ওয়েবসাইট কাস্টমাইজেশন এর জন্য। Contact Us Welcome!

গল্প: ভালোবেসেছি তোরই মতো পর্বঃ ১৩

Bangla Dub Novels

 #ভালোবেসেছি_তোরই_মতো

#পর্বঃ১৩

#লেখিকাঃশাদিয়া_চৌধুরী_নোন


আচমকা নোরিনের ভ্রু কুঞ্চিত হলো। এ-কি! এ কাকে দেখছে সে? নিবিড়!  নিবিড় এই সময় এখানে কি করছে? 

নোরিনের হঠাৎ কি হলো সে জানে না। সে গানটা কোনোমতে গাওয়া শেষ করলো। আনন্দে তার মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা।  নিবিড় নিশ্চয় তার সাথে দেখা করতে এসেছে! নিশ্চয়ই তাকে না দেখে এতোদিন থাকতে পারছিলো না। নোরিন যেন নিজের মাঝে নেই৷ ডিপ ব্লু শার্টে নিবিড়কে মারাত্মক লাগছে। নোরিনের মস্তিষ্ক বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, 'তুই যাস না। আবার তোকে অপমান করবে। নোরিন নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখ। ' 

নোরিন মস্তিষ্কের কথা শুনলো না। এতোদিনের জমিয়ে রাখা সমস্ত মান-অভিমান, জেদ-ঘৃণাকে তুচ্ছ করে নিজেকে নিবিড়ের সামনে দাঁড় করালো। নোরিন আকুতিভরা খুশী খুশী চোখে তাকিয়ে আছে নিবিড়ের দিকে। আর নিবিড়?  সে তো ভ্রু কুঁচকে নোরিনকে দেখেই চলেছে। 

---- নিবিড় তুমি আমার সাথে দেখা করতে এসেছো তাইনা? 


নোরিনের সমস্ত বিশ্বাসকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়ে নিবিড় বললো,

---- প্রশ্নই আসে না! তুই এই কলেজের স্টুডেন্ট  আমি জানতামই না।  আমি তো এসেছি একটা জরীপ করতে। আমাদের ভার্সিটি থেকে একটা প্রজেক্ট নিয়ে পুরো বাংলাদেশের ভালো ভালো কলেজ বাছাই নিয়ে জরীপে নেমেছি। তোকে পেলাম ভালোই হলো। আমাদের একটু সাহায্য কর বোন! তোকে তো পপ সিঙ্গারের মতো লাগছে৷ চোখে এসব কালি-টালি কি দিয়েছিস?


নোরিনের মাথা ঘুরে গেলো নিবিড়ের কথা শোনে। কথার খেই হারিয়ে ফেললো মুহূর্তেই। মুখে ভর করলো আকাশের কালো মেঘ। দাঁতে দাঁত চেপে কোনোরকম কান্না আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো। এতোগুলো মাস পর নিবিড়ের সামনে উপস্থিত হলো এই কথা শুনতে? এতো খারাপ কেনো নিবিড়?  আর কতো নিজেকে ছোট বানাবে নিজেকে নোরিন? আর কতো কষ্ট পাবে! 


নিবিড়কে এড়িয়ে নোরিন চোখ মুখ খিচে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। এই বাজে লোকটার সামনে আর আসবে না ও। কয়েক কদম এগুতেই জ্যাকেটের হুডিতে টান পরলো যেন। নোরিন পেছনে ফিরলো। শয়তান পাজিটা এখন তার জ্যাকেট ধরে টানাটানি করছে৷ কি ভয়ানক অসভ্য! নিবিড় মুচকি হাসি হাসতেই, নোরিনের সমস্ত রাগ যেন কর্পূরের ন্যায় উবে গেলো। বুকের বা পাশ দিয়ে যেন আস্ত একটা বোঝা নেমে হালকা হলো। 


