পার্টঃ১৩(শেষ)
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী(পিচ্চি)
।।।।।
।।।।।
।।।।।
আমি নিলাকে প্রথম থেকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম কারন প্রথমেই যদি পরের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি তাহলে মাথায় চাপ পরবে। তাই আমি আগের প্রশ্ন শুরু করলাম।
.
--নিলা।(আমি)
.
--হুমমম।(নিলা)
.
--আমি তোমার বয়স কমিয়ে দিবো। আজ থেকে ৯ বছর পূর্বে। তখনো তোমার বিয়ে হয়নি। তুমি তখন কোথায় ছিলে?(আমি)
.
--আমি আমার মামা বাসায় ছিলাম। আম্মু অনেক করে বললো যে বাসায় আসতে। বাসায় আমিই যেতে চাচ্ছিলাম। কারন আমি জানতাম আমার বিয়ে ঠিক করবে আম্মু।(নিলা)
.
--ও তুমি কিভাবে জানতে যে তোমার বিয়ে ঠিক করবে তোমার আম্মু।(আমি)
.
--আমিই ভাইয়াকে বলেছিলাম যে আমি তোমার বন্ধুকে পছন্দ করি, ওকেই বিয়ে করবো। তাই ভাইয়াই হৃদয় এর সাথে আমার বিয়ের সব ব্যবস্থা করে।(নিলা)
.
--ও বুঝলাম। ভালোবাসতে হৃদয়কে?(আমি)
.
--প্রথম প্রথম ভালো না বাসলেও ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে অনেকটাই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।(নিলা)
.
--তাহলে আরো দুই বছর সামনে যাওয়া যাক। তুমি হানিমুনে গিয়েছিলে হৃদয় এর সাথে।(আমি)
.
--হ্যা আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনগুলো ছিলো সেখানে। আমি সম্পূর্ণ হৃদয় এর উপরে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।(নিলা)
.
--আচ্ছা এবার আসা যাক হৃদয় এর হত্যার কাহিনীতে। কি হয়েছিলো সেদিন।(আমি)
.
--সেদিন?(নিলা বলতে যাচ্ছে। তবে হাত পা কাঁপছে)
.
--হ্যা শান্ত হও কোনো ভয়ের কারন নাই। তুমি শুধু একটা স্বপ্ন দেখছো। এখন বলো কি হয়েছিলো সেদিন।(আমি)
.
--সেদিন আমরা কক্সবাজারের একটা সুন্দর জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। জায়গাটা খুব সুন্দর ছিলো। কিন্তু আমার মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো। আমি যেটা করতে চাচ্ছিলাম না সেই ভুলটাই করেছিলাম। মনের মধ্যে এতো জেদ বয়ে যাচ্ছিলো সেটা বলার মতো নাই।(নিলা)
.
--কেনো কি করেছিলে এমন।(আমি)
.
--সেদিন আমার এক বান্ধুবীকে ফোন দিয়েছিলাম। ওর ভাই এখানের অনেক বড় সন্ত্রাসী ছিলো। আমি ওনাকে ফোন দিয়ে হৃদয়কে মারার জন্য বলি।(নিলা)
।।।।
।।।।
নিলার কথা শুনে এখন আমার মনই আটকে আসতেছে। নিজের ভাইয়ের যে এমন চরম অবস্থায় মৃত্যু হবে সেটা কল্পনা করি নি। ওর মৃত্যুর সময় ছিলো না কোনো আপন জন। পাশে শুধু ছিলো একজন বিশ্বাস ঘাতক। আমার তো এখনি একটা ছুরি নিয়ে হত্যা করতে মন চাচ্ছে এই হত্যাকারিনীতাকে। কিন্তু আমার তো ব্যস্ত হলে চলবে না। আমার শুনতে হবে কেনো এটা করেছিলো ও। কেনো এভাবে আমার ভাইটাকে হত্যা করেছে। হত্যা যদি করতেই হয় তাহলে বিয়ে করলো কেনো। বিয়ে না করেই তো হত্যা করতে পারতো ও। আমি নিজে একটু শান্ত হয়ে নিলাম। তারপর বলতে লাগলাম,
.
--তারপর কি হয়?(আমি)
.
