পার্ট: ০৭
লেখকঃ হৃদয় বাপ্পী
।।
।।
রাতে মেঘলার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম নিজেই জানি না।সকালে ঘুম থেকে উঠলাম বাবার ডাকে,
.
--তুই এটা কি করলি।(বাবা)
.
--কেনো কি করলাম।(আমি)
.
--তুই আবার চলে আসলি কেনো।(বাবা)
.
--দেখো আমি চায় না আমার জন্য আম্মু কষ্ট পাক।এজন্য আমি চলে এসেছি।(আমি)
.
--ও আচ্ছা তুই যেটা ভালো মনে করিস কর।(বাবা)
.
--এখানে কি কথা হচ্ছে।(আম্মু এসে বললো)
.
--না কিছু না।(আমি)
.
--হ্যা শোন বাবা।আজকে তুই নিধির সাথে দেখা করবি।(আম্মু)
.
--এই নিধিটাকে।(আমি)
.
--কেনো তোর বিয়ে যার সাথে ঠিক করেছি।আমার বান্ধুবীর একমাত্র মেয়ে।(আম্মু)
.
--তা এখন দেখা করবো কেনো বিয়ের পরই তো দেখা করা যাবে।(আমি)
.
--না ও তোর সাথে দেখা করতে চাইছে।আজকে বিকালে তুই কপিশপে গিয়ে কথা বলে আসবি।(আম্মু)
.
--কিন্তু।(আমি)
.
--আর কোনো কিন্তু নাই।যা বলছি তাই করবি।(আম্মু)
.
--আচ্ছা।(আমি)
.
--তুমি এখানে কি করছো।আমার ছেলের মাথায় যদি কোনো কুবুদ্ধি দাও তাহলে কিন্তি তোমার খবর আছে।(আম্মু বাবাকে বললো)
.
--না আমি আবার কি বলবো।(বাবা)
.
--তাহলে চলো।বিয়ের আগে ওকে একা সময় দাও।(আম্মু)
।।।।।
বাবা আর আম্মু চলে গেলো।দুর আমার বিয়েটা দিয়েই দিবে।আচ্ছা মেয়েটার সাথে তো কথা হবে তাহলে মেয়েটাকেই নাহয় সব খুলে বলা যাবে।আর আমার মনে হয় আমার কথা শুনে মেয়ে এমনিই বিয়ে করবে না।আর ওর বফ থাকলে তো কথায় নাই।পালিয়ে চলে যাবে ও আর আমার বিয়েটাও হবে না।যাক বাবা তাহলে একটু ভরসা আছে।ফ্রেস হয়ে সকালের নাস্তা করে রুমে এসে মনের শানৃতিতে একটু গেইমস খেলতে লাগলাম।এই একটাই কাজ যেটা করলে আমি সব চিন্তা সব কষ্ট থেকে দূরে থাকি।তাই যখন কষ্ট হয় তখন একটু বেশী গেইম খেলি।দুপুরে গোসল করে খাবার খেয়ে রুমে আসলাম।একটু ভালো ভাবে সেজে নিলাম।তারপর বাইরে আসলাম,
.
--সালাম চাচা চলেন যাই এখন গাড়িটা বের করেন।(আমি)
.
--এই তো বাবা দারাও বের করতেছি।(সালাম চাচা আমাদের বাসার ড্রাইভার)
.
--সালাম ভাই আজকে আপনাকে যেতে হবে না হৃদয় একাই যাবে আজকে চাবিটা ওর কাছে দেন।(আম্মু)
.
--আম্মু কেনো আমি তো ভালো করে চালাতে পারি না।চাচা তো আছে না।(আমি)
.
--তুই আমার বউ মার সাথে দেখা করতে যাইতেছিস তাহলে তো একটু স্টাইলিস্ট হয়ে যাবি।এজন্য গাড়িটা তুই চালিয়ে যাবি।(আম্মু)
.
--হ্যা বাবা ভাবি ঠিক ই বলেছে এই নাও গাড়ি আজকে তুমি নিয়ে যাও।দেখবা মেয়ে তোমাকে দেখেই পাগল হয়ে যাবে।(সালাম চাচা)
।।।।।
গাড়ি নিয়ে চল্লাম আম্মুর বলা কফিশপে।চাচা কি বললো।আমি তো আর মেয়েকে পাগল করবো না।মেয়েটাকে তো আমি আরো ঘৃণা করাবো।একটু ক্ষেত ক্ষেত হওয়া যাক।শার্ট টার ভাজ নষ্ট করলাম চুল গুলো এলিয়ে দিলাম।থাক আর বেশী করলে তো আয়নায় নিজেকে দেখলেই কান্না আসবে।চলে আসলাম কফিশপে।গাড়িটা পার্ক করে ভিতরে ঢুকলাম।দুর সব শুধু ডাবাল এখানে।কি যেনো নাম বললো মেয়েটার আম্মু।দুর মনে নাই।এখন আমি খুজবো কিভাবে।মেয়েটার তো কিছুই আমি জানি না।কেমন দেখতে তাও তো জানি না।
।।।
।।।
হঠাৎ একটা ডাক শুনলাম এইযে মিস্টার এদিকে আসেন।
।।।।
আমি ও দেখলাম একটা মেয়ে আমাকে ডাক দিলো।আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আমি ও পাশে গিয়ে,
.