---- কোথায় যাচ্ছিস? একটু আপ্যায়ন-টাপ্পায়ন কর!  এরা আমার ফ্রেন্ড। 


নোরিন চোখ ঘুরিয়ে সবার দিকে তাকালো। এতোক্ষণ তো খেয়ালই করেনি। প্রায় ডজনখানেক ছেলে নিয়ে এসেছে নিবিড়।  প্রত্যেকেই উজবুকের মতো তার দিকে তাকিয়ে আছে। নোরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওদের মতিগতি বুঝতে পারলো। জ্যাকেটের জিপ টেনে নিয়ে প্রিন্সিপাল ম্যামের কক্ষ চিনিয়ে দিতেই সবাই রুমের ভেতর চলে গেলো। ম্যাম ভীষণ ব্যস্ত হয়ে কাগজ-পত্র ঘেটে কি যেন করছে। চোখে-মুখে উদ্দীপনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এতোগুলো ব্রাইট স্টুডেন্ট তার সামনে দাঁড়িয়ে।  প্রত্যেকেই দেশের সম্পদ, ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। তিনি আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। 

নোরিন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ নিবিড় নামক অশান্ত ছেলেটা যতক্ষণ না সে আসছে,  এখানে অপেক্ষা করতে বলেছে। নোরিনের একটা গাছের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।  বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেলো। নিজেকে আবার ছোট করেছে সে৷ জীবনটা যে চোখের পলকেই কীভাবে এতো এলোমেলো হয়ে গেলো বুঝে আসে না তার৷ নিবিড় এমনভাবে কথা বলেছে যেন সবকিছুই স্বাভাবিক। ঐ চিঠির কথা, সেদিনে গার্ডেনে বলা কথাগুলো সবকিছু এড়িয়ে গেছে। মুখে তার ছাপটুকু পর্যন্ত নেই৷ নোরিনের দৃষ্টি ছলছল করছে। তাহলে কি নিবিড় সেইসব কথা ভুলে গেছে৷ জীবনের প্রথম নিজের অপ্রকাশিত ভাবনা বলে বেড়ানোর প্রমাণ কি সে ভুলে গেলো? কই নোরিন তো ভুলে যেতে পারেনি৷ প্রতি রাতে সে ধুঁকে ধুঁকে মরে। নোরিনের চোখ আবার ভিজে আসছে। এতোদিন পরেও নিজেকে শক্ত রাখতে পারেনি সে৷ ঠিকই যেচে চলে গেছে নিবিড়ের সামনে৷ আর নিবিড়, সে তো যেন কিছুই জানে না। সত্যি কি আপনি কিছু জানেন না? জানেন নিবিড় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্ট   কোনটি? পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো একতরফা ভালোবাসা। আর তারচেয়ে বড় কষ্ট হলো আমি আপনাকে ভালোবাসি সেটা আপনি জানতেন, কিন্তু এখনো যে ভালোবাসি তা জানেন না। প্রথম প্রেমের যন্ত্রণা আপনি বুঝবেন না নিবিড়।  প্রথম প্রেমের যন্ত্রণাটা মৃত্যুর মতোই ভয়ানক, যন্ত্রনাদায়ক। সবকিছুকে তো নিজের মতো মানিয়ে নিয়েছিলাম এতোদিন। আবার কেনো এলেন আপনি? আপনাকে এতো করে চাইলাম, কই আপনি তো ধরা দেননি। তবুও কেনো আসলেন? 


----- বুড়ি! 


নোরিনের ভাবনার মাঝেই নিবিড় তাকে পেছন থেকে ডাকলো। নোরিন জলদি চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে পেছন ফিরলো। নিবিড় হাত ভাঁজ করে সরু চোখে তাকিয়ে আছে। নোরিনের মনে পুরনো ক্ষতটা জ্বলজ্বল করে উঠলো যেন৷ হার্টবিট লক্ষ গুনে ছুটতে লাগলো। গলা শুকিয়ে এলো আর অসম্ভব রকমের বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো। 


---- বেরিয়ে এলেন যে? বাকিরা আসলো না! 


---- ওরা কাজ করছে। আমি ওদের টিম লিডার। ওদের কাজ শেষ হলেই আমার কাজ শুরু। 


--- ওহ! 


