে আমি কি তাকে কষ্ট দিতে পারি আর।না আমি বাসায় ফিরে যাবো আর আম্মুর পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করবো।হুমমম এখনি যেতে হবে।ফুফা তো সেই ঘুমে ব্যসত আমি এতো জোরে চিল্লানি দিলাম ঘুমই ভাঙলো না।তাহলে তো আমি পালিয়ে গেলে ও কিছুই বুঝবে না।না এখন তো আর জামা কাপড় নিলে হয়তো শব্দে বুঝে যেতে পারে।জামা কাপড় ঘুছানো ছাড়াই টেবিলে কাগজে একটা পলানায়ন চিঠি রেখে ব্যাগটা নিয়ে আবার ও বাসা থেকে বেরিয়ে পরলাম।এখন তো আর আমি বাস পাবো না কিভাবে যে যাবো কিছুই তো বুঝতেছি না।রাত ১২ টা বেজে গেছে।আমি তো রাস্তা ঘাট ও চিনি না।আমাকে যদি কেউ ধরে নিয়ে যাই।তাই ভয়ে ভয়ে রাস্তা দিয়ে হাতটেছিলাম।হঠাৎ একটা রিক্সা পেলাম।
.
--এই যে আঙ্কেল একটু শুনেন।(আমি)
.
--হ্যা বাবা তুমি এতো রাতে এখানে কি করো।(রিক্সা ওয়ালা)
.
--আসলে আমার একটু সাহায্য দরকার।আপনি কি বলবেন আমি তারাতারি ঢাকায় যেতে পারি কিভাবে।(আমি)
.
--আমি তো রিক্সা চালায় তোমারে ঢাহায় নিয়ে যামু কেমনে।
.
--আরে আমি বলতেছি সকালের মধ্যে তারাতারি যাবো কিভাবে।(আমি)
.
--তুমি একহান কাম হরো।তুমারে আমি রেল স্টিশনে রাইখা আসি সহালে ট্রেন আইবো চইলা যাইয়ো ঢাহা।(রিক্সা ওয়ালা)
।।।।।
আমার তো আর কিছুই করার নাই রিক্সায় বসে পরলাম।রিক্সা ওয়ালা আমাকে রংপুর স্টেশনে রেখে আসলো।আমিও নেমে গিয়ে রিক্সার ভারাটা দিয়ে স্টেশনের মধ্যে গেলাম।রাত তখন একটা বাজে।একটা লোক আমাকে দেখে আগিয়ে আসলো।দেখে মনে হচ্ছে স্টেশন মাস্টার।যাইহোক সে আমাকে একটা রুম দেখিয়ে দিলো।আমি রুমে ঘুমিয়ে পরলাম।সকাল ৬ টায় মোবাইল এ এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম তাই উঠতে সমস্যা হলো না।স্টেশনমাস্টার এর কাছ থেকে টিকিটটা নিয়ে ট্রেনে বসে পরলাম।ট্রেন চলতে শুরু করলো আর আমি ও ভাবতে লাগলাম কি থেকে কি হয়ে গেলো।এই ২ দিনে আমি তো মেঘলাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।ওকে ছারা তো এখন এক মুহুর্ত ও ভালো লাগছে না।আমি তো ওকে সত্যি অনেক ভালোবেসেছি।অনেক কষ্ট হচ্ছে এখন ওকে এভাবে না বলে চলে আসছি বলে।কিন্তু আমি আমার ভালোবাসার জন্য আমার আম্মুকে কষ্ট দিতে চাই না।যেহেতু বিয়ে করতামই তাহলে তো আর আম্মুর পছন্দ করা মেয়েকে করতে সমস্যা নায়।এতে আম্মু ও ভালো থাকবে।আমি না হয় কয়েকদিন কষ্টে থাকবো।কিন্তু আমার আম্মু তো চিরদিন কষ্টে থাকবে।তাই আর কোনো কথা ছারাই আম্মুর পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলবো।
সব চিন্তা ভাবনা করতে করতে বাসায় চলে আসলাম।আসার পরই দারওয়ান গেইট খুলে দিলো।আম্মু আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়ে বললো,
.
--তুই পিকনিকে যাবি আমাকে একবার বললেই হতো।কি ভেবেছিস আমি তোকে যেতে দিতাম না।(আম্মু)
.
--আম্মু কি বলতেছে।তাহলে কি আব্বু আম্মুকে বলে নাই আমি পালিয়ে গেছি।মনে হয় চিঠি টাও পাই নাই।(মনে মনে বললাম)
.
---কিরে কথা বলতেছোস না কেনো।(আম্মু)
.
--যাক বাবা বাচা গেলো আম্মু কিছুই জানে না।(মনে মনে)না মানে আম্মু ভয় পেয়েছিলাম যদি তুমি আমাকে যেতে না দিতা।(আমি)
.
--আমাকে একবার বলতি জানিস কতো চিন্তা করেছি তোকে নিয়ে।(আম্মু)
.
--সরি আম্মু।(আমি)
।।।।।
আমি আর কিছুই বললাম না।সোজা আমার রুমে এসে রুম টা আটকিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে মেঘলার কথা ভাবতে লাগলাম শুধু।ওর কথা যতই ভাবছি ততই চোখ দিয়ে পানি পরতেছে।খুব মিস করবো ওর পাগলামি গুলো।আম্মুকে কি বলবো মেঘলার কথা।না না আম্মু আরো অনেক কষ্ট পাবে।থাক মেঘলা নাহয় আমার থেকে আরো ভালো ছেলে পাবে।আমি তো আর ওর জন্য আমার আম্মুকে কষ্ট দিতে পারি না।যাইহোক আমাকে শক্ত হতে হবে।নাহলে তো আম্মু সন্দেহ করবে।
।।।
।।
।
(চলবে