--হ্যা কিছু বলবেন।(আমি)
.
--হ্যা বলার জন্যই তো আপনার আম্মুকে বলেছি আমরা দেখা করবো।(মেয়েটা।)
.
--ও তাহলে আপনি সেই।(আমি)
.
--কেনো আমাকে অন্য কেউ ভেবেছেন নাকি।(মেয়েটা)
.
--না তা না।(আমি)
.
--আচ্ছা ওকে বাদ দেন।আমি প্রথম কথায় আসি আমি এভাবে আপনি করে বলতে পারবো না।(মেয়েটা)
.
--ঠিক আছে যা বলার বলবেন।
.
--আমি তুমি করে বলবো।আর তুমিও আমাকে তুমি করে বলবা।(মেয়েটা)
.
--আচ্ছা চেষ্টা করবো।(আমি)
.
--চেষ্টা করলে হবে না বলতেই হবে।
.
--আচ্ছা বলবো।(আমি)
.
--হুমমমম এখন পরিচিতো হওয়া যাক।আমার নাম নিধি চৌধুরী।এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার।(নিধি)
.
--আমার নাম
.
--বলতে হবে না।তোমার নাম হৃদয় বাপ্পী।বাবা মার একমাত্র সন্তান আমার মতই।তোমার বাবা খান ইন্ডাস্ট্রিস্ট এর মালিক।কিন্তু তিনি এত বড় মানুষ হওয়া সত্যে ও তোমার আম্মুর কথায় উঠে বসে।আর তোমার আম্মু তোমাকে আর তোমার বাবাকে যা বলবে সেটা তোমরা করো।(নিধি)
.
--বাবা তুমি তো দেখি সবই জানো।(আমি)
.
--হুমমমম তোমার ব্যাপারে সবই বলেছে আমার আম্মু।(নিধি)
.
--ভালো।
.
--আমার ব্যাপারে আরো কিছু কথা আছে যেগুলো তোমার জানা উচিত।(আমি)
.
--আমার তো মনে হয় না আরো কিছু কথা আছে তোমার ব্যাপারে কারণ আম্মু তো এই একসপ্তাহ শুধু তোমার সব কথায় বলেছে আমাকে।(নিধি)
.
--আছে আরো কিছু কথা।(আমি)
.
--ওকে বলো শুনি।(নিধি)
.
--আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম।(আমি)
.
--শুধু ভালো বাসতা তো।।।আর তো কিছু হয় নাই।(নিধি)
.
--না আর কিছু হয় নাই আমাদের মাঝে।(আমি)
.
--হুমমম বুঝলাম।ভালো।(নিধি)
।।।।
মনে হচ্ছে কাজ হয়ে যাবে।ও মনে হয় আর এই বিয়ে করবে না।
.
---তোমার কি মনে হচ্ছে আমাকে এই কথা বলবা একটু আনস্মার্ট হয়ে আসবা আর এতেই আমি তোমাকে বলবো যে আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।(নিধি)
.
--হ্যা।(আমি)
.
--দেখো আমার শ্বাশুরী বলে দিছে তুমি এখনি বিয়ে করবা না।এজন্য এমন কিছু কথা আমাকে বলবা।তুমি যাই বলো না কেনো আমি তোমাকেই বিয়ে করতেছি।(নিধি)
.
--কেনো তোমার কোনো বফ নাই।তার সাথে পালিয়ে যাও।(যানি আমার প্রেম এর কথা বললে ও আর কাজ হবে না তাই অন্য কিছু বলে কাজ করাতে হবে)
.
--হুমমম ছিলো।২ মাসের প্রেম ছিলো।(নিধি)
.
--তাহলে ওর সাথে পালিয়ে যাও।(আমি)
.
--দুর নিজের পায়ে কেউ নিজেই কুরাল মারে নাকি।(নিধি)
.
--বুঝলাম না।(আমি)
.
--আমি সব সময় চেয়েছি আমার শ্বাশুরী যেনো আমাকে নিজের মেয়েই ভাববে।আর তোমার আম্মু তো আমাকে সব সময় নিজের মেয়েই ভাবে।তারপর আবার তোমাদের টাকার কোনো অভাব নাই।আমি তো সব সময় খুশি থাকবে।(নিধি)
.
--ও তাহলে তুমি আমার বাবার টাকার জন্য তোমার বফকে ছেড়ে দিছো।(আমি)
.