--তারপর যখন আমি হৃদয়কে নিয়ে ঘুরতে বের হই তখন ঔ ভাইয়া হৃদয় এর বুক বরাবর গুলি করে। আমার মন খুব চাচ্ছিলো যে হৃদয়কে কিছু না করে ওর সাথে সারাটা জীবন কাটাতে। কিন্তু কাউকে আমি কথা দিয়েছিলাম। সেই কথা তো আমাকে মানতেই হবে। খুব কেদেছিলাম সেদিন। গুলিটা যখন করে তখন ওর দিকে চেয়ে কেদেছিলাম। ওকে ধরতে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু কাছে গেলে হয়তো মায়ায় পরে ওকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যেতাম। ওর কাতরানো শরীর দেখে মনটা চুরমার হয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু কিছুই করার ছিলো না আমার। ভাইয়াটা আমাকে বাচানোর জন্য আমার হাতে একটা গুলি করে। আর হৃদয় মারা যাওয়ার পর আমাদের দুইজনকেই হাসপাতালে নিয়ে যায়।(নিলা)
.
--ওওওও।। তা কি কারনে মারলে নিজের স্বামীকে ঔভাবে।(আমি)
.
--তখন আমি ক্লাস ৬ এ পড়ি। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলো আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলো আমার মামাতো বোন। যদি ও আমার থেকে তিন বছরের বড় ছিলো তাও আমরা খুব ভালো বন্ধুর মতোই ছিলাম। আমি রিতি আপুকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না।আপু ও সব সময় আমার সাথেই থাকতো। তবে আস্তে আস্তে আপু আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলো। যে আপু সব সময় আমার সাথে কথা বলতো। সে আস্তে আস্তে ফোনে সময় দেওয়া শুরু করলো। সারাদিন রাত ফোন নিয়ে কথা বলতো। আর যে আপু সময় পেলে আমাকে ছাড়া কখনো বাইরে ঘুরতে যেতো না সে সেজেগুজে আমাকে একা রেখেই ঘুরতে যায়। একদিন রাগে আপুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আমাকে কেনো সময় দাও না। তখন আপু বলেছিলো তুই ও যখন বড় হবি। কারো প্রেমে যখন পরবি তখন বাকি কাউকেই সময় দিতে পারবি না।। আপু কথা শুনে আমার খুব জেদ হয়েছিলো সেদিন। এমন প্রেম করার কি দরকার যদি আপন মানুষদেরই সময় না দিতে পারি। জেদ করে কোনো কথা বলতাম না আমি আপু সাথে। কিন্তু একদিনের ঘঠনায় আমার জীবনটা পুরো তজনজ করে দিলো।(নিলা)
.
--কি ঘঠনা?(আমি)
.
--আমি আপুর সাথেই ঘুমাতাম কিন্তু জেদ করে আপুর সাথে আর ঘুমাতাম না। অন্য রুমে শুতাম আমি। কিন্তু সেদিন রাতে ভাবলাম আপু সাথে শুবো একটু। কারন কিছুদিনে আপু পুরো বদলে গিয়েছিলো। আমাকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করতো। আর গোপনে গোপনে কাদতো। তাই ভাবলাম আপুকে জিজ্ঞাসা করবো কি হয়েছে আপুর। তাই আমি আপুর রুমে যাচ্ছিলাম। ঘরটা খোলায় ছিলো। ভিতরে ঢুকে আপু বলে ডাক দিলাম। কিন্তু যা দেখেছিলাম সেটাই আমার পুরো পৃথিবী পাল্টে গেছে।(নিলা)
.
--কি দেখেছিলে?(আমি)
.
--রিতি আপু ফ্যানের সাথে ঝুলছিলো। তার গলায় ওরনা প্যাচানো ছিলো। সেদিন খুব কান্না করলাম। বুঝি নি কোন দুঃখে আপু এমন করলো। আমাকে একটু বলতে তো পারতো আমি। সেদিন মাথায় কিছুই ঢুকে নি শুধু কান্নাই করেছিলাম। কিন্তু তারপর একদিন আপুর টেবিলে একটা ডাইরী দেখতে পেলাম। সেটাই একটা ছোট চিঠি ছিলো।
চিঠিটা এমন ছিলো,
.
Dear Princess.
.
