ওয়েবসাইট কাস্টমাইজেশন এর জন্য। Contact Us Welcome!

গল্প: ভালোবেসেছি তোরই মতো পর্বঃ ১২

Bangla Dub Novels

 #ভালোবেসেছি_তোরই_মতো

#পর্বঃ১২

লেখিকাঃ #শাদিয়া_চৌধুরী_নোন


জীবনের একটা দরজা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তখন বুঝবে অন্য আরেকটি দরজা তোমার জন্য আপনাআপনিই খুলে গেছে। আজ অনেক মাস কেটে গেলো।  নোরিন প্রায় বেরিয়ে এসেছে নিবিড়ের ট্রমা থেকে। তবে মাঝেমধ্যে সেই আগের দিনগুলো মনে আসলে, ও শুধু থমকে যায়। তখন ওর মন শুধু একটাই প্রার্থনা করে, "হে বিধাতা!  তুমি আমাকে নিবিড়ের সামনে কোনোদিন দাঁড় করিও না। তুমি জানোই আমি তাকে ভুলতে চাই। " 

নোরিন অসংখ্যবার এই প্রার্থনা করে। কিন্তু সে ভুলতে পারে না। উপর থেকে তার দোয়া কবুল হয়না। যতবার ভাবে ভুলে যাবে, তার চেয়েও বেশিবার মনে পড়ে যায়। 

এই এতোগুলো মাসে নোরিন কিংবা নিবিড় কেউই কারো সাথে যোগাযোগ করেনি। নোরিন সম্পূর্ণরুপে নানুবাড়ির সকলের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিলো। জেরু কয়েকবার আসতে চেয়েছিলো কিন্তু নোরিন সরাসরি তাকে আসতে মানা করে দেয়। পড়াশোনায় এখন উন্নতির শেখরে নোরিন। কেমেস্ট্রির সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়টা তার সবথেকে প্রিয়। সে একটানা বসে পুরো একটা খাতা লিখতে লিখতে  শেষ করতে পারে কোনো বিরক্তি ছাড়াই। বাংলা বইয়ে সবার কাছে বিরক্তিকর পদ্যটা নোরিন খুন মনোযোগ দিয়ে পড়ে। খুব ব্যাথিত মনে সে পড়াটা শেষ করে। একদিন তার ক্লাসের ঝর্ণা মিস তাকে অসম্ভব আদুরে গলায় ডেকে বললো,

---- ইউ আর ডুয়িং ভ্যারি ওয়েল মাই বেবি। তুমি দিনদিন সবাইকে ছাড়িয়ে যাচ্ছো। আমার মনে হয়, তুমি এবারে হাইয়েস্ট মার্ক নিয়ে রেঙ্ক করবে। তোমার পারফরমেন্স আগের চেয়ে ভালো। ক্যারি অন। আ'ম অলওয়েজ উইথ ইউ।

নোরিন কিছুই বললো না। তার মন তখন ম্যামকে অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করে বসলো,

---- আচ্ছা মিস? আমরা যে এতো এতো ফরমোলা ইউজ করে এতো কঠিন ম্যাথগুলোকে সল্ভ করি, আচ্ছা কোনো সায়িনটিস্ট কি সুখী হওয়ার ফরমোলা ডিসকাভার করেননি? অথবা ভুলে যাওয়ার দাওয়াই?  

বছর ঘুরতেই নোরিন ইয়ার চেঞ্জ এক্সামে সবচেয়ে ভালো রেসাল্ট করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলো। কলেজে এর আগে এতো ভালো রেঙ্ক কেউ করতে পারেনি৷ তাও সব বিষয়ে! ঝর্ণা মিস নোরিনকে মন ভরে দোয়া করে দিলেন। নোরিন আবার মনে মনে প্রশ্ন করলো, " মিস এখন কি আমি সুখী হতে পারবো? মন খুলে হাসতে পারবো?" 