--না সেটা না।আমি ওকে বলেছিলাম চলো পালিয়ে যাই।কিন্তু ও তো ভয়েই আমার সাথে ব্রেকআপ করে দিছে।তাই আমি ও চিন্তা করলাম বিয়ের পর তো টাকা ও থাকবে,শ্বাশুরি ও ভালো,আর বর তো আছেই যে কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না।(নিধি)
.
--তুমি তো আমার বাবার টাকাকে বিয়ে করতেছো আমাকে না।(আমি)
.
--তোমার এইসব বলে তো আর কিছুই হবে না।আমাকেই বিয়ে করতে হবে তোমাকে।(নিধি)
.
--হুমমম এছাড়া তো কোনো রাস্তা আর দেখতেছি না।(আমি)
.
--হুমমমম জানো আমি না আমার মন মতো কোনো দিন শপিং করতে পারি নাই।কিন্তু বিয়ের পর ১ মাস পর পর ই মন মতো শপিং করতে যাবো।আর হ্যা হানিমুনে কিন্তু আমরা সুইজারল্যান্ড যাবো।(নিধি)
।।।।।।বলে কি এই মেয়ে আমি আরো বিয়েটা ভাঙ্তে চেষ্টা করলাম।আর উনি তো হানিমুন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো।না এখান থেকে কেটে পরতে হবে।।।।।
.
--না আসলে আমার না কাজ আছে একটু এখন যেতে হবে।(আমি)
.
--ওকে তাহলে আমার আমার বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে যেও।(নিধি)
.
--আচ্ছা চলো।
।।।।
গাড়িতে করে যাচ্ছি একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে ও।আমার কানটা খেয়ে দিলো নিধি।
.
--এই এখানে রাখো।(নিধি)
.
--এইটা তোমার বাসা।(আমি নিধিকে বললাম)
.
--হ্যা এটাই আমার বাসা।আর আমার বাবা।(নিধি)
.
--থাক আর বলতে হবে না।তাহলে।(আমি)
.
--হ্যা আমি সব মিথ্যা বলেছি আমার ব্যাপারে।আর এখন এই ভেবো নাজে তোমাকে বিয়ে করতে আমি রাজি না।আমি তোমাকেই বিয়ে করবো।।(এই বলে নিধি চলে গেলো বাসায়)
।।।
।
তাই তো বলি বাবা আমাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করলো কেনো।আমি তো আগে জানলে আর এই সব কান্ড করতাম নাকি।কিন্তু এখন তো আর কিছুই করার নাই।বাবা তো মোটেও খুশি না এই বিয়েতে।বাবার চিরশত্রু আফজাল চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে নিধি চৌধুরীর সাথে আমার বিয়ে এটা তো বাবা মানতে পারবে না।তাই আমাকে পালিয়ে যেতে দিয়েছিলো।যাইহোক এখন বাবার শত্রুর মেয়েকে কিভাবে বিয়ে করি।বাবাও তো কষ্ট পাবে।কিন্তু নিধি ও তো এক কথার মেয়ে।আমি তো জানি এক সাথে ক্লাস 5 পর্যন্ত পরেছি।অনেক জেদি ও।হায় আল্লাহ আমার জীবনে ৩ টা মেয়েই আসলে ৩ টায় এতো জেদি কেনো।এক আমার আম্মু আমাকে বিয়ে দিবেই।আর এক নিধি আমাকে বিয়ে করবেই।আর মেঘলার খবর তো আমি জানি না।না জানি বেচারি এখন কি করতেছে।এভাবে ওর জীবনটা নষ্ট করা হয়তো আমার উচিত হয় নাই।কিন্তু এখন আমার তো আর কিছুই করার নাই।দেখি নিধিকে কিছু একটা বলে দেখি।কিন্তু কিভাবে আমার কাছে তো ওর নাম্বর নাই।গাড়ি নিয়ে বাসায় আসলাম।
বাসায় এসে আম্মুকে
.
--আম্মু তোমার মোবাইলটা দাও তো।(আমি)
.
--কেনো বউ মা নাম্বার দেই নাই।(আম্মু)
.
--না।।।আরে না সেজন্য না।(আমি)
.
--আমি জানি কিজন্য নিবি জানতাম বউমা পছন্দ হবে তোর।দেখ বউমা নামে সেভ করা আছে।(আম্মু)
.
--আচ্ছা তুমি বুঝলা কেমনে আমি ওর নাম্বার নিবো।(আমি)
.
--সেটা তো বলা যাবে না।যা কথা বল যা।(আম্মু)
।।।।।।
নাম্বারটা নিয়ে চলে আসলাম।ফোন দিয়ে যেভাবেই হোক এই বিয়েটা ভাঙতে হবে।
।।।
।।
।
(চলবে)