পার্টঃ০৫
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী(পিচ্চি)
।।।।।
।।।।।
।।।।।
আমি আশে পাশে তাকালাম। তেমন কেউই নেই এখনো। কিন্তু জারা পিক তুলতে তুলতে নদীর পাশে চলে এসেছে। ওর পায়ের জুতো জোড়া খুলে হাটতে থাকলো ঠান্ডা পদ্মার পানিতে। অবশ্য ওর বাচ্চামি দেখে এখন রাগ না বরং হাসি পাচ্ছে। কিন্তু এই রোদে এখানে অবস্থা টাইট হয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে বাতাস থাকলেও রোদের তাপে থাকাই যাচ্ছে না এখানে।
.
--আচ্ছা চলুন আমি নৌকায় উঠবো।(জারা)
.
--না নৌকায় উঠা যাবে না। এখানে বড় কোনো নৌকা নাই এখন।(আমি)
.
--নেই তো কি হয়েছে। ছোট নোকা তো আছে ছাইনী ওয়ালা একটা নৌকা ঠিক করুন। আমি ঘুরবো।(জারা)
.
--আমি পারবো না।(আমি)
.
--ঠিক আছে আমি এখন চিল্লাবো জোরে জোরে আপনি আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসছেন।(জারা)
.
--বলো আমার কিছুই হবে না।(আমি)
.
--তাহলে দাড়ান আপনি আমাকে রেইপ করার জন্য নিয়ে আসছেন এটা আমি জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে বলছি।(জারা)
.
--কি আমি আপনাকে রেইপ করতে নিয়ে আসছি। কথা ভালো করে বলেন।(আমি)
.
--আমাকে নিয়ে নৌকায় ঘুরেন। নাহলে এটাই বলে চিৎকার দিবো। জনগনের মাইর কেমন সেটার স্বাধ পেয়ে যাবেন।(জারা)
.
--মোটেও দরকার নাই সেটার। চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ২০ মিনিটই ঔপারে যাবো আর আসবো।(আমি)
.
--হুমমম চলুন।(জারা)
।।।।
।।।।
আমি একটা নৌকা ঠিক করলাম। জারা ওর মুখটা হিজাব দিয়ে ঢেকে ফেললো। তারপর আমি জারাকে নৌকায় উঠিয়ে দিয়ে নিজেও উঠলাম নৌকায়। জারা অনেকটা আমার পাশেই বসলো। নোকাটা অনেক ছোট। মানে এখানের সবচেয়ে ছোট নৌকার ভিতরে একটা। ৫ জনের বেশী এই নৌকায় চরলে মনে হয় ঢুবে যাবে সেটা আমরা তিন জন বসেই বুঝতে পারলাম। নৌকা সেই ভাবে দুলতেছে। জারা ভয়ে একদম আমার পাশে চেপে বসলো।
।
ব্যাপারটা মোটেও সুবিধার নয়। কারন ভয়ে আমার হাত চেপে ধরছে জারা। একটু পর পরই দোল খাচ্ছে নৌকা আর সেই ভয়ে জারা আমাকে শক্ত করে আকড়ে ধরছে।
.
--দাদা নৌকা আস্তে চালান। এতো দুলছে কেনো।(আমি মাঝিকে বল্লাম)
.
--দাদা এটা নৌকা। স্রোতেই চলছে। একটু দুল তো খাবেই। আপনারা দুইজন শক্ত করে বসে থাকেন।(মাঝি)
.
--তাহলে তুমি বাসের এই কাঠটা শক্ত করে ধরে বসো।(আমি জারার হাত আমার হাত থেকে সরিয়ে দিয়ে আমি একটু সরে বসলাম)
.
--আমার না অনেক ভয় লাগছে। প্রথম নৌকায় উঠেছি তো। একটু ধরতে দেন আপনার হাত।(জারা আমার হাত ধরে বললো)
.
--দুর।(আমার রাগ আরো বেরে গেলো। আমি আর বেশী নিতে পারছি না এই প্যারাটিকে। এটার প্যারাই যদি সহ্য না হয় কিভাবে বউ এর প্যারা সহ্য হবে। জানি না নিলা কেমন হবে। আমি তো দেখা করমু না ওর সাথে। বাচ্চাদের তো এখন একটু ও ভালো লাগে না সেটা এই পাগলটাকে দেখে হারে হারে বুঝতে পারছি।
।
আমরা এই নদীটার ওপারে চলে আসলাম। এখানে একটা চটপটির-ফুসকার দোকা লন রয়েছে।
.
--চলুন আমি ফোসকা খাবো?(জারা)
.
--তোমার জন্য তো আমার সব টাকা চলে যাচ্ছে হুদাই।(আমি)
.
--কি আমার জন্য হুদাই টাকা যাচ্ছে। ঠিক আছে চলে যান। আমাকে নিয়ে যেতে হবে না।(জারা)
.
--তোমার মাথায় কি ছিট আছে। তোমাকে এখানে রেখে গেলে একা বাসায় কিভাবে যাবা। কিছু হলে পরে সব দোষ আমার উপরে যাবে। ফুসকায়ই তো খাবা। চলো খেয়ে তোমাকে দিয়ে আসি।(আমি)
.