তারপর পিনপিতন নীরবতা। দু'পক্ষই চুপচাপ। নোরিন আনমনে সামনে হাঁটতে লাগলো। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পায়ে ঝিম ধরে গেছে। নিবিড়ই এবার মুখ খুললো,

--- তোহ.... দিনকাল কেমন কাটছে? সব ঠিকঠাক? 


--- হ্যাঁ... বেঠিক হওয়ার তো কোনো কথা নয়। 


--- তা বুড়ি প্রেমট্রেম করছিস তো? তোদের বয়সী মেয়েরা তো দশ-বারোটা প্রেম করলেও বলে, আমি জন্মগত চিংগেল! হুহ... তুই কয়টা করছিস বল। 


নোরিনের ইচ্ছে হলো এক্ষুণি নিবিড়কে ল্যাবে নিয়ে যায়৷ তারপর শরীরের ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে পরীক্ষা করবে। এতো বজ্জাত ছেলে এই দুনিয়ায় কেনো! ব্যাটা যেন দুধের বাচ্চা!  শোন, তোকে আমি একটুও ভালোবাসিনা বুঝলি? তুই  আমার সামনে থেকে দূর হ। তোকে আমার সহ্য হচ্ছে না। তোকে আমি একটুও ভালোবাসি না। নোরিনের মুখ দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আবার। ছোট্ট করে জবাব দিলো,

--- প্রেম জীবনে একবারই আসে নিবিড় ভাইয়া। আমার জীবনেও একবার এসেছিলো। সুনামির মতো লন্ডভন্ড করে দিয়ে চলে গেছে। 


নিবিড় ইতস্তত করে খুশ খুশ করতে লাগলো। হালকা ঝেরে কাশলো। চোখ পিটপিট করে যেন নিজেকে শান্ত করতে চাইলো সে। হঠাৎ নোরিনের কানে ফিসফিস করে বললো, 

---- শুনেছি,  সুন্দরী মেয়েদের গায়ে নাকি কলঙ্ক বেশি। তোর আছে নাকি কলঙ্কের দাগ? কতজনের আছে? 


নোরিনের সমস্ত শরীর যেন ঘিনঘিন করে উঠলো। এক মুহূর্তের জন্য পা আটকে দাঁড়িয়ে রইলো। নিশ্বাস ফেলতেও ভুলে গেলো। চোখ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো। 

----- আপনি ভীষণ খারাপ নিবিড় ভাই। আপনি আর কোনোদিন আমার সামনে আসবেন না। 

আর একমুহূর্ত দাঁড়ালো না নোরিন। দুনিয়া ভেঙে কান্না আসছে তার। বারবার ভাঙছে সে। মুখ বুজে সহ্য করে আজ সে আবার প্রতিজ্ঞা করলো, সে নিজেই নিবিড়ের সামনে আর আসবে না। 


এই ছিলো তাদের দেখা হওয়ার মুহূর্ত। নোরিন আবার নিজেকে ব্যস্ত করে ফেললো। নিবিড় নামক কোনো প্রাণীর যেন কোনো অস্তিত্বই নেই এমনভাবে নিজেকে বদলে ফেললো। সামনে থাকলে হয়তো গলে যাবে এই ভয়ে নোরিন একেবারে নিবিড়ের সামনে আসা পর্যন্ত কমিয়ে দিলো। সময় অতিবাহিত হলো।  তিন কি চার মাস পরের কথা,


এক বৃষ্টিস্নাত বিকেলে নোরিন বিছানায় আয়েশ করে পড়ছিলো। লাইলা এসে বলে গেলো, নিচে তার কাজিন গ্যাং এসেছে। নোরিনকে ডাকছে। লাইলা আরো বিশেষভাবে বললো, সেইদিনের সেই সুন্দর, লম্বা জিরাফ ছেলেটাও এসেছে। নোরিন নিচে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললো।  ভীষণ মনোযোগী হওয়ার ভঙ্গিতে লাইলাকে বললো,

