ওয়েবসাইট কাস্টমাইজেশন এর জন্য। Contact Us Welcome!

গল্পঃ ভালোবেসেছি তোরই মতো পর্বঃ ০৪

Bangla Dub Novels

 #ভালোবেসেছি_তোরই_মতো

#পর্বঃ০৪

#লেখিকাঃশাদিয়া_চৌধুরী_নোন


---আপনি সবসময় আমার পানি খেয়ে ফেলেন কেন? 


নিবিড় নিঃশব্দে গ্লাসটা রেখেই ঠাস করে আবার আরেকটা চাটি মারলো নোরিনের মাথায়। চাটির বারিতে নোরিনের কোমল নমনীয় চুল আটকানোর কাঁটাটা আলগা হয়ে এলো। কয়েক গাছি ছোট ছোট চুল সামনে এসে চামচিকার মতো ঝুলে পরলো। নোরিন কাঠ হয়ে বসে আছে। চোখেমুখে কোনো ভাবান্তর নেই। সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ায় অসাবধানে তার বাম হাতটা তরকারির বাটির ভেতরে ঢুকে গেছে। নোরিন হাতটাও তুললো না। একইভাবে বসে রইলো। চুলের অবস্থা শোচনীয়। নিবিড় যেন নোরিনের অবস্থা দেখে আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে গেলো।

----- কীরে বুড়ি! তোর হাত তো বাটির মধ্যে ঢুকে গেছে। তাও বাম হাত ছিহ্!! এই কেউ ওই বাটি থেকে খাস না আবার। তোর বাদর চুলগুলোর দেখছি অবস্থা খারাপ। এইভাবে কেউ খেতে পারে? তোকে দেখে আমার বমি পাচ্ছে। ওয়াক.....


ছোট-বড় সব কাজিনদের মধ্যে একটা হাসির রোল লেগে গেলো। নোরিন ধীরগতিতে উঠে বেসিনে হাত ধুয়ে নিজের রুমে চলে এলো। তারপর ইচ্ছেমতো কাঁদল।  ফাঁকা ঘরে কেঁদে কেঁদে ইচ্ছেমতো লাফালো। বিলাপও করলো।

----- আমার সাথে আপনার কোন জন্মের শত্রুতা আছে বলুন তো নিবিড় ভাইয়া?  জানেন ওরা সবাই আমাকে কতটা রেসপেক্ট করে? আমি তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু? আর আপনি সবার সামনে আমাকে এভাবে মারতে পারলেন!! আপনি এই ফাঁকা ঘরে আমাকে একশোটা মারলেও কিছু বলতাম না। টু শব্দও করতাম না। সবাই হাসছিলো। সবার সামনে আমাকে কেনো হাসির পাত্র বানালেন নিবিড় ভাইয়া? 


নোরিন যা নয় তাই বলে বিলাপ করতে লাগলো। আধঘন্টা পর চোখে-মুখে পানি ঝাপটিয়ে শান্তভাবে খাটে পা ঝুলিয়ে বসলো। গাল আর চোখ দুটো লাল হয়ে আছে খুব৷ স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। 


নোরিন নিজের রুম হতে বের হলো বেলা এগারোটায়। বের হয়ে কাউকে খুঁজলো না। সোজা নানুমণির রুমে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। নোরিনের নানুবাড়িটা ছোটখাটো একটা সমতল পাহাড়ের উপর বানানো। দোতলা কাঠের বড় বাড়ি। বাড়ির সামনে একটা মাঝারি সাইজের উঠোন। তারপর ঢালু হয়ে পাহাড়টা নিচ পর্যন্ত নেমে গেছে। কয়েকশো রকমের গাছ দিয়ে পুরো পাহাড়টাকে দূর থেকে জঙ্গলের মতো মনে হয়। নিচে শান বাঁধানো একটা পুকুর আছে। শীতকালে এখন গোলাপী শাপলায় পুরো পুকুরটা ছেয়ে আছে। পানি পর্যন্ত তোলা যায়না, এতোটুকু কোণা পর্যন্ত অবশিষ্ট নেই। নোরিনের নানাভাই চেয়ারম্যান থাকাকালীন এই বাড়িটা করেছিলেন। বড় বউয়ের সাথে বাবা মা  ধরে বেধে বিয়ে দিলেও, নোরিনের নানুমণিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তিনি। বড় বউকেও একটা বাড়ি করে দিয়েছেন। এখান থেকে দশমিনিট রাস্তা হাঁটলেই ওই বাড়িতে যাওয়া যাবে।  দুই বউয়ের মধ্যে যাতে কোনোপ্রকার ঝামেলা না হয় তাই এই ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। দুই বউ তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে দুই বাড়িতে থাকতো। সে অনেক বছর আগের কথা। এসব কথা এখানকার মানুষের মুখে মুখে। চেয়ারম্যানবাড়ি নিয়ে কার না আগ্রহ থাকে!!! 

নোরিন জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে গ্রামবাংলার বিস্তর জনপদের দিকে। নানুমনি খাটে বসে সবসময়ের মতো পান চিবুচ্ছেন। তিনি নোরিনকে ডাকলেন। 

-- কী গো সুন্দরী বানু! মন খারাপ নাকি? 