--আমাকে বাসায় পাঠানোর জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছেন মনে হয়।(জারা)
.
--হ্যা। বাসায় গেলেই আর এমন পাগলের সাথে দেখা হবে নাতো।(আমি)
.
--যদি রোজ বিরক্ত করি?(জারা)
.
--আমি বিবাহিত জেনেও বিরক্ত করবা কেনো?(আমি)
.
--চলেন ফুসকা খেতে খেতে কথা বলি।(জারা)
।।।।
।।।।
আমি দুই প্লেট ফুসকা অর্ডার দিলাম। জারা বলতে লাগলো,
.
--নাম কি আপনার বউ এর।(জারা)
.
--নিলা।(আমি)
.
--কোন ক্লাসে পড়ে?(জারা)
.
--৯ম শ্রেনীতে মনে হয়।(আমি)
.
--পিক আছে ওর?(জারা)
.
--পিক দিয়ে কি করবা?(আমি)
.
--না আমার ক্রাশের সাথে যার বিয়ে হলো তাকে দেখবো না। সে কি আমার থেকেও বেশী সুন্দরী নাকি সেটা দেখবো।(জারা)
.
--আমি তোমার ক্রাশ হলাম কবে?(আমি)
.
--ক্রাশ না হলে কি আমি এতোক্ষন আপনার সাথে থাকতাম। যাকে চিনি না তার সাথে কি সাহস করে এতো সময় কাটাতাম?(জারা)
.
--যাইহোক। কোনো লাভ নাই এখন।(আমি)
.
--লাভ নাই মানে। আমি পিক দেখবো।(জারা)
.
--তার পিক আমার কাছে নাই।(আমি)
.
--কি???আপনার বউ এর পিক আপনার কাছে নাই।(জারা)
.
--হ্যা নাই।(আমি)
.
--তাহলে আপনিই বলেন সে কি আমার থেকেও সুন্দরী।(জারা মুখটা আবার খুলে আমাকে বললো)
.
--আমি তো তাকে এখনো দেখিই নাই তাহলে কিভাবে বলবো কে বেশী সুন্দর।(আমি)
.
--কি বললেন এখনো দেখেন নি তাকে। নিজে বিয়ে করেছেন কিন্তু বউ কে দেখেন নি কেমন বিয়ে করলেন?(জারা)
.
--জানি না। আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না।(আমি)
.
--বলবেন কিভাবে বিয়ে হলো।(জারা)
.
--না।(আমি)
.
--বলেন না প্লিজ।(জারা)
।।।।
।।।।
অনেক জোর শুরু করলো তাই বিয়ের কাহিনী তাকে বলেই দিলাম। আমার অসহায় এর কাহিনী শুনে সে তো হেসেই মরে যায়।
.
--হাসার কি বল্লাম?(আমি)
.
--আপনার কাহিনীটাই হাসার।(জারা)
.
--কি??(আমি)
.
--ওকে রাগবেন না।(জারা)
.
--আমাকে বলতে হবে মা আমি কি করবো।(আমি)
.
--আমি একটা বুদ্ধি দিতে পারি আপনাকে কাজে লাগাতে পারেন।(জারা)
.
--কি বুদ্ধি।(আমি)
.
--আমার সাথে মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করেন। আর সেটা দিয়ে আপনার উপর যে অবিচার হলো সেটার প্রতিশোধ নিবেন।(জারা)
.
--পাগল হইছো?(আমি)
.
--হ্যা। আমি জানি অনেক রেগে আছো। এতেই আপনার রাগ কমবে। ট্রাই করে দেখতে পারেন।(জারা)
.
--দরকার নাই।(আমি)
.
--ওকে আপনার ইচ্ছা।(জারা)
।।।।
।।।।
ফুসকা চলে আসলো। অনেকটা ঝাল হয়েছে। খেয়ে তো আমি শাশাচ্ছিলাম। জারার অবস্থা খুব করুন হয়েছিলো। ঝাল দিয়ে তো ঔ খেতে চেয়েছিলো। ওর জন্যই তো ওর এই অবস্থা। আমি কোনো রকম বিল দিয়ে বের হলাম। তার পর হাটতে লাগলাম। আমার ঠোট আর মুখ পুরে যাচ্ছে ঝালে। আর জারার দিকে তাকালাম। ওর তো চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।
.
--আমার না ঝাল একদম সহ্য হয় না।(জারা)
.
--তাহলে ঝাল ফুসকা খাই নাকি কেউ সহ্য না হলে।(আমি)
.
--আমি কি জানতাম এতো ঝাল ফুসকা হবে।(জারা)
.
--কিছুই করার নাই সহ্য করো। ঔপাড়ে গিয়ে আইসক্রিম কিনে দিবো।(আমি)
.
--আমার সহ্য হচ্ছে না।(জারা)....