আজমল আলী সেরনিয়াবাত মেয়েকে সময় পেলেই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। নোরিন আগে চুপচাপ থাকলেও সে মানসিক ভাবে সুস্থ ছিলো৷ এখন নোরিন যেন আরো দ্বিগুণ গম্ভীর হয়ে গেছে৷ অথচ সে সব কাজই নিয়মমতো করে। যেমন, সকালের চা করে দেওয়া, বিকেলে একসাথে টিভিতে নিউজ দেখা, আলোচনা করা, রাতে একসাথে খাবার খাওয়া, ঠাট্টা করা, ইউকেন্ডে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করা সবই ঠিক আছে কিন্তু তবুও কিছু একটা যেন হারিয়ে গেছে। আজমল আলী মেয়েকে হাসানোর চেষ্টা করেন। আজ সকালে নোরিনকে বললেন,

---- লিয়াকতকে বলেছিলাম কয়েক কেজি ইলিশ মাছ আনতে। তোমার তো ফেবারিট! কাল জিজ্ঞেস করতেই বললো, মাছ পাইনি। এই মৌসুমে ইলিশ মাছ পাইনি!  কি শাস্তি দেওয়া যায়? 


নোরিন কৌতুক ভরা চোখে তাকিয়ে বললো,

---- বাবা তুমি লিয়াকতকে পদ্মা নদীতে ফেলে দেবে। প্রতিটা ডুবে একটা করে ইলিশ তুলে আনবে। না পারলেই শাস্তি।  কঠিন শাস্তি।


---- ওই কুমড়োপটাশটা  আনবে মাছ? পরে দেখা যাবে ও'র তরমুজ পেট নিয়ে ভেসে উঠেছে। 


নোরিন আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে বললো,

---- বাবা!  তুমি বরং ওর ভুঁড়িটাকে ফুটবল বানিয়ে খেলো। খেলতে খেলতে দেখবে তোমার নিজের ভুঁড়িটাই আর নেই। ভালো না? 


--- হা হা হা মামণি! তা তুমি যে ছেলেটার কথা বলেছিলে রাশেদ৷ বাজে মেসেজ পাঠায়৷ সে কি আর তোমার পিছু নিয়েছে আর?  ওর নাম্বারটা পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠিয়েছিলাম৷ এখন কোনো অসুবিধা হচ্ছে?  


---- না বাবা। এভ্রিথিং ইজ অলরাইট  নাও। বাবা কি হয়েছে জানো? কাল একটা ছেলে ড্রাইভারকে ফুলের বুকে দিয়ে বলে, সিলমোহর সাইনে যেতে। খানিকটা ভাবও দেখালো৷ 


---- হা হা হা মামণি!  এনজয় দিস।  কিন্তু ভুলেও কোনো ছেলেকে মন দেবে না। এসবে এখন জড়ালে নিজের লাইফ ক্যারিয়ার সব শেষ। নিজেকে নিজের হাতে খুন করা৷ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো ছেলেটার হাতে তোমার হাতে তুলে দেবো। 


আজমল আলী মেয়েকে হাসাতে গিয়ে নিজেই ঘর কাঁপিয়ে হাসেন৷ কিন্তু নোরিন হাসে না৷ ঠোঁটটা একটু প্রশস্ত করে রাখে। সে মনে মনে বলে, বাবা মন দেওয়া তো হয়ে গেছে কিন্তু আর ফেরত নিতে পারিনি।  পৃথিবীর সেরা ছেলেটাকে আমি চাইনা। পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ছেলেটাকে বেছে নিয়েছে তোমার মেয়ে। তার হাতে সহস্রবার খুন হয়েছে। সে ভেতরের আমিটাকে শেষ করলেও একটা লাভ হয়েছে। বাবা সে একদিন আমার জন্য আফসোস করবে। আই এশিওর ইউ। তোমার মেয়ে কখনো হারতে শেখেনি। শেষ হাসিটা একদিন আমি, নোরিন সেরনিয়াবাত'ই হাসবে। 