---- আমি ভীষণ ব্যস্ত লাইলা! ভীষণ ব্যস্ত! জগতের পড়া বাকি আছে। দেখো,  আস্ত চল্লিশটা মডেল কোইশ্চ্যেন আজ আট ঘণ্টার মধ্যে কমপ্লিট করতে হবে। ইটস আরজেন্ট। তুমি একটা কাজ করো। নিচে গিয়ে বলবে,  আমি দেখা করতে পারবো না। আমার পড়া আছে। পড়তে পড়তে নাজেহাল অবস্থা।  তুমি ওদের খাইয়ে দাইয়ে বিদেয় করো। থাকতে চাইলে থাকবে। আমি দেখা করছি না। 


নোরিন দরজাটা লক করে বুক চেপে বসে পড়লো মেঝেতে৷ আজ আর পড়া হবে না তার। সবই বাহানা৷ 

সেইদিনের মতো সবাই চলে গেলো। লাইলার কাছে শুনেছে, নিবিড় নাকি বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে গেছে। কেনো গেছে তা অজানা। নোরিন মুখ বাঁকা করে হাসলো। গেলে যাক, তাতে ওর কি হুহ! 


ভীষণ কঠিন হয় সেসব মানুষ, যাদের মনের ভেতরটা বারবার ভেঙেছে। নোরিনও নিজেকে কঠোরে পরিণত করেছে। আরো চারটা মাস কেটে গেলো। নোরিনের মন এখন অনেকটা ফুরফুরে। নিবিড়ের যন্ত্রণা এখন আর আগের মতো পীড়া দেয়না। দেওয়ার কোনো রকম পন্হা সে অবশিষ্ট রাখেনি৷ সবকিছু বন্ধ৷ ভুলেও যোগাযোগ হওয়ার বা সামনে পরার কোনো সুযোগ নেই।  একটু একটু সাজিয়ে নিয়েছে নিজের জীবনটাকে। 

এরই মাঝে একদিন খবর এলো নিবিড়ের বড় ভাই শীতল ভাইয়ার বিয়ে। নানুমণি, নিবিড়ের মা-বাবা দুজনেই নোরিনের বাবাকে আলাদা আলাদা ফোন করে দাওয়াত দিয়ে রেখেছে। বিয়ে তাদের বাড়িতেই হবে। নোরিনকে আগে পাঠিয়ে দিতে বলেছে৷ কিন্তু নোরিন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলো সে কিছুতেই যাবে না। যাবে না মানে, কোনো মতেই যাবে না। অজুহাত হিসেবে রাখলো সামনে পরীক্ষা।  পাবলিক এক্সাম৷ এসব বিয়েটিয়েতে যাওয়া মানেই সময় নষ্ট।  আজমল সাহেব মেনে নিলেন। মেয়ে তার বরাবরই পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস।  তাছাড়া, তিনি হাজারবার বললেও নোরিন যাবে না। ভীষণ একরোখা, জেদী হয়েছে একেবারে মায়ের মতো। 


তার ঠিক দিনদুয়েক পরের কথা। নিবিড় এসে হাজির। আজমল সাহেব বললেন, ' নোরিন তো যাবে না। তুমি বলে দেখো তোমারই তো বোন৷ ' মুখে এসব বললেও আজমল আলী জানেন, নোরিন কারো কথা শুনবে না। 


লাইলাকে দিয়ে খবর পাঠাতেই, নোরিন যথারীতি আগের অজুহাত দিয়ে নিশ্চিন্তে পড়তে শুরু করলো৷ হয়তো চলে গেছে এতোক্ষণে। কিন্তু ওর ধারণাকে ভুল করে মিনিট কয়েকের মাঝে নিবিড় স্বয়ং ওর রুমে এসে হাজির। নোরিন ভয়ে চেয়ার ছেড়ে দূরে সিটকে পরলো। 


#চলবে

(আসসালামু আলাইকুম। গল্পের কোন চরিত্রটি আপনার সবচেয়ে প্রিয় এবং চরিত্রটি নিয়ে আপনার মতামত কি জানতে চাই। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি৷ ধন্যবাদ।)

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.