।।।।
।।।।
জারা আর কিছু বললো না। উচু হয়ে সোজা আমার ঠোটে ঠোট রাখলো। ওর ঠোটের হালকা মিষ্টি লিপস্টিক এর স্বাধে আমার ঠোটের কিছুটা ঝাল এমনিতেই উধাও হয়ে গেলো। চোখ দিয়ে ওর দিকে তাকালাম দেখলাম চোখ বন্ধ করে আছে। আমি ওকে ঢেলে না দেওয়ায় আমাকে আস্তে করে জরিয়ে ধরলো দুহাত দিয়ে। মোটেও ভালোর দিকে যাচ্ছে না ব্যাপারটা। তাই আমি ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলাম ওকে।
.
--এটা কি করলা।(আমি রাগে বল্লাম)
.
--তাছাড়া ঝাল কমানোর কোনো উপায়ই আমি জানি না। এখন অনেকটা ঝাল কমে গিয়েছে।(জারা)
.
--কিন্তু কাজটা তুমি ঠিক করো নি।(যদিও আমারো ঝাল কমে গেছে তাও ঠিক না কাজটা)
.
--সরি আর হবে না এমন। আপনাকে আমি আর বিরক্ত করবো না। আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।(মাথা নিচু করে বললো)
.
--ঠিক আছে কিছু বল্লাম না। তবে যদি আবার আমাকে ফোন দাও তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম। এখন চলো তারাতারি।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি আসলেই অনেকটা রেগে গেছি। হয়তো আমার রাগের ভয়ে আর জারা কিছু বললো না। চুপচাপ নদী পাড় হলাম নৌকায়। এবার আর আমাকে ধরলো না। বাইকে ও এসে চুপচাপ বসে পরলো। কিছুই বললো না।
.
--কোথায় তোমার বাসা।(আমি)
.
--স্কুলের সামনে নামিয়ে দিলেই হবে।(জারা)
.
--ঔখানেই তোমার বাসা?(আমি)
.
--হ্যা স্কুলের পাশেই আমার ফ্লাট।(জারা)
.
--ওকে নামিয়ে দিচ্ছি সমস্যা নাই।(আমি)
।।।।
।।।।
আমি চুপ চাপ বাইক চালিয়ে ওকে স্কুলের সামনে নামিয়েই চলে আসলাম সেখান থেকে। একটু দূরে এসে মনে হলো জারা একটা প্রাইভেট কারে বসেছিলো। হয়তো আমার দেখার ভুল। ওকে দিয়ে আমি কি করবে আর। যা বলেছি ও বুঝতে পারছে। এখন আর আমাকে বিরক্ত করবে না।।।।বাসায় চলে আসলাম।।।।।
।
রাতে ডিনার করে পড়তে বসলাম। এবার একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো। না এইটা তো জারার নাম্বার না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে জারা তাই রিপ্লাই করলাম।
.
--আবার মেসেজ দিছো কোন সাহসে।(আমি)
.
--মানে আমি কি এর আগে আপনাকে মেসেজ দিয়েছি।(অচেনা নাম্বার)
.
--ও সরি আমি আপনাকে অন্য কেউ ভাবছি।(আমি)
.
--ও ঠিক আছে। কেমন আছেন?(অচেনা নাম্বার)
.
--ভালো। কিন্তু আপনি কে চিনলাম না আপনার নাম্বার?(আমি)
.
--আমি নিলা।(অচেনা নাম্বার)
.
--কোন নিলা?(আমি)
.
--কেনো চিনেন না বুঝি। যার সাথে বিয়ে হলো আপনার। আমি সেই নিলা।(নিলা)
.
--ও কিসের জন্য মেসেজ দিলেন?(আমি)
.
--কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে?(নিলা)
.
--দেখুন দেখা করতে বলবেন না প্লিজ আমি নিতে পারবো না আর।(আমি ভয়ে বল্লাম)
.
--না দেখা না। মেসেজেই ঠিক আছি।(নিলা)
.
--হুমমম বলেন।(আমি)
.
--আমাদের তো বিয়ে হয়েছে। কিন্তু আমি একটা ছেলেকে অনেক ভালোবাসি। আমার পক্ষে আপনাকে স্বামী হিসাবে মেনে নেওয়া সম্ভব নই।(নিলা)
.
--এসব কি বলতেছেন। মাথা কি গেছে নাকি?(আমি)
.
--আমি আপনার ছোট আমাকে তুমি করে বলেন। আর আমার মাথা যায় নি। বিয়ে হয়েছে আমাদের এটা আপনি মেনে নিলেও আমি মানতে পারবো না। আমাকে ডিভোর্স না দিলেও আমার সমস্যা নেই আপনি কখনো আমার মন পাবেন না। কারন আমার মন একজনের জন্যই রেখেছি আমি।(নিলা)
.
--এসব তোমার আম্মুকে বলতে।(আমি)
.
--আপনি যেমন মায়ের চাপে আমাকে বিয়ে করেছেন আমি ও আম্মুর চাপে এই কম বয়সেই আপনাকে বিয়ে করেছি। কিন্তু যা হয়েছে এটা আমি মানতে পারবো না।(নিলা)
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((((চলবে)))))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ৬ষ্ঠ পার্টের জন্য।