তুই তো সব সময় আমার কাছে রাজকন্যার মতোই ছিলি। আমার বোনটা আমাকে মাফ করে দিস তুই। তোকে কষ্ট দিয়ে ফেলছিলাম আমি। কিছুই করার ছিলো না। আমি যে মিথ্যা মোহে পরেছিলাম সেটা আমি জানতাম না। তোকে তো বলেছিলাম হৃদয় নামের ছেলেটার সাথে আমার রিলেশন ছিলো। ওর ছবি ও তোকে দেখিয়েছিলাম। তোর বোনের কপালটা দেখ যাকে খুব ভালো একটা ছেলে ভেবে ভালোবাসলাম সে শুধু তোর বোনের শরীর দেখেই ভালোবাসলো। আমার শরীর ভোগ করা ওর শেষ। তাই আমাকে বাদ দিয়ে অন্য একটা মেয়ের জীবন এখন নষ্ট করার চেষ্টাই আছে ও। আমি বুঝি নি এতো খারাপ হবে ও। কিন্তু কি আর করার আছে বল। ভেবেছিলাম এভাবেই নিজের জীবনটা আবার সুন্দর করে নিবো। কিন্তু সেটা হলো কোথায়। যখন আয়নায় নিজের শরীর দেখতাম তখন ওর দেওয়া প্রত্যেকটা দাগের চিহ্ন স্পষ্ট দেখা যেতো। আমি কিছুই ভুলতে পারতাম না। খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম ওকে। সেটা হয়তো তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু ও যে ভালোবাসার নামে এমন নাটক করবে সেটা আমি বুঝতে পারি নি।
।
শুধু তোকেই বল্লাম কথাগুলো। চিঠিটা যেনো বাবা মার কাছে না যায়। তারা হয়তো শুনলে কষ্ট পাবে। অনেক কষ্ট পাবে তারা। তুই আমাকে ভুল বুঝিস না বোন। মাফ করে দিস তোর এই বোনকে। সরাসরি তোকে অনেকবার বলতে চাইছি। কিন্তু বলে ওঠা হয় নি। কিন্তু চলে যাচ্ছি বলে ভুলে যাস নে তোর এই বোনটাকে। তোর মনের একটু জায়গা দিয়ে রাখিস আমাকে।
।
তোরই খারাপ একটা বোন,
রিতি।।।
।।।।।।
।।।।।।
চিঠিটা পরে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু মনের মধ্যে একটা জেদ আসলো যে আমার থেকে আপুকে পুরো দমে কেড়ে নিলো আমি তাকে ছারবো না। যে আমার আপুটাকে ভালোবাসার অভিনয়ে এভাবে মেরে ফেললো আমি ও ওকে ভালোবাসার অভিনয় করে মারবো। তখন আপুর চিঠিটা ধরে কথা দিয়েছিলাম আপু খুনিকে আমি যেভাবে হোক মারবোই। পুরো জেদ আমার মাথায় উঠে গিয়েছিলো।(নিলা)
.
--তাহলে এটাই কারন ছিলো?(আমি)
.
--হ্যা।(নিলা)
।।।।
।।।।
আমি আর কিছুই বল্লাম না। আমার মনটা ও মোচর দিয়ে উঠলো। আমি নিলাকে জাগিয়ে দিলাম। আসলেই নিলার দোষ কোথায়। দোষ তো নিলার ও নেই হৃদয় এর ও নেই। সব তো আমার দোষ। আমার জন্য যে এভাবে ২ টা নিষ্পাপ জীবন শেষ হয়ে যাবে সেটা কল্পনা করি নি আমি। নিলার মুখে রিতির কথা শুনে আমার ও মনে পরলো এর পূর্বে আমার এখানে আসার কাহিনী। হৃদয় সেজে প্রেমে ফেলেছিলাম রিতিকে। কিন্তু এমন যে হয়ে যাবে সেটা কি আমি জানতাম। এমন একটা মোরে এসে যে শেষ হবে বুঝতেই পারি নি। আমার একটা ভুলে রিতি তো মারা গেলোই। সেই তালে আমার ভাইটা যে এই বিষয়ে কিছুই জানে না সে ও মারা গেলো। ভুলটা আমার ই ছিলো। তবে সেটা সংশোধন করতে গিয়ে আরেকটা ভুল করতে চাই না। নিলার কাছে ওর জেদটা কেটে গিয়েছে তাই আর বেশী কথা বল্লাম না আমি,
.
--কি হয়েছিলো এতোক্ষন।(নিলা)
.
--কিছুই হয়নি।(আমি)
.
--কোথায় আমি কি হিপ্লোটাইজ হয়েছিলাম?(নিলা)
.
--না আমি তো মজা করতে ছিলাম তোমার সাথে।(আমি)
.
--কি আপনি মজা করতে ছিলেন।(আমার বুকে কিল দিতে দিতে)
.
--হুমমম মজা তো আরো করবো।(আমি টান দিয়ে নিলাকে আমার বুকে নিয়ে আসলাম)
.
--কি করছেন?(নিলা)
.
--কিছুই না।।(আমি)
.
--তাহলে ছাড়ুন আমাকে।(নিলা)
.
--না ছারতে চাই না আমি হৃদয়ের মতো করে।(আমি)
.
--আমি ও যেতে দিবো আর। ভুল একটা করলেও আর করছি না এখন।(নিলা)
.
--ভুল করছো মানে?(আমি)
.
--আরে না কিছুই না। আপনি আমাকে এভাবেই বুকের মাঝে ধরে রাখুন।(নিলা)
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((সমাপ্তি)
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।