-- নাহ্ নানু। এমনিই। বাবাকে মিস করছি। 


-- চার পাঁচদিনের লাইগা আসলা। আজমলরে তো কইছিলাম। হের তো অফিসে কাজ আছে বললো। 


নোরিন মনে মনে নানুকে উত্তর দিলো, নানুমনি তুমি ভুল ভাবছো। বাবা ইচ্ছে করেই আসেনি। মা'র স্মৃতি যে এখনো তাড়া করে বেড়ায়। আমারও আসতে ইচ্ছে করেনা জানো? মায়ের সাথে এই বাড়িতে, পুরো গ্রামে কত ঘুরেছি। মা সবসময় বলতো, আমরা দুজন বেস্টফ্রেন্ড। 


------ আম্মা আসবো? 

নোরিন দরজায় তাকালো। এক প্রাপ্তবয়স্ক দম্পতি দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পেছনে একজন ছেলে।  ছেলেটাকে সে চেনে। নিবিড়ের বড় ভাই। দুইভাই দেখতে একরকম। পার্থক্য হলো বড় ভাইয়ের রং একটু চাপা আর একটু মোটা।  হালকা ভুড়ি বেরিয়ে আছে। অন্যদিকে নিবিড় উজ্জ্বল ফর্সা আর স্বাস্থ্যবান। মুখের গড়নটার মিল দুভাইয়ের। হতে পারে এই দম্পতি নিবিড় ভাইয়ার মা-বাবা। নোরিন এবার আরো তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। ভদ্রমহিলা তার মামী হবেন। শহুরে ভাব। নোরিন বুঝলো তার মামী গয়নার ক্ষেত্রে বেশ চুজেবল এবং বেশ আধুনিক। নানুমনি তাদের ভেতরে আসতে বললেন।

--- আসো আসো আয়েশা। ভিতরে আসো। আরে আমার নাতিও আইছে দেখছি। বহো বহো... 


---- আম্মা ভালো আছি। আপনার শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক তো? 


--- তোমরা আইছো আমার এখন সব ঠিক। 


নানুর সাথে তারা কথা চালিয়ে যেতে লাগলো। কথার পিঠে জানতে পারলো, নিবিড়ের বড় ভাই শিমুলও একজন ইন্জিনিয়ার। কুয়েটের ছাত্র। নোরিনের মা প্রয়াত দিলারাকে নিয়েও কথা চললো খানিকক্ষণ। আয়েশা নোরিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই বললো,

--- এমন একটা মেয়েই আমার ছেলের জন্য খুঁজছি আম্মা। গ্রামে নোরিনের মতো কোনো মেয়ে পেলে আমাকে বলবেন। 

নোরিনের বিষম খাওয়ার মতো অবস্থা। বিষম খেতে খেতে তার কচুরিপানার পানিতে ঝাপ দিতে ইচ্ছে হলো। এতো দুঃখ সে কোথায় রাখে! 


বিকেল বেলা......

বিয়ে বাড়ি মানেই ব্যস্ততা। হাজার রকমের কাজ। হাজার রকম মানুষের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে, মিলেমিশে কাজ করা। বাড়িতে সবাই কাজ করছে। আজ বাদে কাল বিয়ে। আর মাত্র কয়েকঘণ্টা বাকি। বড়নানু-ছোটনানুর দুই পরিবারের মানুষ, পুরো গ্রামের মানুষ একসাথে কাজ করেও, কোনো কুল-কিনারা হচ্ছে না। তার উপর ছোট ছোট বাচ্চাদের ভোঁ - ভোঁ, চোঁ-চোঁ  লেগেই আছে। 

নোরিনের অবস্থা কাহিল। সে বইটাকে বুকের উপর রেখে চোখ বড় বড় করে, হাত পা চারদিকে ছড়িয়ে শুয়ে আছে। তাকে দেখে মনে হবে, সে এইমাত্র স্ট্রোক করেছে। আসল কথা হচ্ছে গিয়ে, নোরিনের মনে হচ্ছে, পুরো বাড়ির এই বাচ্চাদের কান্না, হৈচৈকে একটা ট্রেনে পুরে; উড়ন্ত ট্রেনটা তার কানের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। সাধারণত, ট্রেনের আওয়াজ হচ্ছে ঝক..ঝক..ঝক টাইপের। কিন্তু এই চিল্লানিমিশ্রিত ট্রেন আওয়াজ করছে,

--- ব্যা-ব্যা-ব্যা-চে-চে-ক্যা-ক্যা-হু-হু-আআআআাা....


নোরিনের মনে হলো ট্রেনটা মাত্রই তার পাশ দিয়ে উড়ে গেলো। তাই সে হাত দিয়ে ট্রেনটাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। হতাশ হলো সে।


 বাচ্চাপার্টির চ্যানচ্যানানি আর উঠতি বাচ্চাদের ট্যানট্যানানি এবং এর বড়দের ফ্যারফ্যারানি থেকে বাঁচতে বাড়ির বড়রা ঠিক করলো সবাইকে ঘুরতে পাঠিয়ে দেবে। 


#চলবে

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.