নিজের প্রতি এতো অবহেলার পরও নোরিনের রুপ যেন দিনদিন বাড়ছে বৈ কমছে না। যতই তার বয়সের সংখ্যাটা যুবতী বয়সকে গ্রহণ করতে যাচ্ছে, ততই তার সৌন্দর্য যেন আশেপাশে ছড়িয়ে পরছে। প্রায় সকালে ঘুম ভাঙলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে, তার চোয়ালের নিখুঁত গড়ন, তার নিটোল ঠোঁট। ঘাড় সমান খাঁজকাটা পেঁয়াজি রঙা চুল। হাতে- পায়ের যেখানে মাংসের অভাবে তাকে রোগা দেখায়,সেসব জায়গায় হালকা ফোলাভাব দেখা দিয়ে একটা আশ্চর্য সুন্দর গড়নে রুপ নিয়েছে। তার হাতে সামান্য চাপ লাগলেই রক্তিম লাল আভা সৃষ্টি হয়, একটু সর্দি হলেই নাক লাল হয়ে যায়।  তার গাম্ভীর্যতা, নিস্তব্ধ-নীরবতা যেন নিজের আভিজাত্যকে অনন্য  উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। বাইরের মানুষের কাছে সে খুব সুখী, হাসিখুশি এবং অহংকার নিমজ্জিত একটা মেয়ে কিন্তু একমাত্র সেই জানে,  নোরিন কীভাবে নিজেকে পুরো পৃথিবী থেকে আড়াল করে রেখেছে। ভেতরে সে একেবারেই প্রাণহীন  একটা ফুল যেটা, বহুদিন পানির অভাবে মারা যাচ্ছে। একটু পানি ছুঁয়ালেই এক্ষুনি বাঁচতে পারে। কিন্তু পানি গ্রহণ করতে সে নারাজ। দরকার পরলে মরে যাক তবুও সে পানি ছুঁয়াবে না। 


🍁

🍁


আজ নোরিনের কলেজে এনুয়্যাল ফাংশান। নোরিন গান করবে। সকালে কলেজে এসে একবার অফিসে একবার ক্লাসে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে তাকে। অনুষ্ঠান হিসেবে বিশেষভাবে সাজাইনি সে নিজেকে। একটা হুডিওয়ালা জ্যাকেট পড়ে জিপ খোলা রেখেছে,  ভেতরের কালো স্ট্রাইপ গেঞ্জি,  কুচকুচে কালো রঙে গায়ের সাথে লাগানো টিপটপ জিন্স। কালো বুট জুতা। পার্লারে গিয়ে স্পেশাল করে শুধু চোখজোড়াকে সাজিয়েছে। গাড় কাজল এবং অন্যান্য উপাদানে সজ্জিত চোখজোড়ার দিকে তাকালে যে কেউ গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যাবে এমন অবস্থা। কাঁধে গিটার তুলে যখন সে হাঁটছে উপস্থিত ছেলের মধ্যে যেন এক চাপা উচ্ছাস, উত্তেজনা।  কি মোহময়ী!আবেদনময়ী অধরা নোরিন!  ছেলেদের আকৃষ্ট করার মতো সব গুণ নিয়ে জন্মেছে সে তবুও নিজের ব্যাপারে বরাবরই অনীহা তার। নিজের জন্যই গাফিলতি। গায়ের মাতাল করা সুগন্ধি যেন তারা কয়েক মিটার দুরত্বে থেকেও উপভোগ করতে পারছে। 


নোরিন অডিটোরিয়ামে নিজের গান পরিবেশন করলো। কিছু কিছু গান আছে যা অনুভূতি ছাড়া প্রকাশ করা যায় না। অনুভূতি ছাড়া গান অসম্পূর্ণ মনে হয়। গান গেয়ে যদি কষ্ট কমানো যায়, চোখ ভিজে আসে,  কিছু স্মৃতি মানসপটে ভেসে আসে তাতেই গায়কের স্বার্থকতা। নোরিন গিটারের হাত দিলো। 


  "এলোমেলো ইচ্ছে যত, 

 ভালোবেসেছি তোরই মতো। 

  ডুবে আছি আজও তোরই প্রেমে

 জীবন সঁপেছি তোরই নামে! 

 এ'কি সাথে পথ চলা

  কত কথা ছিল বলার....

 সব যেন আজ শুধু স্মৃতি হলো

জানি না এ কোন রাত এলো!" 


নোরিন ঝাপসা ভেজা চোখে সামনে তাকালো। তার ইচ্ছে হচ্ছে এক্ষুনি দৌড়ে পালায়। আচমকা নোরিনের ভ্রু কুঞ্চিত হলো। এ-কি! এ কাকে দেখছে সে? নিবিড়!  নিবিড় এই সময় এখানে কি করছে? 


#চলবে

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.